২৭শে রজব লাইলাতুল মিরাজ এটি প্রমাণিত নয়। ইসরা ও মিরাজ সত্য কিন্তু এর তারিখ জানা যায় না।এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে ইবাদত বন্দেগির উদ্ভব ঘটানো বিদআত। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র) এর এই বইটির ২২৮ পৃষ্ঠা থেকে দেখতে পারেনঃ https://goo.gl/qLxAvz
.
তবে আমি যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে চাচ্ছি তা হচ্ছে--মিরাজের সত্যতা নিয়ে ইসলামবিরোধিদের আপত্তি।ইসলাম বিরোধীদের মুহাম্মদ(ﷺ)কে আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে ইসরা ও মিরাজ।মুহাম্মদ(ﷺ) এর মিরাজকে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে কটু কথা বলে খ্রিষ্টান মিশনারী আর তাদের মিডিয়া ইভানজেলিস্টরা। অথচ খোদ তাদের কিতাব থেকে কিন্তু ইসরা ও মিরাজের সত্যতা প্রমাণিত হয়!! চলুন দেখি তাদের কিতাবে কী লেখা আছে---
.
✡ ✞ " এদিকে যাকোব {ইয়া'কুব(আ)} বের-শেবা ছেড়ে হারণ শহরের দিকে যাত্রা করলেন।পথে এক জায়গায় বেলা ডুবে গেলে তিনি সেখানেই রাতটা কাটালেন। সেখানে কতগুলো পাথর পড়ে ছিল। যাকোব সেগুলোর একটা মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পড়লেন।
.
তিনি স্বপ্নে দেখলেন মাটির উপরে একটা সিঁড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং তার মাথাটা গিয়ে স্বর্গে ঠেকেছে। তিনি দেখলেন ঈশ্বরের স্বর্গদূতেরা(ফেরেশতা) তার উপর দিয়ে ওঠা-নামা করছেন, আর সদাপ্রভু ঈশ্বর তার উপরে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি সদাপ্রভু। আমি তোমার পূর্বপুরুষ আব্রাহামের{ইব্রাহিম(আ)} ঈশ্বর এবং ইসহাকেরও ঈশ্বর। তুমি যেখানে শুয়ে আছ সেই দেশ আমি তোমাকে এবং তোমার বংশের লোকদের দেব।তোমার বংশের লোকেরা দুনিয়ার ধূলিকণার মত অসংখ্য হবে। পূর্ব-পশ্চিমে এবং উত্তর-দক্ষিণে তোমার বংশ ছড়িয়ে পড়বে। দুনিয়ার সমস্ত জাতি তোমার ও তোমার বংশের মধ্য দিয়ে আশির্বাদ পাবে।
আমি তোমার সংগে সংগে আছি; তুমি যেখানেই যাও না কেন আমি তোমাকে রক্ষা করব। এই দেশেই আবার আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনব। আমি তোমাকে যা বলেছি তা পূর্ণ না করা পর্যন্ত আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না।”
.
পরে যাকোব{ইয়া'কুব(আ)} ঘুম থেকে উঠে বললেন, “তাহলে সদাপ্রভু নিশ্চয়ই এই জায়গায় আছেন অথচ আমি তা বুঝতে পারি নি।”এই কথা ভেবে তাঁর মনে ভয় হল। তিনি বললেন, “কি অসাধারণ এই জায়গা! এটা ঈশ্বরের ঘর ছাড়া আর কিছু নয়; স্বর্গের দরজা এখানেই।”
যাকোব খুব ভোরে উঠলেন এবং যে পাথরটা তিনি মাথার নীচে দিয়েছিলেন সেটা থামের মত করে দাঁড় করিয়ে তার উপরে তেল ঢেলে দিলেন। তিনি জায়গাটার নাম দিলেন বেথেল (বাইত+এল যার মানে “আল্লাহর ঘর”)। এই জায়গাটার কাছের শহরটার আগের নাম ছিল লূস।"
[ইহুদি তানাখ/খ্রিষ্টান বাইবেল, পয়দায়েশ(আদিপুস্তক/Genesis) ২৮:১০-১৯]
.
মিরাজ সম্পর্কিত হাদিস---
.
✔ "মিরাজ সম্পর্কে আবু সাঈদ খুদরি(রা)-এর বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক বলেন, আমি রাসূল(ﷺ) -কে বলতে শুনেছি যে, বায়তুল মুকাদ্দাসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর আমার সামনে মি'রাজ(একটি সিঁড়ি) উপস্থিত করা হল। আমার সঙ্গী জিবরাইল তার ওপর আমাকে আরোহণ করতে বলেন। সেটি আমাকে নিয়ে আকাশের একটি দরজায় উপস্থিত হল, যার নাম বাবুল হাফাযা অর্থাৎ প্রহরীদের ফটক। ইসমাইল নামক এক ফেরেশতা তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। আবু সাঈদ খুদরি(রা) বলেন, রাসূল(ﷺ) ইরশাদ করেন, আমাকে যখন প্রথম আকাশের দরজার মুখে হাজির করা হল তখন প্রশ্ন করা হল, ইনি কে হে জিবরাইল! তিনি বললেন, মুহাম্মদ(ﷺ) । আবার প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন সেই ফেরেশতা আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন। সেখানে মানব জাতির পিতা আদম (আ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল।...
[বিস্তারিতঃ তাফসির ইবন কাসিরের সুরা বনী ইস্রাঈলের ১নং আয়াতের তাফসির]
.
---->>> বাইবেলের বিবরণ ও ইসরা-মিরাজ সম্পর্কিত হাদিসটিতে একটা কমন জিনিস দেখা যাচ্ছে। আর সেটা হলঃ একটি আসমানী সিঁড়ি।
.
//তিনি স্বপ্নে দেখলেন মাটির উপরে একটা সিঁড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং তার মাথাটা গিয়ে স্বর্গে ঠেকেছে। তিনি দেখলেন ঈশ্বরের স্বর্গদূতেরা(ফেরেশতা) তার উপর দিয়ে ওঠা-নামা করছেন, ...//
.
//বায়তুল মুকাদ্দাসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর আমার সামনে একটি সিঁড়ি উপস্থিত করা হল। আমার সঙ্গী জিবরাইল তার ওপর আমাকে আরোহণ করতে বলেন। সেটি আমাকে নিয়ে আকাশের একটি দরজায় উপস্থিত হল, যার নাম বাবুল হাফাযা অর্থাৎ প্রহরীদের ফটক।...//
.
রাসুল(ﷺ) যে স্থান থেকে আসমানে গিয়েছিলেন{অর্থাৎ যে স্থানে মিরাজ(সিঁড়ি) আনা হয়েছিল}, ঠিক সেই স্থানেই একটি আসমানী সিঁড়ি রয়েছে বলে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কিতাবে লেখা আছে।
যেসমস্ত খ্রিষ্টান ও ইহুদি পণ্ডিত রাসুল(ﷺ) এর মিরাজ নিয়ে বাজে কথা বলেন, আমার বিশ্বাস তাদের কেউ এটা খেয়াল করেননি! করলেও বেমালুম চেপে গিয়েছেন।
রাসুল(ﷺ) নিঃসন্দেহে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কাছে রক্ষিত তাওরাতের পণ্ডিত ছিলেন না।তারা নিশ্চয়ই এটা বলতে পারবে না যে রাসুল(ﷺ) ইয়াকুব(আ) এর ঐ সিঁড়ির কথা ইহুদিদের কিতাব থেকে পড়েছেন!! তিনি আরবি ভাষাই লিখতে পড়তে জানতেন না যেখানে ওল্ড টেস্টামেন্ট/তানাখ এর ভাষা হিব্রু। {{সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ তানাখ/Old testament আরবিতে অনুবাদ করেন ইহুদি পণ্ডিত সাদিয়া গাওন; নবম শতকে। রাসুল(ﷺ) এর প্রায় ৩০০ বছর পরে।}} ঐ পাথরের স্থানে আসমানের দরজা এবং আসমানী সিঁড়ি আছে বলে নবী ইয়া'কুব(আ){Jacob} স্বপ্নে দেখেছেন বলে তাদের গ্রন্থে লেখা আছে এবং নবীদের স্বপ্নকে তারাও সত্য বলে বিশ্বাস করে। আরবিতে এ সিঁড়িকে বলে মি'রাজ।শত শত বছর ধরে রাসুল(ﷺ) এর মি'রাজ নিয়ে আহলে কিতাব ও অন্য সম্প্রদায়ের লোকরা কটূক্তি করে আসছে।
.
[ইয়াকুব(আ) এর ঐ স্থানের পাথরটির উপরেই বনী ইস্রাঈলের নবীগণের বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদ ছিল এবং হাজার হাজার বছর ধরে সেটা ইহুদিদের কিবলা। মসজিদুল হারাম কিবলা হবার আগ পর্যন্ত রাসুল(ﷺ)ও ঐদিকে মুখ করে সলাত পড়তেন।ঐ পাথরের উপরেই বর্তমানে সোনালী গম্বুজের কুব্বাতুস সাখরা মসজিদ।]
.
যে সমস্ত নাস্তিক-মুক্তমনারা মুহাম্মদ(ﷺ) এর ইসরা ও মিরাজ নিয়ে বক্রোক্তি করে, এখানে তাদেরও ভাবনার কিছু খোরাক রয়েছে।তাদেরকে তো অধিকাংশ সময়েই অবাধে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের গ্রন্থ থেকে কোট করতে দেখা যায়।
.
ইসলামবিরোধিরা ইসরা ও মিরাজের আরেকটি দিক নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তোলে আর তা হচ্ছে--ইসরা ও মিরাজের সময়ে কি আদৌ বাইতুল মুকাদ্দাস বলে কোন কিছু ওখানে ছিল? ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোম সম্রাট টাইটাস ইহুদিদের Temple Mount(হিব্রুতে বাইত হা মিকদাশ) ধ্বংস করেন। তাদের এই অভিযোগের জবাব পাওয়া যাবে ২ পর্বের এই নোটে--
১ম পর্বঃ https://goo.gl/YdgBRs
২য় পর্বঃ https://goo.gl/OSlaOc
.
======
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com এবং response-to-anti-islam.com
ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1
Post a Comment