দৈনিক ৭টি ফলদায়ক (প্রোডাক্টিভ) অভ্যাস


আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাতে চেষ্টা করব ৭ টি আধ্যাত্মিক (স্পিরিচুয়াল) কাজের কথা যেগুলো অভ্যাসে পরিণত করার মাধ্যমে জীবনভর উপকৃত হওয়া যায়। আর আমি মনে করি এই কাজগুলো প্রত্যেক মুসলিমের আধ্যাত্মিক ‘রুটি-রুজি’। এই কাজগুলো অভ্যাসে পরিণত করলে ইনশা আল্লাহ আপনার জীবন তরীকে আপনি ভিড়াতে পারবেন আল্লাহর ভালোবাসার বন্দরে, আর এতে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাবে আপনার ঈমান। কথা না বড়িয়ে আসুন জেনে নেই সেই ৭ টি কাজ সম্পর্কেঃ

১. ফরজ সালাতের আগের বা পরের সুন্নাত সালাতগুলো আদায় করাঃ আমি জানি শুধুমাত্র ফরজ সালাত আদায় শেষে মসজিদ থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আশা খুবই সহজ। তবে আমরা যখন এটা অনুধাবন করতে পারব যে, সুন্নাত সালাত আদায় না করার ফলে কত মূল্যবান পুরস্কার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি তখন তা ত্যাগ করা আমাদের জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। বছরের পর বছর আমি এটাই শিখে আসছি যে, নিজেকে সুন্নাত সালাত আদায়ে অভ্যস্ত করার একমাত্র উপায় হচ্ছেঃ নিয়মিত এই সালাতগুলো আদায়ের মাধ্যমে অভ্যাস গড়ে তোলা। আর এভাবে সুন্নাত সালাতগুলো আপনার সালাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাবে এবং সেগুলো ছাড়া আপনার সালাত অসম্পূর্ণ মনে হবে।

২. প্রত্যেক সালাতের পর আল্লাহকে স্মরণ করাঃ আবার বলছি, আমাদের ব্যস্ত জীবনের কারণে সালাত আদায় শেষে মসজিদ থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আশা খুবই সহজ। কিন্তু সততার সাথে বলুন তো, সালাত শেষে সামান্য দু’আ, তাসবীহ ইত্যাদি পড়ার জন্য কতটা সময়ের প্রয়োজন? (উত্তরঃ বড়োজোর ৪/৫ মিনিট)। বর্তমানে দু’আর ছোট ছোট অসংখ্য বই (আমি প্রিফার করব ‘হিসনুল মুসলিম’ বইটি) ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনস পাওয়া যায় যেখানে অসংখ্য দু’আ সংকলিত থাকে। নিয়মিত সালাত শেষে দু’আগুলো পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং আপনার সালাতকে সমৃদ্ধশালী করে তুলুন।
৩. সকাল ও সন্ধায় আল্লাহকে স্মরণ করাঃ ২ নং ধাপও এই অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ থেকে এমন অনেক দু’আ পাওয়া যায়, যা তিনি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পর পাঠ করতেন। আর এই দু’আগুলো প্রকৃত চাপ উপশমকারক এবং উদ্দীপনা বৃদ্ধিকারক, যার ফলে কোন কিছুই আপনাকে প্রফুল্ল থাকা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।

৪. রাতের সালাতঃ আলহামদুলিল্লাহ! রামাদানের সময় রাতে আমরা তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করেছি। তবে রামাদানের বাইরেও অসংখ্য সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা রাতের সালাতের পুরস্কার লাভ করতে পারি। আপনি যদি রাতের সালাত আদায়ে নতুন হোন অথবা সারা বছর নিয়মিত আদায় না করে থাকেন, তবে অন্তত ঈশার সালাত জামা’আতে আদায়ের ব্যাপারটি (বিশেষ করে ভাইয়েরা) নিশ্চিত করুন এবং নিজেকে বলুন ‘কোন অজুহাত নয়!’ তাহাজ্জুদ আদায়ের অভ্যাস তুলুন এবং তা টানা ৩০ দিন পর্যন্ত করার চেষ্টা করুন। ইনশা আল্লাহ এটি আপনাকে বছরের বাকি দিনগুলোতেও রাতে সালাতে দাঁড়ানোয় আগ্রহী করে তুলবে।

৫. চাশ্‌ত এর সালাত আদায় করাঃ একজন ফলপ্রত্যাশী (প্রোডাক্টিভ) মুসলিমের একটি ফলদায়ক (প্রোডাক্টিভ) দিনের জন্য এটি একটি সর্বোচ্চ গোপন কৌশল। ২ রাকা’আত সালাত যা সূর্যোদয় থেকে সূর্য যখন তার সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকে (যোহরের প্রায় আধঘন্টা আগ পর্যন্ত), তার আগে যে কোন সময় আদায় করা যায়। আর এটা চাশ্‌ত এর সালাত নামে পরিচিত। এই সালাতের পুরস্কার হচ্ছে নিজের দেহের প্রতিটি হাড়ের সমপরিমাণ দানের সমান। তাছাড়া এর ফলে দিনের বেলা আপনি যে প্রফুল্লতা অনুভব করবেন, তা সত্যিই অতুলনীয়!

৬. প্রতিদিন একঘন্টা কুর’আন তিলাওয়াত করাঃ উল্লেখ্য, আমি এখানে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে কুর’আন তিলাওয়াতের কথা বলছি, এক পারা কিংবা একটি সূরা না। এখানে কুর’আনের কতটুকু পড়েছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কতটুকু বুঝতে পারছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি একঘন্টা সময় ব্যয় করে মাত্র একটি আয়াত তিলাওয়াত করেন, আর সেটি ভালোভাবে বুঝতে পারেন, তবে তা না বুঝে কুর’আনের অনেক বড় অংশ তিলাওয়াত করার চেয়ে অধিক উপকারী।

৭. ঘুমানোর আগে দু’আ করাঃ দীর্ঘ কর্মময় দিনের পর আপনি প্রচণ্ড ক্লান্ত। আপনার দেহ চায়, আপনি বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ুন… কিন্তু থামুন! ঘুমিয়ে পড়ার আগে আপনি কি পারবেন না নিজেকে আর মাত্র ১০ টি মিনিট দিতে, সামান্য কিছু দু’আ পড়ার জন্য? এটাই আপনার দিনের সর্বশেষ কাজ! চেষ্টা করুন আর উপভোগ করুন জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ঘুমটি এবং ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠুন খুব সহজেই।

____
আর এগুলোই আপনার কাজ! বছর জুড়ে এই ৭ টি অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন এবং তা আজ থেকেই শুরু করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি উপকৃত হবেন জীবনভর।
মূল লেখা : এই লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে Productivemuslim.com ওয়েবসাইট থেকে। লিখেছেন মুহাম্মাদ ফারিস।
অনুবাদ কৃতজ্ঞতা : মুসাফির শহীদ

1 Comments

  1. আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post