প্রশ্ন (১) রমযান মাসে ওমরা করার ফযীলত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস আছে কি?
উত্তর (১) পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
হ্যাঁ, রমযান মাসে ওমরা করার ফযীলত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহতে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عمرة في رمضان تعدل حجة»
‘রমযানের ওমরা একটি হজ্বের সমান’।
অন্য বর্ণনায় ‘রমযানের ওমরা আমার সাথে হজ্ব করার সমান’।
প্রশ্ন (২) মক্কা শরীফে রমযানের সিয়াম সাধনার ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় কি? অধিক পরিমাণে তাওয়াফের ফযীলত সম্পর্কেও সহীহ হাদীস আছে কি?
উত্তর (২): প্রশ্নটির প্রথম অংশ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো সহীহ হাদীস মক্কায় রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে নেই। তবে নামাযের ন্যায় মক্কায় সিয়াম সাধনার ফযীলত সম্পর্কে যঈফ (দুর্বল) হাদীস রয়েছে।
আর অধিক তাওয়াফের বিষয়টি হলো যেহেতু তাওয়াফ করা নেক কাজসমূহের অন্যতম। আর নেককাজ অধিক পরিমাণে করাও উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [البقرة: ١٩٧]
“তোমরা পাথেয় অবলম্বন কর। আর নিশ্চয় উত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৭] কিন্তু যখন মওসুমের সময় হয় হজ্বের মওসুম অথবা ওমরার মওসুম তখন সাধারণ মানুষের অধিক পরিমাণে তাওয়াফ করা উচিত নয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের ক্ষেত্রে তাওয়াফে হজ্ব, তাওয়াফে কুদুম, তাওয়াফে ইফাদাহ ও বিদায়ী তাওয়াফ ব্যতীত অন্য কোনো তাওয়াফ করেন নি। আর এটা হলো তাওয়াফকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দে তাওয়াফের সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন (৩): হজ্ব ও ওমরার উদ্দেশ্যে গমনকারীর সঙ্গে হারাম খেলা-ধুলার সামগ্রী সঙ্গে নেওয়ার হুকুম কি?
উত্তর (৩): হারাম যন্ত্রসামগ্রী বহন করা, যখন মানুষ সেগুলো ব্যবহার করবে নিশ্চয় তা অপরাধ। আর অপরাধ বা গুনাহ বার বার করা কবীরা গুনাহে পরিণত হয়। আর যখন সেটা হজ্ব বা ওমরার ইহরাম করার পর হবে, তখন তা অধিক গুনাহের কারণ। কেননা মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ ١٩٧ ﴾ [البقرة: ١٩٧]
‘‘যে ব্যক্তি হজ্ব করা নির্ধারণ করবে, তবে সেখানে কোনো অশ্লীলতা, ফুসুকী, ঝগড়া-বিবাদ নেই।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৭]
অতএব, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো হজ্ব ও ওমরাহ গমনে বা প্রত্যাবর্তনে অথবা উভয়ের মধ্যে হারাম বা আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্ত থেকে বিরত থাকা।
প্রশ্ন (৪) কখন ইজতেবা হবে? এটা কি মিকাত হতে হবে অথবা তাওয়াফে কুদুম এর শুরুতে হবে?
তাওয়াফের দু‘রাকাত সালাত আদায়ের পূর্বে না পরে কাঁধ ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী স্থান ঢেকে রাখবে? ইজতেবা কি শুধু তাওয়াফে না তাওয়াফ ও সা‘ঈ উভয়টাতে? আর ইজতেবা তরককারীর বিধান কি?
উত্তর (৪): ইজতেবা হলো, তাওয়াফকারী কর্তৃক তার ডান কাঁধ বের করে রাখা এবং ইহরামের চাঁদরের উভয় পাশ বাম কাঁধের উপর রাখা। আর এটি তাওয়াফে কুদুমে সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। ফলে কেউ যদি তা না করে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আর এটা শুধু তাওয়াফেই করার বিধান রয়েছে। অতঃপর যখন তাওয়াফ সম্পন্ন হবে, তখন তাওয়াফের দু’রাকাত সালাত আদায় করার পূর্বে উভয় ঘাড় ঢেকে দিবে। আর ইজতেবা সাত চক্করের সব কয়টিতেই হবে। রমল এর বিপরীত। কেননা রমল হবে প্রথম তিন চক্করে মাত্র।
প্রশ্ন (৫): যমযমের পানি পানের ফযীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছে কি? সেগুলো কি? আর যমযমের পানি পান করার সময় কোন দো‘আর বিধান আছে কি? যমযমের পানি বহন করে দেশে নিয়ে যাওয়া বৈধ কি? অপবিত্রতা ও জানাবাত দুরীকরণে যমযমের পানি ব্যবহার বৈধ কি?
উত্তর (৫) : যমযমের পানি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে যা জানতে পেরেছি তন্মধ্যে উত্তমটি হচ্ছে নিম্নোক্ত হাদীস,
«ماء زمزم لما شرب له»
“যমযমের পানি যে জন্য পান করা হয় সেটার কাজে লাগে”।
আর যমযমের পানি পান করার সময় দো‘আর কোনো সহীহ হাদীস আমার মনে আসছে না। কিন্তু তাতেও অন্যান্য পানি পানের নিয়ম মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ পানি পানের সময় শুরুতে তাসমিয়া এবং শেষে হামদালাহ বলবে। অর্থাৎ তুমি পান করার সময় বলবে বিসমিল্লাহ এবং পান শেষে বলবে আল-হামদুলিল্লাহ।
আর সেটা বহন করে মক্কার বাইরে নিয়ে যাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা পূর্বে এ ধরণের কাজ হয়েছিল। তাছাড়া এ সম্পর্কিত হাদীসটি
«ماء زمزم لما شرب له»
“যমযমের পানি যে জন্য পান করা হয় সেটার কাজে লাগে” তা মক্কায় পান করা এবং মক্কার বাহিরে পান করা উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
আর আপবিত্রতা ও জানাবত বা বড় নাপাকী জানাগত দূর করাও এর দ্বারা বৈধ।
প্রশ্ন (৬) হিজরে ইসমাঈলের মধ্যে প্রবেশকারী তথা ডান পাশে হিজরে ইসমাঈল ও বামে কাবাকে রেখে তাওয়াফের বিধান কি?
উত্তর (৬): প্রশ্নকারী কর্তৃক কাবার সে অংশকে হিজরে ইসমাঈল বা ইসমাইলের পাথর বা হিজর বলে ব্যাখ্যা করা ভুল। কেননা এ অংশটি ইসমাঈলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। ইসমাঈল এটাকে চিনতেনই না। এ অংশটি কুরাইশরা যখন কাবা নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেছিল সে সময়ে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। কারণ তারা এর প্রথম ভিত্তি ইবরাহীমের নির্মাণের আদলে নির্মাণ করার জন্য পর্যাপ্ত মালামাল সংগ্রহ করতে পারে নি, ফলে এ অবস্থায় স্থানটিকে তারা ঘিরে রেখেছে। এজন্য এটাকে হিজর বলে। অনুরূপভাবে এটাকে হাতীমও বলা হয়। কেননা এটা কাবার চূর্ণ অংশ। আর তার অধিকাংশ স্থান কাবার অংশ। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, যখন কোনো মানুষ তাওয়াফের সময় এটার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে বিপরীত দিকের দরজা দিয়ে বের হলো নিশ্চয় তার চক্করটি পূর্ণ করল না। কারণ চক্কর হতে হলে অবশ্যই তাকে কা‘বা ও হাতীম উভয়টিকে চক্করের ভিতরে রেখে তা করতে হবে। অতএব, যদি কেউ কোনো তাওয়াফের চক্করে হাতীমের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে অপর দিক দিয়ে পার হলো, তাহলে তার তাওয়াফ সহীহ হবে না। তার কর্তব্য হলো এটাকে পূণরায় করা। তাই যারা হাতীমের ভিতর দিয়ে কোনো চক্কর দিয়ে কা‘বার তাওয়াফ করবে সে তাওয়াফের কারণে যা অর্জিত হওয়ার তার কিছুই অর্জন করবে না, সুতরাং ইহরাম থেকে প্রাথমিক হালাল হওয়ার যে সুবিধা তাওয়াফ করার মাধ্যমে অর্জন করতে পারত সেটার অধিকারী সে হবে না। যখন প্রাথমিক হালাল হওয়া প্রাথমিক তাওয়াফের উপর নির্ভরশীল থাকে। আর নিশ্চয় এক্ষেত্রে আমি পছন্দ করি এ সংবাদ সরবরাহ করতে যে, যারা হজ্ব ও ওমরা করার ইচ্ছা পোষণ করবে তাদের কর্তব্য হলো হজ্ব ও ওমরা করার পূর্বে উভয়ের আহকামসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যেন এ ধরনের বড় ভুলে পতিত হতে না হয়।
প্রশ্ন (৭): কা‘বা ঘরের গেলাপে ঝুলে থাকা বা সেটার উপর ঝুঁকে পড়ার হুকুম কি?
উত্তর (৭): কা‘বা ঘরের ঢেকে থাকা গেলাপে ঝুলে থাকা বা ইহার উপর ঝুঁকে পড়ার শরী‘আতের কোনো ভিত্তি নেই। আর এ কারণে যখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দেখলেন যে, তিনি কা‘বা ঘর তাওয়াফ করছেন, আর এর চারকোণ স্পর্শ করছেন তখন তিনি বর্ণনা করেন, স্পর্শ করাটা শুধু হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর সাথে নির্দিষ্ট। অতঃপর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, “এ ঘরের কোনো কিছুই পরিত্যাজ্য নয়” তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জবাব দিলেন ‘‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূলের জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডান পার্শ্বস্থিত দু‘কোণ (রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ) ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করেন নি। অতঃপর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বক্তব্য মেনে নেন।
প্রশ্ন (৮): তাওয়াফের দু‘রাকাআত সালাত আদায়ের স্থান আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে বলুন।
উত্তর (৮): তাওয়াফের দু‘রাকা‘আত সালাত আদায়ের সুন্নাত নিয়ম হলো, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন মাকামে ইবরাহিম তার ও বায়তুল্লাহর মাঝে থাকে। আর যদি মাকামে ইবরাহিম নিকটবর্তী হয় তবে তা উত্তম। যদি তা সহজ না হয় তবে এ দু‘রাকআত সালাত মাকামে ইবরাহীমের দূরবর্তী কোন স্থান থেকে আদায় করলেও জায়েয হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো মাকামে ইবরাহীমকে কা‘বা ও তার মাঝে রাখবে। আর সেটাও যদি সহজ না হয় তাহলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থান থেকে দু‘রাক‘আত সালাত আদায় করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন (৯): তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্করে রমল করা কি পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট? রমল কি সকল চক্করে করবে? না কিছু সংখ্যক চক্কর করলে চলবে?
উত্তর (৯): রমল পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট। মহিলাদের ক্ষেত্রে বাইতুল্লাহর তাওয়াফে রমল করা সুন্নাত হয়, অনুরূপভাবে তাদের জন্য সা‘য়ীর ক্ষেত্রে দুটি নিদর্শনের মাঝে দৌড় দেওয়াও সুন্নাত নয়।
আর পুরুষদের জন্য তাওয়াফের সময় রমল করা কেবল প্রথম তিন চক্করের সাথে নির্দিষ্ট। এ তিন চক্করে রমল করা হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পুরো স্থান জুড়েই করতে হবে। কেননা বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন।
অবশ্য উমরাতুল কাযাতে সাহাবায়ে কিরাম কেবল হাজরে আসওয়াদ হতে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত রমল করেছিলেন, বাকী রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ এ দু’ কোণের মাঝে সাহাবায়ে কিরাম স্বাভাবিকভাবে হেটে চলেছিলেন। এটা করেছিলেন কুরাঈশদের ক্রোধকে জাগ্রত করার জন্য; কারণ কুরাঈশরা ছিল কাবার উত্তর দিকে। অতঃপর যখন সাহাবাগণ তাদের থেকে আড়ালে যেতেন তখন তারা সাধারণভাবে চলতেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় প্রথম তিন চক্করে পুরো চক্করেই রমল করেছেন। (অর্থাৎ উমরাতুল কাযার মত কেবল হাজরে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত করেই ক্ষান্ত হননি। তাই বিদায় হজ্বের রাসূলের আমল হিসেবে প্রথম তিন চক্করের পুরোটাতেই রমল করতে হবে)
প্রশ্ন (১০): তাওয়াফ বা সা‘ঈর সময় দু’ বা ততোধিক ব্যক্তির মাঝে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় রত হওয়ার বিধান কি?
উত্তর (১০): তাওয়াফ বা সা‘ঈর সময় জ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনায় কোনো অসুবিধা নেই। আর এতে তাওয়াফ ও সা‘ঈ নষ্ট হয় না। কিন্তু উত্তম হলো, সেময়ে মানুষকে যিকিরে মশগুল করা। কেননা তাওয়াফ ও সা‘ঈর সময় শেষ হয়ে আসছে। আর আলোচনা করা অন্য সময়ে সুযোগ আছে। তবে তাওয়াফ ও সা‘ঈর মাঝে যদি আকস্মিক কোনো প্রশ্নের উদ্ভব হয় তখন সেটা (জ্ঞানগর্ভ আলোচনা) দ্বারা কোনো কিছু নষ্ট হবে না; যদি না প্রশ্নকারী অনেক বেশী প্রশ্ন করে বসেন। আর এ কারণে আমরা বলব তাওয়াফ ও সা‘ঈর মধ্যে কোনো প্রশ্নকারী প্রশ্ন করলে তাকে অবসর হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর বললেও কোনো মানুষের জন্য দোষ নেই। এটা এ কারণে যে, যেন ব্যক্তি এ সময়টা যিকিরে অতিবাহিত করতে পারে।
প্রশ্ন (১১): তাওয়াফ ও সা‘ঈর প্রত্যেক চক্করে কোনো নির্দিষ্ট দো‘আ আবশ্যক করে নেয়ার বিধান কি? তাওয়াফের ভেতর কোনো নারী বা পুরুষ উচ্চস্বরে কিছু দো‘আর আবৃত্তি করা যে উচ্চস্বর নামাজী ও তাওয়াফকারী এবং অন্যান্যদের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এর বিধান কি?
উত্তর (১১): এখানে প্রত্যেক চক্করে নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। বরং প্রত্যেক চক্করের জন্য দো‘আ নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বর্ণনা আসে নি। হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলা আর হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
বলা বর্ণিত আছে। আর অবশিষ্ট স্থানে সাধারণ যিকির ও কুরআন তেলাওয়াত। আর দো‘আ এক চক্করে একটি নির্দিষ্ট করে অন্য চক্করে অপরটি এমন নয়। কোনো ব্যক্তি দো‘আ পড়বে, তার পেছনে অথবা ডানে অথবা বামে অনেক লোক তা অনুসরণ করবে সাহাবীগণের আমল থেকে এমনটির ভিত্তি নেই। অপরদিকে উচ্চস্বরে পড়া যেহেতু এতে তাওয়াফকারীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ও কষ্টের কারণ হয় সেহেতু এটা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছেন, যখন তিনি সাহাবায়ে কিরামের কারও কারও দ্বারা উচ্চস্বরে মসজিদে কুরআন পাঠ করতে শুনতে পেলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কুরআনের ক্ষেত্রে একে অন্যের উপর উচ্চস্বরে পাঠ করো না।” অথবা তিনি বললেন: “কিরআত পাঠের ক্ষেত্রে।” অনুরূপভাবে আমরা সেসব তাওয়াফকারীদের বলব যে তোমরা মানুষের উপর উচ্চস্বরে বলবে না তাহলে তাদেরকে তোমরা কষ্ট দিবে। বরং প্রত্যেকে পছন্দমত দো‘আ করবে।
এ জন্যই এটা বলা যায় যে, যদি এ সকল তাওয়াফ পরিচালনাকারী মানুষদেরকে এটা বলতে উদ্বুদ্ধ করা যায় যে, তোমরা তাওয়াফ করো আর হাজরে আসওয়াদ স্পর্শের সময় তাকবীর বলো। তোমরা হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে বলবে:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
এবং তাওয়াফের অবশিষ্ট সময়ে তোমরা ইচ্ছামত দো‘আ কর, যিকর কর এবং কুরআন পাঠ কর। আর লোকেরা যদি তাদের অনুসরণ করতো তবে তা কতই না উত্তম ও উপকারী কাজ বলে বিবেচিত হতো। কেননা এভাবে করলে প্রত্যেক মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী তার রবের নিকট সে ভাষায় দো‘আ করতে সমর্থ হতো যে ভাষা সে বুঝে। পক্ষান্তরে আজকাল তাওয়াফ পরিচালনাকারীগণ যেসব দো‘আ পড়ে থাকেন সে সব দো‘আ সম্পর্কে তাদের অনুগামীরা কিছুই জানেন না। যদি তাওয়াফ পরিচালনাকারীদের পেছনে যারা চলে তাদেরকে তাদের পরিচালনাকারী কি দো‘আ করেছে সেটা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা বলতে সমর্থ হবে না। বস্তুত যে দো‘আর অর্থ মানুষ জানে তা দিয়ে দো‘আ করা তালকীনের (অন্যের মাধ্যমে শুনে পড়া) মাধ্যমে করা দো‘আ থেকে অনেক বেশী উপকারী।
প্রশ্ন (১১): তাওয়াফ ও সা‘ঈর প্রত্যেক চক্করে কোনো নির্দিষ্ট দো‘আ আবশ্যক করে নেয়ার বিধান কি? তাওয়াফের ভেতর কোনো নারী বা পুরুষ উচ্চস্বরে কিছু দো‘আর আবৃত্তি করা যে উচ্চস্বর নামাজী ও তাওয়াফকারী এবং অন্যান্যদের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এর বিধান কি?
উত্তর (১১): এখানে প্রত্যেক চক্করে নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। বরং প্রত্যেক চক্করের জন্য দো‘আ নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বর্ণনা আসে নি। হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলা আর হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
বলা বর্ণিত আছে। আর অবশিষ্ট স্থানে সাধারণ যিকির ও কুরআন তেলাওয়াত। আর দো‘আ এক চক্করে একটি নির্দিষ্ট করে অন্য চক্করে অপরটি এমন নয়। কোনো ব্যক্তি দো‘আ পড়বে, তার পেছনে অথবা ডানে অথবা বামে অনেক লোক তা অনুসরণ করবে সাহাবীগণের আমল থেকে এমনটির ভিত্তি নেই। অপরদিকে উচ্চস্বরে পড়া যেহেতু এতে তাওয়াফকারীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ও কষ্টের কারণ হয় সেহেতু এটা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছেন, যখন তিনি সাহাবায়ে কিরামের কারও কারও দ্বারা উচ্চস্বরে মসজিদে কুরআন পাঠ করতে শুনতে পেলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কুরআনের ক্ষেত্রে একে অন্যের উপর উচ্চস্বরে পাঠ করো না।” অথবা তিনি বললেন: “কিরআত পাঠের ক্ষেত্রে।” অনুরূপভাবে আমরা সেসব তাওয়াফকারীদের বলব যে তোমরা মানুষের উপর উচ্চস্বরে বলবে না তাহলে তাদেরকে তোমরা কষ্ট দিবে। বরং প্রত্যেকে পছন্দমত দো‘আ করবে।
এ জন্যই এটা বলা যায় যে, যদি এ সকল তাওয়াফ পরিচালনাকারী মানুষদেরকে এটা বলতে উদ্বুদ্ধ করা যায় যে, তোমরা তাওয়াফ করো আর হাজরে আসওয়াদ স্পর্শের সময় তাকবীর বলো। তোমরা হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে বলবে:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
এবং তাওয়াফের অবশিষ্ট সময়ে তোমরা ইচ্ছামত দো‘আ কর, যিকর কর এবং কুরআন পাঠ কর। আর লোকেরা যদি তাদের অনুসরণ করতো তবে তা কতই না উত্তম ও উপকারী কাজ বলে বিবেচিত হতো। কেননা এভাবে করলে প্রত্যেক মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী তার রবের নিকট সে ভাষায় দো‘আ করতে সমর্থ হতো যে ভাষা সে বুঝে। পক্ষান্তরে আজকাল তাওয়াফ পরিচালনাকারীগণ যেসব দো‘আ পড়ে থাকেন সে সব দো‘আ সম্পর্কে তাদের অনুগামীরা কিছুই জানেন না। যদি তাওয়াফ পরিচালনাকারীদের পেছনে যারা চলে তাদেরকে তাদের পরিচালনাকারী কি দো‘আ করেছে সেটা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা বলতে সমর্থ হবে না। বস্তুত যে দো‘আর অর্থ মানুষ জানে তা দিয়ে দো‘আ করা তালকীনের (অন্যের মাধ্যমে শুনে পড়া) মাধ্যমে করা দো‘আ থেকে অনেক বেশী উপকারী।
প্রশ্ন (১২): হজরে আসওয়াদ ও রুকণে ইয়ামানীর মধ্যকার তাওয়াফকারীর জন্য শরীয়াতসম্মত দো‘আ কি?
উত্তর (১২): শরীয়ত সম্মত দো‘আ হলো:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
অপরদিকে দো‘আকে পরিপূর্ণ করার জন্য
«وأدخلنا الجنة مع الأبرار»
বলা অতঃপর এটার কোনো ভিত্তি নেই। অনুরূপভাবে
«يا عزيز يا غفار يارب العالمين»
বলাও কোনো ভিত্তি নেই। বরং যখন পরিবেশ এমন হয়ে যায় মানুষ আয়াতটি অর্থাৎ
﴿ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
পড়া শেষ হয়েছে অথচ তাওয়াফস্থলে ভিড়ের কারণে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, তাহলে সে হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত বার বার এ দো‘আটি পুনরাবৃত্তি করতে থাকবে।
প্রশ্ন (১৩): মুলতাযামে অবস্থানের হুকুম কি? যদি সেটা শরীয়াতসম্মত হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কোন দো‘আ পাঠ করা মুস্তাহাব। কা‘বার কোন স্থানটি মুলতাযামের জন্য নির্দিষ্ট।
উত্তর (১৩): মুলতাযামে অবস্থান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ কোনো সুন্নাত বর্ণিত হয়নি। কিন্তু তা ছিল সাহাবীগণের আমল। আর সেখানে যা ইচ্ছা তা প্রার্থনা করবে। মুলতাযামের স্থান হলো হাজরে আসওয়াদ ও কা‘বার দরজার মধ্যবর্তী স্থান।
প্রশ্ন ১৪: সাফা ও মারওয়ার শরীয়তসম্মত দো‘আ ও যিকির কি? দো‘আ ও তাকবীর বলার সময় কি হাত উঠাতে হবে? আর তার পদ্ধতি কি? সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের উপর আরোহনের বৈধ পরিমাণ কতটুকু? মহিলারা বা তাদের সঙ্গী মহিলার দুটি সবুজ নিদর্শনের মাঝে (সাফা ও মারওয়ার) দ্রুত পথ চলবে কি? সা‘ঈর সময় শরী‘আতসম্মত কোনো দো‘আ আছে কি? দুটি সবুজ নিদর্শনের মাঝে দ্রুত পথ চলার হিকমত কি?
উত্তর ১৪: এ প্রশ্নটি বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করে। তার উত্তর হলো, কোনো মানুষ যখন সাফা-মারওয়ার সা‘ঈ শুরু করবে তখন তার শুরুতে যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন সে আল্লাহর বাণী পাঠ করবে:
﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ﴾ [البقرة: ١٥٨]
আমি শুরু করছি যা দ্বারা আল্লাহ শুরু করেছেন, (অর্থাৎ আল্লাহ সাফা পাহাড়ের কথা আগে বলেছেন তাই আমি আগে সাফা পাহাড়ে উঠব) তারপর সাফা পাহাড়ে আরোহণ করবে যেন কা‘বা দেখতে পায় অতঃপর দু হাত উত্তোলন করবে যেমনিভাবে দো‘আর মধ্যে উত্তোলন করা হয় ও তাকবীর বলবে। আর নিম্নের যিকিরটি পাঠ করবে:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير لا إله إلا الله وحده، أنجز وعده، ونصر عبده، وهزم الأحزاب وحده»
অতঃপর যে যা ইচ্ছা তা দো‘আ করবে, তারপর দ্বিতীয়বার পূর্বের যিকিরটি পড়বে আর ইচ্ছামাফিক দো‘আ করবে, অতঃপর তৃতীয়বারও সে যিকিরটি পাঠ করবে। অতঃপর পদব্রজে চলতে অবতরণ করবে সবুজ চিহ্নিত খুঁটির দিকে। অতঃপর যখন সবুজ নিদর্শনে পৌছাবে তখন অপর নিদর্শনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দ্রুত হাঁটবে। অতঃপর সাধারণভাবে হাঁটবে; কিন্তু মহিলাগণ ব্যতীত, তারা এখানে দ্রুত পথ চলবে না। অনুরূপভাবে যারা মহিলাদের সঙ্গী সাথী, তারাও মহিলাদের দেখে শুনে রাখা ও হিফাযত করার লক্ষ্যে দু’ নিদর্শনের মাঝে দ্রুত চলবে না। আর যখন মারওয়ায় পৌঁছুবে তখন (﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٥٨] ) এ আয়াতাংশটি পাঠ করবে না। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় বার ও পরবর্তী কোনো বার যখন সাফা পাহাড়ে যাবে তখনও (﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ﴾ [البقرة: ١٥٨] ) আয়াতটি পাঠ করবে না; কেননা এমনটি বর্ণিত হয়নি। সা‘ঈর মধ্যে হাজী সাহেব যা ইচ্ছা তা আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করবে। আর কেউ যদি পছন্দ করে তবে সে যেন কুরআন তিলাওয়াত করে ও আল্লাহর যিকির করবে, তাসবীহ পড়ে, তাহলীল ও তাকবীর বলে। অতঃপর যখন মারওয়াতে পৌঁছাবে এবং তাতে আরোহণ করবে তখন সাফা পাহাড়ের উপর যা করেছে তা করবে।
অপরদিকে সাফা পাহাড়ে আরোহনের পরিমাণ হলো এমন পরিমাণ উপরে উঠা যেন কা‘বা দেখা যায়। আর এটা আরোহনের সর্বনিম্ন পরিমাণ। আরোহণ হওয়া সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব হলো সাফা ও মারওয়ার মধ্যে (সা‘ঈ) অন্তর্ভুক্ত থাকা। দু’ নিদর্শনের মাঝে সা‘ঈর হিকমত হলো, রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণ ও ইসমাঈলের মায়ের উপত্যাকায় অবতরণের অবস্থা স্মরণ করা। আর সেটি ছিল দু’ নিদর্শনের মধ্যবর্তী স্থান। তিনি যখন উপত্যকায় দ্রুত নামতেন তখন তার সন্তান ইসমাইলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেন। সহীহ বুখারীতে এ সম্পর্কে দীর্ঘ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
প্রশ্ন (১৫): সা‘ঈ শেষে মারওয়াতে চুল কর্তন করা জায়েয কি? মাথা মুন্ডণ করা অথবা মাথার কিছু অংশের চুল কর্তন করার হুকুম কি? আর যে মাথা টাক অথবা মুণ্ডিত সে কি করবে? সা‘ঈ ও তাওয়াফকারী সা‘ঈ এবং তাওয়াফের মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রাম নেয়া জায়েয কি? মাথা মুণ্ডন ও চুল কর্তনের মাঝে কোনটি উত্তম দলীলসহ বলুন।
উত্তর (১৫): যখন মানুষ সা‘ঈ থেকে অবসর হয় এবং তা ওমরার সা‘ঈ হয় তখন নিশ্চয় সে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা চুল কর্তন করবে। তবে মাথা মুণ্ডন উত্তম। কেননা এটা আল্লাহকে সম্মান দেখানোর খুব নিকটবর্তী। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার আর চুল কর্তনকারীর জন্য একবার দো‘আ করেছেন।
আর যে মাথায় টাক অথবা যে মাথা সাম্প্রতিককালে মুণ্ডন করা হয়েছে তার থেকে মাথা মুণ্ডন অথবা চুল কর্তন করা রহিত হয়ে গেছে; কেননা তার মাথায় চুল নেই। আর এটা টাকের বিধান হওয়ার ব্যাপারটি তো স্পষ্টই; কারণ টাক মাথায় কোন চুল গঁজায় না। কিন্তু যার মাথার চুল মুণ্ডন করা হয়েছে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে কিছু চুল গজানো পর্যন্ত অপেক্ষা করা তারপর মুণ্ডন করা।
অপরদিকে মাথার কিছু অংশ মুণ্ডন করা অথবা মাথার কিছু অংশে কর্তন করা জায়েয নেই। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন ﴿ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ ٢٧ ﴾ [الفتح: ٢٧] “তোমাদের মাথাসমূহকে মুণ্ডন করা অবস্থায় এবং চুল ছাঁটা অবস্থায়”, তাহলে অবশ্যই সমস্ত মাথা মুণ্ডন করতে হবে অথবা সমস্ত চুল থেকে কর্তন করতে হবে। আর উত্তমভাবে ও ব্যাপকভাবে যা চুল কর্তন করে থাকে তা হচ্ছে বর্তমানে সাধারণত মানুষ চুল কর্তন করার জন্য যে সব মেশিন ব্যবহার করে থাকে তা। কেননা এতে ব্যাপকভাবে এবং সুন্দরভাবে চুল কর্তন অর্জিত হয়। কেঁছি দিয়ে কাটার চেয়েও তা উত্তম। আর আমরা যে চুল মুণ্ডনের কথা বলেছি তা কেবল পুরষদের জন্য। অপরদিকে নারীগণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সামান্য অংশ কর্তন করাই বিধিসম্মত।
আর যখন তাওয়াফকারী অথবা সা‘ঈকারী ক্লান্ত হয় ও বসে পড়ে তখন তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সে দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকবে না বরং সে অল্প সময় বসবে; যাতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং তার পেশী প্রশান্ত হয়, তারপর আবার চলা শুরু করবে; তারপর যদি তার দ্বিতীয়বার কোনো বৈঠকের প্রয়োজন হয় তবে কোনো অসুবিধা নেই, অনুরূপ তৃতীয় অথবা চতুর্থবার বসাতেও কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ১৬: হারামের মধ্যে ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়ানো নাকি উপর তলাসমূহে দাঁড়ানো? আমরা প্রত্যক্ষ করি যে, মাতাফের প্রথম কাতারের জন্য অনেকেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় আযানের অর্ধঘন্টা পূর্বে বা তারও অধিক আগে, এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত? এভাবে তাদের প্রথম কাতারে বসার দ্বারা তাওয়াফকারীদের স্থান সংকীর্ণ হয়ে যায়।
জবাব ১৬: কোনো সন্দেহ নেই যে, মাসজিদে হারাম বা অন্যান্য মাসজিদে ইমামের কাছাকাছি দাঁড়ানো দূরে দাঁড়ানো থেকে উত্তম। আর যারা কা‘বার পাশে বসে থেকে সালাতের অপেক্ষা করতে থাকে নিশ্চয় তাদের কোনো অধিকার নেই সেখানে বসার। তাওয়াফকারীগণ সে স্থানের অধিক মুখাপেক্ষী। কেননা তাওয়াফকারীদের জন্য সে স্থান জরুরী। অতএব, সেটা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া তাদের অধিকার নষ্ট করা ও তাদের ক্ষতির কারণ। বরং মানুষ অপেক্ষা করবে তারপর যখন ইমাম এসে যাবে তখন প্রত্যেকে তার নিজ নিজ স্থানে কাতারবন্দী হবে।
প্রশ্ন (১৭): রমযানে তারাবীহ এর সালাতে মুক্তাদীগণ ইমামের অনুসরণের জন্য কুরআন শরীফ বহন করার বিধান কি?
উত্তর (১৭) উপর্যুক্ত উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ বহন করা সুন্নাহের বিপরীত। আর তা কয়েক দিক থেকেই:
প্রথমত: এভাবে দন্ডায়মানের সময় মানুষের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা ছুটে যায়।
দ্বিতীয়ত: কুরআন বহন করা অধিক নড়াচড়ার দিকে নিয়ে যায় যার কোনো প্রয়োজন নেই; যেমন কুরআন খোলা, বন্ধ করা, বগলের নিচে রাখা ও পকেটে রাখা ইত্যাদি।
তৃতীয়ত: কুরআন বহন মুসল্লীকে অনেক নড়াচড়ায় ব্যস্ত রাখে।
চতুর্থত: এতে মুসল্লীর দৃষ্টি সিজদার স্থান থেকে নষ্ট হয়। আর অধিকাংশ আলেমের মতে সিজদার স্থানের প্রতি দৃষ্টি দেয়া সুন্নাত এবং উত্তম।
পঞ্চমত: মুসল্লী এতে ভুলে থাকে যে সে সালাতে আছে যখন সে যে সালাতে আছে সেটার জন্য হৃদয় জাগ্রত না থাকে। অন্যদিকে মুসল্লীর যখন সালাতে খুশু অবলম্বন করবে, ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে, দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবন্ধ রাখবে, নিশ্চয় এটা অধিক পরিমাণে হৃদয়কে জাগ্রত রাখে যে সে সালাতে আছে এবং সে একজন ইমামের পিছনে রয়েছে।
প্রশ্ন (১৮): যখন কোনো মহিলা হজ্ব বা ওমরা করার ইচ্ছা করবে অথচ তিনি ঋতুবর্তী বা নিফাসবর্তী, তখন কি করবে? আর ইহরাম করার পর অথবা তাওয়াফ শেষে যদি কেউ হায়েযপ্রাপ্ত হয় তার বিধান কি?
উত্তর (১৮): যখন কোনো মহিলা ওমরা অথবা হজ্ব করার জন্য মীকাত দিয়ে অতিক্রম করে অথচ সে নিফাসবর্তী অথবা হায়েযপ্রাপ্তা, তখন নিফাস ও হায়েয থেকে পবিত্রা নারীগণ যা করে সেও তাই করবে। অর্থাৎ গোসল করবে কিন্তু অতিরিক্ত কাপড় দ্বারা রক্তক্ষরণ বন্ধ রাখবে এবং ইহরাম করবে, অতঃপর যখন পবিত্রা হবে তখন তাওয়াফ করবে, সা‘ঈ করবে ও চুল কর্তন করবে এবং ওমরা সম্পন্ন করবে। অপরদিকে যখন ইহরাম করার পর এবং তাওয়াফের পূর্বে হায়েযপ্রাপ্তা হবে অথবা নিফাসবর্তী হবে তখন সে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত ইহরামের উপর অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর তাওয়াফ করবে, সা‘ঈ করবে এবং চুল কর্তন করবে।
আর যখন তাওয়াফের পর ঋতুবর্তী হবে তখন সে তার ওমরাহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। কারণ এতে তার কোনো ক্ষতি নেই। কেননা তাওয়াফের পর অপবিত্রতা ও ঋতু হতে পবিত্র থাকার কোনো শর্ত নেই।
প্রশ্ন (১৯): ঋতুবর্তী নারীদের জন্য মসজিদ হারামে প্রবেশ করা বৈধ কি? আর যখন নারী তাওয়াফরত অবস্থায় অনুভব করবে যে তার ঋতুর রক্ত পড়তে যাচ্ছে তখন সে কি করবে?
উত্তর (১৯): ঋতুবর্তী নারীর জন্য মসজিদে হারামে প্রবেশ করা বৈধ নয়, তবে পার হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। তাওয়াফের জন্য তার অবস্থান অথবা কুরআন শ্রবণ অথবা তাসবীহ পাঠ বা তাহলীল এসব কিছুর জন্যই মসজিদে হারামে অবস্থান জায়েয নয়।
আর যখন কোন মহিলা তাওয়াফের মধ্যে ঋতুর রক্ত প্রবাহিত হওয়ার অনুভব করবে তখন সে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ চালু রাখবে। অতঃপর যখন নিশ্চিত হবে যে, ঋতুর রক্ত বের হচ্ছে তখন পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর পবিত্র হলে নতুন করে তাওয়াফ শুরু করবে।
প্রশ্ন (২০) : ই‘তিকাফকারী ব্যতীত অন্যদের জন্য পুরো রমযান মাসের মাসজিদে হারামে স্থান নির্ধারণ করে বালিশ ও বিছানা রেখে নামায পড়ার বিধান কি?
উত্তর (২০): মাসজিদে হারাম অন্যান্য মাসজিদের মত, যে আগে পৌঁছবে সে বসবে। আর কারো জন্য মসজিদের বাইরে বের হওয়ার সময় মসজিদে স্থান রেখে আসা বৈধ নয়।
কিন্তু যদি মসজিদেরই অন্য স্থানে যাবে এবং জনসাধারণের ভিড় থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে কোনো প্রশস্ত স্থানে বসে, অতঃপর যখন সালাতের সময় নিকটবর্তী হবে তখন সে তার নির্ধারণ করে রেখে যাওয়া স্থানে সালাত পড়তে আসবে, তখন কোনো অসুবিধা নেই। কেননা তার জন্য মসজিদের যে কোনো স্থানে বসার অধিকার রয়েছে। আর যখন সে অন্য প্রশ্রস্ত স্থানে সালাত আদায়ের জন্য যাবে অতঃপর সেখানে কাতার মিলিত হবে তখন তার কর্তব্য হলো তার স্থানের সামনে যাওয়া অথবা পেছনের প্রশস্ত স্থানে যাওয়া। কেননা যখন সে কাতারে মিলিত হবে আর তার জন্য এ (বিছানা) জায়গা থাকবে সে মসজিদের অন্য জায়গাও গ্রহণ করবে। এতে সে দুই স্থানের দখল নিলো। আর কোন মানুষ দু স্থান গ্রহণ করার মালিক নয়।
অপরদিকে মসজিদের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে নেওয়া; যাতে কেবল সে সেখানেই সালাত আদায় করবে, নিশ্চয় তা একটি নিষিদ্ধ কাজ। বরং মানুষের উচিৎ যেখানে স্থান পাবে সেখানেই সালাত আদায় করা।
প্রশ্ন (২১): ওমরার সা‘ঈকে তাওয়াফের পূর্বে আদায় করার হুকুম কি? আর যে ব্যক্তি মারওয়া থেকে সা‘ঈ শুরু করে সাফাতে শেষ করল তার বিধান কি?
উত্তর (২১): প্রথমত: নিশ্চয় তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে না। তার উপর ওয়াজিব হলো পুনরায় দ্বিতীয় সা‘ঈ করা। কেননা এটা যথাস্থানে সংগঠিত হয়নি। যেহেতু সা‘ঈ হলো তাওয়াফের পর।
দ্বিতীয়ত: এ অবস্থায় মারওয়া থেকে সা‘ঈ শুরু হওয়া প্রথম চক্করটি বাতিল হয়ে যাবে। তারপর এ চক্বরটি বাদ দিয়ে নতুন সাত চক্কর সম্পন্ন করবে।
প্রশ্ন (২২): সাফা ও মারওয়াতে অথবা সাধারণ দো‘আর পর মুখ ও দু’হাত মাসেহ করার বিধান কি?
উত্তর (২২) : সহীহ হলো দো‘আর পর দু’ হাত দিয়ে মুখ মাসেহ করা শরী‘আতসম্মত নয়। কেননা এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি।
প্রশ্ন (২৩): মহিলাগণকে তারাবীহ সালাতের সময় তাওয়াফ করা হতে নিষেধ করা হয়; এমতাবস্থায় পুরুষের জন্য কী তারাবীহ এর সালাত চালিয়ে যাওয়া উত্তম নাকি তাওয়াফ করা উত্তম?
উত্তর (২৩): উত্তম হলো, তারাবীহর সালাত চলমান রাখা; যেন কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব লিখা হয়। আর তাওয়াফের তো অন্য সময় রয়েছেই।
প্রশ্ন (২৪): ওমরাকারীর জন্য কোনটি উত্তম নফল সালাত অথবা নফল তাওয়াফ?
উত্তর (২৪) : যখন ওমরাকারীদের সংখ্যা অধিক হবে, তখন উত্তম হলো সালাতে মশগুল হওয়া। যাতে করে তাওয়াফকারীদের জন্য তাওয়াফের স্থান সংকুলান হয়।
প্রশ্ন (২৫): রমযানের শেষ দশকে প্রত্যেক রাতে দু‘বার বিতরের সালাত আদায় হয় আর আমার ইচ্ছা হলো ইমাম সাহেব সালাত সম্পন্ন করে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত সালাত আদায় করি; যাতে সেটার ফযীলত পেতে পারি। তাহলে আমি কি করব? আমি কি বিতরের সালাত রাতের শুরুতে ছেড়ে দিব অথবা শেষ রাতে। আর বিতরের সালাত বিনষ্ট করার কোনো প্রমাণ সাব্যস্ত আছে কি?
উত্তর (২৫) প্রথম ও শেষ রাতে বিতর সালাত বিনষ্ট করার যে নিয়ম আলিমগণের নিকট বর্তমানে প্রসিদ্ধ হয়েছে তা করা যাবে না; আর সেটার ধরন হচ্ছে, যখন কেউ প্রথম রাতে বিতর সালাত পড়ে, তারপর শেষ রাতেও আবার কিয়ামুল লাইল পড়তে চায়, তখন দু’ দু’ রাকাত করে সে সালাত আদায় শুরু করার পূর্বে দ্বিতীয়বার পূর্বে আদায়কৃত বিতর সালাতটি পড়া। এ পদ্ধতিটি যদিও কতিপয় পূর্বসূরীদের আমল ছিল কিন্তু সুন্নাহ থেকে এ ব্যাপারে কোনো দলীল নেই। আর দ্বিতীয়বারের বিতরের রাকাতটিকে প্রথম বারের বিতরের রাকা‘আতের উপর ভিত্তি করা ঠিক হবে না; কেননা প্রথমবারের বিতরের রাকা‘আত ও দ্বিতীয়বারের বিতরের রাক‘আতের মধ্যে যোজন পার্থক্য তৈরী হয়েছে।
আমরা তো কেবল এটাই বলি যে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রথম রাত্রির সালাত কিংবা শেষ রাত্রির সালাতে ইমামের সালাত শেষ করে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তার পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে চায়, সে যদি প্রথম রাতে ইমামের সাথে বিতর সালাত পড়ে এবং সালাম ফিরায় তখন সে দাঁড়িয়ে যাবে এবং এক রাকাত আদায় করে নিবে। অর্থাৎ ইমামের সাথে সালাত আদায়ের সময় এ নিয়ত করে তার সাথে সালাতে প্রবেশ করবে যে সে জোড় সালাত আদায় করবে তারপর যখন (ইমাম) সালাম ফিরাবে তখন সে দাঁড়াবে এবং এক রাক‘আত আদায় করবে; যাতে করে তোমার বিতরটি শেষ রাতের ইমামের সাথে আদায় করতে পার।
প্রশ্ন (২৬) আমরা কতিপয় মুসল্লীকে দেখি যে, তারা হারাম শরীফের মধ্যে অবস্থান করা অবস্থায় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মূল কা‘বার দিকে মুখ করে দাঁড়ায় না, তাদের সালাতের হুকুম কি?
উত্তর (২৬): তাদের সালাত বাতিল হবে; কেননা যখন কারো কা‘বা দেখা সম্ভব হয় তখন তার জন্য মূল কা‘বার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো আবশ্যক। অবশেষে সৌদী সরকার (আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন) কা‘বার দিকে সঠিক দিক নির্ধারণ করে কিছু চিহ্ন দিয়ে দিয়েছে। তাঁরা নীচের পাথরের উপর দু’টি করে আকঁ দিয়ে দিয়েছে; সুতরাং যখন তুমি সে দিকে মুখ করে দাঁড়াবে তখন তোমার মুখ ফিরানো সহীহ হবে।
প্রশ্ন (২৭): হারাম শরীফে সালাত আদায় করছে অথচ কা‘বা দর্শন সম্ভব হচ্ছে না, অন্যান্য মুসল্লীদের মত কা‘বাকে সামনে রেখেছে। আর সালাত সম্পন্ন হওয়ার পর তার কাছে স্পষ্ট হলো যে সে মূল কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেনি, এসব লোকদের সালাতের হুকুম কি?
উত্তর (২৭): আমি মনে করি যে, কা‘বা পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসন্ধান করা ব্যতীত সালাত আদায় করলে তাদের সালাত পুনরাবৃত্তি করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের পক্ষে সেটা অনুসন্ধান পূর্ণরূপে সম্ভব। যদি এমন কোনো স্থানে হয় যেখান থেকে কা‘বা দেখা যায় না এমতাবস্থায় যখন মানুষ সালাতের জন্য দাঁড়ায় তখন তো তার কাছে কা‘বার দিক স্পষ্ট হবে।
যদিও কেউ কেউ বলেছেন, এমতাবস্থায় কষ্টের কারণে তারা মা‘যুর (তাদের গ্রহণযোগ্য ওযর থাকায় তা গ্রহণযোগ্য হবে।) বিশেষ করে যখন মানুষ হারামে আসে আর লোকেরা সালাত শুরু করে দিয়েছে, এমতাবস্থায় তার কাতার অনেক দূরে হওয়ার কারণে সরাসরি কা‘বা দেখা তার জন্য কঠিন। বরং তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাই সে অবস্থায় কষ্টের কারণে কা‘বার দিকের মুখোমুখি হওয়াই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন (২৮): বিতর সালাতে দো‘আয়ে কুনুত সম্পর্কে কিছু বর্ণিত আছে কি? আর তা কি রুকুর পূর্বে না পরে? আর সেখানে হাত উত্তোলন করবো কি?
উত্তর (২৮): বিতর সালাতে কুনুত পড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। কেননা হাসান ইবনে আলী (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিতর সালাতের কুনুতের দো‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিক্ষা দিলেন নিম্নের পরিচিত দো‘আ-
اللهم اهدني فيمن هديت …….الخ
আর সে দো‘আতে সুন্নাত হলো দু’হাত উত্তোলন করা। কেননা আমার যতটুকু মনে পড়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, “নিশ্চয় তিনি তাঁর দু’ হাত উত্তোলন করতেন।”
আর কুনুত হবে রুকুর পরে। তবে যদি কেউ রুকুর আগে কুনুত করে তবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন (২৯): মাসজিদুল হারামে ফরয সালাত আদায়কারী অথবা নফল সালাত, মুক্তাদী অথবা এককভাবে সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গমনকারীর বিধান কি?
উত্তর (২৯): মুক্তাদীর সামনে দিয়ে গমন করায় কোনো অসুবিধা নেই। মাসজিদে হারামে হোক বা অন্য কোনো স্থানে; কেননা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঐ সময় আসলেন যখন তিনি ছিলেন মিনায়, আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষদের নিয়ে দেয়ালবিহিন স্থানে সালাত আদায় করছেন। এমতাবস্থায় তিনি (ইবনে আব্বাস) একটি গাধীর উপর সওয়ার হয়ে কোনো এক কাতারের সামনে দিয়ে গমন করেন, অথচ কেউ তা অস্বীকার করে নি।
অপরদিকে যখন কোনো সালাত আদায়কারী ইমাম হয় অথবা একা সালাত আদায়কারী হয়, তখন তার সামনে দিয়ে মাসজিদে হারাম অথবা অন্যত্র কোথাও গমন করা জায়েয নয়। কেননা এখানে দলীলটি অত্যন্ত ব্যাপক। তার বিপরীতে এমন কোনো দলীল নেই যা মক্কা অথবা মসজিদে হারামকে সে বিধান থেকে আলাদা করবে; বা এমন কোনো দলীল নেই যা দ্বারা বুঝা যাবে যে সেখানে সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গমন করায় কোনো ক্ষতি নেই বা গমনকারীর কোনো গুনাহ নেই।
প্রশ্ন (৩০) রমযান মাসে যেসব মহিলা ওমরা করে, তাদের জন্য ফরয সালাত বা তারাবীহ সালাত তাদের গৃহে আদায় করা উত্তম? না কি মসজিদে হারামে?
উত্তর (৩০): সুন্নাহ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহিলাদের জন্য উত্তম হলো তাদের গৃহে সালাত আদায় করা, চাই তা মক্কায় হোক অথবা অন্যত্র। আর এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله وبيوتهن خير لهن»
“আল্লাহর দাসীদেরকে আল্লাহর ঘরে যেতে নিষেধ করো না, আর তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম”।
এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় অবস্থানকালীন সময়েই বলেছিলেন। অথচ মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের অতিরিক্ত ফযিলতও রয়েছে। কেননা তাদের বাড়ীতে সালাত আদায় অধিক পর্দা পালন ও ফেতনা থেকে দূরে থাকার উপযোগী। ফলে বাড়ীতে সালাত আদায় তাদের জন্য উত্তম ও ভালো তা প্রমাণিত হলো।
প্রশ্ন (৩১) কুরআন খতমের দো‘আ নামাযের ভেতরে বা বাইরে করা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর (৩১): সালাতের ভেতরে এটা শরী‘আতসম্মত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ থেকে এমনটি বর্ণিত হয়নি যে তারা সালাতে কুরআন খতমের দো‘আ পড়তেন। অবশ্য আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় তিনি যখন কুরআন খতম করতেন, তখন তার পরিবারকে একত্রিত করতেন ও দো‘আ করতেন। কিন্তু এটা সালাতে নয়।
প্রশ্ন (৩২): মৃত অথবা জীবিত ব্যক্তিদের জন্য তাওয়াফের সাওয়াব অথবা কুরআন তিলাওয়াত হাদীয়া করে প্রেরণ করার বিধান কি?
উত্তর (৩২): ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ এর মাযহাব মতে বিখ্যাত হচ্ছে যে, মৃত বা জীবিত ব্যক্তির জন্য তাওয়াফ অথবা সালাত অথবা কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব হাদিয়া দেওয়াতে দোষ নেই। তারপরও তা এমন বিষয় নয় যা করার জন্য কোনো মানুষকে শরী‘আতে নির্দেশ কিংবা উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। বরং সাওয়াব হাদীয়া দেওয়ার চেয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করা উত্তম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا مات الإنسان أو قال ابن آدم انقطع عمله إلا من ثلاث : صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له»
“যখন মানুষ মারা যায় অথবা বনি আদম যখন মারা যায় তখন তার সব আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিসের ধারা বলবৎ থাকে। সাদকায়ে জারীয়াহ অথবা এমন ইলম যা উপকারে আসে অথবা এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করবে।” এখানে তিনি বলেননি ‘অথবা এমন নেক সন্তান যে তার জন্য কোনো কাজ করবে’ বরং বলেছেন, ‘তার জন্য দো‘আ করবে।’ এর দ্বারা বুঝা যায় যে, দো‘আ করা সাওয়াব হাদিয়া দেওয়ার চেয়ে উত্তম।
প্রশ্ন (৩৩): মাসজিদে হারামে সালাতসমূহ আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে কথাবার্তা বলা, হাসি-কৌতুক ও খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করার বিধান কি?
উত্তর (৩৩): কোনো সন্দেহ নেই যে, এতে মুসল্লীদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। আর নিশ্চিতভাবে তা তাদেরকে ইমামের যথাযথ অনুসরণ ও সালাতে কিয়াম করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত করে। আর যেহেতু তা মুসল্লীদের বিরক্তির কারণ হয় তাই তা হারাম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে পরষ্পর উচ্চস্বরে কিরআত পাঠেও নিষেধ করেছেন, তাহলে কথাবার্তা, কৌতুক ও অন্যান্য ব্যাপার কিরূপে বৈধ হবে?
প্রশ্ন (৩৪): ওমরাকারীদের জন্য রমযান বা অন্যসময় বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব কি? এক্ষেত্রে সাবধানতা কি?
উত্তর (৩৪): বিশুদ্ধ মত হলো, রমযানে বা অন্য সময় ওমরাকারীর বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব। কিন্তু যখন মানুষ ওমরা সম্পন্ন করার সাথে সাথে মক্কা ত্যাগ করতে চায় তখন তার জন্য প্রথম তাওয়াফই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন (৩৫): ইহরাম করার সময় দু’ রাকআত সালাত আদায়ের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো দলীল আছে কি? বিশেষ করে যখন ইহরামের পূর্বে কোনো ফরয সালাত না থাকে?
উত্তর (৩৫): রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সালাতের প্রমাণ নেই। আর এজন্য আমরা বলব, যদি কোনো ফরয সালাতের সময় হয় তখন ফরযের পর ইহরাম করবে, অন্যথায় সালাত ব্যতীত ইহরাম করবে। আর যদি ‘সুন্নাতুল ওযু’ (তাহিয়্যাতুল ওযু) হিসেবে দু’রাক‘আত সালাত পড়ে তবে তা উত্তম। অথবা যদি চাশতের (দুহা) সময় হয়, তবে দু’ রাক‘আত সালাতুদ দুহা পড়াও উত্তম।
প্রশ্ন (৩৬): যে ব্যক্তি রমযানে ওমরা করেছে, আর রমযানের কিছু দিন মক্কায় অবস্থান করেছে তার জন্য পুনরায় ওমরা করা উত্তম নাকি বেশি বেশি তাওয়াফ করা উত্তম? অনুরূপভাবে হজ্জের দিনগুলিতেও (বেশি করে উমরা আদায় করা উত্তম নাকি বেশি করে তাওয়াফ করা উত্তম?)
উত্তর (৩৬): উত্তম হলো, বারবার ওমরা না করা। বরং বারবার ওমরা করার বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে প্রসিদ্ধ ছিল না, অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কিরামের যুগেও প্রসিদ্ধ ছিল না। তাই কোনো কোনো আলেম সেটাকে বিদ‘আত বলেও স্পষ্ট মত ব্যক্ত করেছেন। বস্তুত: ওমরা হবে এক সফরে একবার, আর তাওয়াফও বারবার করবে না; যাতে যারা হজ্জ বা উমরার জন্য কা‘বার তাওয়াফ করতে ইচ্ছে করে তাদের জন্য তাওয়াফের স্থান সংকীর্ণ হয়ে না যায়। বরং সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরসহ অন্যান্য আল্লাহর নৈকট্যশীল কাজ করবে।
প্রশ্ন(৩৭): যে ব্যক্তি হজ্জ বা ওমরা করতে আসে এবং মক্কার অন্যান্য মসজিদে সালাত আদায় করে, তবে কি সেসব মসজিদেও অনেকগুণ সওয়াব পাওয়া যায় যা মাসজিদে হারামে পাওয়া যায়?
উত্তর (৩৭): মাসজিদে হারামে যে অধিক পরিমাণে সওয়াব পাওয়া যায় তা অন্যস্থানে পাওয়া যায় না। কেননা সহীহ মুসলিমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
«صَلاَةٌ فِى مَسْجِدِى هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلاَّمَسْجِدَ الْكعبة».
‘‘আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সালাত আদায় করা কা‘বার মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র সালাত আদায়ের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ’’। আলোচ্য হাদীসে কা‘বার মসজিদকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তবে এটা বলা যায় যে, হারাম এলাকার মাসজিদসমূহে সালাত আদায় করা অন্যান্য স্থানের মসজিদসমূহে সালাত আদায় করা থেকে উত্তম; যেহেতু তা হারাম বা সম্মানিত এলাকায় অবস্থিত।
প্রশ্ন (৩৮): আমাদের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ভাইগণ সম্পর্কে আপনার কী বক্তব্য? যারা অন্যদেরকে নিজেদের স্থলাভিষিক্ত করে নিজেরা সাওয়াবের আশায় এবং হারামে বহুগুণ সাওয়াব পাওয়ার মানসে ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করে, অথচ তারা মসজিদের লোকদের থেকে অনুমতি নেয় না, এমনকি হজ্জ ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমতি নেয় না। এমনকি তাদের কেউ কেউ এমন কিছু সংখ্যক লোকদের দায়িত্ব প্রদান করে আসে যারা এ কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। অনুরূপভাবে সেসব রাষ্ট্রের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপারে আপনার কী মত যারা তাদের উপর অর্পিত কাজসমূহ ত্যাগ করে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত সওয়াবের আশায় এবং হারামে সালাত আদায়ের বহুগুণ সওয়াব নিতে ওমরা করতে চলে আসে?
উত্তর (৩৮): এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, নিশ্চয় তাদের কাজের মধ্যে থাকা ওমরায় যাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেননা তারা তাদের কাজে থাকলে ওয়াজিব আদায় করা হবে, যাতে অবহেলা করলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে তাদের ওমরা করতে যাওয়া একটি নফল কাজ, যা ছেড়ে দেওয়াতে কোনো শাস্তি নেই।
আর এ কারণে আমার উপদেশ সেসব ভাইদের জন্য যারা এসব কাজ করেন একমাত্র সওয়াবের আশায়, আমি তাদের বলব, নিশ্চয় তোমাদের নিজ নিজ কর্মে থাকা ও কাজ করার মধ্যে সাওয়াব রয়েছে। আর ওয়াজিব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তোমাদের ওমরা করতে যাওয়া, নিরাপদ থাকার চেয়ে গোনাহে নিপতিত হওয়ার অধিক নিকটবর্তী।
প্রশ্ন (৩৯): যখন কুরআন তেলাওয়াত সম্পন্ন হবে তখন খতমে কুরআনের দো‘আ পড়া শরী‘আতসম্মত কি? শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া থেকে খতমে কুরআনের দো‘আর বিষয়টি কতটুকু সহীহ?
উত্তর (৩৯): পূর্বেই আমরা বলেছিলাম যে, আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি যখন কুরআন খতম সম্পন্ন করতেন, তখন তার পরিবার-পরিজনকে একত্রিত করতেন এবং দো‘আ করতেন। ফলে কেউ তার অনুসরণ করলে এক্ষেত্রে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর যে দো‘আ শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (রহ) এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয় তা আমি শুদ্ধ বলে ধারণা করি না। কেননা তার লিখা কোনো গ্রন্থে তা উল্লেখ হয়নি।
প্রশ্ন(৪০): যে ব্যক্তি সা‘ঈ করার স্থানের পিছনে প্রশস্ত খোলা স্থানে সালাত আদায় করবে তার সালাতও কী তার মত বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে যে মসজিদুল হারামের বারান্দায় সালাত আদায় করে?
উত্তর (৪০): যে ব্যক্তি সেখানে পড়বে সে মসজিদুল হারামে সালাত আদায়কারীর মত হবে না, যদি না কাতারসমূহ সেখান পর্যন্ত মিলিত অবস্থায় প্রলম্বিত না হয়। যেমন মাসজিদুল হারাম যদি পূর্ণ হয়ে যায়, অনুরূপভাবে সা‘ঈর স্থানও পূর্ণ হয়ে যায়, তারপর সেখান পর্যন্ত কাতার পৌঁছে যায়, তাহলে আশা করা যায়, যে সেখানে সালাত আদায় করবে সে মাসজিদুল হারামে সালাত আদায় করার মত সাওয়াব পাবে।
প্রশ্ন (৪১): যখন কোনো নারী মক্কায় পৌঁছার পর ঋতুবর্তী হবে আর তার পরিবার-পরিজন মক্কা থেকে সফর করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে সে কি অপেক্ষা করবে নাকি তাদের সাথে সফর করবে? চাই তার সফর এমন হোক যাতে কসর করা যায় অথবা নয়?
উত্তর (৪১): যখন তাওয়াফ করার পূর্বে কোনো নারী ঋতুবর্তী হবে তাকে অবশ্যই পবিত্র হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হবে। তারপর তাওয়াফ করবে ও ওমরা পূর্ণ করবে। কিন্তু যদি ইহরামের সময় এ শর্ত থাকে যে,
«اللهم إن حبسني حابس فمحلي حيث حبستني»
“হে আল্লাহ, যদি কোনো বাধাদানকারী আমাকে বাধা দেয়, তাহলে যেখানে আপনি আমাকে বাধা দিবেন সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব”। তখন সে মহিলা হালাল হয়ে যেতে পারবে এবং পরিবারের সাথে হারাম থেকে বের হয়ে যাবে, এতে তার কোনো অসুবিধা হবে না।
প্রশ্ন (৪২): মক্কা বা অন্যান্য স্থানে প্রচুর ভীড়ে মুসল্লী যদি মাটির উপর সিজদা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে তাহলে তার হুকুম কি?
উত্তর (৪২): শরী‘আতসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে দু’ বাহু প্রসারিত করে সাজদা করা, তা ব্যতীতও যদি কেউ সাজদা দিতে সক্ষম হয়, তাহলে সে সেভাবেই সাজদা করবে। কিন্তু তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে বসে পড়বে এবং সিজদার ইঙ্গিত করবে।
কতিপয় আলেমের অভিমত হলো: তখন সে অপেক্ষা করবে যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম সিজদা হতে দণ্ডায়মান না হয়। ইমাম দণ্ডায়মান হলে জায়গা প্রশস্ত হবে অতঃপর সিজদা দিবে।
আর অন্যান্যদের মত হলো, মানুষের পিঠে সিজদা করবে। কিন্তু প্রথম বক্তব্যটি সর্বাধিক সঠিক। আর তা হলো, ইঙ্গিতে সিজদা করা। কেননা এমতাবস্থায় সে (মুসল্লী) অক্ষম। আর যে সিজদা দিতে অক্ষম সে সিজদার প্রতি ইঙ্গিত করবে।
প্রশ্ন (৪৩): যে মহিলা স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করে (ইহরাম অবস্থায়) এটা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা গাইরে মাহরিমদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ে। তার হুকুম কি?
উত্তর (৪৩): ইহরাম অবস্থায় মহিলা হাজী যা ইচ্ছা সে পরিমাণ স্বর্ণের জিনিস ব্যবহার করতে পারবে তবে তা যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে। এমনকি আংটি ও দুই হাতের চুড়ি। কিন্তু এমতাবস্থায় গাইরে মাহরিম ব্যক্তির ফিতনায় জড়িয়ে যাবার অশংকায় তা ঢেকে রাখবে।
প্রশ্ন (৪৪): মহিলার জন্য তাওয়াফের স্থানে ভিড় থাকা অবস্থায় তাওয়াফ করা অথবা পুরুষদের থেকে দূরে অবস্থান করে অন্য ইবাদতে মশগুল হওয়া, এ দু’টির মধ্যে কোনটি উত্তম?
উত্তর (৪৪): যখন ওমরা অথবা হজ্জের মওসুম আসবে উত্তম হলো বার বার তাওয়াফ না করা; এমনকি পুরুষ হলেও, তাহলে মহিলাদের বেলায় বার বার কিভাবে সম্ভব হবে?
প্রশ্ন (৪৫): মহিলা হাজীদের ও ওমরাকারীদের সাথে অপরিচিত পুরুষ থাকলে সেখানে মুখমণ্ডল খোলার হুকুম কি?
উত্তর (৪৫): তাদের জন্য এটা হারাম। মহিলার জন্য চেহারা খোলা রাখা গাইরে মাহরামদের নিকট হজ্জ, ওমরা এবং অন্যান্য স্থানে বৈধ নয়।
প্রশ্ন (৪৬): ইহরাম অবস্থায় বুরকা পরিধান করা ও নাক-মুখ ঢেকে রাখার কাপড় দ্বারা আবৃত করার হুকুম কি?
উত্তর (৪৬): বুরকার বিষয়ে বিধান হচ্ছে, মুহরিম অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের নেকাব পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তাই নাক-মুখ বেঁধে রাখার কাপড় পরিধান করা তো আরও বেশি নিষিদ্ধ। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, মহিলা তার মুখমন্ডলকে ওড়না দ্বারা পূর্ণরূপে ঢেকে ফেলবে যখন তার পাশে কোনো আজনবী তথা গাইরে মাহরাম থাকে। যদি তার পাশে কোনো গাইরে মাহরাম না থাকে তখন অবশ্যই সে তার মুখমণ্ডল খোলা রাখবে।
প্রশ্ন (৪৭): কিছু কিছু মানুষ ইমামের সাথে এগারো রাকা‘আত সালাত আদায় করার পর ইমাম থেকে আলাদা হয়ে যায়, এ ভিত্তিতে যে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্যান্য সময়ে এগারো রাকআতের বেশি সালাত (তারাবীহ) আদায় করেন নি।” তাদের এ কাজের হুকুম কি?
উত্তর (৪৭): যে ইমাম তারাবীহর সালাত এগারো রাকআতের বেশি আদায় করে সে ইমাম থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া সুন্নাতের বিপরীত। বরং তা হচ্ছে অনেক সাওয়াব ও পূণ্যের কাজ থেকে বঞ্চিত হওয়া। তাছাড়া তা সালাফে সালেহীনের রীতিবিরুদ্ধ কাজ। কারণ যে, যারা (সাহাবীগণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করেছেন তারা তাঁর সালাত শেষ হওয়ার পূর্বে প্রত্যাবর্তন করেন নি। আর সাহাবীগণ তাদের ইমামের অনুযায়ী কাজ করতেন, এমনকি তারা যেটাকে বিধিবদ্ধ মনে করতেন ইমাম তার অতিরিক্ত কিছু করার ক্ষেত্রেও। যেমন ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন মিনায় সালাত পূর্ণ করতেন তখন তারা বিষয়টির বিরোধিতা করলেও ইমামের অনুসরণ করে পূর্ণ সালাতই আদায় করেছিলেন। তারা বলতেন: মতবিরোধ খারাপ।
তাছাড়া এভাবে ইমামকে ছেড়ে তাদের প্রত্যাবর্তন করার মাধ্যমে তারা বড় সাওয়াব থেকে মাহরূম হয়ে গেলো, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«من قام مع الإمام حتى ينصرف كتبت له قيام ليلة»
‘‘যে কেউ ইমামের সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় এবং ইমাম সালাত শেষ না করা পর্যন্ত তার সাথে থাকে তার কিয়ামুল লাইলের প্রতিদান লেখা হয়।’’
এগার রাক‘আতের অধিক হারাম নয়। বরং এটা জায়েয। এর দলীল হলো: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, “দু’ দু’ রাক‘আত করে আদায় করবে, অতঃপর যখন কেউ সকাল হয়ে যাবার আশংকা করে তখন সে এক রাক‘আত পড়বে, ফলে তা সে যা পড়ছে সেটাকে বেজোড় করে দিবে।” এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংখ্যা নির্দিষ্ট করেন নি। যদি এগারো রাক‘আতের অধিক হারাম বা নিষিদ্ধ হতো তবে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করতেন। অতএব, আমার ভাইদের জন্য উপদেশ হলো, ইমাম নামায শেষ না করা পর্যন্ত তারা যেন ইমামের অনুসরণ করে।
প্রশ্ন (৪৮): যে ব্যক্তি রমযানে সওয়াবের আশায় মক্কায় যাবে এমতাবস্থায় যে তার মহিলাদের ব্যাপারে সে উদাসীন; তারা হারামে যাওয়ার সময় সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে, সে ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার উপদেশ কি?
উত্তর (৪৮): এ ব্যক্তির জন্য মক্কায় যাওয়া সম্ভব আর রমযানে ওমরার কারণে অধিক সওয়াব লাভও সম্ভব হবে। তবে তার উচিত তার মহিলাদেরকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে বারণ করা যেমনিভাবে সে তার দেশে তার মহিলাদেরকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে বারণ করবে। ওমরার জন্য যাওয়া আর নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো পরষ্পর সংযুক্ত বিষয় নয়।
প্রশ্ন (৪৯): মসজিদে হারামে এমন শিশুদের সংগে নিয়ে গমন করার বিধান কী, যারা মুসল্লীদের ও কুরআন তিলাওয়াতকারীদের বিরক্তি সৃষ্টি করে?
উত্তর (৪৯): মসজিদসমূহে ছোট শিশুদের সাথে করে যাওয়া জায়েয নয়, চাই তা মসজিদে হারাম হোক অথবা অন্য কোনো মাসজিদ; কারণ, এতে মুসল্লী ও কুরআন তিলাওয়াতকারীদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন (৫০): সাধারণভাবে মুসলিমদের জন্য, আর বিশেষ করে রমযান মুবারাকে ওমরা পালনকারীদের জন্য আপনার কী উপদেশ?
উত্তর (৫০): আমার উপদেশ হলো, তারা অধিক পরিমাণে আল্লাহর আনুগত্যের কাজ করবে। যেমন কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন ও অন্যান্য কাজ করবে এবং হারাম বা নিষিদ্ধ কর্মসমূহ হতে বিরত থাকবে।
———-
আল-ফাতাওয়া আল-মাক্কীয়্যাহ
– শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদ : ড. মোঃ আব্দুল কাদের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উত্তর (১) পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
হ্যাঁ, রমযান মাসে ওমরা করার ফযীলত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহতে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«عمرة في رمضان تعدل حجة»
‘রমযানের ওমরা একটি হজ্বের সমান’।
অন্য বর্ণনায় ‘রমযানের ওমরা আমার সাথে হজ্ব করার সমান’।
প্রশ্ন (২) মক্কা শরীফে রমযানের সিয়াম সাধনার ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় কি? অধিক পরিমাণে তাওয়াফের ফযীলত সম্পর্কেও সহীহ হাদীস আছে কি?
উত্তর (২): প্রশ্নটির প্রথম অংশ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো সহীহ হাদীস মক্কায় রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে নেই। তবে নামাযের ন্যায় মক্কায় সিয়াম সাধনার ফযীলত সম্পর্কে যঈফ (দুর্বল) হাদীস রয়েছে।
আর অধিক তাওয়াফের বিষয়টি হলো যেহেতু তাওয়াফ করা নেক কাজসমূহের অন্যতম। আর নেককাজ অধিক পরিমাণে করাও উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
﴿وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيۡرَ ٱلزَّادِ ٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [البقرة: ١٩٧]
“তোমরা পাথেয় অবলম্বন কর। আর নিশ্চয় উত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৭] কিন্তু যখন মওসুমের সময় হয় হজ্বের মওসুম অথবা ওমরার মওসুম তখন সাধারণ মানুষের অধিক পরিমাণে তাওয়াফ করা উচিত নয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের ক্ষেত্রে তাওয়াফে হজ্ব, তাওয়াফে কুদুম, তাওয়াফে ইফাদাহ ও বিদায়ী তাওয়াফ ব্যতীত অন্য কোনো তাওয়াফ করেন নি। আর এটা হলো তাওয়াফকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দে তাওয়াফের সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন (৩): হজ্ব ও ওমরার উদ্দেশ্যে গমনকারীর সঙ্গে হারাম খেলা-ধুলার সামগ্রী সঙ্গে নেওয়ার হুকুম কি?
উত্তর (৩): হারাম যন্ত্রসামগ্রী বহন করা, যখন মানুষ সেগুলো ব্যবহার করবে নিশ্চয় তা অপরাধ। আর অপরাধ বা গুনাহ বার বার করা কবীরা গুনাহে পরিণত হয়। আর যখন সেটা হজ্ব বা ওমরার ইহরাম করার পর হবে, তখন তা অধিক গুনাহের কারণ। কেননা মহান আল্লাহ বলেন-
﴿ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ ٱلۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي ٱلۡحَجِّۗ ١٩٧ ﴾ [البقرة: ١٩٧]
‘‘যে ব্যক্তি হজ্ব করা নির্ধারণ করবে, তবে সেখানে কোনো অশ্লীলতা, ফুসুকী, ঝগড়া-বিবাদ নেই।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৯৭]
অতএব, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো হজ্ব ও ওমরাহ গমনে বা প্রত্যাবর্তনে অথবা উভয়ের মধ্যে হারাম বা আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্ত থেকে বিরত থাকা।
প্রশ্ন (৪) কখন ইজতেবা হবে? এটা কি মিকাত হতে হবে অথবা তাওয়াফে কুদুম এর শুরুতে হবে?
তাওয়াফের দু‘রাকাত সালাত আদায়ের পূর্বে না পরে কাঁধ ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী স্থান ঢেকে রাখবে? ইজতেবা কি শুধু তাওয়াফে না তাওয়াফ ও সা‘ঈ উভয়টাতে? আর ইজতেবা তরককারীর বিধান কি?
উত্তর (৪): ইজতেবা হলো, তাওয়াফকারী কর্তৃক তার ডান কাঁধ বের করে রাখা এবং ইহরামের চাঁদরের উভয় পাশ বাম কাঁধের উপর রাখা। আর এটি তাওয়াফে কুদুমে সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। ফলে কেউ যদি তা না করে তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। আর এটা শুধু তাওয়াফেই করার বিধান রয়েছে। অতঃপর যখন তাওয়াফ সম্পন্ন হবে, তখন তাওয়াফের দু’রাকাত সালাত আদায় করার পূর্বে উভয় ঘাড় ঢেকে দিবে। আর ইজতেবা সাত চক্করের সব কয়টিতেই হবে। রমল এর বিপরীত। কেননা রমল হবে প্রথম তিন চক্করে মাত্র।
প্রশ্ন (৫): যমযমের পানি পানের ফযীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস রয়েছে কি? সেগুলো কি? আর যমযমের পানি পান করার সময় কোন দো‘আর বিধান আছে কি? যমযমের পানি বহন করে দেশে নিয়ে যাওয়া বৈধ কি? অপবিত্রতা ও জানাবাত দুরীকরণে যমযমের পানি ব্যবহার বৈধ কি?
উত্তর (৫) : যমযমের পানি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে যা জানতে পেরেছি তন্মধ্যে উত্তমটি হচ্ছে নিম্নোক্ত হাদীস,
«ماء زمزم لما شرب له»
“যমযমের পানি যে জন্য পান করা হয় সেটার কাজে লাগে”।
আর যমযমের পানি পান করার সময় দো‘আর কোনো সহীহ হাদীস আমার মনে আসছে না। কিন্তু তাতেও অন্যান্য পানি পানের নিয়ম মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ পানি পানের সময় শুরুতে তাসমিয়া এবং শেষে হামদালাহ বলবে। অর্থাৎ তুমি পান করার সময় বলবে বিসমিল্লাহ এবং পান শেষে বলবে আল-হামদুলিল্লাহ।
আর সেটা বহন করে মক্কার বাইরে নিয়ে যাওয়াতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা পূর্বে এ ধরণের কাজ হয়েছিল। তাছাড়া এ সম্পর্কিত হাদীসটি
«ماء زمزم لما شرب له»
“যমযমের পানি যে জন্য পান করা হয় সেটার কাজে লাগে” তা মক্কায় পান করা এবং মক্কার বাহিরে পান করা উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
আর আপবিত্রতা ও জানাবত বা বড় নাপাকী জানাগত দূর করাও এর দ্বারা বৈধ।
প্রশ্ন (৬) হিজরে ইসমাঈলের মধ্যে প্রবেশকারী তথা ডান পাশে হিজরে ইসমাঈল ও বামে কাবাকে রেখে তাওয়াফের বিধান কি?
উত্তর (৬): প্রশ্নকারী কর্তৃক কাবার সে অংশকে হিজরে ইসমাঈল বা ইসমাইলের পাথর বা হিজর বলে ব্যাখ্যা করা ভুল। কেননা এ অংশটি ইসমাঈলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। ইসমাঈল এটাকে চিনতেনই না। এ অংশটি কুরাইশরা যখন কাবা নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেছিল সে সময়ে বাইরে রেখে দেওয়া হয়। কারণ তারা এর প্রথম ভিত্তি ইবরাহীমের নির্মাণের আদলে নির্মাণ করার জন্য পর্যাপ্ত মালামাল সংগ্রহ করতে পারে নি, ফলে এ অবস্থায় স্থানটিকে তারা ঘিরে রেখেছে। এজন্য এটাকে হিজর বলে। অনুরূপভাবে এটাকে হাতীমও বলা হয়। কেননা এটা কাবার চূর্ণ অংশ। আর তার অধিকাংশ স্থান কাবার অংশ। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, যখন কোনো মানুষ তাওয়াফের সময় এটার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে বিপরীত দিকের দরজা দিয়ে বের হলো নিশ্চয় তার চক্করটি পূর্ণ করল না। কারণ চক্কর হতে হলে অবশ্যই তাকে কা‘বা ও হাতীম উভয়টিকে চক্করের ভিতরে রেখে তা করতে হবে। অতএব, যদি কেউ কোনো তাওয়াফের চক্করে হাতীমের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে অপর দিক দিয়ে পার হলো, তাহলে তার তাওয়াফ সহীহ হবে না। তার কর্তব্য হলো এটাকে পূণরায় করা। তাই যারা হাতীমের ভিতর দিয়ে কোনো চক্কর দিয়ে কা‘বার তাওয়াফ করবে সে তাওয়াফের কারণে যা অর্জিত হওয়ার তার কিছুই অর্জন করবে না, সুতরাং ইহরাম থেকে প্রাথমিক হালাল হওয়ার যে সুবিধা তাওয়াফ করার মাধ্যমে অর্জন করতে পারত সেটার অধিকারী সে হবে না। যখন প্রাথমিক হালাল হওয়া প্রাথমিক তাওয়াফের উপর নির্ভরশীল থাকে। আর নিশ্চয় এক্ষেত্রে আমি পছন্দ করি এ সংবাদ সরবরাহ করতে যে, যারা হজ্ব ও ওমরা করার ইচ্ছা পোষণ করবে তাদের কর্তব্য হলো হজ্ব ও ওমরা করার পূর্বে উভয়ের আহকামসমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যেন এ ধরনের বড় ভুলে পতিত হতে না হয়।
প্রশ্ন (৭): কা‘বা ঘরের গেলাপে ঝুলে থাকা বা সেটার উপর ঝুঁকে পড়ার হুকুম কি?
উত্তর (৭): কা‘বা ঘরের ঢেকে থাকা গেলাপে ঝুলে থাকা বা ইহার উপর ঝুঁকে পড়ার শরী‘আতের কোনো ভিত্তি নেই। আর এ কারণে যখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দেখলেন যে, তিনি কা‘বা ঘর তাওয়াফ করছেন, আর এর চারকোণ স্পর্শ করছেন তখন তিনি বর্ণনা করেন, স্পর্শ করাটা শুধু হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর সাথে নির্দিষ্ট। অতঃপর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, “এ ঘরের কোনো কিছুই পরিত্যাজ্য নয়” তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জবাব দিলেন ‘‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসূলের জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডান পার্শ্বস্থিত দু‘কোণ (রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ) ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করেন নি। অতঃপর মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার বক্তব্য মেনে নেন।
প্রশ্ন (৮): তাওয়াফের দু‘রাকাআত সালাত আদায়ের স্থান আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে বলুন।
উত্তর (৮): তাওয়াফের দু‘রাকা‘আত সালাত আদায়ের সুন্নাত নিয়ম হলো, মাকামে ইবরাহিমের পেছনে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন মাকামে ইবরাহিম তার ও বায়তুল্লাহর মাঝে থাকে। আর যদি মাকামে ইবরাহিম নিকটবর্তী হয় তবে তা উত্তম। যদি তা সহজ না হয় তবে এ দু‘রাকআত সালাত মাকামে ইবরাহীমের দূরবর্তী কোন স্থান থেকে আদায় করলেও জায়েয হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো মাকামে ইবরাহীমকে কা‘বা ও তার মাঝে রাখবে। আর সেটাও যদি সহজ না হয় তাহলে মসজিদে হারামের যে কোনো স্থান থেকে দু‘রাক‘আত সালাত আদায় করা যাবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন (৯): তাওয়াফে কুদুমের প্রথম তিন চক্করে রমল করা কি পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট? রমল কি সকল চক্করে করবে? না কিছু সংখ্যক চক্কর করলে চলবে?
উত্তর (৯): রমল পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট। মহিলাদের ক্ষেত্রে বাইতুল্লাহর তাওয়াফে রমল করা সুন্নাত হয়, অনুরূপভাবে তাদের জন্য সা‘য়ীর ক্ষেত্রে দুটি নিদর্শনের মাঝে দৌড় দেওয়াও সুন্নাত নয়।
আর পুরুষদের জন্য তাওয়াফের সময় রমল করা কেবল প্রথম তিন চক্করের সাথে নির্দিষ্ট। এ তিন চক্করে রমল করা হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পুরো স্থান জুড়েই করতে হবে। কেননা বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন।
অবশ্য উমরাতুল কাযাতে সাহাবায়ে কিরাম কেবল হাজরে আসওয়াদ হতে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত রমল করেছিলেন, বাকী রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদ এ দু’ কোণের মাঝে সাহাবায়ে কিরাম স্বাভাবিকভাবে হেটে চলেছিলেন। এটা করেছিলেন কুরাঈশদের ক্রোধকে জাগ্রত করার জন্য; কারণ কুরাঈশরা ছিল কাবার উত্তর দিকে। অতঃপর যখন সাহাবাগণ তাদের থেকে আড়ালে যেতেন তখন তারা সাধারণভাবে চলতেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের সময় প্রথম তিন চক্করে পুরো চক্করেই রমল করেছেন। (অর্থাৎ উমরাতুল কাযার মত কেবল হাজরে আসওয়াদ থেকে রুকনে ইয়ামানী পর্যন্ত করেই ক্ষান্ত হননি। তাই বিদায় হজ্বের রাসূলের আমল হিসেবে প্রথম তিন চক্করের পুরোটাতেই রমল করতে হবে)
প্রশ্ন (১০): তাওয়াফ বা সা‘ঈর সময় দু’ বা ততোধিক ব্যক্তির মাঝে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় রত হওয়ার বিধান কি?
উত্তর (১০): তাওয়াফ বা সা‘ঈর সময় জ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনায় কোনো অসুবিধা নেই। আর এতে তাওয়াফ ও সা‘ঈ নষ্ট হয় না। কিন্তু উত্তম হলো, সেময়ে মানুষকে যিকিরে মশগুল করা। কেননা তাওয়াফ ও সা‘ঈর সময় শেষ হয়ে আসছে। আর আলোচনা করা অন্য সময়ে সুযোগ আছে। তবে তাওয়াফ ও সা‘ঈর মাঝে যদি আকস্মিক কোনো প্রশ্নের উদ্ভব হয় তখন সেটা (জ্ঞানগর্ভ আলোচনা) দ্বারা কোনো কিছু নষ্ট হবে না; যদি না প্রশ্নকারী অনেক বেশী প্রশ্ন করে বসেন। আর এ কারণে আমরা বলব তাওয়াফ ও সা‘ঈর মধ্যে কোনো প্রশ্নকারী প্রশ্ন করলে তাকে অবসর হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর বললেও কোনো মানুষের জন্য দোষ নেই। এটা এ কারণে যে, যেন ব্যক্তি এ সময়টা যিকিরে অতিবাহিত করতে পারে।
প্রশ্ন (১১): তাওয়াফ ও সা‘ঈর প্রত্যেক চক্করে কোনো নির্দিষ্ট দো‘আ আবশ্যক করে নেয়ার বিধান কি? তাওয়াফের ভেতর কোনো নারী বা পুরুষ উচ্চস্বরে কিছু দো‘আর আবৃত্তি করা যে উচ্চস্বর নামাজী ও তাওয়াফকারী এবং অন্যান্যদের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এর বিধান কি?
উত্তর (১১): এখানে প্রত্যেক চক্করে নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। বরং প্রত্যেক চক্করের জন্য দো‘আ নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বর্ণনা আসে নি। হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলা আর হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
বলা বর্ণিত আছে। আর অবশিষ্ট স্থানে সাধারণ যিকির ও কুরআন তেলাওয়াত। আর দো‘আ এক চক্করে একটি নির্দিষ্ট করে অন্য চক্করে অপরটি এমন নয়। কোনো ব্যক্তি দো‘আ পড়বে, তার পেছনে অথবা ডানে অথবা বামে অনেক লোক তা অনুসরণ করবে সাহাবীগণের আমল থেকে এমনটির ভিত্তি নেই। অপরদিকে উচ্চস্বরে পড়া যেহেতু এতে তাওয়াফকারীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ও কষ্টের কারণ হয় সেহেতু এটা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছেন, যখন তিনি সাহাবায়ে কিরামের কারও কারও দ্বারা উচ্চস্বরে মসজিদে কুরআন পাঠ করতে শুনতে পেলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কুরআনের ক্ষেত্রে একে অন্যের উপর উচ্চস্বরে পাঠ করো না।” অথবা তিনি বললেন: “কিরআত পাঠের ক্ষেত্রে।” অনুরূপভাবে আমরা সেসব তাওয়াফকারীদের বলব যে তোমরা মানুষের উপর উচ্চস্বরে বলবে না তাহলে তাদেরকে তোমরা কষ্ট দিবে। বরং প্রত্যেকে পছন্দমত দো‘আ করবে।
এ জন্যই এটা বলা যায় যে, যদি এ সকল তাওয়াফ পরিচালনাকারী মানুষদেরকে এটা বলতে উদ্বুদ্ধ করা যায় যে, তোমরা তাওয়াফ করো আর হাজরে আসওয়াদ স্পর্শের সময় তাকবীর বলো। তোমরা হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে বলবে:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
এবং তাওয়াফের অবশিষ্ট সময়ে তোমরা ইচ্ছামত দো‘আ কর, যিকর কর এবং কুরআন পাঠ কর। আর লোকেরা যদি তাদের অনুসরণ করতো তবে তা কতই না উত্তম ও উপকারী কাজ বলে বিবেচিত হতো। কেননা এভাবে করলে প্রত্যেক মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী তার রবের নিকট সে ভাষায় দো‘আ করতে সমর্থ হতো যে ভাষা সে বুঝে। পক্ষান্তরে আজকাল তাওয়াফ পরিচালনাকারীগণ যেসব দো‘আ পড়ে থাকেন সে সব দো‘আ সম্পর্কে তাদের অনুগামীরা কিছুই জানেন না। যদি তাওয়াফ পরিচালনাকারীদের পেছনে যারা চলে তাদেরকে তাদের পরিচালনাকারী কি দো‘আ করেছে সেটা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা বলতে সমর্থ হবে না। বস্তুত যে দো‘আর অর্থ মানুষ জানে তা দিয়ে দো‘আ করা তালকীনের (অন্যের মাধ্যমে শুনে পড়া) মাধ্যমে করা দো‘আ থেকে অনেক বেশী উপকারী।
প্রশ্ন (১১): তাওয়াফ ও সা‘ঈর প্রত্যেক চক্করে কোনো নির্দিষ্ট দো‘আ আবশ্যক করে নেয়ার বিধান কি? তাওয়াফের ভেতর কোনো নারী বা পুরুষ উচ্চস্বরে কিছু দো‘আর আবৃত্তি করা যে উচ্চস্বর নামাজী ও তাওয়াফকারী এবং অন্যান্যদের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এর বিধান কি?
উত্তর (১১): এখানে প্রত্যেক চক্করে নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। বরং প্রত্যেক চক্করের জন্য দো‘আ নির্দিষ্ট করা বিদ‘আত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বর্ণনা আসে নি। হজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলা আর হজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
বলা বর্ণিত আছে। আর অবশিষ্ট স্থানে সাধারণ যিকির ও কুরআন তেলাওয়াত। আর দো‘আ এক চক্করে একটি নির্দিষ্ট করে অন্য চক্করে অপরটি এমন নয়। কোনো ব্যক্তি দো‘আ পড়বে, তার পেছনে অথবা ডানে অথবা বামে অনেক লোক তা অনুসরণ করবে সাহাবীগণের আমল থেকে এমনটির ভিত্তি নেই। অপরদিকে উচ্চস্বরে পড়া যেহেতু এতে তাওয়াফকারীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ও কষ্টের কারণ হয় সেহেতু এটা নিষিদ্ধ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছেন, যখন তিনি সাহাবায়ে কিরামের কারও কারও দ্বারা উচ্চস্বরে মসজিদে কুরআন পাঠ করতে শুনতে পেলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কুরআনের ক্ষেত্রে একে অন্যের উপর উচ্চস্বরে পাঠ করো না।” অথবা তিনি বললেন: “কিরআত পাঠের ক্ষেত্রে।” অনুরূপভাবে আমরা সেসব তাওয়াফকারীদের বলব যে তোমরা মানুষের উপর উচ্চস্বরে বলবে না তাহলে তাদেরকে তোমরা কষ্ট দিবে। বরং প্রত্যেকে পছন্দমত দো‘আ করবে।
এ জন্যই এটা বলা যায় যে, যদি এ সকল তাওয়াফ পরিচালনাকারী মানুষদেরকে এটা বলতে উদ্বুদ্ধ করা যায় যে, তোমরা তাওয়াফ করো আর হাজরে আসওয়াদ স্পর্শের সময় তাকবীর বলো। তোমরা হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝে বলবে:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
এবং তাওয়াফের অবশিষ্ট সময়ে তোমরা ইচ্ছামত দো‘আ কর, যিকর কর এবং কুরআন পাঠ কর। আর লোকেরা যদি তাদের অনুসরণ করতো তবে তা কতই না উত্তম ও উপকারী কাজ বলে বিবেচিত হতো। কেননা এভাবে করলে প্রত্যেক মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী তার রবের নিকট সে ভাষায় দো‘আ করতে সমর্থ হতো যে ভাষা সে বুঝে। পক্ষান্তরে আজকাল তাওয়াফ পরিচালনাকারীগণ যেসব দো‘আ পড়ে থাকেন সে সব দো‘আ সম্পর্কে তাদের অনুগামীরা কিছুই জানেন না। যদি তাওয়াফ পরিচালনাকারীদের পেছনে যারা চলে তাদেরকে তাদের পরিচালনাকারী কি দো‘আ করেছে সেটা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা বলতে সমর্থ হবে না। বস্তুত যে দো‘আর অর্থ মানুষ জানে তা দিয়ে দো‘আ করা তালকীনের (অন্যের মাধ্যমে শুনে পড়া) মাধ্যমে করা দো‘আ থেকে অনেক বেশী উপকারী।
প্রশ্ন (১২): হজরে আসওয়াদ ও রুকণে ইয়ামানীর মধ্যকার তাওয়াফকারীর জন্য শরীয়াতসম্মত দো‘আ কি?
উত্তর (১২): শরীয়ত সম্মত দো‘আ হলো:
﴿رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
অপরদিকে দো‘আকে পরিপূর্ণ করার জন্য
«وأدخلنا الجنة مع الأبرار»
বলা অতঃপর এটার কোনো ভিত্তি নেই। অনুরূপভাবে
«يا عزيز يا غفار يارب العالمين»
বলাও কোনো ভিত্তি নেই। বরং যখন পরিবেশ এমন হয়ে যায় মানুষ আয়াতটি অর্থাৎ
﴿ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ ﴾ [البقرة: ٢٠١]
পড়া শেষ হয়েছে অথচ তাওয়াফস্থলে ভিড়ের কারণে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, তাহলে সে হাজরে আসওয়াদের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত বার বার এ দো‘আটি পুনরাবৃত্তি করতে থাকবে।
প্রশ্ন (১৩): মুলতাযামে অবস্থানের হুকুম কি? যদি সেটা শরীয়াতসম্মত হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কোন দো‘আ পাঠ করা মুস্তাহাব। কা‘বার কোন স্থানটি মুলতাযামের জন্য নির্দিষ্ট।
উত্তর (১৩): মুলতাযামে অবস্থান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ কোনো সুন্নাত বর্ণিত হয়নি। কিন্তু তা ছিল সাহাবীগণের আমল। আর সেখানে যা ইচ্ছা তা প্রার্থনা করবে। মুলতাযামের স্থান হলো হাজরে আসওয়াদ ও কা‘বার দরজার মধ্যবর্তী স্থান।
প্রশ্ন ১৪: সাফা ও মারওয়ার শরীয়তসম্মত দো‘আ ও যিকির কি? দো‘আ ও তাকবীর বলার সময় কি হাত উঠাতে হবে? আর তার পদ্ধতি কি? সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের উপর আরোহনের বৈধ পরিমাণ কতটুকু? মহিলারা বা তাদের সঙ্গী মহিলার দুটি সবুজ নিদর্শনের মাঝে (সাফা ও মারওয়ার) দ্রুত পথ চলবে কি? সা‘ঈর সময় শরী‘আতসম্মত কোনো দো‘আ আছে কি? দুটি সবুজ নিদর্শনের মাঝে দ্রুত পথ চলার হিকমত কি?
উত্তর ১৪: এ প্রশ্নটি বিভিন্ন দিক অন্তর্ভুক্ত করে। তার উত্তর হলো, কোনো মানুষ যখন সাফা-মারওয়ার সা‘ঈ শুরু করবে তখন তার শুরুতে যখন সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হবে তখন সে আল্লাহর বাণী পাঠ করবে:
﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ﴾ [البقرة: ١٥٨]
আমি শুরু করছি যা দ্বারা আল্লাহ শুরু করেছেন, (অর্থাৎ আল্লাহ সাফা পাহাড়ের কথা আগে বলেছেন তাই আমি আগে সাফা পাহাড়ে উঠব) তারপর সাফা পাহাড়ে আরোহণ করবে যেন কা‘বা দেখতে পায় অতঃপর দু হাত উত্তোলন করবে যেমনিভাবে দো‘আর মধ্যে উত্তোলন করা হয় ও তাকবীর বলবে। আর নিম্নের যিকিরটি পাঠ করবে:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير لا إله إلا الله وحده، أنجز وعده، ونصر عبده، وهزم الأحزاب وحده»
অতঃপর যে যা ইচ্ছা তা দো‘আ করবে, তারপর দ্বিতীয়বার পূর্বের যিকিরটি পড়বে আর ইচ্ছামাফিক দো‘আ করবে, অতঃপর তৃতীয়বারও সে যিকিরটি পাঠ করবে। অতঃপর পদব্রজে চলতে অবতরণ করবে সবুজ চিহ্নিত খুঁটির দিকে। অতঃপর যখন সবুজ নিদর্শনে পৌছাবে তখন অপর নিদর্শনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দ্রুত হাঁটবে। অতঃপর সাধারণভাবে হাঁটবে; কিন্তু মহিলাগণ ব্যতীত, তারা এখানে দ্রুত পথ চলবে না। অনুরূপভাবে যারা মহিলাদের সঙ্গী সাথী, তারাও মহিলাদের দেখে শুনে রাখা ও হিফাযত করার লক্ষ্যে দু’ নিদর্শনের মাঝে দ্রুত চলবে না। আর যখন মারওয়ায় পৌঁছুবে তখন (﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ﴾ [البقرة: ١٥٨] ) এ আয়াতাংশটি পাঠ করবে না। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় বার ও পরবর্তী কোনো বার যখন সাফা পাহাড়ে যাবে তখনও (﴿ ۞إِنَّ ٱلصَّفَا وَٱلۡمَرۡوَةَ مِن شَعَآئِرِ ٱللَّهِۖ ﴾ [البقرة: ١٥٨] ) আয়াতটি পাঠ করবে না; কেননা এমনটি বর্ণিত হয়নি। সা‘ঈর মধ্যে হাজী সাহেব যা ইচ্ছা তা আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করবে। আর কেউ যদি পছন্দ করে তবে সে যেন কুরআন তিলাওয়াত করে ও আল্লাহর যিকির করবে, তাসবীহ পড়ে, তাহলীল ও তাকবীর বলে। অতঃপর যখন মারওয়াতে পৌঁছাবে এবং তাতে আরোহণ করবে তখন সাফা পাহাড়ের উপর যা করেছে তা করবে।
অপরদিকে সাফা পাহাড়ে আরোহনের পরিমাণ হলো এমন পরিমাণ উপরে উঠা যেন কা‘বা দেখা যায়। আর এটা আরোহনের সর্বনিম্ন পরিমাণ। আরোহণ হওয়া সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব হলো সাফা ও মারওয়ার মধ্যে (সা‘ঈ) অন্তর্ভুক্ত থাকা। দু’ নিদর্শনের মাঝে সা‘ঈর হিকমত হলো, রাসূলের সুন্নাতের অনুসরণ ও ইসমাঈলের মায়ের উপত্যাকায় অবতরণের অবস্থা স্মরণ করা। আর সেটি ছিল দু’ নিদর্শনের মধ্যবর্তী স্থান। তিনি যখন উপত্যকায় দ্রুত নামতেন তখন তার সন্তান ইসমাইলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেন। সহীহ বুখারীতে এ সম্পর্কে দীর্ঘ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
প্রশ্ন (১৫): সা‘ঈ শেষে মারওয়াতে চুল কর্তন করা জায়েয কি? মাথা মুন্ডণ করা অথবা মাথার কিছু অংশের চুল কর্তন করার হুকুম কি? আর যে মাথা টাক অথবা মুণ্ডিত সে কি করবে? সা‘ঈ ও তাওয়াফকারী সা‘ঈ এবং তাওয়াফের মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রাম নেয়া জায়েয কি? মাথা মুণ্ডন ও চুল কর্তনের মাঝে কোনটি উত্তম দলীলসহ বলুন।
উত্তর (১৫): যখন মানুষ সা‘ঈ থেকে অবসর হয় এবং তা ওমরার সা‘ঈ হয় তখন নিশ্চয় সে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা চুল কর্তন করবে। তবে মাথা মুণ্ডন উত্তম। কেননা এটা আল্লাহকে সম্মান দেখানোর খুব নিকটবর্তী। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার আর চুল কর্তনকারীর জন্য একবার দো‘আ করেছেন।
আর যে মাথায় টাক অথবা যে মাথা সাম্প্রতিককালে মুণ্ডন করা হয়েছে তার থেকে মাথা মুণ্ডন অথবা চুল কর্তন করা রহিত হয়ে গেছে; কেননা তার মাথায় চুল নেই। আর এটা টাকের বিধান হওয়ার ব্যাপারটি তো স্পষ্টই; কারণ টাক মাথায় কোন চুল গঁজায় না। কিন্তু যার মাথার চুল মুণ্ডন করা হয়েছে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে কিছু চুল গজানো পর্যন্ত অপেক্ষা করা তারপর মুণ্ডন করা।
অপরদিকে মাথার কিছু অংশ মুণ্ডন করা অথবা মাথার কিছু অংশে কর্তন করা জায়েয নেই। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন ﴿ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ ٢٧ ﴾ [الفتح: ٢٧] “তোমাদের মাথাসমূহকে মুণ্ডন করা অবস্থায় এবং চুল ছাঁটা অবস্থায়”, তাহলে অবশ্যই সমস্ত মাথা মুণ্ডন করতে হবে অথবা সমস্ত চুল থেকে কর্তন করতে হবে। আর উত্তমভাবে ও ব্যাপকভাবে যা চুল কর্তন করে থাকে তা হচ্ছে বর্তমানে সাধারণত মানুষ চুল কর্তন করার জন্য যে সব মেশিন ব্যবহার করে থাকে তা। কেননা এতে ব্যাপকভাবে এবং সুন্দরভাবে চুল কর্তন অর্জিত হয়। কেঁছি দিয়ে কাটার চেয়েও তা উত্তম। আর আমরা যে চুল মুণ্ডনের কথা বলেছি তা কেবল পুরষদের জন্য। অপরদিকে নারীগণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সামান্য অংশ কর্তন করাই বিধিসম্মত।
আর যখন তাওয়াফকারী অথবা সা‘ঈকারী ক্লান্ত হয় ও বসে পড়ে তখন তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সে দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকবে না বরং সে অল্প সময় বসবে; যাতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং তার পেশী প্রশান্ত হয়, তারপর আবার চলা শুরু করবে; তারপর যদি তার দ্বিতীয়বার কোনো বৈঠকের প্রয়োজন হয় তবে কোনো অসুবিধা নেই, অনুরূপ তৃতীয় অথবা চতুর্থবার বসাতেও কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন ১৬: হারামের মধ্যে ইমামের নিকটবর্তী দাঁড়ানো নাকি উপর তলাসমূহে দাঁড়ানো? আমরা প্রত্যক্ষ করি যে, মাতাফের প্রথম কাতারের জন্য অনেকেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় আযানের অর্ধঘন্টা পূর্বে বা তারও অধিক আগে, এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত? এভাবে তাদের প্রথম কাতারে বসার দ্বারা তাওয়াফকারীদের স্থান সংকীর্ণ হয়ে যায়।
জবাব ১৬: কোনো সন্দেহ নেই যে, মাসজিদে হারাম বা অন্যান্য মাসজিদে ইমামের কাছাকাছি দাঁড়ানো দূরে দাঁড়ানো থেকে উত্তম। আর যারা কা‘বার পাশে বসে থেকে সালাতের অপেক্ষা করতে থাকে নিশ্চয় তাদের কোনো অধিকার নেই সেখানে বসার। তাওয়াফকারীগণ সে স্থানের অধিক মুখাপেক্ষী। কেননা তাওয়াফকারীদের জন্য সে স্থান জরুরী। অতএব, সেটা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া তাদের অধিকার নষ্ট করা ও তাদের ক্ষতির কারণ। বরং মানুষ অপেক্ষা করবে তারপর যখন ইমাম এসে যাবে তখন প্রত্যেকে তার নিজ নিজ স্থানে কাতারবন্দী হবে।
প্রশ্ন (১৭): রমযানে তারাবীহ এর সালাতে মুক্তাদীগণ ইমামের অনুসরণের জন্য কুরআন শরীফ বহন করার বিধান কি?
উত্তর (১৭) উপর্যুক্ত উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ বহন করা সুন্নাহের বিপরীত। আর তা কয়েক দিক থেকেই:
প্রথমত: এভাবে দন্ডায়মানের সময় মানুষের ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা ছুটে যায়।
দ্বিতীয়ত: কুরআন বহন করা অধিক নড়াচড়ার দিকে নিয়ে যায় যার কোনো প্রয়োজন নেই; যেমন কুরআন খোলা, বন্ধ করা, বগলের নিচে রাখা ও পকেটে রাখা ইত্যাদি।
তৃতীয়ত: কুরআন বহন মুসল্লীকে অনেক নড়াচড়ায় ব্যস্ত রাখে।
চতুর্থত: এতে মুসল্লীর দৃষ্টি সিজদার স্থান থেকে নষ্ট হয়। আর অধিকাংশ আলেমের মতে সিজদার স্থানের প্রতি দৃষ্টি দেয়া সুন্নাত এবং উত্তম।
পঞ্চমত: মুসল্লী এতে ভুলে থাকে যে সে সালাতে আছে যখন সে যে সালাতে আছে সেটার জন্য হৃদয় জাগ্রত না থাকে। অন্যদিকে মুসল্লীর যখন সালাতে খুশু অবলম্বন করবে, ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে, দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবন্ধ রাখবে, নিশ্চয় এটা অধিক পরিমাণে হৃদয়কে জাগ্রত রাখে যে সে সালাতে আছে এবং সে একজন ইমামের পিছনে রয়েছে।
প্রশ্ন (১৮): যখন কোনো মহিলা হজ্ব বা ওমরা করার ইচ্ছা করবে অথচ তিনি ঋতুবর্তী বা নিফাসবর্তী, তখন কি করবে? আর ইহরাম করার পর অথবা তাওয়াফ শেষে যদি কেউ হায়েযপ্রাপ্ত হয় তার বিধান কি?
উত্তর (১৮): যখন কোনো মহিলা ওমরা অথবা হজ্ব করার জন্য মীকাত দিয়ে অতিক্রম করে অথচ সে নিফাসবর্তী অথবা হায়েযপ্রাপ্তা, তখন নিফাস ও হায়েয থেকে পবিত্রা নারীগণ যা করে সেও তাই করবে। অর্থাৎ গোসল করবে কিন্তু অতিরিক্ত কাপড় দ্বারা রক্তক্ষরণ বন্ধ রাখবে এবং ইহরাম করবে, অতঃপর যখন পবিত্রা হবে তখন তাওয়াফ করবে, সা‘ঈ করবে ও চুল কর্তন করবে এবং ওমরা সম্পন্ন করবে। অপরদিকে যখন ইহরাম করার পর এবং তাওয়াফের পূর্বে হায়েযপ্রাপ্তা হবে অথবা নিফাসবর্তী হবে তখন সে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত ইহরামের উপর অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর তাওয়াফ করবে, সা‘ঈ করবে এবং চুল কর্তন করবে।
আর যখন তাওয়াফের পর ঋতুবর্তী হবে তখন সে তার ওমরাহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। কারণ এতে তার কোনো ক্ষতি নেই। কেননা তাওয়াফের পর অপবিত্রতা ও ঋতু হতে পবিত্র থাকার কোনো শর্ত নেই।
প্রশ্ন (১৯): ঋতুবর্তী নারীদের জন্য মসজিদ হারামে প্রবেশ করা বৈধ কি? আর যখন নারী তাওয়াফরত অবস্থায় অনুভব করবে যে তার ঋতুর রক্ত পড়তে যাচ্ছে তখন সে কি করবে?
উত্তর (১৯): ঋতুবর্তী নারীর জন্য মসজিদে হারামে প্রবেশ করা বৈধ নয়, তবে পার হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে সেটা ভিন্ন কথা। তাওয়াফের জন্য তার অবস্থান অথবা কুরআন শ্রবণ অথবা তাসবীহ পাঠ বা তাহলীল এসব কিছুর জন্যই মসজিদে হারামে অবস্থান জায়েয নয়।
আর যখন কোন মহিলা তাওয়াফের মধ্যে ঋতুর রক্ত প্রবাহিত হওয়ার অনুভব করবে তখন সে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ চালু রাখবে। অতঃপর যখন নিশ্চিত হবে যে, ঋতুর রক্ত বের হচ্ছে তখন পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর পবিত্র হলে নতুন করে তাওয়াফ শুরু করবে।
প্রশ্ন (২০) : ই‘তিকাফকারী ব্যতীত অন্যদের জন্য পুরো রমযান মাসের মাসজিদে হারামে স্থান নির্ধারণ করে বালিশ ও বিছানা রেখে নামায পড়ার বিধান কি?
উত্তর (২০): মাসজিদে হারাম অন্যান্য মাসজিদের মত, যে আগে পৌঁছবে সে বসবে। আর কারো জন্য মসজিদের বাইরে বের হওয়ার সময় মসজিদে স্থান রেখে আসা বৈধ নয়।
কিন্তু যদি মসজিদেরই অন্য স্থানে যাবে এবং জনসাধারণের ভিড় থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে কোনো প্রশস্ত স্থানে বসে, অতঃপর যখন সালাতের সময় নিকটবর্তী হবে তখন সে তার নির্ধারণ করে রেখে যাওয়া স্থানে সালাত পড়তে আসবে, তখন কোনো অসুবিধা নেই। কেননা তার জন্য মসজিদের যে কোনো স্থানে বসার অধিকার রয়েছে। আর যখন সে অন্য প্রশ্রস্ত স্থানে সালাত আদায়ের জন্য যাবে অতঃপর সেখানে কাতার মিলিত হবে তখন তার কর্তব্য হলো তার স্থানের সামনে যাওয়া অথবা পেছনের প্রশস্ত স্থানে যাওয়া। কেননা যখন সে কাতারে মিলিত হবে আর তার জন্য এ (বিছানা) জায়গা থাকবে সে মসজিদের অন্য জায়গাও গ্রহণ করবে। এতে সে দুই স্থানের দখল নিলো। আর কোন মানুষ দু স্থান গ্রহণ করার মালিক নয়।
অপরদিকে মসজিদের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে নেওয়া; যাতে কেবল সে সেখানেই সালাত আদায় করবে, নিশ্চয় তা একটি নিষিদ্ধ কাজ। বরং মানুষের উচিৎ যেখানে স্থান পাবে সেখানেই সালাত আদায় করা।
প্রশ্ন (২১): ওমরার সা‘ঈকে তাওয়াফের পূর্বে আদায় করার হুকুম কি? আর যে ব্যক্তি মারওয়া থেকে সা‘ঈ শুরু করে সাফাতে শেষ করল তার বিধান কি?
উত্তর (২১): প্রথমত: নিশ্চয় তার সা‘ঈ শুদ্ধ হবে না। তার উপর ওয়াজিব হলো পুনরায় দ্বিতীয় সা‘ঈ করা। কেননা এটা যথাস্থানে সংগঠিত হয়নি। যেহেতু সা‘ঈ হলো তাওয়াফের পর।
দ্বিতীয়ত: এ অবস্থায় মারওয়া থেকে সা‘ঈ শুরু হওয়া প্রথম চক্করটি বাতিল হয়ে যাবে। তারপর এ চক্বরটি বাদ দিয়ে নতুন সাত চক্কর সম্পন্ন করবে।
প্রশ্ন (২২): সাফা ও মারওয়াতে অথবা সাধারণ দো‘আর পর মুখ ও দু’হাত মাসেহ করার বিধান কি?
উত্তর (২২) : সহীহ হলো দো‘আর পর দু’ হাত দিয়ে মুখ মাসেহ করা শরী‘আতসম্মত নয়। কেননা এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছুই সাব্যস্ত হয়নি।
প্রশ্ন (২৩): মহিলাগণকে তারাবীহ সালাতের সময় তাওয়াফ করা হতে নিষেধ করা হয়; এমতাবস্থায় পুরুষের জন্য কী তারাবীহ এর সালাত চালিয়ে যাওয়া উত্তম নাকি তাওয়াফ করা উত্তম?
উত্তর (২৩): উত্তম হলো, তারাবীহর সালাত চলমান রাখা; যেন কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব লিখা হয়। আর তাওয়াফের তো অন্য সময় রয়েছেই।
প্রশ্ন (২৪): ওমরাকারীর জন্য কোনটি উত্তম নফল সালাত অথবা নফল তাওয়াফ?
উত্তর (২৪) : যখন ওমরাকারীদের সংখ্যা অধিক হবে, তখন উত্তম হলো সালাতে মশগুল হওয়া। যাতে করে তাওয়াফকারীদের জন্য তাওয়াফের স্থান সংকুলান হয়।
প্রশ্ন (২৫): রমযানের শেষ দশকে প্রত্যেক রাতে দু‘বার বিতরের সালাত আদায় হয় আর আমার ইচ্ছা হলো ইমাম সাহেব সালাত সম্পন্ন করে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত সালাত আদায় করি; যাতে সেটার ফযীলত পেতে পারি। তাহলে আমি কি করব? আমি কি বিতরের সালাত রাতের শুরুতে ছেড়ে দিব অথবা শেষ রাতে। আর বিতরের সালাত বিনষ্ট করার কোনো প্রমাণ সাব্যস্ত আছে কি?
উত্তর (২৫) প্রথম ও শেষ রাতে বিতর সালাত বিনষ্ট করার যে নিয়ম আলিমগণের নিকট বর্তমানে প্রসিদ্ধ হয়েছে তা করা যাবে না; আর সেটার ধরন হচ্ছে, যখন কেউ প্রথম রাতে বিতর সালাত পড়ে, তারপর শেষ রাতেও আবার কিয়ামুল লাইল পড়তে চায়, তখন দু’ দু’ রাকাত করে সে সালাত আদায় শুরু করার পূর্বে দ্বিতীয়বার পূর্বে আদায়কৃত বিতর সালাতটি পড়া। এ পদ্ধতিটি যদিও কতিপয় পূর্বসূরীদের আমল ছিল কিন্তু সুন্নাহ থেকে এ ব্যাপারে কোনো দলীল নেই। আর দ্বিতীয়বারের বিতরের রাকাতটিকে প্রথম বারের বিতরের রাকা‘আতের উপর ভিত্তি করা ঠিক হবে না; কেননা প্রথমবারের বিতরের রাকা‘আত ও দ্বিতীয়বারের বিতরের রাক‘আতের মধ্যে যোজন পার্থক্য তৈরী হয়েছে।
আমরা তো কেবল এটাই বলি যে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রথম রাত্রির সালাত কিংবা শেষ রাত্রির সালাতে ইমামের সালাত শেষ করে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তার পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে চায়, সে যদি প্রথম রাতে ইমামের সাথে বিতর সালাত পড়ে এবং সালাম ফিরায় তখন সে দাঁড়িয়ে যাবে এবং এক রাকাত আদায় করে নিবে। অর্থাৎ ইমামের সাথে সালাত আদায়ের সময় এ নিয়ত করে তার সাথে সালাতে প্রবেশ করবে যে সে জোড় সালাত আদায় করবে তারপর যখন (ইমাম) সালাম ফিরাবে তখন সে দাঁড়াবে এবং এক রাক‘আত আদায় করবে; যাতে করে তোমার বিতরটি শেষ রাতের ইমামের সাথে আদায় করতে পার।
প্রশ্ন (২৬) আমরা কতিপয় মুসল্লীকে দেখি যে, তারা হারাম শরীফের মধ্যে অবস্থান করা অবস্থায় সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মূল কা‘বার দিকে মুখ করে দাঁড়ায় না, তাদের সালাতের হুকুম কি?
উত্তর (২৬): তাদের সালাত বাতিল হবে; কেননা যখন কারো কা‘বা দেখা সম্ভব হয় তখন তার জন্য মূল কা‘বার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো আবশ্যক। অবশেষে সৌদী সরকার (আল্লাহ তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন) কা‘বার দিকে সঠিক দিক নির্ধারণ করে কিছু চিহ্ন দিয়ে দিয়েছে। তাঁরা নীচের পাথরের উপর দু’টি করে আকঁ দিয়ে দিয়েছে; সুতরাং যখন তুমি সে দিকে মুখ করে দাঁড়াবে তখন তোমার মুখ ফিরানো সহীহ হবে।
প্রশ্ন (২৭): হারাম শরীফে সালাত আদায় করছে অথচ কা‘বা দর্শন সম্ভব হচ্ছে না, অন্যান্য মুসল্লীদের মত কা‘বাকে সামনে রেখেছে। আর সালাত সম্পন্ন হওয়ার পর তার কাছে স্পষ্ট হলো যে সে মূল কা‘বার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেনি, এসব লোকদের সালাতের হুকুম কি?
উত্তর (২৭): আমি মনে করি যে, কা‘বা পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসন্ধান করা ব্যতীত সালাত আদায় করলে তাদের সালাত পুনরাবৃত্তি করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের পক্ষে সেটা অনুসন্ধান পূর্ণরূপে সম্ভব। যদি এমন কোনো স্থানে হয় যেখান থেকে কা‘বা দেখা যায় না এমতাবস্থায় যখন মানুষ সালাতের জন্য দাঁড়ায় তখন তো তার কাছে কা‘বার দিক স্পষ্ট হবে।
যদিও কেউ কেউ বলেছেন, এমতাবস্থায় কষ্টের কারণে তারা মা‘যুর (তাদের গ্রহণযোগ্য ওযর থাকায় তা গ্রহণযোগ্য হবে।) বিশেষ করে যখন মানুষ হারামে আসে আর লোকেরা সালাত শুরু করে দিয়েছে, এমতাবস্থায় তার কাতার অনেক দূরে হওয়ার কারণে সরাসরি কা‘বা দেখা তার জন্য কঠিন। বরং তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর তাই সে অবস্থায় কষ্টের কারণে কা‘বার দিকের মুখোমুখি হওয়াই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন (২৮): বিতর সালাতে দো‘আয়ে কুনুত সম্পর্কে কিছু বর্ণিত আছে কি? আর তা কি রুকুর পূর্বে না পরে? আর সেখানে হাত উত্তোলন করবো কি?
উত্তর (২৮): বিতর সালাতে কুনুত পড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। কেননা হাসান ইবনে আলী (রা:) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিতর সালাতের কুনুতের দো‘আ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শিক্ষা দিলেন নিম্নের পরিচিত দো‘আ-
اللهم اهدني فيمن هديت …….الخ
আর সে দো‘আতে সুন্নাত হলো দু’হাত উত্তোলন করা। কেননা আমার যতটুকু মনে পড়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, “নিশ্চয় তিনি তাঁর দু’ হাত উত্তোলন করতেন।”
আর কুনুত হবে রুকুর পরে। তবে যদি কেউ রুকুর আগে কুনুত করে তবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন (২৯): মাসজিদুল হারামে ফরয সালাত আদায়কারী অথবা নফল সালাত, মুক্তাদী অথবা এককভাবে সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গমনকারীর বিধান কি?
উত্তর (২৯): মুক্তাদীর সামনে দিয়ে গমন করায় কোনো অসুবিধা নেই। মাসজিদে হারামে হোক বা অন্য কোনো স্থানে; কেননা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ঐ সময় আসলেন যখন তিনি ছিলেন মিনায়, আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষদের নিয়ে দেয়ালবিহিন স্থানে সালাত আদায় করছেন। এমতাবস্থায় তিনি (ইবনে আব্বাস) একটি গাধীর উপর সওয়ার হয়ে কোনো এক কাতারের সামনে দিয়ে গমন করেন, অথচ কেউ তা অস্বীকার করে নি।
অপরদিকে যখন কোনো সালাত আদায়কারী ইমাম হয় অথবা একা সালাত আদায়কারী হয়, তখন তার সামনে দিয়ে মাসজিদে হারাম অথবা অন্যত্র কোথাও গমন করা জায়েয নয়। কেননা এখানে দলীলটি অত্যন্ত ব্যাপক। তার বিপরীতে এমন কোনো দলীল নেই যা মক্কা অথবা মসজিদে হারামকে সে বিধান থেকে আলাদা করবে; বা এমন কোনো দলীল নেই যা দ্বারা বুঝা যাবে যে সেখানে সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গমন করায় কোনো ক্ষতি নেই বা গমনকারীর কোনো গুনাহ নেই।
প্রশ্ন (৩০) রমযান মাসে যেসব মহিলা ওমরা করে, তাদের জন্য ফরয সালাত বা তারাবীহ সালাত তাদের গৃহে আদায় করা উত্তম? না কি মসজিদে হারামে?
উত্তর (৩০): সুন্নাহ দ্বারা বুঝা যায় যে, মহিলাদের জন্য উত্তম হলো তাদের গৃহে সালাত আদায় করা, চাই তা মক্কায় হোক অথবা অন্যত্র। আর এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله وبيوتهن خير لهن»
“আল্লাহর দাসীদেরকে আল্লাহর ঘরে যেতে নিষেধ করো না, আর তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম”।
এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় অবস্থানকালীন সময়েই বলেছিলেন। অথচ মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের অতিরিক্ত ফযিলতও রয়েছে। কেননা তাদের বাড়ীতে সালাত আদায় অধিক পর্দা পালন ও ফেতনা থেকে দূরে থাকার উপযোগী। ফলে বাড়ীতে সালাত আদায় তাদের জন্য উত্তম ও ভালো তা প্রমাণিত হলো।
প্রশ্ন (৩১) কুরআন খতমের দো‘আ নামাযের ভেতরে বা বাইরে করা শরী‘আতসম্মত কি?
উত্তর (৩১): সালাতের ভেতরে এটা শরী‘আতসম্মত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ থেকে এমনটি বর্ণিত হয়নি যে তারা সালাতে কুরআন খতমের দো‘আ পড়তেন। অবশ্য আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় তিনি যখন কুরআন খতম করতেন, তখন তার পরিবারকে একত্রিত করতেন ও দো‘আ করতেন। কিন্তু এটা সালাতে নয়।
প্রশ্ন (৩২): মৃত অথবা জীবিত ব্যক্তিদের জন্য তাওয়াফের সাওয়াব অথবা কুরআন তিলাওয়াত হাদীয়া করে প্রেরণ করার বিধান কি?
উত্তর (৩২): ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ এর মাযহাব মতে বিখ্যাত হচ্ছে যে, মৃত বা জীবিত ব্যক্তির জন্য তাওয়াফ অথবা সালাত অথবা কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব হাদিয়া দেওয়াতে দোষ নেই। তারপরও তা এমন বিষয় নয় যা করার জন্য কোনো মানুষকে শরী‘আতে নির্দেশ কিংবা উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। বরং সাওয়াব হাদীয়া দেওয়ার চেয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করা উত্তম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إذا مات الإنسان أو قال ابن آدم انقطع عمله إلا من ثلاث : صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له»
“যখন মানুষ মারা যায় অথবা বনি আদম যখন মারা যায় তখন তার সব আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিসের ধারা বলবৎ থাকে। সাদকায়ে জারীয়াহ অথবা এমন ইলম যা উপকারে আসে অথবা এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করবে।” এখানে তিনি বলেননি ‘অথবা এমন নেক সন্তান যে তার জন্য কোনো কাজ করবে’ বরং বলেছেন, ‘তার জন্য দো‘আ করবে।’ এর দ্বারা বুঝা যায় যে, দো‘আ করা সাওয়াব হাদিয়া দেওয়ার চেয়ে উত্তম।
প্রশ্ন (৩৩): মাসজিদে হারামে সালাতসমূহ আদায়ের ফাঁকে ফাঁকে কথাবার্তা বলা, হাসি-কৌতুক ও খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করার বিধান কি?
উত্তর (৩৩): কোনো সন্দেহ নেই যে, এতে মুসল্লীদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। আর নিশ্চিতভাবে তা তাদেরকে ইমামের যথাযথ অনুসরণ ও সালাতে কিয়াম করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত করে। আর যেহেতু তা মুসল্লীদের বিরক্তির কারণ হয় তাই তা হারাম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে পরষ্পর উচ্চস্বরে কিরআত পাঠেও নিষেধ করেছেন, তাহলে কথাবার্তা, কৌতুক ও অন্যান্য ব্যাপার কিরূপে বৈধ হবে?
প্রশ্ন (৩৪): ওমরাকারীদের জন্য রমযান বা অন্যসময় বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব কি? এক্ষেত্রে সাবধানতা কি?
উত্তর (৩৪): বিশুদ্ধ মত হলো, রমযানে বা অন্য সময় ওমরাকারীর বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব। কিন্তু যখন মানুষ ওমরা সম্পন্ন করার সাথে সাথে মক্কা ত্যাগ করতে চায় তখন তার জন্য প্রথম তাওয়াফই যথেষ্ট হবে।
প্রশ্ন (৩৫): ইহরাম করার সময় দু’ রাকআত সালাত আদায়ের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো দলীল আছে কি? বিশেষ করে যখন ইহরামের পূর্বে কোনো ফরয সালাত না থাকে?
উত্তর (৩৫): রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সালাতের প্রমাণ নেই। আর এজন্য আমরা বলব, যদি কোনো ফরয সালাতের সময় হয় তখন ফরযের পর ইহরাম করবে, অন্যথায় সালাত ব্যতীত ইহরাম করবে। আর যদি ‘সুন্নাতুল ওযু’ (তাহিয়্যাতুল ওযু) হিসেবে দু’রাক‘আত সালাত পড়ে তবে তা উত্তম। অথবা যদি চাশতের (দুহা) সময় হয়, তবে দু’ রাক‘আত সালাতুদ দুহা পড়াও উত্তম।
প্রশ্ন (৩৬): যে ব্যক্তি রমযানে ওমরা করেছে, আর রমযানের কিছু দিন মক্কায় অবস্থান করেছে তার জন্য পুনরায় ওমরা করা উত্তম নাকি বেশি বেশি তাওয়াফ করা উত্তম? অনুরূপভাবে হজ্জের দিনগুলিতেও (বেশি করে উমরা আদায় করা উত্তম নাকি বেশি করে তাওয়াফ করা উত্তম?)
উত্তর (৩৬): উত্তম হলো, বারবার ওমরা না করা। বরং বারবার ওমরা করার বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে প্রসিদ্ধ ছিল না, অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কিরামের যুগেও প্রসিদ্ধ ছিল না। তাই কোনো কোনো আলেম সেটাকে বিদ‘আত বলেও স্পষ্ট মত ব্যক্ত করেছেন। বস্তুত: ওমরা হবে এক সফরে একবার, আর তাওয়াফও বারবার করবে না; যাতে যারা হজ্জ বা উমরার জন্য কা‘বার তাওয়াফ করতে ইচ্ছে করে তাদের জন্য তাওয়াফের স্থান সংকীর্ণ হয়ে না যায়। বরং সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরসহ অন্যান্য আল্লাহর নৈকট্যশীল কাজ করবে।
প্রশ্ন(৩৭): যে ব্যক্তি হজ্জ বা ওমরা করতে আসে এবং মক্কার অন্যান্য মসজিদে সালাত আদায় করে, তবে কি সেসব মসজিদেও অনেকগুণ সওয়াব পাওয়া যায় যা মাসজিদে হারামে পাওয়া যায়?
উত্তর (৩৭): মাসজিদে হারামে যে অধিক পরিমাণে সওয়াব পাওয়া যায় তা অন্যস্থানে পাওয়া যায় না। কেননা সহীহ মুসলিমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
«صَلاَةٌ فِى مَسْجِدِى هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ إِلاَّمَسْجِدَ الْكعبة».
‘‘আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সালাত আদায় করা কা‘বার মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র সালাত আদায়ের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ’’। আলোচ্য হাদীসে কা‘বার মসজিদকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তবে এটা বলা যায় যে, হারাম এলাকার মাসজিদসমূহে সালাত আদায় করা অন্যান্য স্থানের মসজিদসমূহে সালাত আদায় করা থেকে উত্তম; যেহেতু তা হারাম বা সম্মানিত এলাকায় অবস্থিত।
প্রশ্ন (৩৮): আমাদের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ভাইগণ সম্পর্কে আপনার কী বক্তব্য? যারা অন্যদেরকে নিজেদের স্থলাভিষিক্ত করে নিজেরা সাওয়াবের আশায় এবং হারামে বহুগুণ সাওয়াব পাওয়ার মানসে ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করে, অথচ তারা মসজিদের লোকদের থেকে অনুমতি নেয় না, এমনকি হজ্জ ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমতি নেয় না। এমনকি তাদের কেউ কেউ এমন কিছু সংখ্যক লোকদের দায়িত্ব প্রদান করে আসে যারা এ কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। অনুরূপভাবে সেসব রাষ্ট্রের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপারে আপনার কী মত যারা তাদের উপর অর্পিত কাজসমূহ ত্যাগ করে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত সওয়াবের আশায় এবং হারামে সালাত আদায়ের বহুগুণ সওয়াব নিতে ওমরা করতে চলে আসে?
উত্তর (৩৮): এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, নিশ্চয় তাদের কাজের মধ্যে থাকা ওমরায় যাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেননা তারা তাদের কাজে থাকলে ওয়াজিব আদায় করা হবে, যাতে অবহেলা করলে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে তাদের ওমরা করতে যাওয়া একটি নফল কাজ, যা ছেড়ে দেওয়াতে কোনো শাস্তি নেই।
আর এ কারণে আমার উপদেশ সেসব ভাইদের জন্য যারা এসব কাজ করেন একমাত্র সওয়াবের আশায়, আমি তাদের বলব, নিশ্চয় তোমাদের নিজ নিজ কর্মে থাকা ও কাজ করার মধ্যে সাওয়াব রয়েছে। আর ওয়াজিব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তোমাদের ওমরা করতে যাওয়া, নিরাপদ থাকার চেয়ে গোনাহে নিপতিত হওয়ার অধিক নিকটবর্তী।
প্রশ্ন (৩৯): যখন কুরআন তেলাওয়াত সম্পন্ন হবে তখন খতমে কুরআনের দো‘আ পড়া শরী‘আতসম্মত কি? শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া থেকে খতমে কুরআনের দো‘আর বিষয়টি কতটুকু সহীহ?
উত্তর (৩৯): পূর্বেই আমরা বলেছিলাম যে, আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি যখন কুরআন খতম সম্পন্ন করতেন, তখন তার পরিবার-পরিজনকে একত্রিত করতেন এবং দো‘আ করতেন। ফলে কেউ তার অনুসরণ করলে এক্ষেত্রে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আর যে দো‘আ শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (রহ) এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয় তা আমি শুদ্ধ বলে ধারণা করি না। কেননা তার লিখা কোনো গ্রন্থে তা উল্লেখ হয়নি।
প্রশ্ন(৪০): যে ব্যক্তি সা‘ঈ করার স্থানের পিছনে প্রশস্ত খোলা স্থানে সালাত আদায় করবে তার সালাতও কী তার মত বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে যে মসজিদুল হারামের বারান্দায় সালাত আদায় করে?
উত্তর (৪০): যে ব্যক্তি সেখানে পড়বে সে মসজিদুল হারামে সালাত আদায়কারীর মত হবে না, যদি না কাতারসমূহ সেখান পর্যন্ত মিলিত অবস্থায় প্রলম্বিত না হয়। যেমন মাসজিদুল হারাম যদি পূর্ণ হয়ে যায়, অনুরূপভাবে সা‘ঈর স্থানও পূর্ণ হয়ে যায়, তারপর সেখান পর্যন্ত কাতার পৌঁছে যায়, তাহলে আশা করা যায়, যে সেখানে সালাত আদায় করবে সে মাসজিদুল হারামে সালাত আদায় করার মত সাওয়াব পাবে।
প্রশ্ন (৪১): যখন কোনো নারী মক্কায় পৌঁছার পর ঋতুবর্তী হবে আর তার পরিবার-পরিজন মক্কা থেকে সফর করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে সে কি অপেক্ষা করবে নাকি তাদের সাথে সফর করবে? চাই তার সফর এমন হোক যাতে কসর করা যায় অথবা নয়?
উত্তর (৪১): যখন তাওয়াফ করার পূর্বে কোনো নারী ঋতুবর্তী হবে তাকে অবশ্যই পবিত্র হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হবে। তারপর তাওয়াফ করবে ও ওমরা পূর্ণ করবে। কিন্তু যদি ইহরামের সময় এ শর্ত থাকে যে,
«اللهم إن حبسني حابس فمحلي حيث حبستني»
“হে আল্লাহ, যদি কোনো বাধাদানকারী আমাকে বাধা দেয়, তাহলে যেখানে আপনি আমাকে বাধা দিবেন সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব”। তখন সে মহিলা হালাল হয়ে যেতে পারবে এবং পরিবারের সাথে হারাম থেকে বের হয়ে যাবে, এতে তার কোনো অসুবিধা হবে না।
প্রশ্ন (৪২): মক্কা বা অন্যান্য স্থানে প্রচুর ভীড়ে মুসল্লী যদি মাটির উপর সিজদা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে তাহলে তার হুকুম কি?
উত্তর (৪২): শরী‘আতসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে দু’ বাহু প্রসারিত করে সাজদা করা, তা ব্যতীতও যদি কেউ সাজদা দিতে সক্ষম হয়, তাহলে সে সেভাবেই সাজদা করবে। কিন্তু তাও যদি সম্ভব না হয়, তবে বসে পড়বে এবং সিজদার ইঙ্গিত করবে।
কতিপয় আলেমের অভিমত হলো: তখন সে অপেক্ষা করবে যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম সিজদা হতে দণ্ডায়মান না হয়। ইমাম দণ্ডায়মান হলে জায়গা প্রশস্ত হবে অতঃপর সিজদা দিবে।
আর অন্যান্যদের মত হলো, মানুষের পিঠে সিজদা করবে। কিন্তু প্রথম বক্তব্যটি সর্বাধিক সঠিক। আর তা হলো, ইঙ্গিতে সিজদা করা। কেননা এমতাবস্থায় সে (মুসল্লী) অক্ষম। আর যে সিজদা দিতে অক্ষম সে সিজদার প্রতি ইঙ্গিত করবে।
প্রশ্ন (৪৩): যে মহিলা স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করে (ইহরাম অবস্থায়) এটা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা গাইরে মাহরিমদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ে। তার হুকুম কি?
উত্তর (৪৩): ইহরাম অবস্থায় মহিলা হাজী যা ইচ্ছা সে পরিমাণ স্বর্ণের জিনিস ব্যবহার করতে পারবে তবে তা যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে। এমনকি আংটি ও দুই হাতের চুড়ি। কিন্তু এমতাবস্থায় গাইরে মাহরিম ব্যক্তির ফিতনায় জড়িয়ে যাবার অশংকায় তা ঢেকে রাখবে।
প্রশ্ন (৪৪): মহিলার জন্য তাওয়াফের স্থানে ভিড় থাকা অবস্থায় তাওয়াফ করা অথবা পুরুষদের থেকে দূরে অবস্থান করে অন্য ইবাদতে মশগুল হওয়া, এ দু’টির মধ্যে কোনটি উত্তম?
উত্তর (৪৪): যখন ওমরা অথবা হজ্জের মওসুম আসবে উত্তম হলো বার বার তাওয়াফ না করা; এমনকি পুরুষ হলেও, তাহলে মহিলাদের বেলায় বার বার কিভাবে সম্ভব হবে?
প্রশ্ন (৪৫): মহিলা হাজীদের ও ওমরাকারীদের সাথে অপরিচিত পুরুষ থাকলে সেখানে মুখমণ্ডল খোলার হুকুম কি?
উত্তর (৪৫): তাদের জন্য এটা হারাম। মহিলার জন্য চেহারা খোলা রাখা গাইরে মাহরামদের নিকট হজ্জ, ওমরা এবং অন্যান্য স্থানে বৈধ নয়।
প্রশ্ন (৪৬): ইহরাম অবস্থায় বুরকা পরিধান করা ও নাক-মুখ ঢেকে রাখার কাপড় দ্বারা আবৃত করার হুকুম কি?
উত্তর (৪৬): বুরকার বিষয়ে বিধান হচ্ছে, মুহরিম অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের নেকাব পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তাই নাক-মুখ বেঁধে রাখার কাপড় পরিধান করা তো আরও বেশি নিষিদ্ধ। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, মহিলা তার মুখমন্ডলকে ওড়না দ্বারা পূর্ণরূপে ঢেকে ফেলবে যখন তার পাশে কোনো আজনবী তথা গাইরে মাহরাম থাকে। যদি তার পাশে কোনো গাইরে মাহরাম না থাকে তখন অবশ্যই সে তার মুখমণ্ডল খোলা রাখবে।
প্রশ্ন (৪৭): কিছু কিছু মানুষ ইমামের সাথে এগারো রাকা‘আত সালাত আদায় করার পর ইমাম থেকে আলাদা হয়ে যায়, এ ভিত্তিতে যে, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্যান্য সময়ে এগারো রাকআতের বেশি সালাত (তারাবীহ) আদায় করেন নি।” তাদের এ কাজের হুকুম কি?
উত্তর (৪৭): যে ইমাম তারাবীহর সালাত এগারো রাকআতের বেশি আদায় করে সে ইমাম থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া সুন্নাতের বিপরীত। বরং তা হচ্ছে অনেক সাওয়াব ও পূণ্যের কাজ থেকে বঞ্চিত হওয়া। তাছাড়া তা সালাফে সালেহীনের রীতিবিরুদ্ধ কাজ। কারণ যে, যারা (সাহাবীগণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করেছেন তারা তাঁর সালাত শেষ হওয়ার পূর্বে প্রত্যাবর্তন করেন নি। আর সাহাবীগণ তাদের ইমামের অনুযায়ী কাজ করতেন, এমনকি তারা যেটাকে বিধিবদ্ধ মনে করতেন ইমাম তার অতিরিক্ত কিছু করার ক্ষেত্রেও। যেমন ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন মিনায় সালাত পূর্ণ করতেন তখন তারা বিষয়টির বিরোধিতা করলেও ইমামের অনুসরণ করে পূর্ণ সালাতই আদায় করেছিলেন। তারা বলতেন: মতবিরোধ খারাপ।
তাছাড়া এভাবে ইমামকে ছেড়ে তাদের প্রত্যাবর্তন করার মাধ্যমে তারা বড় সাওয়াব থেকে মাহরূম হয়ে গেলো, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«من قام مع الإمام حتى ينصرف كتبت له قيام ليلة»
‘‘যে কেউ ইমামের সাথে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় এবং ইমাম সালাত শেষ না করা পর্যন্ত তার সাথে থাকে তার কিয়ামুল লাইলের প্রতিদান লেখা হয়।’’
এগার রাক‘আতের অধিক হারাম নয়। বরং এটা জায়েয। এর দলীল হলো: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, “দু’ দু’ রাক‘আত করে আদায় করবে, অতঃপর যখন কেউ সকাল হয়ে যাবার আশংকা করে তখন সে এক রাক‘আত পড়বে, ফলে তা সে যা পড়ছে সেটাকে বেজোড় করে দিবে।” এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংখ্যা নির্দিষ্ট করেন নি। যদি এগারো রাক‘আতের অধিক হারাম বা নিষিদ্ধ হতো তবে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করতেন। অতএব, আমার ভাইদের জন্য উপদেশ হলো, ইমাম নামায শেষ না করা পর্যন্ত তারা যেন ইমামের অনুসরণ করে।
প্রশ্ন (৪৮): যে ব্যক্তি রমযানে সওয়াবের আশায় মক্কায় যাবে এমতাবস্থায় যে তার মহিলাদের ব্যাপারে সে উদাসীন; তারা হারামে যাওয়ার সময় সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছে, সে ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার উপদেশ কি?
উত্তর (৪৮): এ ব্যক্তির জন্য মক্কায় যাওয়া সম্ভব আর রমযানে ওমরার কারণে অধিক সওয়াব লাভও সম্ভব হবে। তবে তার উচিত তার মহিলাদেরকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে বারণ করা যেমনিভাবে সে তার দেশে তার মহিলাদেরকে সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে বারণ করবে। ওমরার জন্য যাওয়া আর নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো পরষ্পর সংযুক্ত বিষয় নয়।
প্রশ্ন (৪৯): মসজিদে হারামে এমন শিশুদের সংগে নিয়ে গমন করার বিধান কী, যারা মুসল্লীদের ও কুরআন তিলাওয়াতকারীদের বিরক্তি সৃষ্টি করে?
উত্তর (৪৯): মসজিদসমূহে ছোট শিশুদের সাথে করে যাওয়া জায়েয নয়, চাই তা মসজিদে হারাম হোক অথবা অন্য কোনো মাসজিদ; কারণ, এতে মুসল্লী ও কুরআন তিলাওয়াতকারীদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন (৫০): সাধারণভাবে মুসলিমদের জন্য, আর বিশেষ করে রমযান মুবারাকে ওমরা পালনকারীদের জন্য আপনার কী উপদেশ?
উত্তর (৫০): আমার উপদেশ হলো, তারা অধিক পরিমাণে আল্লাহর আনুগত্যের কাজ করবে। যেমন কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন ও অন্যান্য কাজ করবে এবং হারাম বা নিষিদ্ধ কর্মসমূহ হতে বিরত থাকবে।
———-
আল-ফাতাওয়া আল-মাক্কীয়্যাহ
– শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদ : ড. মোঃ আব্দুল কাদের
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
Post a Comment