সুঘ্রাণ!

মাশেতা নামক একজন মহিলা ফিরআউন কন্যার চুল আঁচড়ানোর কাজে নিয়োজিত ছিল।

কোনো একদিন ফিরআউন কন্যার চুল আঁচড়ানোর সময় সহসা চিরুণি হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল। তা ওঠাতে ওঠাতে আনমনে তার মুখ থেকে বের হয়ে পড়ল হে আল্লাহ ! তোমাকে অমান্যকারী ধ্বংস হোক। এ কথায় ফিরআউনের কন্যার সন্দেহ হলে জিজ্ঞেস করল, ফিরআউন ছাড়াও কি তোমার কোনো আল্লাহ আছে নাকি? দাসী জবাবে বলল, আমার আল্লাহ সেই আল্লাহ যে ফিরআউনেরও আল্লাহ। শুধু ফিরআউন নয় সে আকাশ জমিনেরও আল্লাহ । তিনি একক তাঁর কোনো শরিক নেই।

একথা শুনে রাগে ফিরআউনের কন্যা অগ্নিশর্মা হয়ে পিতার কাছে গিয়ে বলল, আব্বা আমার চুল বিন্যাসকারিণী বলে কি, আমার আল্লাহ সেই আল্লাহ যে ফিরআউনেরও আল্লাহ , আসমান জমিনেরও আল্লাহ। তার কোনো শরিক নেই। ফিরআউন বলল, এক্ষুণি তাকে হাজির কর। সাথে সাথে তাকে হাজির করা হলো। সেও নির্ভয়ে হাজির হলো।

আজ তার আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার ঈমানী পরীক্ষার দিন। এতে প্রাণ দিতে হলে দেবে। তারই ভালোবাসায় যদি জীবন দেওয়া যায় তবেই তো ধন্য। ফিরআউন জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর। সে বলল হ্যাঁ। ফিরআউন বলল, সে আল্লাহকে ছেড়ে এখনই আমার সামনে আমার আল্লাহয়ী স্বীকার কর। মাশেতা বলল, না কিয়ামত পর্যন্তও তা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। নির্দেশ দেওয়া হলো তাকে পেরেক মার ।

তৎক্ষণাৎ তাকে শুইয়ে তার হাতে ও পায়ে পেরেক মারা হলো। তারপর আল্লাহ ওয়ালাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য যে বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছু রাখা হতো তাও এনে তার উপর ছেড়ে দেওয়া হলো। বলা হলো এখনো সময় আছে তোমার আল্লাহকে ছাড় নতুবা ২ মাস পর্যন্ত তোমাকে লাগাতার এ শাস্তি দেওয়া হবে। মাশেতা বলল, তুমি আমাকে দুই মাসের শাস্তির ভয় দেখাও ৭০ মাস পর্যন্ত আমাকে শাস্তি দিয়ে দেখ আল্লাহর ভালোবাসা এক বিন্দুও কমবে না; বরং বাড়বে। বোখারি শরিফে আছে রূমের এক বাদশাহর কথা। তিনি বলেন, ‘এমনি হলো ঈমানের অবস্থা যখন তার স্বাদ কোনো অন্তরে প্রবেশ করে তখন তা আর বের হয় না। হে ফিরআউন শুনে রাখ, তুমি যদি বছরের পর বছর আমাকে শাস্তি দিতে থাক তবুও আমি আমার মহান প্রভুকে পরিহার করব না। এ নেক মহিলার দুটি সন্তান ছিল একটি চার পাঁচ বছরের, আরেকটি ছিল দুগ্ধপোষ্য। ফিরআউন উভয় সন্তানকে তার মায়ের সামনে এনে প্রথমে বড় সন্তানকে মায়ের বুকের উপর রেখে জবাই করল। তারপর বলল, এখনও সুযোগ আছে নতুবা তোমার দুগ্ধপোষ্য এ শিশুটিকেও হত্যা করা হবে। মাশেতা বলল, যদি তুমি সমগ্র পৃথিবীকে আমার বুকের উপর এনে জবাই কর তবুও আমি আমার প্রিয়তম আল্লাহকে ছাড়ব না। একথা শুনে হুকুম দেওয়া হলো এ শিশুটিকেও তার বুকের উপর রেখে জবাই কর। ওই শিশু সন্তান যে বুকের উপর চড়ে দুধ পান করত আজ সেখানে রেখে তাকে জবাই করা হবে এ অবস্থা দেখে মায়ের চোখে পানি এলো।

৬ মাসের এ শিশুর মুখ থেকে কথা বের হলো, বলল মা কেন কাঁদ? জান্নাত তোমার জন্য সুসজ্জিত করা হচ্ছে। মা জান্নাতে পৌঁছে আল্লাহর দীদার হাসিল হবে। এখনো কথা বলতে পারে না এমন শিশুর মুখ থেকে এ কথা শুনে মা অবাক হলেন। ঈমান আরও মজবুত হলো। জালিমরা শিশুটিকে হত্যা করল। মা প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চির জান্নাত বাসিনী হলেন।

তাফসিরে দুররে মানসুরে আছে রাসুল সা. যখন মেরাজে যাচ্ছিলেন, বোরাক মিসরের কাছাকাছি এক ময়দানে পৌঁছল, তখন জান্নাতের খুশবু তিনি অনুভব করলেন। বললেন, খুব সুন্দর সুঘ্রাণ পাচ্ছি, মনে হয় এটা জান্নাতের সুঘ্রাণ। জিবরাইল আ. বললেন, জান্নাত তো অনেক দূরে মনে হয়, ফিরআউন কন্যার কেশ বিন্যাসকারিণী মহিলা মাশেতার কবর থেকে এ সুঘ্রাণ আসছে। সুবহানাল্লাহ।

(মাআলিমুত-তানযিল গ্রন্থ থেকে বর্ণিত)

Post a Comment

أحدث أقدم