প্রশ্নোত্তরে ইসলামী ব্যাংকের নানা দিক

● ইসলামী ব্যাংক প্রচলিত সুদি ব্যাংকের সুদ টাকেই অন্য নামে দিচ্ছেন, আদৌ কি পার্থক্য আছে ?

উ: ব্যাংকিংয়ে রিবা (আমরা সুদ না বলে রিবা বললে ভালো হয়) হয় সাধারণত অতিরিক্ত দেয়া/ নেয়ার শর্তে ঋণ গ্রহণ/প্রদানের মাধ্যমে। কনভেনশনাল রিবাউই (সুদী) ব্যাংকের বিনিয়োগ ও জমাগ্রহণের মোট একটাই, ঋণ দেয়া ও নেয়া। তাই তা রিবা।

ইসলামী ব্যাংকে কোনো ঋণ প্রদান করা হয় না। আমাদের দেশে কেবল একটি বিদেশী ব্যাংকের সম্প্রতি ছাত্রদের জন্য সীমিত আকারে ঋণ প্রদানের কথা শুনেছিল। এই ঋণ ক্বারদে হাসান বা সুদমুক্ত ঋণ।

ইসলামী ব্যাংক কনভেনশনাল ব্যাংকে প্রায় সব বা অধিকাংশ কাজই করছে, তবে যেখানে যেরকম ইসলামী চুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব, সেখানে সেভাবে। কোথাও পার্টনারশিপ চুক্তি (সাধারণত জমা গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং বাড়ী কেনার মূলধন সংগ্রহে), কোথাও ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি যেমন গাড়ী বা কোনো আসবাব কেনার প্রয়োজনে মুরাবাহা, অনুরূপভাবে সালাম-ইস্তিসনা ইত্যাদি।

একজন বিক্রেতা পণ্য-টাকার বিনিময়ে বিক্রয় চুক্তির অধীনে কোনো লাভ করলে সেটাকে রিবা বলা হয় না।

সারকথা, তাত্ত্বিকভাবে ইসলামী ব্যাংকে কোনো সুদ নেই। তবে নানা কারণে শরীয়াহ লঙ্ঘন করে যে কোনো চুক্তি সুদ বা রিবায় পরিণত হতে পারে। এজন্য দায়িত্বটা আমাদের সবার। সবাইকেই পড়াশোনা করে শরীয়াহর নীতিমালা জানতে হবে।




● ইসলামি ব্যঙ্কের Credit card এ সময়মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারলে তাতে জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে এব্যপারটা কী সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে না?

উ: এটা নির্ভর করে কীসের ভিত্তিতে ক্রেডিট দেয়া হচ্ছে। কিছু ব্যাংক তাওয়াররুক/ মুরাবাহা ব্যবহার করে, যা মোটেও যৌক্তিক নয়। কিছু ব্যাংক ক্বারদে হাসান দেয়, আর বাৎসরিক একটা ম্যানেজমেন্ট ফি নেয়, যা ঠিক আছে। আর ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা যে কোনো ঋণের ক্ষেত্রেই নিন্দনীয়। রাসূল স. বলেছেন, সামর্থ্যবানের টালবাহানা জুলুম।

● Provisional profit মানে কী?
উ: প্রভিশনাল প্রফিট হলো সম্ভাব্য শর্তযুক্ত প্রফিট, যা বছর শেষে চূড়ান্ত হিসাব শেষে সমন্বয় করা হয়।



● ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এ সেভিংস একাউন্ট খোলা যাবে কি?
উ: কোনো ব্যাংকের নাম উল্লেখ না করাই ভালো। তবে আইবিবিএল দেশের অন্যান্য ইসলামী ব্যাংকের তুলনায় ভালো অবস্থায় আছে।

● যদি যায় তাহলে, সেই একাউন্টের প্রফিট এর বিধান কী?
উ. ইসলামী ব্যাংকগুলো সেভিংস একাউন্ট করে মুদারাবার ভিত্তিতে। একাউন্টও বৈধ, প্রফিটও। যদি না শরীয়াহ লঙ্ঘনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

● একাউন্টের প্রফিট দিয়ে একাউন্টের চার্জ পরিশোধ করা যাবে কি? অর্থাৎ বার্ষিক যেই চার্জ তারা কেটে নেয় ?
উ: জি।



● ইসলামী ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের সামনে কেবল মুনাফাই সামনে থাকে এবং ব্যাংকের স্টাফগনও কেবল মুনাফার দিকটাই তুলে ধরে এবং বিনিয়োগ না আমানত তা একাউন্ট খোলার সময় আলোচনা হয় না, যদিও বা কাগজে হয়তো ঐ ধরনের কিছু থাকে, এ অবস্থায় ঐ মুনাফা সুদেরই একটা প্রকারে পরিণত হচ্ছে কিনা?

উ: একাউন্ট খোলার সময় শুধু লাভের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া = রিবা নয়। লসের সম্ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা না হওয়াও রিবা নয়। রিবা হলো ঋণের বিপরীতে চুক্তি/ শর্ত করে অতিরিক্ত প্রদান/গ্রহণ। (রিবা নাসিয়াহ)



● ইসলামী ব্যাংকে মাসিক মুনাফা নামে একটা সঞ্চয় আছে এটা কি শরিয়ত সম্মত?

উ: ইসলামী ব্যাংকগুলোতে মাসিক মুনাফা প্রদানের সিস্টেম হলো: মূলত চুক্তিটা মুদারাবার। মুদারাবা হলো একপক্ষের মূলধন ও অপরপক্ষের শ্রম/ ব্যবস্থাপনা যোগে যৌথ ব্যবসা, যেখানে লাভ বন্টন করা হয় পূর্ব নির্ধারিত হারে, আর লস মূলত বহন করেন মূলধন বিনিয়োগকারী। তো, মাসিক মুনাফা স্কিমে গ্রাহককে প্রতি মাসে পূর্ববর্তী বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে একটি সম্ভাব্য বাৎসরিক মুনাফা ধরে তার মাসিক সম্ভাব্য পরিমাণ দেয়া হয়। যা বছরের শেষ মাসে সমন্বয় করা হয়। চুক্তি হিসেবে এতে কোনো সমস্যা নেই, বর্তমান ফিকহী বোর্ডগুলোর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে।


উত্তর দিয়েছেন: শাইখ ইউসুফ সুলতান

Post a Comment

أحدث أقدم