ইমাম আহমাদ (রহ:) : হানবালি ফিক্বহের প্রধান


ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হলেন হানবালি মাযহাবের প্রধান। তিনি ১৬১ হিজরীতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম হাদীস মুখস্থকারী ও বর্ণনাকারী। ইমাম আবু হানিফার ছাত্র আবু ইঊসুফের অধীনে হাদীসশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন তিনি। এছাড়াও ইমাম শাফিইর (রহ:) নিজ তত্ত্বাবধানে ফিকহ ও হাদীসশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

তাঁর সমকালীন খলীফাগণ অনেকে মু'তাযিলি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন। এ ভ্রান্ত আকীদাহর বিরোধিতার কারণে ইমাম আহমাদকে অনেক নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিলো। 'কুর'আনকে সৃষ্টি করা হয়েছে' ভ্রান্ত এই দার্শনিক চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে খলীফা আল মা'মূনের (শাসনকাল ১৯৭-২২৭ হিজরি) নির্দেশে তিনি কারারুদ্ধ হয়ে দু'বছর নির্যাতিত হন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পুনরায় বাগদাদে পাঠদান করতে থাকেন। আল ওয়াসিক শাসনভার হাতে নেওয়ার পর (শাসনকাল ২২৭-২৩১ হিজরি) পুনরায় তাঁর উপর নির্যাতন আরম্ভ হয়। ফলে, ইমাম আহমাদ পাঠদান বন্ধ করে দেন এবং পরবর্তী খলীফা আল মুতাওয়াক্কিল (শাসনকাল ২৩২- ২৪৭ হিজরি) ক্ষমতা লাভের আগ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর তিনি আত্মগোপনে থাকেন। খলীফা আল মুতাওয়াক্কিল মু'তাযিলি বিশেষজ্ঞদের বহিষ্কার করে সরকারিভাবে তাদের দর্শনকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তাঁর উপর এ নির্মম নির্যাতনের অবসান ঘটে। ইমাম আহমাদ ২৪১ হিজরীতে ইন্তেকাল করার পূর্ব পর্যন্ত নিয়মিতভাবে বাগদাদে তাঁর পাঠদান অব্যাহত রাখেন।

ইমাম আহমাদের মূল লক্ষ্য ছিল হাদীস সংগ্রহ, বর্ণনা ও এর ব্যাখ্যা প্রদান করা। তিনি ত্রিশ হাজারেরও বেশি হাদীসের একটি বিশাল সংকলন প্রস্তুত করেন, যা মুসনাদে আহমাদ নামে পরিচিত।

ইমাম আহমাদের প্রধান দুই ছাত্র ছিলেন তাঁর দুই পুত্র: সালিহ ও আব্দুল্লাহ্। তাঁর তত্ত্বাবধানে অধ্যয়ন করেছেন এমন বিখ্যাত হাদীস বিশারদের অন্যতম ছিলেন সর্বাধিক প্রসিদ্ধ হাদীসগুলোর সংকলকদ্বয় ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম।

হানবালি মাযহাবের অধিকাংশ অনুসারীই বসবাস করে ফিলিস্তিন ও সাউদি আরবে। মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সাউদি আরবে এ মাযহাবটি বেশ প্রভাব বিস্তার করে আছে। কারণ, সংস্কারবাদী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব হানবালি মাযহাবের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেছেন, ফলে এটি অঘোষিতভাবে তার আন্দোলনের মাযহাবে পরিণত হয়।

________________________________
বই: মাযহাব (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ)
লেখক: ড. আবু আমিনাহ্ বিলাল ফিলিপ্স

Post a Comment

أحدث أقدم