খারেজী সম্প্রদায়ের জন্মকথা:

জ্ঞানীদের অনেকের ধারণা যে, খারেজীর আবির্ভাব রাসূল (সাঃ) এর যুগেই হয়েছিল কিন্তু তা ছিল ব্যক্তি পর্যায়ের ঘটনা। এর প্রমাণ স্বরূপ তারা যুল খুআয়সারার ঘটনা উল্লেখ করেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূল (সাঃ) এর নিকট ছিলাম। তিনি কিছু সম্পদ বন্টন করছিলেন। এমতাবস্থায় তামীম গোত্রের এক ব্যক্তি যুল খুআয়সারা আসলো এবং বললঃ আল্লাহর রাসূল ন্যায় করেন। নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমার ধ্বংশ হোক, আমি ইনসাফ না করলে কে করবে। [বুখারী, মানাকিব, নং ৩৬১০]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সাঃ) বলেনঃ এর প্রজন্ম থেকে এমন এক সম্প্রদায় জন্ম নিবে, যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী পার হবে না। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে হচ্ছে, তিনি (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি তাদের পেয়ে যাই তাহলে আমি তাদের সামূদ কাওমের ন্যায় হত্যা করবো”। [বুখারী, মাগাযী, নং ৪৩৫১]

এই ব্যক্তি ছিল প্রথম খারেজী যে, সবচেয়ে বড় ইনসাফপরায়ণ ইমাম নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর বন্টনের প্রতি প্রকাশ্যে আঙ্গুল তোলে এবং নিজ রায়কে প্রাধান্য দেয়।

অন্য দিকে উসমান (রাযিঃ) এর হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এবং পরে অন্যায় ভাবে তাঁকে হত্যাকারী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ও ত্বাবারী ও ইবনে কাসীর (রাহেঃ) খারেজী বলে অভিহিত করেছেন। [আল্ বিদায়া ওয়ান নিহায়া,১০/২৭০-২৯৪]

কিন্তু এই সময় পর্যন্তও খারেজী একটি সম্পূর্ণ দল ও মতবাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে নি।

তাদের একটি স্বতন্ত্র দল ও মতবাদরূপে আত্মপ্রকাশ ঘটে ৩৭ হিজরিতে সিফ্ফীনের যুদ্ধকালে , যখন আলী ও মুআবিয়া (রাযিঃ) উভয়ের পক্ষ থেকে সমস্যার সামাধানার্থে দুই জন বিচারক নির্ধারণ করেন। এই মর্মে যে তারা দু’জনে মুসলিম উম্মার জন্য যা কল্যাণকর মনে করবেন, তা ফয়সালা করবেন এবং উভয় পক্ষ তাদের সালিস মেনে নিবে। তাই আলী (রাযিঃ) এর পক্ষ থেকে আবু মুসা আল আশআরী (রাযিঃ) এবং মুআবিয়া (রাযিঃ) এর পক্ষ থেকে আমর বিন আস (রাযিঃ) কে নির্ধারণ করা হয়। ঘটনাটি ইসলামী ইতিহাসে (তাহকীম) বা সালিস নির্ধারণ নামে পরিচিত। [দেখুন, আল্ বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া,১০/৫৫৪]

এই সিদ্ধান্ত শুনার পর আলী (রাযিঃ) এর দল থেকে এক সম্প্রদায় এই বলে বিদ্রোহ করলো এবং দল থেকে বের হয়ে গেল যে, তোমরা আল্লাহর দ্বীনে মানুষকে সালিসকারী তথা বিচারকারী নিয়োগ করেছো? অথচ (ইনিল্ হুকমু ইল্লা লিল্লাহ!) আল্লাহ ছাড়া কোনো বিধানদাতা নেই। অতঃপর তারা যেমন ইমাম আলী (রাযিঃ) কে পরিত্যাগ করে, তেমন মুসলিম জামাআতকেও পরিত্যাগ করে (হারূরা) নামক স্থানে বসবাস শুরু করে। ইবনে কাসীরের বর্ণনা মতে তাদের সংখ্যা ১২ হাজারের কাছাকাছি ছিল। প্রথমে আলী (রাযিঃ) ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) তাদের নিকট প্রেরণ করেন এবং তাঁদের সাথে মুনাযারা করেন, যার ফলে কিছু লোক তাদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরে আসে। অতঃপর বাকিদের সাথে আলী (রাযিঃ) যুদ্ধ করেন, যা নাহারওয়ান যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। খারেজীদের অধিকাংশই সেই যুদ্ধে নিহত হয়। [প্রাগুক্ত,১০/৫৬১]

Post a Comment

أحدث أقدم