মসজিদের আদব

মসজিদের অনেক আদব ও বিধান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নে উল্লেখকরা হল :

১. কারুকার্য বাদ দিয়ে সুন্দর করে বিল্ডিং বানানো, কেননা কারুকার্য করা বেদআত। এতে নামাজির মনোযোগ নষ্ট হয় এবং প্রতিযোগিতা ও অহংকারের দরজা খুলে যায়। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহসাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন, আমাকে মসজিদ সাজাতে নির্দেশ দেয়া হয়নি। ইবনে আব্বাস বলেন, তারা অবশ্যই মসজিদসমূহ সাজাবে, যেমন ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাজাতো। ইমাম বোখারি রহ. বলেন, উমর রা. মসজিদ বানাতে নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, আমি মানুষকে বৃষ্টি থেকে হেফাজত করছি। সাবধান! লাল ও হলুদ রং ব্যবহার করবে না। মানুষ ধাঁধাঁয় পড়ে যাবে। আনাস রা. বলেন, মসজিদ নিয়ে মানুষ গর্ব ও প্রতিযোগিতা করবে, কিন্তু খুব কম লোকই মসজিদ আবাদ করবে।

 ২. কবরের উপর মসজিদ তৈরি করা কিংবা মসজিদে কবর বানানো হারাম। কেননা এটি মূলত কবরের সম্মান প্রদর্শণ এবং আল্লাহতাআলা ব্যতীত কবরের এবাদত করার মাধ্যমে শিরকের রাস্তা তৈরি করে । রাসূলুল্লাহসাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন: لعن الله اليهود والنصارى، اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد. (رواه مسلم : ৮২৫) ইহুদি ও খ্রিস্টানদের উপর আল্লাহতাআলার অভিশাপ। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। জুন্দুব রা. রাসূলুল্লাহসাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি অসিয়ত শুনেছেন, তিনি রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন:― ...وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم وصالحيهم مساجد، ألا فلا تتخذوا القبور مساجد، فإني أنهاكم عن ذلك. (رواه مسلم : ৮২৭) ...তোমাদের পূর্ববর্তীরা নবী ও সৎ লোকদের কবরকে মসজিদ বানাতো। সাবধান! তোমরা কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করছি। কবরস্থানে জানাযার নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাজ বৈধ নয়।

৩. মসজিদ সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখা। অপবিত্র করা বা কষ্টদায়ক জিনিস সেখানে রাখা হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন― البصاق فى المسجد خطيئة وكفارتها دفنها. (رواه النسائي : ৭১৫) মসজিদে থুতু ফেলা অন্যায়, তার কাফ্ফারা হল পুতে ফেলা। পুতে ফেলা সম্ভব না হলে, অন্যভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন, রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমসজিদের দেয়াল থেকে থুতু সরিয়ে ফেলেছিলেন।

৪. মসজিদে নম্রতা ও স্থিরতার সাথে যাওয়া। তাড়াতাড়ি বা দৌঁড়িয়ে না যাওয়া। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন— وإذا أتيتم الصلاة فعليكم بالسكينة، فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فأتموا. (رواه البخاري : ৫৯৯) যখন তোমরা নামাজে আসবে অবশ্যই ধীর-স্থিরতার সাথে আসবে। যতটুকু পাবে, আদায় করবে। আর যতটুকু ছুটে যাবে, পূর্ণ করবে।

৫. মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বের হওয়া। আনাস রা. বলেন―সুন্নত হল যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যখন বের হবে বাম পা দিয়ে বের হবে। প্রবেশ এবং বের হবার দোয়া পড়বে। রাসূলের নির্দেশ :― إذا دخل أحدكم المسجد فليقل اللهم افتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج فليقل اللهم إنى أسألك من فضلك. যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন বলবে : اللهم افتح لي أبواب رحمتك. আর যখন বের হবে তখন বলবে : اللهم إني أسألك من فضلك

৬.মসজিদে আগে আগে যাওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার প্রতি আগ্রহী থাকা―রাসূলুল্লাহসাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন― لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لاستهموا على ذلك، ولو يعلمون ما في التهجير لا سبقوا إليه. (رواه البخاري : ৫৮০) যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার মাঝে কি আছে, আর লটারি ব্যতীত সেটি পাওয়া সম্ভব হত না, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মাঝে কি ফজিলত আছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত। আর যিনি মসজিদে আগে আসবেন, কোন কারণ ছাড়া তার প্রথম কাতার বাদ দিয়ে পিছনে বসা উচিত নয়। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘যে ব্যক্তি আগে আসল এবং কোর ওজর ব্যতীতই প্রথম কাতার ছাড়া অন্য জায়গায় বসল, সে শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করল। পিছনে হটে থাকার দরুন সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করল। রাসূলুল্লাহসাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন― تقدموا، فائتموا بي، وليأتم بكم من بعدكم، لا يزال قوم يتأخرون حتى يؤخرهم الله. (رواه مسلم : ৬৬২) তোমরা সামনের দিকে অগ্রসর হও এবং আমার এক্তেদা কর। আর তোমাদের পরবর্তীগণ তোমাদের এক্তেদা করবে। একটি সম্প্রদায় সব সময় পিছনে থাকবে এক পর্যায়ে আল্লাহতাআলা তাদেরকে পিছনে ঠেলে দেবেন। মসজিদে আগে আসার মাঝে অনেক উপকার। যথা―জামাতের শুরু থেকে অংশগ্রহণ, কোরআন পড়ার সুযোগ, নফল আদায় করার সুযোগ, ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।যতক্ষন নামাজের অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষন নামাজরত আছে বলে ধরা হবে এবং প্রথম কাতার পাওয়া―ইত্যাদি।

৭.মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ব্যতীত বসবে না। আবু কাতাদাহ আনসারী রা. বলেন, রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন, إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلسنّ حتى يصلي ركعتين. (رواه البخاري : ১০৯৭) তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত না পড়া ব্যতীত কখনোই বসবে না। ইমাম সাহেব জুমার নামাজে খুতবা দানরত থাকা অবস্থায় প্রবেশ করলেও এ’দুই রাকাত আদায় করবে তবে একটু সংক্ষিপ্তাকারে আদায় করবে। জাবের রা. রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামথেকে বর্ণনা করেন― إذا جاء أحدكم يوم الجمعة والإمام يخطب فليصل ركعتين ويتجوز فيهما. (رواه أبو داؤد : ৯৪২) ইমামের খুতবা চলা অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সংক্ষেপে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে।

৮. মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা, নামাজি বা তেলাওয়াতকারীকে বিরক্ত করা মাকরূহ। চাই তা সাধারণ কথা হোক বা উচ্চস্বরে কোরআর পাঠ করা হোক। পাশের লোককে কষ্ট দেয়া নিষেধ। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন, إن المصلي يناجي ربه فلينظر بما يناجيه، ولا يجهر بعضكم على بعض بالقرآن. (رواه مالك في المؤطأ : ১৬৩) নামাজি ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে গোপনে কথা বলে। তার খেয়াল রাখা উচিত যে, সে কি বলছে। তোমরা কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের মাধ্যমে একে অন্যের উপর শব্দ কর না।

৯. মুক্তাদী সর্বদা ইমামের অনুসরণ করবে, প্রত্যেক আমল তার পর পরই সাথে সাথে আদায় করবে। ইমামের আদায়ের আগে করবে না, সাথেও করবে না। আবার ইমাম থেকে অনেক দেরিতেও না। রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএরশাদ করেন― إنما جعل الإمام ليؤتم به، فلا تختلفوا عليه، فإذا كبر فكبروا، وإذا ركع فاركعوا، وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا -اللهم ربنا ولك الحمد―وإذا سجد فاسجدوا، وإذا صلى جالسا فصلوا جلوسا أجمعون. (رواه البخاري : ৬৮০) ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাঁর অনুসরণের জন্য, তোমরা তার সাথে বিরোধ কর না। তিনি যখন আল¬াহু আকবার বলবেন, তখন তোমরা আল্লাহআকবার বলবে, আর যখন রুকু করবেন, তোমরা রুকু করবে, যখন سمع الله لمن حمده বলবেন, তোমরা اللهم ربنا ولك الحمد বলবে, যখন সেজদা করবেন, তোমরা সেজদা করবে, যখন তিনি বসে নামাজ আদায় করবেন তখন তোমরা সবাই বসে নামাজ আদায় করবে। ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা হারাম হওয়া সম্পর্কে রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন― أما يخشى الذي يرفع رأسه قبل الإمام أن يحول الله رأسه رأس حمار أو صورته صورة حمار. (رواه أبو داؤد : ৫২৮) যে ব্যক্তি নামাজে ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় তার কি ভয় হয় না যে, আল্লাহতাআলা তার মাথাকে গাধার মাথা বানিয়ে দেবেন কিংবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতি বানিয়ে দেবেন।


___
মুসলিম : ৮২৫

মুসলিম : ৮২৭

নাসায়ী : ৭১৫

বোখারি : ৫৯৯

বোখারি : ৫৮০

মুসলিম : ৬৬২

বোখারি : ১০৯৭

আবু দাউদ : ৯৪২

মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ১৬৩

বোখারি : ৬৮০

আবু দাউদ : ৫২৮

Post a Comment

أحدث أقدم