" তারপর সে[মরিয়ম(আ)] তাঁকে[ঈসা(আ)] কোলে নিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এলো। তারা বলল, “হে মরিয়ম! তুমি তো এক অদ্ভুতকরেছো!”
‘হে হারুনের বোন! তোমার বাবা তো খারাপ লোক ছিল না। আর তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী’।"
(কুরআন, মারইয়াম ১৯:২৭-২৮)
খ্রিষ্টান মিশনারী ও নাস্তিক-মুক্তমনারা অভিযোগ করে যে—কুরআনে বর্ণিত ঐতিহাসিক তথ্যগুলোতে ভুল আছে [নাউযুবিল্লাহ]। তারা দাবি করে, সুরা মারইয়ামের ২৮নং আয়াতে ঈসা(আ) এর মা মারইয়াম(আ)কে “হে হারুনের বোন” বলে সম্বোধন করা হয়েছে। বাইবেলে বর্ণিত আছে যে মুসা(আ) ও হারুন(আ) এর বোনের নামও মারইয়াম[যাত্রাপুস্তক(Exodus) ১৫:২০]। কাজেই কুরআনে এই দুই মারইয়ামকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে এবং ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে [নাউযুবিল্লাহ]।
এই প্রশ্ন নবী(ﷺ) এর যুগের খ্রিষ্টানরাও তুলতো। এবং স্বয়ং নবী(ﷺ) এর উত্তর দিয়ে গেছেন।
মুগীরা বিন শুবা (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) আমাকে নাজরানের দিকে পাঠান। তারা আমাকে বলল, তোমরা কি কুরআনে এ বাক্য পড় না— يَا أُخْتَ هَارُونَ[“হে হারুনের বোন”; সুরা মারইয়ামের ২৮নং আয়াত] ?
অথচ মুসা ও ঈসার মাঝে কত কালের ব্যবধান ?
আমি তাদের এ প্রশ্নের কী উত্তর দেব জানতাম না। তাই নবী(ﷺ)-এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে এ কথা জানালাম।
তিনি বললেনঃ তুমি কি তাদেরকে এ সংবাদ দিতে পারলে না যে, তারা পূর্ববর্তী নবী ও পূণ্যবান লোকদের নামে তাদের নাম রাখত।
[তিরমিজি, অধ্যায় ৪৭(কুরআন তাফসীর অধ্যায়), হাদিস ৩১৫৫]
[সহীহ(দারুস সালাম)]
সহীহ মুসলিমেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে।
অর্থাৎ মারইয়াম(আ)কে “হারুনের বোন” বলার অর্থ এই নয় যে তিনি মুসা(আ) এর সময়কার মানুষ হারুন(আ) এর বোন। সে যুগে বনী ইস্রাঈলের লোকজন নবী-রাসুল ও পূণ্যবান মানুষের নামে সন্তানদের নামকরণ করত। কাজেই হারুন নামে অনেক মানুষ ছিল। এরপরেও যদি খ্রিষ্টান মিশনারীরা তাদের এই ভ্রান্ত যুক্তি দেখানো চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে আমরা বলব— বাইবেলে বর্ণিত হয়েছে যে মারইয়ামের স্বামীর{কুরআনে মারইয়ামের কোন স্বামীর কথা বলা নেই;} নাম ইউসুফ(যোসেফ)[দেখুন মথি ১:১৬, লুক ২:৫]। এমনকি এই ইউসুফের বাবার নামও ইয়াকুব[দেখুন মথি ১:১৫-১৬] !! অথচ নবী ইউসুফ(আ) বাস করতেন তার হাজার বছর পূর্বে। নবী ইউসুফ(আ) ছিলেন ইয়াকুব(আ)[ইস্রাঈল] এর ১২ পুত্রের একজন; যেই ১২ পুত্রের বংশধররা বনী ইস্রাঈলের ১২ জাতি। বাইবেল লেখকেরা কি মারইয়ামের স্বামীর সাথে বনী ইস্রাঈলের ১২ জনকের একজন, নবী ইউসুফ(আ) এর সাথে মিলিয়ে ফেলেছে?
খ্রিষ্টান মিশনারীরা এর জবাবে অবশ্যই বলবেন—আরে এই ইউসুফ তো সেই ইউসুফ না।সেকালে বনী ইস্রাঈলের লোকজন নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখত। [নাস্তিক-মুক্তমনারাও কোনকালে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না।]
এ কথা বলা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।
.
খ্রিষ্টান প্রচারক ও নাস্তিক-মুক্তমনাদের তাই বলি— দ্বিমুখী নীতি পরিহার করুন।সেই সাথে মুসলিমদেরও উচিত এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং এমন প্রশ্নের সম্মুখিন হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া।
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
إرسال تعليق