রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ : জাতীয়তাবাদের বিজয়

বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে কেন রোহিঙ্গারা নিষ্পেষিত হচ্ছে? কারণ রোহিঙ্গাদের মুসলমান পরিচয়ের সঙ্গে যাবতীয় নেতিবাচকতা যুক্ত করার প্রচেষ্টা। দেশটির সোশাল মিডিয়ায় রোহিঙ্গা যুবকদের দ্বারা মিয়ানমারের মেয়েদের ধর্ষণের খবর ছড়ানো হয়। তারপর প্রয়োজনমতো চলে আক্রমণ, নির্যাতন, নিপীড়ন। যদিও বাস্তব অবস্থা অবলোকন করলে এমন খবরকে আপনার হাস্যকর মনে হবে।

কিভাবে সেখানকার উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা ধর্মকে আশ্রয় করে দিনের পর দিন নির্মন নির্যাতন চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের উপর তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন সাংবাদিক ওং চুং ওয়াই। তার অনুসন্ধানের চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

"প্রত্যেক ধর্মেই কিছু উগ্র লোক থাকে। এরা সবসময়ই নিজের ধর্মের কলঙ্ক। মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষু আরশিন ‍উইরানথুও উগ্র বৌদ্ধদের দলেই পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারের নামে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে আসছেন তিনি। ২০০৩ সালে ধর্মীয় উস্কানি দেয়ার অপরাধে তার নয় বছরের জেল হয়। জেল খেটে বেরিয়ে এসে মুসলমান-বিরোধী প্রচারণা আরো বাড়িয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি আবারও এই ধর্মীয় নেতা বিশ্বমিডিয়ায় হেডলাইন হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে করা এক আইনের সামলোচনা করায় জাতিসংঘের এক কর্মকর্তাকে ‘ব্শ্যো’ বলেছেন তিনি। মিয়ানমারে তার প্রভাব অস্বাভাবিক। সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ করে যার শিরোনাম ‘দ্য ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর’। এ প্রতিবেদনের কারণে মিয়ানমারে টাইম ম্যাগাজিনকে নিষিদ্ধ করা হয়। এতেই উগ্র জাতীয়তাবাদে রাষ্ট্রের মদদ বা অনুমোদনটা আঁচ করা যায়।

একারণেই মিয়ানমারের সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে শুধু বৌদ্ধ ধর্মের নাম করে যেকোন কিছু করা সম্ভব। উইরানথুর মত অনেক উগ্র বৌদ্ধরা তা করছেও। দেশটিতে কোন মুসলিম উগ্রবাদী সম্পর্কে যত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়, তার ছিটেফোটাও নেয়া হয়না বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের ব্যাপারে। শুধু ধর্মীয় নেতারাই নয়, এ দলে আছেন দেশটির পুলিশ, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা পর্যন্ত।"

অথচ এই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের বড় বড় ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা দু-একটি কথা বলেই চুপ! কারণ রেহিঙ্গারা মুসলিম! এতো বহু দূরের কথা! ঘরের পাশের লোক না খেয়ে মারা যেতে দেখেও প্রতিবেশী যখন বিনোদন আর সুখের খোঁজে দিশেহারা সেখানে ইসলাম না বুঝা লোকদের থেকে আশা করাই বোকামী! তবে প্রকৃত সুখ যে স্রষ্টার সৃষ্টিতে সেবা করায় সে কথা তারা দিব্যি ভুলেই আছে!

পরিশেষে এতটুকুই বলবো- একটা মিথ্যা ধর্মকে ভিত্তি করে বৌদ্ধরা আমাদের মুসলিম ভাইদের পুড়িয়ে, পিটিয়ে হত্যা করছে! আর আমরা তা দেখে মনে করছি এরা তো বাংলাদেশী নয়! আসলে আমরা ১৯৭১ সালের পূর্বেও বাংলাদেশী ছিলাম না! আর পৃথিবীতে আসার পূর্বে কেউই তার দেশের পরিচয়টাও জানতো না! আবার সেদিকেই (আল্লাহর নিকটে) আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে! তাই এই অল্প সময়ের মধ্যে মিছে জাতীয়তাবোধের কাছে প্রকৃত ভাতৃত্ববোধকে যেন আমরা বিক্রি করে না দেই!

Post a Comment

Previous Post Next Post