কিভাবে সম্ভব?

এক রাজা তার এক ভৃত্যকে খুবই মুল্যায়ন করতন। এমন কি অনেক সময় তার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিদের চেয়েও। এটা নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং রাজার নিকটজনদের প্রায় সবারই মনে প্রচণ্ড খোভ জন্মাতে থাকে। রাজা তাদের নানা আচরণে এটা আঁচ করতে পারেন।

এরপর একদিন রাজা তাদের সকলকে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ জানান। সবাই হলরুমে উপস্থিত হলে রাজা ঘোষণা করেন যে আজ তোমরা সকলেই খাবার শেষ করার পর যে পাত্রগুলোতে খাদ্য পরিবেশন করা হয়েছে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলবে।

সবাই তো খেতে বসে তো হতভম্ব! এতো দামি মার্বেলের উপর হিরামুক্ত খচিত পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে যার দাম কোটি কোটি টাকা। সবাই চিন্তা করলেন, এটা নিশ্চয়ই রাজা আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য বলেছেন, আসলে তিনি আমাদের বুদ্ধিসুদ্ধি যাচাই করতে চান। তাই সবাই খাবার শেষ করে একে একে উঠে যাচ্ছিলেন, কেউ পাত্র ভাংলেন না।

হঠাৎ এক কোণে বাসন-কোসন ভাঙ্গার শব্দে সবাই চমকে গেলেন। তাকিয়ে দেখলেন সেই ভৃত্য। নির্দিধায় দামি দামি থালাবাসনগুলো সব আছড়ে আছড়ে ভেঙ্গে ফেলছে। তার এই আচরণ দেখে তার নির্বুদ্ধিতার ব্যাপারে তারা আবারও নিশ্চিত হলেন এবং নিজেদের বুদ্ধির উপর তাদের আস্থা আরো বেড়ে গেলো।

পরের দিন রাজা সবাইকে হলরুমে আবার ডাকলেন। সবাইকে রাজা জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদেরকে বলেছিলাম খাবার পর থালাবাসনগুলো ভেঙ্গে ফেলতে, কিন্তু কী মনে করে তোমরা তা করোনি?

তারা কাচুমাচু করে তাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনের অনেক বুদ্ধিদিপ্ত কারণ ব্যাখ্যা করলেন। এরপর রাজা ভৃত্যকে জিজ্ঞেসে করলেন, এরা কেউই ভাংলো না, তাহলে তুমি কেন ভাংলে?

ভৃত্য বললো, 'মনিব, আমি তো এতো কিছু বুঝি না। আমি বুঝি এটা আপনার হুকুম। আমার সামনে ছিলো মাত্র দুটো পথ; হয় থালাবাসন ভাংতে হয়, নয়তো আপনার হুকুম ভাংতে হয়। থালা-বাসন যতো দামিই হোক না কেন, আমার কাছে আপনার হুকুম তার চেয়ে অনেক বেশী দামি। তাই আমি আপনার হুকুম রক্ষা করেছি, আর থালাবাসন ভেঙ্গে ফেলেছি।

...... আমাদের জীবনেও অনেক এমন মুহুর্ত আসে, যখন আল্লাহর হুকুম আর 'লোকেরা কী মনে করে করবে'র মধ্যে এমন সংঘাত তৈরি হয়। স্ত্রীর সাথে ভাইকে, গায়রে মাহরাম নিকটাত্মীয়দেরকে কীভাবে পর্দা করতে বলি? কীভাবে বোনের ছেলেকে ড্রয়িং রূমে বসতে বলি? কীভাবে বিয়েতে গায়ে হলুদ নিষেধ করি? কীভাবে প্যান্টটা টাখনুর উপরে তুলি?

এমন আরো অসংখ্য 'কীভাবে'র সংঘাত আমাদের জীবনে আসে। আল্লাহকে, আল্লাহর বিধানকে আমরা কতখানি মূল্যায়ন করি, কতখানি গুরুত্ব দিই তা প্রমাণের এটিই সময়। আমরা যদি তখন আল্লাহর হুকুম ভাঙ্গি আর অন্যের কিংবা নিজ কুপ্রবৃত্তির ইচ্ছাকে সমুন্নত রাখি, তাহলে কী প্রমাণিত হয়? আল্লাহর হুকুম আমাদের কাছে বেশী দামী নাকি অন্য কিছু বেশী দামী?

আমাদের মনে রাখা দরকার, এমন একদিন আমাদেরকে আল্লাহর সামনে দাড়াতে হবে...

"যেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার পিতা মাতা, তার স্ত্রী ও সন্তান থেকে, সেদিন প্রত্যেকে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। সেদিন কিছু মুখ হবে উজ্জ্বল; সহাস্য, উৎফুল্ল; কিছু মুখ হবে ধুলোমলিন, কালিমাচ্ছন্ন। এরা তারাই আল্লাহকে (আল্লাহর বিধানকে) প্রত্যাখ্যানকারী, পাপাচারি। (আল কুরআন ৮০: ৩৪-৪২)

Post a Comment

Previous Post Next Post