সালাফী মতবাদের মূল ভিত্তি কি ?


মুসলিম জাতির মত বা পথ একটিই। সেটা হল সহজ সরল সোজা পথ। যে পথ সম্পর্কে বলতে যেয়ে একদিন রাসূল (সঃ) একটা সরল রেখা আঁকলেন এবং তার ডান দিকে দুটি এবং বাম দিকে দুটি রেখা আঁকলেন। অতঃপর তিনি তাঁর হাতকে মধ্য রেখায় রেখে বললেনঃ “এটাই আমার পথ। এটাই আমার সোজা পথ, তোমরা এই পথেরই অনুসরণ কর এবং অন্য পথ সমূহের অনুসরণ করো না। যদি কর তবে তা আল্লাহর সোজা পথ হতে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করে দিবে।” {ইব্‌ন মাজাহ/১১}

মুসলিম জাতির মাযহাব একটিই তা হলো ইসলাম / যারা একমাত্র মাযহাব ইসলামকে ভেঙ্গে চৌচির করেছে তারা ধৃষ্টতার পরিচয়ই দিয়েছে। কারণ তাদের আল্লাহর রাসূলের (সঃ) সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তাদের দায় দায়িত্ব আল্লাহর নিকট। আল্লাহ তায়ালা বলেন:


“যারা নিজেদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে নিজেরাই নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের কোনো দায়িত্বই তোমার ওপর নেই; তাদের (ফয়সালার) ব্যাপারটা আল্লাহ তায়ালার হাতে, (যেদিন তারা তাঁর কাছে ফিরে যাবে) তখন তিনি তাদের বিস্তারিত বলবেন, তারা কে কি করছিলো।” {সূরা আল আনয়াম, আয়াত ১৫৯}

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন:
“ওয়া মাইয়্যাবতাগি গাইরাল ইসলামি দিনান ফালাইয়্যুকবালা মিনহু ওয়াহুয়া ফিল আখিরাতি মিনাল খাছিরিন।”

“যদি কেউ ইসলাম ছাড়া (নিজের জন্যে) অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে (উদ্ভাবিত) ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে চরম ব্যর্থ হবে।” {সূরা আল-ই-ইমরান, আয়াত ৮৫}


তাহলে সেই পথের সন্ধান কিভাবে মিলবে ?

নবীজি (সা:) বলেন -সর্বোত্তম যুগ হল আমার যুগ ,তারপরের যুগ(খোলফায়ে রাশেদিনের সময়ে) ,তারপরের যুগ (তাবেইন এর সময় ) । (মিশকাত শরীফ)

আর সালাফী শব্দটি এসেছে 'সালাফ' (পূর্বসূরী) শব্দ হতে। যার অর্থ বুঝায় প্রথম তিন যুগের মুসলিমদের (ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও কর্ম পদ্ধতিতে) অনুসরণ করা।

তাই বলা যায় প্রকৃত সালাফিদের মূল ভিত্তি হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর যে কেউ তাদের পুরোপুরি অনুসরণ করবে, আশা করা যায় তাঁরা মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। (আমীন)


সালাফীদের মুলনীতি

১। একমাত্র অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ।

২। সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে করতে হবে।

৩। কোরআন ও সহীহ হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।

৪। সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে বা ইজমায় না থাকলে সে সকল বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ (শরীয়ত গবেষণা) করবেন, কোরআন বা সহীহ হাদীস বিরোধী ইজতিহাদ প্রমাণ হলে তা বর্জন করতে হবে।


সালাফী মানহাজ এর মূলনীতি বিষয়ে আল্লামা ডঃ মুহাম্মদ বাযমুল ( মক্কা ) বলেন, প্রকৃত সালাফিদের মূলনীতি হলো:

১। আল ইখলাস।
২। সুন্নাহর অনুসরন (আল্লাহর রাসুল(সাঃ) কে আকিদাহ,মিনহাজ,ইবাদতের পদ্ধতি,চরিত্র এর ক্ষেত্রে ইমাম হিসেবে মানা) ।
৩। বিদআত এবং বিদআতিদের ব্যাপারে সতর্ক কর।
৪। জামাত এর সাথে একতাবদ্ধ থাকা এবং বিভক্ত না হওয়া(এবং বিভক্তি সৃষ্টি না করা)।


শাইখ ইবনে উসাইমীন (রহ.) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন:


"সালাফদের দিকে নিজেকে সম্পর্কিত করা ওয়াজিব, যেহেতু তাঁরা (সালাফগণ) সেটাই অনুসরণ করেছেন যা রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুসরণ করেছেন। আর নিজেকে সালাফি বলা যদি উদ্দেশ্য হয় এর দ্বারা দল প্রতিষ্ঠা করা, অর্থাৎ কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত করা তাহলে আমরা এসব দলের বিরুদ্ধে লড়াই করি। আমাদের কাছে ওয়াজিব হল মুসলিম উম্মাহকে হতে হবে একই দল রসূলুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের পথ অনুযায়ী। যদি কেউ সালাফি বলে এটা উদ্দেশ্য করে যে 'সালাফদের অনুসরণ, দল প্রতিষ্ঠা নয়' তাহলে এটা হক্ব, সঠিক।"


শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,
"কেউ যদি তার চলার পথকে স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং নতুন আবিষ্কৃত মতবাদ হতে আলাদা বুঝাতে নিজেকে সালাফী পরিচয় দেয় এতে কোন সমস্যা নেই। তবে মুসলিম জামাত হতে নিজেকে আলাদাভাবে দলীয়করণ নিষেধ।"

2 Comments

  1. আলহামদুলিল্লাহ, অনেক কিছু জানতে পারলাম। আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সহিহ ইসলাম বুঝার তৌফিক দান করুন।

    ReplyDelete
  2. সব ই ভাল, ইসলামিক শাসন কই?

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post