সাহাবীদের জীবন থেকে : যেমন ছিলেন তারা


ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) তার খেলাফাতের সময় প্রায় রাতেই ছদ্ম বেশে বের হতেন। ঘুরে ঘুরে দেখতেন তার সম্রাজ্যের অবস্থা।

সেরকমই এক রাতের কথা। ওমর (রাঃ) বের হয়েছেন, দূরে দেখলেন একটা তাবু। ঐ জায়গায় আগে এই তাবু কখনওই চোখে পড়ে নি। ওমর (রাঃ) চিন্তা করলেন,- যেয়েই দেখা যাক না এই তাবু এখানে কি করে এলো।

তিনি সামনে এগোলেন। তাবুর কাছে গেলেন। দেখেলেন এক লোক তাবুর বাইরে বসে আছে। আর ভেতরে এক মহিলা যন্ত্রণায় চিৎকার করছে।

ওমর (রাঃ) লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ব্যাপারটা কী? কোণ সমস্যা আছে কী?

লোকটা বললঃ আল্লাহ তোমার ভালো করুক। দয়া করে তুমি যা করছিলে তাই কর গিয়ে(অর্থাৎ এখানে নাক গলাতে এস না)।

ওমর (রাঃ) তারপরো জোর দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ কি হয়েছে বল?

লোকটা বললঃ তাবুর ভেতরে যে যন্ত্রণায় চিৎকার করছে সে আমার স্ত্রি। প্রসব বেদনা উঠেছে। বাচ্চা হবে।

ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ তার সাথে ভেতরে কি কেউ আছে? লোকটা বললঃ না। সে একা।

এই লোকের কাছ থেকে তাদের সম্বন্ধে যা জানা গেল তা হল, তার গর্ভবতি স্ত্রিকে নিয়ে সে মদিনা হয়ে কোথাও যাচ্ছিল। পথেই তার স্ত্রির প্রসব বেদনা ওঠে। সুতরাং আর কোন উপায় না পেয়ে , এত রাতে এই মাঝপথে তাবু গেরে বসেছে। এখন অপেক্ষা করছে বাচ্চা প্রসবের।

ওমর (রাঃ) এই কথা জানা মাত্র আর দেরি করলেন না। দ্রুত নিজের বাড়ি গেলেন। বাড়ি পৌঁছে তার স্ত্রি উম্মে কলসুমকে বললেনঃ তুমি কি কিছু ভালো কাজকে গ্রহন করবে যা আল্লাহ তোমার জন্যে পাঠিয়েছেন।
উম্মে কলসুম বললেনঃ আপনি খুশি হলে অবশ্যই গ্রহন করব।

ওমর (রাঃ) বললেনঃ এসো আমার সাথে। একটা মেয়ের বাচ্চা হবে কিন্তু সাথে কেউ নেই।

তিনি তার স্ত্রিকে নিয়ে ঐ তাবুর কাছে গেলেন। আর যাওয়ার সময় তাদের সাথে কিছু ময়দা আর খাবার তৈরির কিছু সরঞ্জাম নিয়ে নিলেন।

তারা দ্রুত তাবুর কাছে পৌছলেন। ওমর (রাঃ) এর স্ত্রি উম্মে কলসুম দেরি না করে তাবুর ভেতরে প্রবেশ করলেন।

আর ওমর (রাঃ) বাইরে বসে থাকা লোকটাকে বললেনঃ একটা কাজ কর একটু আগুন জ্বালাও। লোকটা অল্প জায়গা নিয়ে একটা আগুনের ব্যাবস্থা করল। আর সেখানে ওমর (রাঃ) খাবার রান্না শুরু করলেন।

ওমর (রাঃ) যখন খাবার রান্না করছেন তখন ভেতর থেকে তার স্ত্রি উম্মে কলসুম চিৎকার করে বললেনঃ হে আমিরুল মুমিনিন (সেই সময় খালিফাকে আমিরুল মুমিনিন ডাকা হত)! আপনার বন্ধুকে অভিনন্দন দিন। আল্লাহর রহমতে তার পুত্র হয়েছে।

লোকটা তার সন্তানের সংবাদ পেয়ে বেজায় খুশি হল , কিন্তু তার পাশে এই যে লোকটা বসে রান্না করছে এটা কে? ভেতর থেকে ঐ মহিলা বলল আমিরুল মুমিনিন(!!!)

কি সর্বনাশ!!! এই যে চুলার উপর রান্না চড়িয়ে বসে আছেন। এ আর কেউ নন বরং মুসলিম জাহানের খালিফা, আমিরুল মুমিনিন ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

তার অর্থ হলো সে এতক্ষন পাশে বসে যার রান্না দেখছিল সে আর কেউ না স্বয়ং ওমর (রাঃ), লোকটার কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, সে ওমর (রাঃ) এর দিকে অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে তার কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়।

ওমর (রাঃ) তাকে নির্ভয় দিয়ে বললঃ এদিকে আসো । আর এই পাত্রটা নেও রাতের খাবার খাও তোমার স্ত্রিকেও খাওয়াও।

লোকটা ওমর (রাঃ) এর হাত থেকে খাবারের পাত্রটি নিয়ে তাবুর সামনে রাখল। সেখান থেকে উম্মে কলসুম সেই পাত্রটি ভেতরে নিয়ে সেই মহিলাকে খাওয়ালেন।

এই ছিলো আমাদের নেতা । মুসলিম জাহানের খালিফা উমর বিন খাত্তাব (রা)। কালের পরিক্রমায় মুসলিম জাতি উমর (রা) কে হারিয়েছে। দুনিয়া মুখি হতে গিয়ে নিজেদের দ্বীন থেকে ক্রমান্বয়ে দুরে সরে গেছে।

এরপর হারিয়েছে নিজেদের সম্মান এবং আদর্শ। বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে মুসলিম নির্যাতন চলছে। এমন কি মুসলমান নিধন চলছে সিরিয়া , ফিলিস্থিন , ইরাক, আফগানিস্তান সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাল্লা দিয়ে। প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই। কোন মুসলমান নেতা নেই। মুসলমানরা আজ নেতৃত্ব শূন্য। এই নেতৃত্ব শূন্য জাতির জন্যে যোগ্য একজন নেতা প্রয়োজন। যে আবার এই জাতিকে আল্লাহর ইচ্ছায় সঠিক পথের দিশা দিতে পারবে। আর এই নেতা তখনই আসবে , যখন এই জাতি আবার তার পরিচয় খুঁজে পাবে। দ্বীনের দিকে ফিরে যাবে এবং কুরআন এবং সুন্নাতের সাথে আবারও সম্পর্ক স্থাপন করবে।


আরো পড়ুন:


Post a Comment

أحدث أقدم