[১ম পর্ব]
[২য় পর্ব]
পবিত্রতা অর্জনের বিধিবিধান
প্রশ্ন ৩৫: মহিলাদের সাদা বা হলদে যে পদার্থ বের হয়, সেটা কি পবিত্র নাকি অপবিত্র? উহা অবিরামভাবে বের হওয়া সত্ত্বেও কি অযু করা আবশ্যক হবে? আর বিচ্ছিন্নভাবে বের হলেই বা তার হুকুম কি? কেননা বেশীরভাগ মহিলা -তম্মধ্যে শিক্ষিত মহল উল্লেখযোগ্য- মনে করে যে, এটা স্বাভাবিক সিক্ততা, যাতে অযু করা জরূরী নয়?
উত্তরঃ গবেষণার পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, মহিলাদের এই তরল পদার্থ যদি মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে তা পবিত্র। তবে পবিত্র হলেও তা অযু ভঙ্গ করবে। কেননা অযু ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য অপবিত্র হওয়া শর্ত নয়। যেমন এই যে বায়ূ- যা পশ্চাদভাগ দিয়ে বের হয়, তার তো কোন দোষ নেই; অথচ তা অযু ভঙ্গ করে। অতএব, অযু অবস্থায় যদি মহিলার এরূপ তরল পদার্থ বের হয়, তাহলে তা অযু ভঙ্গ করবে এবং তাকে নতুনভাবে অযু করতে হবে।
তবে যদি তা অবিরামভাবে চলে, তাহলে অযু ভঙ্গ করবে না। কিন্তু নামাযের সময় হলে সে নামাযের জন্য অযু করবে এবং ঐ অযুতে ঐ ওয়াক্তের ফরয ও নফল নামাযসমূহ আদায় করবে। অনুরূপভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে এবং তার জন্য বৈধ সব কাজ সে করতে পারে। যেমনিভাবে মূত্রবেগ ধারণে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিদ্বানগণ এ বক্তব্যই পেশ করেছেন। এটাই হলো তরল ঐ পদার্থের বিধান। অর্থাৎ পবিত্রতার দিক বিবেচনায় সেটা পবিত্র। কিন্তু অযু ভঙ্গের দিক বিবেচনায় সেটা অযু ভঙ্গকারী- যদি না সেটা অবিরাম বের হয়। আর অবিরাম বের হলে অযু ভঙ্গ করবে না; তবে মহিলাকে নামাযের সময় হলে নামাযের জন্য অযু করতে হবে- নামাযের সময়ের আগে নয় এবং অযু ধরে রাখতে হবে। পক্ষান্তরে যদি তা অবিরাম না চলে এবং নামাযের সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া তার অভ্যাস হয়, তাহলে যে সময়ে বন্ধ থাকে নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় না থাকলে নামাযকে সেই সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করবে। আর নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় থাকলে অযু করে নামায আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে কম-বেশীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা এর সবই একই রাস্তা দিয়ে বের হয়। সুতরাং কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে। তবে যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দিয়ে বের হয়- যেমন রক্ত, বমি, তা কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে না।
এদিকে এগুলো অযু ভঙ্গ করবে না মর্মে কতিপয় মহিলার যে বিশ্বাস, ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অভিমত ছাড়া তার কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। তিনি বলেন, “ইহা অযু ভঙ্গ করে না।” কিন্তু তিনি এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করেননি। যদি কুরআন-সুন্নাহ থেকে বা ছাহাবীগণের কথা থেকে এর পক্ষে কোন দলীল থাকত, তাহলে তা দলীল হিসাবেই গৃহীত হত।
যাহোক, মহিলাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং নিজেদের পবিত্রতা অর্জনের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেননা অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়লে তা গৃহীত হবে না- যদিও তারা একশত বার নামায পড়ে। এমনকি কতিপয় আলেম বলেছেন, যে অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়ে, সে কুফরী করে। কেননা ইহা আল্লাহর সাথে ঠাট্টার শামিল।
প্রশ্ন ৩৬: যে মহিলার অবিরাম তরল পদার্থ বের হয়, সে যদি যে কোন এক ফরয নামাযের জন্য অযু করে, তাহলে ঐ ফরয নামাযের অযু দিয়ে পরবর্তী ফরয নামায পর্যন্ত সময়ে ইচ্ছামত নফল নামায পড়া এবং কুরআন তেলাওয়াত করা তার জন্য ঠিক হবে কি?
উত্তরঃ যদি সে কোন ফরয নামাযের জন্য সেই নামাযের প্রথম ওয়াক্তে অযু করে, তাহলে পরবর্তী নামাযের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত সময়ে সে ইচ্ছামত ফরয ও নফল নামাযসমূহ পড়তে পারবে এবং কুরআন তেলাওয়াতও করতে পারবে।
প্রশ্ন ৩৭: ঐ মহিলা কি ফজরের নামাযের অযু দিয়ে চাশতের নামায পড়তে পারবে?
উত্তরঃ না, পড়তে পারবে না। কেননা চাশতের নামাযের সময় নির্দিষ্ট। সেজন্য এই নামাযের সময় হলে তাকে আবার অবশ্যই অযু করতে হবে। তাছাড়া ঐ মহিলা ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলার মত। আর ইস্তেহাযাগ্রস্ত মহিলাকে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের জন্য অযু করতে বলেছেন।
*যোহরের ওয়াক্তঃ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে আছর পর্যন্ত।
*আছরের ওয়াক্তঃ যোহরের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর থেকে সূর্য হলদে হওয়া পর্যন্ত। আর যরূরী প্রয়োজনে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
*মাগরিবের ওয়াক্তঃ সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিম দিগন্তের সান্ধ্য লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত।
*এশার ওয়াক্তঃ পশ্চিম দিগন্তের সান্ধ্য লালিমা দূর হওয়ার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
প্রশ্ন ৩৮: উক্ত মহিলা মধ্যরাত শেষ হওয়ার পরে এশার অযুতে তাহাজ্জুদ নামায পড়লে কি শুদ্ধ হবে?
উত্তরঃ [কেউ কেউ বলেন,] এশার অযুতে তাহাজ্জুদ নামায পড়লে শুদ্ধ হবে না। মধ্যরাত শেষ হওয়ার পর তার উপর নতুনভাবে অযু করা ওয়াজিব। আবার কেউ বলেন, নতুনভাবে অযু করা তার জন্য যরূরী নয়। আর এ দ্বিতীয়টাই অগ্রাধিকার যোগ্য অভিমত।
প্রশ্ন ৩৯: এশার শেষ ওয়াক্ত কোন্টি (অর্থাৎ উক্ত মহিলার নামাযের ক্ষেত্রে) এবং কিভাবে তা জানা সম্ভব?
উত্তরঃ এশার শেষ ওয়াক্ত হলো অর্ধরাত্রি। আর উহা জানার উপায় হলো, সূর্যাস্ত থেকে ফজর পর্যন্ত সময়টাকে দুইভাগে ভাগ করতে হবে। প্রথম ভাগে এশার ওয়াক্ত শেষ হবে এবং দ্বিতীয় ভাগটা এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী একটা সময় হিসাবে বিবেচিত হবে, কোন ফরয নামাযের সময় হিসাবে নয়।
প্রশ্ন ৪০: তরল ঐ পদার্থ যার বিচ্ছিন্নভাবে আসে, সে অযু করলে এবং অযুর পরে ও নামাযের আগে আবার তা বের হলে সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ যার বিচ্ছিন্নভাবে তরল পদার্থ আসে, সে উহা বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। কিন্তু যদি তার এমন কোন অভ্যাস না থাকে; বরং এই হচ্ছে এই নাই এমন অবস্থা হয়, তাহলে সে নামাযের সময় হলে অযু করে নামায পড়বে। এতে তার কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ৪১: শরীর বা কাপড়ে এই তরল পদার্থ লাগলে করণীয় কি?
উত্তরঃ যদি তা পবিত্র হয়, তাহলে কিছুই করতে হবে না। আর অপবিত্র হলে অর্থাৎ মূত্রাশয় থেকে বের হলে, তা অবশ্যই ধুয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন ৪২: এই তরল পদার্থের কারণে যে অযু করতে হয়, তাতে কি শুধু অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধুলেই যথেষ্ট হবে?
উত্তরঃ এই তরল পদার্থ যদি পবিত্র হয় অর্থাৎ মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে শুধু অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ধুলেই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন ৪৩: এই তরল পদার্থের কারণে অযু ভঙ্গের পক্ষে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কোন হাদীছ বর্ণিত না হওয়ার কারণ কি- অথচ মহিলা ছাহাবীগণ তাঁদের দ্বীনের বিষয়াদি নিয়ে ফৎওয়া জিজ্ঞাসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন?
উত্তরঃ তরল এই পদার্থ সব মহিলার না আসার কারণে।
প্রশ্ন ৪৪: অযুর বিধান সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে যে মহিলা অযু করে না, তার করণীয় কি?
উত্তরঃ তাকে আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে এবং এ বিষয়ে জ্ঞানসম্পন্ন আলেমকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
প্রশ্ন ৪৫: “এই তরল পদার্থের কারণে অযু করতে হবে না” মর্মের অভিমত কেউ কেউ আপনার দিকে সম্বন্ধিত করে থাকে-[আপনি তাদেরকে কি বলবেন]?
উত্তরঃ যে এই অভিমত আমার দিকে সম্বন্ধিত করে, সে সত্যবাদী নয়। তবে আমার মনে হয়, “উহা পবিত্র” মর্মে আমার যে অভিমত, তা থেকে সে বুঝেছে যে, উহা অযু ভঙ্গ করবে না।
প্রশ্ন ৪৬: ঋতুস্রাবের এক বা একাধিক দিন অথবা একদিনেরও কম সময় আগে মেয়েদের মেটে রঙ্গের ঘোলা ঘোলা যে পদার্থ বের হয়, তার হুকুম কি? এটা কখনও চিকন কালো সূতার আকৃতিতে বা গোটা গোটা হয়ে অথবা এ জাতীয় কোন আকৃতিতে বের হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে ইহা ঋতুস্রাবের পরে আসলে তার হুকুমই বা কি?
উত্তরঃ ঋতুস্রাবের ভূমিকাস্বরূপ এটা হলে তাকে ঋতুস্রাব গণ্য করা হবে। এটা চেনার উপায় হলো, ঋতুবতীর স্বাভাবিক ব্যথা অথবা পেট ব্যথা অনুভূত হওয়া।
আর ঋতুস্রাবের পরে ঘোলা ঘোলা যে পদার্থ বের হয়, তা দূর হওয়া পর্যন্ত সে অপেক্ষা করবে। কেননা ঋতুস্রাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘোলা এই তরল পদার্থ ঋতুস্রাব হিসাবেই গণ্য হবে। এ মর্মে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “সাদা জাতীয় পদার্থ না দেখা পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়া করো না।”
উত্তর দিয়েছেন: শাইখ মুহাম্মাদ ইব্ন সালেহ্ আল-উসাইমীন
অনুবাদ : আব্দুল আলীম বিন কাওসার
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
Post a Comment