রুমির জন্য অনেক বিয়ের প্রপোজাল আসতো। দেখতে মোটামোটি হলেও ছোট থেকে পর্দা করতো। ভালো ব্যবহার আর ইসলামিক মাইন্ডের জন্য সবাই ওকে কম বেশি পছন্দ করতো। কিন্তু ওর বাবা মা ওকে আগে বিয়ে দিবেন না। অনেক পড়ালেখা করাবেন বলে ঠিক করেছিলো। তারা মেয়েকে না দেখিয়েই সব প্রপোজাল না করে দিলেন।
রুমির মাস্টার্স কমপ্লিট হয়েছে। ভালো রেজাল্ট করেছে। বাবা মা এখন বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে লাগলো। কিন্তু তাদের অবাক করে কোনো পাত্রই তারা পেলোনা। যেসব পাত্রের খোঁজ পায় সবাই বয়সে ছোট! রুমি বলে দিয়েছে ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ে, টাখনুর উপর প্যান্ট, দাড়ি আছে এমন ছেলে বিয়ে করবে। কিন্তু এমন ছেলেরা যে সব আগেই বিয়ে করে ফেলে!
বাবা মা অনেক খুঁজেও পাত্র না পেয়ে রুমিকে বুঝাতে লাগল যে নরমাল মুসলিম ছেলে বিয়ে করলে ও পরে তাকে নিজের মতো প্র্যাক্টেসিং বানিয়ে নিতে পারবে ইত্যাদি। রুমির মন মানতোনা, কিন্তু বাবা মায়ের এই কষ্টও ও দেখতে পারতোনা। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে এমনই এক ছেলের সাথে বিয়ে হলো যে কিনা নামাযটাও ঠিক মতো পড়েনা।
আগে থেকেই রুমির মন খারাপ ছিলো, তবুও সে অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নিজের সংসারে প্রবেশ করলো। প্রথম এক মাস ভালোই গেলো। নামায না পড়লেও আবীর খারাপ না বলেই ওর মনে হলো। ওকে নামাজ পড়তে বা পর্দা করতে আবীর বাঁধা দিতনা দেখেও ও খুব খুশি ছিলো।
কিন্তু ধীরে ধীরে আসল সমস্যা শুরু হলো। ওর বাসার কেও পর্দার সমস্যা বুঝতোনা। ওর দেবর যখন তখন রুমে চলে আসতো। ও না করলে উল্টা ওকেই কথা শুনতে হতো ওর মেন্টালিটিই নাকি খারাপ। বাসায় হাসেবেন্ডের মামাতো চাচাতো ভাইয়েরা আসলে ভাবির সাথে দুষ্টুমি করতে চাইতো। ও এগুলো পছন্দ করেনা বলে ওকে দেমাগি বলা শুরু হলো।
প্রথম প্রথম আবীর ওর কথায় নামাজ পড়তো। কিন্তু ফজরের নামাজ্র ওকে উঠানো খুব কষ্টের ছিলো। প্রথম প্রথম উঠলেও আজকাল উঠতে চায়না।ইসলামের কোনো নিয়ম পালন করতে বললে করেনা। একদিন তো বলেই বসলো যে বেশি নামাজি হইসো? বেহেস্তে মনেহয় একাই যাবা? আমাকে শিখাতে এসোনা কি করা লাগবে কি লাগবেনা!
ননমাহরাম মেয়েদের সাথেও আবীর খুব স্বাভাবিক ভাবে মিশতো যা রুমির একটুও ভালো লাগতোনা। অফিসের মেয়ে কলিগদের সাথে আড্ডা দেয়া, মেয়ে কাজিনদের সাথে গল্প করা ইত্যাদি আবীরের জন্য স্বাভাবিক ছিলো কারণ ওর ইসলামিক জ্ঞান কম। বুঝতোনা এগুলো কেনো নিষেধ। উল্টা ভাবতো রুমির মন ছোট তাই ও খারাপ চোখে দেখে, হিংসা করে।
অবস্থা এমন হয়ে দাড়ালো যে কারো সাথেই ওর কিছু মিলেনা। হাসবেন্ড চায় ও হিজাব পড়লেও পার্টিতে নিকাব না পরুক, কিন্তু ও তা মানেনা। রুমির এতো মানুষের মাঝেও একা লাগে। কেও নাই যে ওকে বুঝবে। দেবরকে রুমে আসতে না করার পর থেকে শ্বাশুড়ী আম্মাও রাগ! উঠতে বসতে ওর ভুল ধরেন। বাবা মায়ের উপর অভিমানে তাদের কিছু বলেন না। আর বলেই বা কি লাভ, মাঝ থেকে তারাও তো কষ্ট পাবে!
আবীরের পরিবার যে খারাপ তা না, তারা হচ্ছে আধুনিক মনা। কিন্তু প্র্যাক্টেসিং মুসলিম রুমির সাথে তাদের মিলেনা। রুমি দিন রাত দুআ করে যেন আল্লাহ তাদের মন পরিবর্তন করে দেন। এতো বেশি সেক্রিফাইস করা দিন দিন ওর জন্য অসহ্য হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ঝগড়া হওয়ার ভয়ে সে নিজেই ওদের অনেক কথা মেনে নিচ্ছে। কিন্তু ভিতরে কষ্টের তীব্রতা বেড়েই যাচ্ছে। ইসলামিক পরিবেশ থেকে দূরে, ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের থেকে দূরে থাকতে থাকতে ভয় হয় এক সময় ও ও হয়তো তাদের মতো হয়ে যাবে!
এখন এখানে দুইটা জিনিস হতে পারে।
১, হেদায়েতের মালিক আল্লাহ। রুমি দুআ করতে পারে, দুআ কবুল হলে সব ঠিক হয়ে যেতে পারে
২,দুআ কবুল না হলে, আল্লাহ যদি আবীরের ভাগ্যে হেদায়েত না রাখেন বা দুআ কবুলের আগেই যদি রুমি শয়তানের ওয়াসওয়াসায় তাদের মতো হয়ে যায় তাহলে রুমি দুনিয়া ও আখিরাত দুইটাই হারাতে পারে।
অনেক আপুই আমাকে জিজ্ঞেন করেন যে বিয়ের সময় কেমন ছেলে দেখতে হবে। আমি একটাই কথা বলি যার সাথে তোমার মেন্টালিটি মিলে এবং যাকে ইশ্তেখারা পড়ার পর তোমার জন্য সঠিক মনেহয় তাকেই বিয়ে করো। আমরা বিয়ে করি হাফ দ্বীন পূরণের জন্য। যে আমার দ্বীনই পূরণ করতে পারবেনা তাকে বিয়ে করে কি লাভ? কাওকে শিখিয়ে পড়িয়ে আমাদের মতো করে নিবো ভাবাটাই ভুল। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ। সে যদি হেদায়েত না পায়? বা যতোদিন হেদায়ের না পাবে ততোদিন কি এসব সমস্যা ফেস করার মানসিকতা আমার আছে। আমি কি পারবো নিজের ঈমান ধরে রাখতে?আমাদের ইসলামিক নলেজ কি এতোই বেশি? তাছাড়া পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাড়িয়ে এরপর কেন বিয়ে করতে হবে?ততোদিন কি পারবেন নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করে যেতে?
বিয়ে রাসূল (সা) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। যাদের সামর্থ্য, সুযোগ সুবিধা আছে তারা হেলায় ফেলায় এই সুন্নাহ পালনে বিলম্ব করবেন না আশা করি।
লিখেছেন: নায়লা আমাতুল্লাহ্
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে হেদায়েত নসিব করুন আমিন
ردحذفإرسال تعليق