অপ্রমাণ্যের প্রমাণ


সকাল সকাল আবু বকরের (রদিআল্লাহু আ’নহু) কাছে উপস্থিত হয়েছে কিছু লোক। কী যেন শুনতে এসেছে তারা। চোখে মুখে উন্নাসিকতা আর উচ্ছ্বাস।
“তোমার বন্ধু সম্পর্কে এখন কী বলবে, হে আবু বকর!? তিনি তো এখন দাবি করছেন—তিনি নাকি গতরাতে বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়েছিলেন, সেখানে নাকি ইবাদাত করেছেন, আবার এক রাতের মধ্যেই মক্কায় ফিরে এসেছেন।”
আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) ভাবলেন স্বভাবসুলভ মিথ্যাচারই হয়তো করছে কুরাইশরা। “তোমরা আমাকে আগে বলো, তিনি কি সত্যিই এ কথা বলেছেন কি না।” কুরাইশ লোকগুলো হাঁ-সূচক উত্তর দিল। “তিনি তো এখনও লোকদের কাছে এই কাহিনী বর্ণনা করছেন।”
আবু বকর (রদিআল্লাহু আ’নহু) বললেন, “আল্লাহর কসম! যদি তিনি ﷺ একথা বলে থাকেন, তবে তিনি সত্য বলছেন। আর এতে এতো আশ্চর্যের কী আছে? তিনি যখন বলেন যে তাঁর কাছে আসমান থেকে ওহী নাযিল হয়, একজন ফেরেশতা তা তাঁর কাছে নিয়ে আসেন, আমি তো সেসব কথায় বিশ্বাস করি; আর সেগুলো তো তোমাদের এখনকার বর্ণনার চেয়েও বিস্ময়কর!”

.
[২]
মানুষ প্রমাণ খোঁজে, প্রমাণের উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, শত আলোচনা করে জ্ঞান জাহির করে ছাড়ে। গবেষণা আর বিজ্ঞানচর্চার এই যুগে প্রমাণগুলো আজ বৈজ্ঞানিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রমাণ চাই করতে করতে মানুষ যে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাস্তবতা ভুলে যায় তা হলো—প্রমাণ ছাড়াই অনেক অপ্রামাণ্য বিষয়াদি সে বাস্তব জীবনে অনায়াসে স্বীকার করে নেয়, বিশ্বাস করে নেয়—এমন সব অপ্রামাণ্য বিষয়াদি যা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। একটু চোখ বুলানো যাক।
.
দর্শন ও যুক্তিবিদ্যাগত সত্য (Philosophical & Logical Truths)
বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বা Theoretical বিষয়গুলো যুক্তি ও গণিতের ওপর নির্ভর করে প্রমাণ করা হয়। আর বিজ্ঞান যেসব দর্শন ও যুক্তিবিদ্যার ওপর টিকে রয়েছে, সেগুলো বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। যেমন, একই সাথে একটি বিষয় সত্য আবার মিথ্যা হতে পারে না—এই যুক্তিটির ওপর ভিত্তি করে অনেক সময়ই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। অথচ একই সাথে একটি বিষয় সত্য আবার মিথ্যা হতে পারে না’—এই যুক্তিটির নিজেরই কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেওয়া যায় না। এটা কেবলই উপলব্ধির বিষয়। তেমনই দর্শন ও যুক্তিবিদ্যাগত অন্যান্য সমস্ত সত্যগুলোই অপ্রামাণ্য, কেবল উপলব্ধির বিষয়। ‘পৃথিবীর সমস্ত আপেল লাল’—এই বাক্য সত্য হলে ইকবাল সাহেবের কেনা আপেলটি যে লালই হবে, তার আলাদা কোনো প্রমাণ দিতে হয় না। কারণ, দর্শনগত ও যুক্তিগত ধারণাগুলো বিজ্ঞান প্রথমেই সত্য ধরে নিয়েই সামনে এগোয়। তাই সেগুলো আবার প্রমাণ করতে গেলে চক্রাকারে তর্ক (Argument in a circle) ছাড়া আর কিছুই হবে না।
আর গাণিতিক সত্যগুলোও (Mathematical Truths) দর্শনগত ও যুক্তিগত সত্যের আরেকটি রূপমাত্র। যেমন, ‘পাঁচ’ সংখ্যাটির ধারণা বা ‘এক’ এর পর ‘দুই’ সংখ্যাটাই আসে বা এক এক যোগ করলে ‘দুই’-ই হয়—এমন সব অতি সাধারণ গাণিতিক বিষয়গুলোও দর্শনগত উপলব্ধির বিষয়। এগুলো বিজ্ঞান দিয়ে আলাদাভাবে প্রমাণ করতে হয় না।
.
অধিবিদ্যাগত / অবস্তুগত সত্য (Metaphysical Truths):
আমাদের এই জগতটা আসলে কোনো কম্পিউটার সিমুলেশন বা কারো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবজগত আর এতে যা কিছু হচ্ছে তা বাস্তবিকই হচ্ছে। ১০ মিনিট আগে যে ঘটনাটা অতীত হয়েছে তা সত্যিই ঘটেছে, নিজ সত্ত্বা বা ‘আমি’ এর উপলব্ধি, অন্যান্য মানুষের সত্ত্বা বা মনের অস্তিত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো এধরনের সত্যের অন্তর্ভুক্ত এবং বিজ্ঞানের আওতারই বাইরে। কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই আমরা এই জগতের বাস্তবতা, অতীতের বাস্তবতা, নিজ ও অপরাপর সত্ত্বার অস্তিত্ব ইত্যাদি Metaphysical ব্যাপারগুলো দিব্যি মেনে নিই।
তাই হাস্যকর হলেও সত্য, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রমাণ বলে ফেনা তোলা কাউকে নিজের মনের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে বললেই চুপসে যেতে দেখা যায়।
.
মানবিকতা ও নৈতিকতা (Morals & Ethics):
মানবিকতা ও নৈতিকতাকে কখনো বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা বা মাপা যায় না। নাৎসি বিজ্ঞানীরা যে গ্যাস চেম্বারে মানুষ হত্যায় মেতে উঠতো, হিংস্র সব গবেষণায় মেতে উঠতো সেগুলো যে নীতিবিবর্জিত, অমানবিক ছিলো—তা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এছাড়া ধর্ষণ, অজাচার ইত্যাদির মতো নৈতিকতা বিবর্জিত কার্যকলাপের কোনো বৈজ্ঞানিক সদুত্তর নেই। বিজ্ঞান এগুলোর খারাপ প্রভাব দেখাতে পারে মাত্র। কিন্তু এগুলো অপরাধ কিনা সেই প্রশ্নে বিজ্ঞান নীরব।
ধর্মীয় বিশ্বাস আর বিধিবিধানে মুক্তচিন্তার দাবিদারেরা বিজ্ঞান টেনে আনলেও ধর্ষণ, সমকামিতার মতো বিষয়াদিতে ঠিকই ‘মানবিকতা’ আমদানি করে, তখন তাদের বিজ্ঞান পালিয়ে বেড়ায়। বাস্তবতা বিবর্জিত হয়ে যারা LGBT rights বা সমকামিতা সমর্থন করে আর —‘ভালোবাসা যে কারও মধ্যে হতে পারে’, ‘এটা ব্যতিক্রম তবে অস্বাভাবিক কিছু না’— এধরনের ফালতু বাহানা দাঁড় করায়, তাদের বেশিরভাগও অজাচার বা Incest-কে অনৈতিক মনে করে; তখন তাদের ওইসব গাঁজাখুরি যুক্তি আর দেখা যায় না। আবার কিছু কুলাঙ্গার স্রষ্টাকে অস্বীকার করে বিজ্ঞানকে রবের আসনে বসায়। কিন্তু বিজ্ঞান নৈতিকতার প্রশ্নে অচল হওয়ায় ওই কুলাঙ্গাররাও রক্তসম্পর্কের অজাচারকে অনৈতিক প্রমাণ করতে পারে না; তবুও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদেরকে যদি বলা হয় নিজ স্ত্রীকে নিজ ছেলের সাথে অজাচার করতে দেবে কিনা—তখন ওদেরও ঠিকই নৈতিকতা চলে আসে। আর সর্বশেষ শ্রেণির যেসব চূড়ান্ত কুলাঙ্গাররা নৈতিকতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অপারগ হয়ে সমকামিতার সাথে সাথে নিজ বাবা-মা, ছেলেমেয়েদের সাথেও এমন অজাচারের বৈধতা দিয়ে দেয়, সেই কুলাঙ্গারদের ব্যাপারে বোঝাই যায় যে এরা আসলে সমাজে কী প্রতিষ্ঠা করতে চায়... এককথায় চূড়ান্ত মাত্রার ব্যভিচার ও অরাজকতা—ঠিক যেমনটা শয়তান চায়।
নৈতিকতা এবং এর থেকে উৎসারিত অপরাধবিজ্ঞান গড়েই উঠেছে ধর্মীয় অনুশাসনগুলোকে কেন্দ্র করে। কারণ, কারও ইচ্ছা হলেই কোনো কিছু করে ফেলতে পারবে কিনা—এমন সমস্ত বিষয়াদি শেষমেশ নৈতিকতার প্রশ্নেই এসে দাঁড়ায়, যা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে। আর মানুষভেদে যেহেতু নৈতিকতার মূল্যায়ন ভিন্ন, তাই যে-কেউ দাবি করতেই পারে যে, সে আরেকজনের নির্ধারণ করে দেওয়া নৈতিকতার স্কেলে চলবে না। তাই এক্ষেত্রেও সবচেয়ে যৌক্তিক হলো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্ধারিত সার্বজনীন নৈতিকতা মেনে নেওয়া। তাছাড়া, সৃষ্টিকর্তাই বিধান প্রদান ও নৈতিকতার স্কেল নির্ধারণের সবচেয়ে বেশি হকদার ও একচ্ছত্র অধিকারী। তা না হলে যে যা খুশি তা-ই করতে চাওয়ার অধিকার দিতে দিতে একসময় সভ্যতার পতন নিশ্চিত হয়; একারণেই আধুনিক Individualism, Secularism তথা সেক্যুলার ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। আর সমস্ত অধঃপতনের সূত্রপাত হয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্ধারিত নৈতিকতা ও অনুশাসন ছুঁড়ে ফেলে বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় মেতে উঠে।
ইদানিংকালে সমকামিতা বিষয়ে মানবিকতার প্রশ্ন এড়াতে ‘গে জিন’ (Gay Gene) আবিষ্কারের নতুন ফন্দি আঁটা হয়েছে। অর্থাৎ জন্মগতভাবেই কেউ সমকামি হয়ে গেলে তো একাজে আর অমানবিকতার তীর আসবে না। কিন্তু বহু চেষ্টা হলেও এমন জিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ কারণে বলতে শোনা যায়, বিজ্ঞানীরা ‘ধারণা করছেন’ সমকামিতার কারণ হল ‘গে জিন’। আর তাতেই নাস্তিক্যবাদীদের আস্ফালন শুরু হয়ে যায়, এমন সব নিউজগুলো ফলাও করে প্রচার করতে দেখা যায়। অথচ এমন ধারণা যে তাহলে অন্যসব অপরাধের ক্ষেত্রেও করে নেওয়া যায় অর্থাৎ কেউ সিরিয়ালি খুন করছে —‘কিলার জিন’ এর কারণে, কেউ ধর্ষণ করছে ‘রেপিস্ট জিন’ এর কারণে, এতে তার কোন দোষ নেই, কেবল সেই জিনটা খুঁজে পাওয়া বাকি— একই যুক্তি এসব ক্ষেত্রে ঠিকই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এভাবে যখন যে যুক্তি যেভাবে নিজের কাজে লাগে, সেভাবে যাচ্ছেতাইভাবে জোড়াতালি দিয়ে গড়ে উঠে ওদের তর্কগুলো।
সভ্যতার অধঃপতনের একটি বাস্তব উদাহরণ হলো, আমেরিকায় ৩০–৪০ বছর আগে সমকামিতাকে অপরাধ আর মানসিক ব্যাধি হিসেবে দেখা হলেও এখন সেখানে এটা বৈধ করা হয়ে গেছে। এছাড়া বিশ্বের কিছু জায়গায় Incest Marriage এরও বৈধতা রয়েছে! আবার কিছু জায়গায় রীতিমতো উলঙ্গ হয়ে ঘোরাফেরার অধিকারের জন্য আন্দোলনও চলে। আর বলাই বাহুল্য, সভ্যবেশী অসভ্যদের দেশে মানুষ উলঙ্গ হয়ে চলাফেরার জন্য নির্ধারিত বহু বিচ রয়েছে! এভাবে ধীরে ধীরে পশুর স্তরও অতিক্রম করে নেমে যাচ্ছে ওরা। আর এই সমস্তকিছুর প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিলো স্রষ্টাকে অস্বীকার করে, তাঁর নির্ধারিত নৈতিকতাকে অস্বীকার করে বিজ্ঞান দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা। কারণ ওই একটাই, বিজ্ঞানে ‘নৈতিকতা’ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই!
.
শিল্পকলা ও নান্দনিকতা (Aesthetic and literature):
শিল্পকলার মূল্য বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করা যায় না। সৃজনশীলতা, সৌন্দর্য্যবোধ ইত্যাদি বিষয়গুলো বিজ্ঞানের আওতার বাইরে আর তাই শিল্পসাহিত্যও বিজ্ঞান দ্বারা মাপা যায় না। সে কারণে পাথরের ভাস্কর্য যতো নিখুঁতই হোক না কেন, বিজ্ঞানের হিসাবে তার মূল্য কেজি দরে অন্যান্য পাথরের মতোই। তেমনই চিত্রকর্ম, সাহিত্যকর্ম বাস্তবে যতই সৃজনশীল ও নান্দনিক হোক না কেন, সেগুলোর সবই বিজ্ঞানের হিসাবে রীতিমতো মূল্যহীন। কারণ শিল্পসাহিত্য বিজ্ঞান দ্বারা অপ্রামাণ্য।
দেশীয় কলাবিজ্ঞানীরা আল্লাহকে অবিশ্বাসের জন্য এতো বিজ্ঞান কপচায়, অথচ শিল্পকলারই যে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই তা তাদের মনে থাকে না। এছাড়া শিল্পবোধে আসক্তি বেশিরভাগ সময়েই নগ্নতায় গিয়ে ঠেকে। প্রাচীন গ্রিক ভাস্কর্য থেকে উপমাহাদেশীয় প্রাচীন মূর্তি, চিত্রকর্ম, সাহিত্য সবকিছু সেই সাক্ষ্যই বহন করে। কামনা-বাসনাকে নির্জীব এসব শিল্পমাধ্যমে ধারণ করা মূলত Objectophilia নামক বিকারগ্রস্ততার প্রায়োগিক রূপ। শিল্পচর্চাকারীদের বেশিরভাগই এই মানসিক বিকারগ্রস্ততায় আক্রান্ত হয়ে যায় আর নিজেদের সাহিত্যে-শিল্পকর্মে নগ্নতা, বিকৃত যৌনাচার ইত্যাদির প্রকাশ ঘটায়। চিত্রকর ছবিতে এগুলো ফুটিয়ে তোলে, সাহিত্যিক নিজের গল্প-কবিতা-উপন্যাসের কল্পিত চরিত্রদের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে, তো ভাস্কর ফুটিয়ে তোলে ভাস্কর্যে। শিল্পের আধুনিক রূপ সিনেমা, গান ইত্যাদিতেও শিল্পের নামে বেহায়াপনা, অশ্লীলতার প্রসার হয়। শিল্পের নামে ওদের কাছে সবই চলে।
কিন্তু এরকম বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, অবাধ যৌনাচার বা এমন কিছু হওয়ার সুযোগ রয়েছে তেমন বেশিরভাগ মাধ্যমগুলোকেই ইসলামি অনুশাসন কখনো বৈধতা দেয় না। বৈধতা দেয় না কোনোটিরই লাগামহীনতার। সে কারণেই যুগে যুগে কলাচর্চাকারীদের ইসলামের প্রতি এতো বিদ্বেষ। এককথায়, তারা শিল্পের নামে যা খুশি তা করার স্বাধীনতা চায়। অর্থাৎ, তারা সেক্যুলারিজমই চায় ‘শিল্প’ নামক মুখোশের আড়ালে। এ কারণেই দেখা যায়, যে-ই শিল্পসাহিত্য সচেতন, সে-ই সেক্যুলার। আবার যে সেক্যুলার সেও শিল্পসাহিত্য অনুরাগী।
.
চৈতন্যবোধ (Conscience/Consciousness):
নিজস্ব অনুভূতি বা চৈতন্যবোধ কখনো বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। বিজ্ঞান কখনোই বলতে পারে না ভালোবাসার, ঘৃণার, রাগ-অভিমান করার বা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হবার অনুভূতি কেমন। স্ক্যান করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কিন্তু অনুভূতিগুলো আসলে কেমন তা জানা যায় না।
এছাড়াও অনুভূতি-অভিজ্ঞতা হয় একান্তই নিজস্ব ও ব্যক্তিভেদে একেক রকম। বিশ্বাস, ভালোবাসা ইত্যাদি ছাড়াও সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতি কেমন, ঝর্ণার মৃদু শব্দ শোনার অনুভূতি কেমন—এসব থেকে শুরু করে সাধারণ লাল রঙ দেখার অনুভূতিটিও আসলে একজনের নিকট কেমন—তা বিজ্ঞান তো দূরের কথা, দ্বিতীয় আরেকজনও বলতে পারে না; এমনকি দ্বিতীয়জনকে হুবহু একই বিষয়াদি দেখানো-শোনানো হলেও। চেতনা, অনুভূতি, অভিজ্ঞতার একান্তই ব্যক্তিগত হওয়ার এই ব্যাপারটিকে Qualia বলা হয়ে থাকে।
.
[৩]
বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করা যায় না—এমন অজস্র বিষয়াদি জানার পর ‘বিজ্ঞান’ সম্বন্ধেই কিছু বিষয় লক্ষণীয়।
প্রথমত, অনেকে বিজ্ঞানকে সব সমস্যার সমাধান মনে করে, মনে করে বিজ্ঞান হলো Omnipotent. অথচ দর্শন, যুক্তি, মানবিকতা-নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়াদি যে বিজ্ঞান দিয়ে অপ্রামাণ্য, তা তাদের মাথায় আসে না। তাছাড়াও ‘বিজ্ঞান দিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায়’ বা ‘বিজ্ঞান হলো Omnipotent’ অথবা ‘বিজ্ঞান একসময় ঠিকই উত্তর খুঁজে বের করবে’ এই কথাগুলোও স্রেফ দর্শনগত উক্তি বা বিশ্বাসমাত্র। এই কথাগুলোরও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই! এগুলোও বিজ্ঞানের প্রতি অন্ধবিশ্বাস—একে বলা হয় Scientism যা কিনা New-Atheism এর ভিত্তি।
.
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান আসলে কী? পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, যুক্তিতর্ক, দর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে জগত সম্বন্ধে জানবার পদ্ধতিগত উপায়ই হল বিজ্ঞান। সাধারণত বিজ্ঞান দুই উপায়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় —Deductive reasoning আর Inductive Reasoning. Deductive reasoning-এর মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কিছু দর্শন, যুক্তিতর্ককে সত্য ধরে নিয়ে শেষমেশ সিদ্ধান্তে আসা হয়। আর Inductive Reasoning-এ পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসা হয়। প্রথমটিতে যে কেবলই উপলব্ধি ও দর্শনগত কিছু সত্যকে মেনে নিয়েই সামনে আগানো হয়—তা আগেই আলোচিত হয়েছে। আর ২য় উপায়ে অর্থাৎ, Inductive Reasoning-এ যেসব পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসা হয়, সেগুলোর পরবর্তী পর্যবেক্ষণ সবসময়ই ভিন্ন ফলাফল দেখাতে পারে। যেমন—কেউ যদি একটি শহরের ২০,০০০ কবুতর পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধন্তে আসে যে, এই শহরের কবুতরগুলো সাদা, তাহলে তার সিদ্ধান্ত আপাত সত্য হলেও অ্যাবসোলুট সত্য হবে না। কারণ ২০,০০১ তম কবুতরটি সবসময়ই বাদামি বা ধূসর হতেই পারে। Inductive Reasoning ভিত্তিক এমন বহু তথ্য আমরা ‘বিজ্ঞান’ শব্দের আড়ালে নিত্য অকাট্য ভেবে নিই।
তাছাড়া আরেকজনের পর্যবেক্ষণ থেকে আসা সিদ্ধান্ত যে আসলেও সত্য—সেটা মেনে নিয়ে আমরা মূলত সিস্টেমনির্গত ‘বিজ্ঞানী’ দাবিদারদেরকে বিশ্বাস করে যাই। এছাড়াও রাজনীতির প্রশ্নে, ইতিহাসের প্রশ্নে, নৈতিকতার প্রশ্নে, এরকম আরো অনেক প্রশ্নে আমরা নানাজনের কথা বিশ্বাস করে যাই অহরহ, তখন বলি না চাক্ষুষ প্রমাণের কথা। কিন্তু ‘সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব’ যা উপলব্ধিগতভাবে আমরা অনুভব করি—সে ব্যাপারে বিশ্বাস করতে পারি না ৪০ বছর ধরে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী মানুষটি শেষ নবুওয়্যাতের আর এক রাতের মধ্যে ইসরা-মিরাজের দাবি নিয়ে এলে, লেখাপড়া না জেনেও কুরআনের মত অশ্রুতপূর্ব বাণী নিয়ে এলে, আসলে বিশ্বাস করতে পারি না তা নয়, বরং বিশ্বাস করতে চাই না।
.
তৃতীয়ত, বিজ্ঞান বিভিন্ন বিষয়াদির ব্যাখ্যাস্বরূপ অনেক তত্ত্ব দাঁড় করায়। আর অনেকসময়ই সেসব তত্ত্ব পর্যবেক্ষণেরও অযোগ্য হলেও মানুষ তাতে ‘বিশ্বাস’ করে, স্রেফ বায়াসড সিস্টেমনির্গত ‘বিজ্ঞানীরা’ বিশ্বাস করেন বলে। এই সিস্টেম বায়াসড কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট বস্তুবাদী দর্শনের ওপর গড়ে ওঠা, এবং এই সিস্টেম অন্ধভাবে সায়েন্টিজমে বিশ্বাসী। অর্থাৎ এই সিস্টেম বিশ্বাস করে ‘বিজ্ঞান দিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায় বা যাবে’। বায়াসড এই সিস্টেম থেকে বের হওয়া বায়াসড বিজ্ঞানীদের অপ্রমাণিত মত এবং বিশ্বাসকে উপস্থাপন করা হয় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে। বেশি বেশি প্রচার করা হয় নাস্তিকতার উপসংহারকে সমর্থন করে এমন বিভিন্ন হাইপোথিসিসগুলোকে। ফলস্বরূপ এই সিস্টেমনির্গত অপ্রমাণিত, প্রমাণঅযোগ্য দাবিগুলোকে আমরা হরহামেশা বিশ্বাস করি। যেমন, Multiverse Theory-তে অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাসী, অথচ সবাই জানে যে এই মহাবিশ্বের বাহিরে কোনোকিছু পর্যবেক্ষণও সম্ভব নয়। এখন স্রষ্টাও পর্যবেক্ষণ-আওতামুক্ত, আবার অন্য মহাবিশ্বও পর্যবেক্ষণ-আওতার বাহিরে। তাহলে কেন শেষমেশ থিওরিই বেছে নেওয়া! এবং একে বৈজ্ঞানিক্ব (scientific) বলে দাবি করা? যেন স্রষ্টাকে অবিশ্বাসের জন্যই এতোসব নাটক। তা না হলে যে বস্তুবাদী হওয়া যায় না, পাওয়া যায় না ‘যা খুশি তা করা’র সার্টিফিকেট।
.
চতুর্থত, তাত্ত্বিক বিষয়াদি ছাড়াও পরিমাপসহ অন্যান্য প্রায়োগিক ক্ষেত্রের মূল বিষয়গুলোও আমরা কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়া মেনে নিই। প্র্যাক্টিকালের বিষয়গুলো হলো এককগুলো। যেমন, এক মিটার আসলে কতোটুকু? কেন এতোটুকুই হলো? কেন সামান্য বেশি বা সামান্য কম হলো না—এই প্রশ্নগুলো আমরা কেউ করি না। কারণ এই ধরনের বিষয় মেনে না নিয়ে তর্ক করা আসলে অযথা কালক্ষেপণের খারাপ নিয়্যাতকেই নির্দেশ করে। অথচ একই জিনিস যে আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানগুলোর জন্যও প্রযোজ্য—তা নাস্তিক আর সংশয়বাদীদের খেয়াল থাকে না। এই বিধান এমন কেন হলো, ওটা অমন কেন হল, কেন ওটা এরকম হলো না—এমন সমস্ত প্রশ্নও যে মেনে না নেয়ার খাতিরে অযথা কালক্ষেপণেরই নামান্তর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে নাস্তিক, সংশয়বাদী আর সমঘরানার প্রাণীরা কেবল দুটো কারণে করে থাকতে পারে। এক, তাদের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছে অথবা দুই, কেবল অবিশ্বাসের জন্য তারা ভণ্ডামি বা Hypocrisy-তে মেতেছে।
.
পঞ্চমত, বিজ্ঞানের একটি শাখা Quantum Physics-এর অনেক বিষয়ই আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে অনুধাবণ করা গেলেও বিজ্ঞান তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না। যেমন, Quantum Entanglement হলো ইলেকট্রনের মতো উপপারমাণবিক কণিকাগুলোর এমন এক বিশেষ অবস্থা, যখন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্ব হলেও দু’টি কণিকার মধ্যে একরকম যোগাযোগ থাকে। পুরো মহাবিশ্বে এই অবস্থায় কণিকারা বিরাজমান থাকায় পুরো মহাবিশ্ব রীতিমতো একটা জীবন্ত দেহের মতো! অথচ এটা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম সূত্র—মহাবিশ্বে আলোর গতিবেগ সর্বোচ্চ—এর বিপরীত। এর কারণ হিসেবে কোয়ান্টাম কণিকার জগত আর তার ধর্মকে আলাদা বিবেচনা করেই এর নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বলাই বাহুল্য, অন্যান্য সবকিছুর মতো এখানকার ‘কেন’ প্রশ্নেও বিজ্ঞান নীরব। কীভাবে হয় সে ব্যাখ্যাতেই বিজ্ঞান সীমাবদ্ধ থাকে।
.
[৪] Burden of Proof এর ভুল প্রয়োগ
Burden of Proof হলো কেউ কোনো দাবি নিয়ে এলে সেই দাবির পক্ষে প্রমাণ পেশ করার Burden বা দায়ভার। এতো এতো কিছু প্রমাণ ছাড়া মেনে নিলেও কেবল স্রষ্টার ক্ষেত্রেই এসে নাস্তিকদের Burden of Proof খোঁজাটা আসলে ভণ্ডামিই নির্দেশ করে। কিন্তু সেটা বাদ দিলেও ইতিহাসে Burden of Proof-এর সবচেয়ে বাজে আর বুদ্ধিহীন প্রয়োগ সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, আর সেটা করে যত্তসব বুদ্ধিহীন অথর্বরাই। কারণ আস্তিক-নাস্তিক আলোচনায় Burden of Proof-এর কথা যখন আনা হয়, তখন by default বা আগে থেকেই ধরে নেওয়া হয় যে কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই আর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এক নতুন দাবি। আর তাই দাবিকারীকে নিজ দাবির স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে হবে। যুক্তি ঠিক আছে, তবে প্রয়োগ নয়! বরং সৃষ্টির নৈপুণ্য আর সুবিন্যাস থেকেই by default একজন Intelligent Designer / Manufacturer বা এককথায় স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। ঠিক যেমন এই লেখাটি পড়বার সময় by default একজন লেখকের অস্তিত্ব মন স্বীকার করে নেয়। লেখাটির পেছনে যে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার অস্তিত্ব আছে তা আলাদা করে প্রমাণ করতে হয় না।
.
ডিএনএ কোডিংয়ের কথাও যদি বাদ দেই—মহাবিশ্বের উৎপত্তি, ছায়াপথ, নক্ষত্রসমূহ থেকে শুরু করে অণু এবং আণবিক কণার মতো বস্তুর আকার আকৃতিও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনেকগুলো মৌলিক ধ্রুবকের উপর নির্ভর করে। আর প্রতিটি সংখ্যায় যে পরিমাণ নিখুঁত সমন্বয় করা হয়েছে, তা একজন Intelligent Designer-এর অস্তিত্বের দিকেই নির্দেশ করে। মহাকর্ষ ধ্রুবক যদি ১০৬০ এর (অর্থাৎ, ১ এর পরে ৬০ টি শূন্য) এক ভাগ বেশি বা কম হতো, তাহলে কোনো ছায়াপথ, গ্রহ নক্ষত্র কিছুই সৃষ্টি হতো না। শুধুমাত্র এই ধ্রুবকের অতো সূক্ষ্ম পরিমাণ বিচ্যুতিতেও মহাবিশ্বের সূচনালগ্নেই এর অতিব্যাপ্তি হয়ে যেতো বা মুহূর্তেই ধীর ব্যাপ্তির কারণে পরক্ষণেই গুটিয়ে ধ্বংস হয়ে যেতো। আবার, মহাজাগতিক ধ্রুবকের মান ১০১২০ এর এক ভাগও এদিক-সেদিক হলে তা মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের হারে একই প্রভাব ফেলে কখনো এ পর্যন্ত আসা তো দূরের কথা, মহাবিশ্ব নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যেতো।
যে সমস্ত বিচ্যুতির কথা বলা হচ্ছে, তা যে আসলে কতো ক্ষুদ্র তা বুঝতে পৃথিবীতে মোট যতোটি বালুকণা রয়েছে—তা কল্পনা করা যেতে পারে। এই সংখ্যক বালুকণা দিয়ে যদি একটা ধ্রুবক গঠিত হয়েছে বলে ধরা হয়, তবে পৃথিবীতে আরেকটি বালুকণা যোগ করলে বা একটি সরিয়ে নিলে আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকতো না! প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, পারমাণবিক মৌলিক কণিকাগুলোর ভর, হাবল ধ্রুবকসহ আরও বহু ধ্রুবকের এমন নিখুঁত ভারসাম্য বা Fine Tuning একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বা আছেন এই যৌক্তিক উপসংহারের দিকেই by default নিয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে Burden of Proof আসলে নাস্তিকদের ওপরেই বর্তায়। আমরা সৃষ্টিজগত থেকে স্বভাবজাতভাবেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বুঝি। এটাই হলো by default. এখন তোমরা নিজেদের অস্বীকারের প্রমাণ দাও।
নাস্তিক্যবাদী বিজ্ঞানীরা এমন অসম্ভব নিখুঁত বিন্যাসকে স্রষ্টা ছাড়া ব্যাখ্যা করার চেষ্টায় Multiverse Theory এনেছে যেখানে মূলত বলা হয় পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর যতো সম্ভাবনা হওয়া সম্ভব, তার সবগুলো ক্রমান্বয়ে হয়ে চলছে অর্থাৎ লক্ষ-কোটি বিলিয়ন সংখ্যক মহাবিশ্ব বিভিন্ন মানের মৌলিক ধ্রুবক নিয়ে ক্রমাগত জন্মাচ্ছে আর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনোটি হয়তো টিকে যাচ্ছে কিছুকাল। আর এভাবে করে যে মহাবিশ্বটির সবকিছু এক্কেবারে Perfect হয়ে গিয়েছে, ঠিক সেটাতেই সৌভাগ্যবশত আমরা রয়েছি! অথচ এই তত্ত্ব বা বিশ্বাস প্রমাণের কোনো উপায় নেই। কারণ, অন্য কোনো মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণই সম্ভব নয়। এই তত্ত্বও যে Burden of Proof-এর দাবি রাখে সে কথা আর কেউ বলে না। কেবল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে অবিশ্বাসের জন্য এই সমস্ত রূপকথায় বিশ্বাস আর প্রচার-প্রসার করে চলে। অথচ না দেখেই আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসের কথা এলে, আল্লাহর ইচ্ছায় এক রাতে ইসরা-মিরাজ ভ্রমণের কথা এলে এরাই আবার রূপকথা বলে বলে মুখে ফেনা তোলে।
.
আগেকার যুগের জ্ঞানীরাও সৃষ্টিনৈপুণ্য থেকে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুধাবণ করতে পারতেন। তখন কেবল শুধু আজকের মতো সূক্ষ্ম মানসহ জানা ছিল না। নবি ইবরাহিম (আ.) নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলো দেখে চিন্তাভাবনা করে স্রষ্টায় বিশ্বাসে এসে পৌঁছেছিলেন (৬ : ৭৫), তো অ্যারিস্টটল কল্পনা করেছিল সারাটা জীবন মাটির নিচে কাটিয়ে দেওয়া কিছু মানুষেরা হঠাৎ উপরে উঠে এলে সৃষ্টিবৈচিত্র্য দেখে ঠিকই একজন স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়ে উঠবে। অবশ্য ইব্রাহিম (আ.)যে আল্লাহরই কাছে আন্তরিকভাবে সাহায্য প্রার্থনাস্বরূপ বলেছিলেন, “যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ-প্রদর্শন না করেন, তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।” (৬ : ৭৭) এমন সাহায্য চাওয়া অ্যারিস্টটল বা হালের অ্যান্টনি ফ্লিউদের বেলায় শোনা যায় না। অথচ স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুধাবনের পর তাঁর কাছে আন্তরিকভাবে সাহায্য প্রার্থনাই হলো সর্বপ্রথম দায়িত্ব যা কিনা প্রকৃত মুমিনরা সুরা ফাতিহার মাধ্যমে দিনে কমপক্ষে ১৭ বার করে থাকে।
.
[৫]
আসলে প্রমাণ খোঁজাতে সমস্যা নেই। সমস্যা হল যাচাইয়ের সৎ মানসিকতা থেকে প্রমাণ না খুঁজে অবিশ্বাস পুষে রেখে কালক্ষেপণের জন্য ‘প্রমাণ চাই, প্রমাণ চাই’ বলে বেড়ানো। এমন মানুষদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিই, অন্তরে সৎ নিয়্যাত রয়েছে নাকি কালক্ষেপণের বা সংশয় সন্দেহে ডুবে থেকে দুনিয়াতে যা খুশি তাই করে বেড়ানোর ধান্দা রয়েছে তা সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
ইসরা ও মিরাজের রাতের পরদিন সকালে তাই মক্কার কাফিরদের জন্যও কাফেলার প্রমাণ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি। অথচ আবু বকরও (রদিআল্লাহু আ’নহু) প্রমাণ খুঁজেছিলেন। অতঃপর প্রমাণ পাবার পর ঠিকই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে মুহাম্মাদ (ﷺ) সত্য বলছেন। অর্থাৎ, প্রমাণের চেয়েও বড় হলো আসলেও আপনি আন্তরিক কিনা, আসলেও আপনি বিশ্বাস করতে চান কিনা। নইলে শত-সহস্র প্রমাণেও কোন ফায়দা হবে না। তাই আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বান্দাদের থেকে প্রথমেই চেয়েছেন গায়েবে বিশ্বাস, কারণ যে বিশ্বাস করতে চায় না তার জন্য কোনো প্রমাণই অকাট্য হবে না। সে কারণেই সুরা বাকারার প্রথমেই আল্লাহ বলেছেন ‘যারা গায়েবে বিশ্বাস করে’। কারণ আমরা আসলে প্রমাণ পেয়ে বিশ্বাস করি—তা নয়। বরং একটা বিষয় সচেতন বা অবচেতনভাবে বিশ্বাস করি বলেই প্রমাণ পাই, সে বিষয়ের প্রমাণ গ্রহণ করি। আর আমরা যে সবকি
[তানভীর আহমেদ]

অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com  এবং response-to-anti-islam.com

ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1

Post a Comment

Previous Post Next Post