মুখোশ উন্মোচন - ৩ [পশ্চিমা সমাজের মরিচিকা: তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের ভোগ করা]


নাস্তিক-ইসলামবিদ্বেষীরা যে পশ্চিমা নারী অধিকার ও নারী স্বাধীনতার কল্পকথা শুনিয়ে ইসলামকে আক্রমন করে, মধ্যযুগীয় ও বর্বর বলে, ইসলাম নারীকে অসম্মানিত করেছে এমন দাবি করে, আসুন দেখা যাক সেই পশ্চিমের শিক্ষিত, স্বাধীন, অধিকারপ্রাপ্ত নারীদের আসলে কিসের মুখোমুখি হতে হয়। আসুন দেখি সভ্য পশ্চিম স্বাধীন নারীদের সাথে ঠিক কিভাবে আচরণ করতে শেখায়।
.
২০১৩ সালের আগস্ট । ইউ.এস. এ. । ১৯ বছরের সারা (ছদ্মনাম) খুব খুশি । তার এতদিনের স্বপ্ন পূরন হতে চলেছে । অনেক চেষ্টার পর সে সুযোগ পেয়েছে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার । অবশেষে এসেছে সেই মুহূর্ত। ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় রাতে তার সব ক্লাসমেটেরা পার্টী করছিল ভার্সিটিতে ভর্তির আনন্দে । সারাও ছিল সেখানে ।

.
রাত প্রায় ১ টার দিকে তার এক পুরুষ ক্লাসমেটের সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেল। এই ছেলেটাকে সে আগে কখনো দেখেনি তবে মাঝে মাঝে অনলাইনে কথা হয়েছে । কিছুক্ষন গল্প গুজব করার পর ঐ ছেলেটা তাকে বলল, “চল কিছু ড্রিংক করা যাক । মাথা নেড়ে সায় জানালো সারা – ভালো বলেছ । আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । ছেলেটা সারার গ্লাসে ড্রিংকস ঢেলে দিল । সারা চুমুক দিল গ্লাসে । তারপর তার আর কিছুই মনে নেয় ।
.
নয় ঘন্টা পর যখন তার জ্ঞান ফিরল সে নিজেকে আবিষ্কার করল অপরিচিত এক রুমের বিছানায় । মাথাটা ঝিম ঝিম করছিল, গায়ে একটা সুতা পর্যন্তও নেই, চুলগুলো এলোমেলো । বিছানার পাশে চেয়ারে বসে আছে একটা ছেলে – এই ছেলেটায় গতকাল রাতে তার গ্লাসে মদ ঢেলে দিয়েছিল মনে পড়লো তার । স্থানীয় একটা হাসপাতালে মেডিক্যাল চেকআপের রিপোর্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল সারাকে ধর্ষণ করা হয়েছে । সারা অবশ্য আগে থেকেই এমনটা অনুমান করেছিল ।
.
খুবই দুঃখের বিষয় ইউরোপ আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরকম ঘটনা খুবই কমন । ধর্ষণ আমেরিকার শিক্ষার্থীদের কাছে ডালভাতের মতোই সাধারণ ঘটনা । এই দেশের কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলো পৃথিবীর গতিপথ পাল্টে দেওয়া মানুষ তৈরি করছে সত্য , কিন্তু সেই সাথে তৈরি করছে অনেক ধর্ষক । আমেরিকার স্কুল , কলেজ , ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস গুলোই নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাস ।
.
কিছু পরিসংখ্যান সাহায্য করবে অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে –
.
# এমন ছয়লাখ তিয়াত্তর হাজার শিক্ষার্থী যারা এ মুহূর্তে আমেরিকার কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন তাঁরা জীবনে অন্তত একবার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন । (২০০৭ সালের জরিপ)
.
# প্রতি ২১ ঘন্টায় আমেরিকার কোন না কোন কলেজের ক্যাম্পাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে
.
# প্রতি ১২ জন কলেজেগামী পুরুষ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ জন ধর্ষণের সাথে জড়িত
.
# ধর্ষিত হওয়া ৫৫ শতাংশই নারী সে সময় মাতাল ছিলেন । ৭৫ শতাংশ ধর্ষকেরাই ধর্ষণ করার সময় মাতাল ছিল বা তার অল্প কিছুক্ষন আগে ড্রাগস নিয়েছিল ।
.
# ইংল্যান্ডের প্রতি তিনজন মহিলা শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন তাঁর নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ধর্ষণের শিকার হয় (টেলিগ্রাফ)
.
# আন্ডারগ্র্যাড লেভেলের অর্ধেক মহিলা শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই এমন কাউকে চিনেন যারা তাদের নিজেদের ক্যাম্পাসেই নিজেদের বন্ধুদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে । (টেলিগ্রাফ)
.
# “It is estimated that 1 in 5 women on college campuses has been sexually assaulted during their time there — 1 in 5.” –President Obama, remarks at White House, Jan. 22, 2014
.
“We know the numbers: one in five of every one of those young women who is dropped off for that first day of school, before they finish school, will be assaulted, will be assaulted in her college years.” –Vice President Biden, remarks on the release of a White House report on sexual assault, April 29, 2014 (Washington post)
.
এই রেপগুলোর পেছনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করে অনেক গুলো বিষয়। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুলো হল- পর্ণমুভি, মদ্যপান , গাঁজা, কোকেন এককথায় ড্রাগস , নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশ, নারীদের অভদ্র (indecent) পোশাক আশাক ।
.
ফার্স্ট ইয়ারের ফ্রেশ স্টুডেন্টদের জন্য ওরিয়েন্টশানের দিন থেকে শুরু করে থ্যাংকসগিভিংডে পর্যন্ত এই ছয় সপ্তাহ সবচেয়ে ভয়াবহ । এই সময় তারা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির মধ্যে থাকে যৌন নিপীড়নের । এই সময়টাতে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাদের সংগ্রাম করতে হয় । সেই সাথে সিনিয়রদের “দাদাগিরি” ফলানোতো আছেই ।
.
Association of American Universities এর নতুন প্রতিবেদন (৬) থেকে দেখা যায় গ্র্যাজুয়েশান কোর্স শেষ করার পূর্বে প্রতি চার জন্য নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হন । এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে গত বসন্তে ২৭ টি টপ ইউনিভার্সিটির প্রায় দেড়লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে । এই প্রতিবেদনে আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী নির্যাতনের যে চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা ২০১৪ সালের আগের প্রতিবেদন (1 in a 5 stats, এই প্রতিবেদন দেখেই ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন গঠন করেছিল – white house task force to protect students from sexual assault ) থেকে অনেক ভয়াবহ . White house task force এর প্রথম রিপোর্টে (not alone) অবশ্য বলা হয়েছিল প্রতি চার জন নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন জন ক্যাম্পাসে থাকাকালীন যৌন নির্যাতনের শিকার হন ।
.
প্রায় ৮৪ শতাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষক ভিক্টিমের পরিচিত থাকে । বেশীর ভাগক্ষেত্রেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় ভিক্টিমের বন্ধু, ক্লাসমেট , এক্স- বয়ফ্রেন্ড অথবা পরিচিত অন্য কেউ । প্রতিবেদনে আরো দেখা যায় – ধর্ষণের সময় অধিকাংশ ভিক্টিম স্বাভাবিক সচেতন অবস্থায় ছিলেন না – তারা হয় মাতাল ছিলেন বা কোন হার্ড ড্রাগস নিয়েছিলেন অথবা কোন ভাবে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলেন ।
.
.
সারা তার ধর্ষকের বিরুদ্ধে কোন চার্জ আনেননি এবং জনসম্মুখে প্রকাশও করেননি ঠিক কে তাকে ধর্ষণ করেছিল । আমেরিকাতে ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না । American Civil Liberties Union এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৫ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনাই আনরিপোর্টেড থেকে যায় । এক্সপার্টদের মতে এর কারন হতে পারে ভিক্টিমের মানসম্মান হারানোর ভয়, ধর্ষকদের বিচার না করা বা তাদের প্রতি সমাজের সহানুভূতি । ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হলেও , বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্ষকের গায়ে ফুলের টোকাটা পর্যন্ত পড়ে না আইনী এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে । বোঝেন আমেরিকার এই সমাজ কতটা পচে গেছে ।
.
অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে । অবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে তার প্রশাসন । হিলারী ক্লিনটন ক্যাম্পেইন করছেন , সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে । তবে সেগুলো খুব একটা ফলপ্রসু হচ্ছে না কলেজ, ইউনিভার্সটির কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে । u.s. senate subcommittee on financial & contracting oversight স্বীকার করেছে ৪৪০টি কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি স্যাম্পলের মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশী কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি গত ৫ বছরে একটা যৌন নিপীড়নের ঘটনার তদন্তও ভালোমতো করেনি । বেশীরভাগ কলেজ , ইউনিভার্সটি কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে না তাদের ক্যাম্পাসে ঘটা নারী নির্যাতনের ঘটনা গুলো বের হয়ে আসুক ।
.
কে আর নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চায় ? কেই বা চাইবে নিজেদের গোমর ফাঁস করে দিয়ে সরকার বা কোন দাতব্য সংস্থার ফান্ডিং হারাতে । বাধ্য হয়ে সারা’র মতো শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো চেষ্টা করছেন ক্যাম্পাসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য । বিভিন্ন সোসাইটি বা মুভমেন্টের মাধ্যমে তারা চেষ্টা করছেন ধর্ষণের বিরুদ্ধে সবাইকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার ।
.
সুবহানআল্লাহ! উপরে যতই মহান , সভ্য , উদার , মানবিক বলে মনে হোক না কেন এই হল পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী সভ্যতার আসল চেহারা । স্বাধীনতা আর নারীর সমানাধিকার বলে চিল্লাপাল্লা করে গলা ফাটিয়ে ফেললেও দিন শেষে নারীর ইজ্জতের চেয়ে তাদের কাছে ভাবমূর্তি আর ডলারের মূল্য অনেক বেশী । মদীনাতে একজন মুসলিম মহিলার সম্মানের জন্য মহানবী (সাঃ) ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে ফেলেছিলেন প্রায় । মাত্র একজন মহিলার জন্য । অথচ এই ইসলামকে আজ পুরো বিশ্ব জুড়ে খুব সুপরিকল্পিত ভাবে রিপ্রেজেন্ট করা হচ্ছে নারী স্বাধীনতার হন্তারক হিসেবে । বোরখার আড়ালে মুসলিমরা নারীদের ঘরের চার দেয়ালে আটকে রাখে , সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার দেয় না , মুসলিমরা সেক্স স্টারভড ব্লা ব্লা ব্লা ......
#ডাবলস্ট্যান্ডার্ড
===========================
তথ্যসূত্রঃ
1. One in Four USA. Sexual
2. National Center for Victims of Crime , U.S. Department of Justice, Office
for Victims of Crime (OVC). National Crime Victims' Rights Week Resource Guide.
2009. 3. U.S. Department of Justice. Center for Problem-Oriented Policing.
Acquaintance Rape of College Students.http://www.cops.usdoj.gov/pdf/e03021472.pdf 4.
U.S. Department of Justice.2005 National Crime Victimization Study. 2005. 5.
Crisis Connection. National College Health Risk Behavior Survey. Fisher, Cullen
===========================
উৎস: লস্ট মডেস্টি ব্লগ
লস্ট মডেস্টি ব্লগের আর্টিকেলের লিঙ্কঃhttp://lostmodesty.blogspot.com/2015/12/blog-post_29.html
প্রবন্ধের কপিরাইট © লস্ট মডেস্টি ব্লগ
পুনঃপ্রকাশ, লস্ট মডেস্টি ব্লগ অনুমোদিত
.
অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com  এবং response-to-anti-islam.com

ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1

Post a Comment

أحدث أقدم