গণতন্ত্রের ধোকা!

গণতন্ত্রের নাম এবং ধারণা- দুটোরই উদ্ভব ঘটেছে প্রাচীন গ্রীসে, যার অর্থ “জনগণের শাসন”। প্রাচীন গ্রীসের নগর-রাষ্ট্রসমূহে, বিশেষত এথেন্সে, দাস এবং নারীদেরকে ভোটাধিকার দেওয়া হতো না, কার্যত অধিবাসীদের ২০ থেকে ৩০ ভাগের একটি ক্ষুদ্র অংশ ছিল সক্রিয় নাগরিক।২৯ বর্তমান পশ্চিমা গণতন্ত্রের বাস্তবতাও খুব ভিন্ন কিছু নয়।

প্রকৃতপক্ষে, শাসনকর্তৃত্ব বর্তমানে তার চেয়েও ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। ‘শাসনকার্যে আমাদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে’- জনগনের মনে এমন একটি আবহ সৃষ্টি করতে পশ্চিমারা নির্বাচন নির্বাচন নাটক মঞ্চস্থ করতে থাকে। অত্যন্ত সুকৌশলে তারা সাধারণ মানুষকে শাসনব্যবস্থায় কার্যকর অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখে।

যেমন, আমেরিকার মতো দেশে সরকার যেখানে অন্যান্য অনেক খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে সেখানে সকল স্তরের শিক্ষা একারণেই বিনামূল্যে দেওয়া হয় না যে, সাধারণ শ্রেণীর কেউ যেন সহজে সরকারব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করার মতো যোগ্য হয়ে উঠতে না পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা খুবই ব্যায়বহুল হওয়ার কারণে নিম্ন শ্রেণী থেকে আসা লোকেদের বেশিরভাগই নিজেদের অবস্থা উত্তরণে ব্যর্থ হয়। তথাপি, দেখা যাবে সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং ভর্তুকিযুক্ত আবাসনের পক্ষে রায় দিয়ে থাকে। অথচ হাইস্কুলের গণ্ডি পেরোতেই বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এটি এজন্য নয় যে আমেরিকান সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যায়ভার বহনে অক্ষম, বরং এর উদ্দ্যেশ্য হলো তাদেরকে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা, যেন শিক্ষিত মুষ্টিমেয় এলিট শ্রেণীর উপর অল্পশিক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের সমর্থন ধরে রাখা যায়, তাদের মুখাপেক্ষী বানিয়ে রাখা যায়। অথচ, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে আক্রান্ত সুদানের মতো একটি দেশও বিনামূল্যে শিক্ষার আর্থিক যোগান দিতে সমর্থ হয়েছে।

'সভ্যতার সংকট'
ড. বিলাল ফিলিপস

Post a Comment

أحدث أقدم