একটি সহজ আমল


নিজ হাতে আটা পিষতে পিষতে নবীকন্যা ফাতিমা (রাদিআল্লাহু আনহা) এর হাতে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল। কোন এক যুদ্ধের পরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এলে নবীকন্যা রাসুল (সাঃ) সাথে দেখা করতে যান। উদ্দেশ্য - যুদ্ধবন্দীদের মধ্য থেকে নিজের জন্য একজন সেবিকা চাওয়া।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তখন ছিলেন না ঘরে। পরে নবীজি (সাঃ) ঘরে এলে হযরত আ'য়িশা (রাঃ) তাঁকে ফাতিমার আসা এবং সেবিকার অনুরোধের বিষয়টি জানান। সব শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মেয়ের বাড়িতে যান।

রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় 'আলী-ফাতিমা শুয়ে পড়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আসার খবরে তাঁরা দুজনে উঠে বসতে চাইলেও তিনি (সাঃ) বাধা দেন। স্নেহের মেয়ে এবং মেয়ের জামাইয়ের পাশে বসলেন তিনি। তিনি তাঁদের এত কাছে বসলেন যে 'আলী (রাঃ) নবীজির ঠান্ডা পায়ের শীতলতা টের পাচ্ছিলেন। রাসুল (সাঃ) তখন দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন –

"তোমরা যা চেয়েছ, আমি কি তার চেয়ে ভালো একটি বিষয়ের শিক্ষা দেবো তোমাদের? যখন ঘুমাতে যাবে বিছানায়, তখন ৩৪ বার 'আল্লাহু আকবার', ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' এবং ৩৩ বার 'সুবহানাল্লাহ' পড়ো । তোমরা যা চেয়েছিলে আমার কাছে, এই 'আমল তার থেকে অনেক উত্তম।"

এই হাদীসটি 'আলী (রাঃ) নিজে বর্ণনা করেছেন। বুখারী ও মুসলিম - উভয় হাদীসগ্রন্থে সংকলিত হাদীস এটি।

'আলী ইবনে আবু ত্বালিব (রাঃ) তাঁর পুরো জীবনে এই 'আমল করা ছাড়া রাতে ঘুমাতে যান নি। এই কথাটা যখন তিনি উপস্থিত লোকদের জানান, তখন তাঁরা 'আলী (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেন,
– হে আমীরুল মু'মিনীন, সিফ্ফীনের যুদ্ধের রাতেও পড়েছিলেন?
– জ্বী, যুদ্ধের সিফ্ফীনের রাতেও।


শুধু উপকারী জ্ঞান অর্জন করেই থেমে যেতেন না তাঁরা। বরং শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সেই জ্ঞানের উপর 'আমল করাকেও অবশ্য কর্তব্য মনে করতেন তাঁরা। 'আলী (রাঃ) এর ভাষায় -

"অর্জিত জ্ঞান ব্যক্তির 'আমলকে সাথে যোগ দেয়ার জন্য ডাকে। যদি 'আমল জ্ঞানের ডাকে সাড়া দেয়, তবে উত্তম। কিন্তু যদি সাড়া না দেয়, তবে জ্ঞান তাকে ছেড়ে চলে যায়।"

সুব'হানাল্লাহ; কতো উত্তম কথা!
রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুম।

সূত্রঃ
• রিয়াদ্বুস স্বালেহীনঃ অধ্যায় ১৬ (কিতাবুল আযকার), হাদীস ৫২।
• 'আলী ইবনে আবু ত্বালিব (ডঃ আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী) – পৃষ্ঠা ৩৪৫।

সংগ্রহে- জাবেদ কায়সার

Post a Comment

أحدث أقدم