পানাহারের আদব

আল্লাহর বান্দাদের উপর যতগুলি অনুগ্রহ আছে তার মাঝে অন্যতম প্রধান অনুগ্রহ হল পানাহার। মানুষের শরীর গঠন,বর্দ্ধন ও টিকে থাকার মূল উপাদান হচ্ছে পানাহার। এই নেয়ামতের দাবি হল এর দাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আর এ কৃতজ্ঞতা আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর দেয়া বিধান পালন করার মাধ্যমে আদায় করা যেতে পারে।এ নেয়ামতের আরো একটি দাবি হচ্ছে, এর সহায়তায় আল্লাহর নাফরমানি করা যাবে না।

পানাহারের অনেকগুলো আদব ও বিধান রয়েছে, যাকে দুইভাবে ভাগ করা যেতে পারে :

প্রথমত : যে বিষয়গুলোর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।

যেমন:
১) খাদ্য এবং পানীয় জাতীয় জিনিসের এহতেরাম করা আর এই বিশ্বাস রাখা যে এগুলি আল্লাহর নেয়ামত যা আল্লাহ তাআলা তাকে দিয়েছেন।
২) খাদ্য জাতীয় জিনিসকে অবহেলা-অসম্মান না করা ;ডাস্টবিন ও ময়লা আবর্জনার ভিতরে না ফেলা।
৩) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। বিশুদ্ধ অভিমত হল: খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব, কেননা অনেকগুলো সহীহ এবং সুস্পষ্ট হাদীস এ নির্দেশই করে।


দ্বিতীয়ত : যে বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক :

১। পানাহারে অহেতুক খরচ করা,
আল্লাহ তাআলা বলেন―
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ ﴿الاعراف : 31﴾
অর্থাৎ : খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।[১০]

২। প্রয়োজন ছাড়া বাম হাতে খাওয়া হারাম।
বেশ কিছু হাদীস এর প্রমাণ হিসাবে পেশ করা যেতে পারে।

(ক) বাম হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা―
যেমন জাবের (রা.)-এর হাদীসে মারফুতে এসেছে :―
«لا تأكلوا بالشمال، فإن الشيطان يأكل بالشمال». (3763)
অর্থাৎ : তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়।

(খ) ডান হাতে খাওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ-
যেমন ইবনে উমর রা. কর্তৃক বর্ণিত মারফু হাদীসে এসেছে―
«إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه، وإذا شرب فليشرب بيمينه، فإن الشيطان يأكل بشماله، ويشرب بشماله».. مسلم (3746)
অর্থাৎ: তোমরা কেউ যখন খাবে ডান হাতে খাবে যখন পান করবে ডান হাতে পান করবে, কেননা শয়তান বাম হাতে খায়। বাম হাতে পান করে। [১১]
এই ধরনের নির্দেশের অর্থ হল বাম হাতে খাওয়া হারাম।

(গ) বাম হাতে খেলে শয়তানের সাথে সাদৃশ্য হয়।
যেমন পূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এবং অমুসলিমদের সাথেও সাদৃশ্য হয়। আর শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক উভয়টিই নিষিদ্ধ ও হারাম।

(ঘ) বাম হাতে খাবার গ্রহন কারী জনৈক ব্যক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বদ দোআ করা এবং এর কারণ বর্ণনা করা যে এটি অহংকার মূলক কাজ।
عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه أن رجلاً أكل عند النبي صلى الله عليه وسلم بشماله، فقال: كل بيمينك» » ، قال: لا أستطيع، قال: «لا استطعت»، ما منعه إلا الكبر، قال: فما رفعها إلى فيه. مسلم (3766)
অর্থাৎ সালামা বিন আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ডান হাতে খাও। সে বলল আমি পারব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আর কখনও পারবেও না। একমাত্র অহংকারই তাকে ডান হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখল। বর্ণনাকারী বলেন: এরপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত উঠাতে পারেনি।[১২]

৩। দাঁড়িয়ে পানাহার করা মাকরূহ, সুন্নত হল বসে পানাহারকার্য সম্পন্ন করা।
عن أنس رضي الله عنه أن النبي نهى أن يشرب الرجل قائماً، قال قتادة: فقلنا: فالأكل؟ فقال (أنس): ذلك أشر وأخبث. . مسلم (3772)
অর্থাৎ : আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ রা. বলেন : আমরা বললাম তাহলে দাঁড়িয়ে খাওয়ার হুকুম কি ? আনাস বললেন সেটাতো আরো বেশি খারাপ আরো বেশি দূষণীয়।[১৩]

৪। কোন কিছুর উপর হেলান দিয়ে আহার করা মাকরূহ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন―
إني لا آكل متكئاً
আমি হেলান দিয়ে আহার করি না।
ইবনে হাজার রহ. বলেন : খাওয়ার জন্য বসার মোস্তাহাব পদ্ধতি হচ্ছে। দুই হাটু গেড়ে,দুই পায়ের পিঠের উপর বসা। অথবা ডান পা খাড়া করে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা।

৫। খাওয়ার পাত্রে ফু দেয়া এবং তার ভিতর নি:শ্বাস ফেলা মাকরুহ।
عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي «نهى أن يتنفس في الإناء، أو ينفخ فيه».. الترمذي (1810)
অর্থাৎ : ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার পাত্রে ফু দেওয়া বা শ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন।[১৪]
وعن أبي قتادة رضي الله عنه مرفوعاً: «لا يمسكن أحدكم ذكره بيمينه وهو يبول، ولا يتمسح من الخلاء بيمينه، ولا يتنفس في الإناء». مسلم (392)
আবু কাতাদাহ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণন করছেন:তোমাদের কেউ যেন প্রস্রাব করার সময় পুরুষাঙ্গ ডান হাত দ্বারা স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দ্বারা যেন ইস্তেনজা না করে। অনুরূপ খাবার পাত্রে যেন শ্বাস না ফেলে।[১৫]

৬। খাবারের দোষ বের করা ও বর্ণনা করা মাকরূহ।
বরং আগ্রহ হলে খাবে, মনে না চাইলে দোষ ধরা ব্যতীত বাদ দেবে।
قال أبو هريرة رضي الله عنه: ما عاب رسول الله r طعاماً قط، كان إذا اشتهى شيئاً أكله، وإن كرهه تركه». البخاري (498
আবু হুরাইরা রা. বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোন খাবারের দোষ বের ও বলাবলি করেননি, মনে চাইলে খেতেন। অপছন্দ হলে রেখে দিতেন।

______
[১০] আল-আরাফ-৩১
[১১] মুসলিম : ৩৭৬৩
[১২] মুসলিম : ৩৭৬৬
[১৩] মুসলিম : ৩৭৭২
[১৪] তিরমিজি : ১৮১০
[১৫] মুসলিম : ৩৯২



লেখক : আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
تأليف: أختر الزمان محمد سليمان
সম্পাদনা : ইকবাল হুসাইন মাসুম
مراجعة: إقبال حسين معصوم
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض

Post a Comment

أحدث أقدم