প্রমাণ এবং বিশ্বাসের মধ্যকার পার্থক্য


প্রমাণ আর বিশ্বাস, দুটি দুই মেরুর ভিন্ন দুটি বিষয়। ২+২=৪, এটা প্রমাণিত ফ্যাক্ট, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে এটাও প্রমাণিত, চন্দ্র ও সূর্য পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত আবর্তন ঘটায়, এই সবই প্রমাণিত।

এখন প্রশ্ন হলো, যেটা অলরেডি প্রমাণিত, সেটা বিশ্বাস করা আর না করার কিছু আছে কি? যেটা এমনিই প্রমাণিত, সেটা অবিশ্বাস করার মত কোন অপশন ই আসলে বাকি থাকে না। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বিশ্বাস একটি যৌক্তিক বিশ্বাস, স্বভাবজাত, জন্মগত বিশ্বাস। মানুষ তার চারপাশে তাকালেই স্রষ্টার অস্তিত্বের নিদর্শন এমনিতেই চোখে পড়ে, এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষের মহাবিশ্ব স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি এবং এতো নিখুঁতভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ যে সম্ভব নয়, তা যে কোন যৌক্তিক মস্তিষ্ক সহজেই অনুধাবণ করতে জানে।

এখানে প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানের মানদন্ড টেনে আনা মানে বিজ্ঞানকেই নিজের মনের অজান্তে স্রষ্টা হিসেবে মেনে নেয়া, যদিও একজন নাস্তিক না বুঝে অথবা নিজে পরীক্ষা না করে, বিজ্ঞান যা বলে তাই মেনে নেয়, অথচ এই বিজ্ঞানই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।
মানুষকে যেহেতু এই পৃথিবীতে পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেহেতু এখানে অপশন রাখাই হয়েছে এমনভাবে, যে বিশ্বাস করার সে যেমন নিদর্শন খুঁজে পাবে, যে অবিশ্বাস করার সেও কোন না কোন অজুহাত খুঁজে পাবে। ব্যাপারটা এমন না যে, আল্লাহ তাআলা একদিন নেমে এসে সবাইকে দেখিয়ে বললেন, আমি আল্লাহ। তারপরেই সবাই বিশ্বাসী হয়ে ধর্ম কর্ম করা শুরু করে দেবে! মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাস তার ইন্দ্রিয়ের, বা বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্তের চেয়ে বরং মানসিক সিদ্ধান্ত বা যৌক্তিক সিদ্ধান্তের উপর বেশি নির্ভর করে।
.
যে অবিশ্বাস করার নিয়ত করেই ফেলেছে, সে কোন না কোন অজুহাত খুঁজে বের করবেই, কেনোনা যদি সে তা না করে, তবে তার নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে হবে, যা সে মন থেকে চায়না। আল্লাহ তো বলেছেন ই-
.
"যদি আমি তাদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণ ও করতে থাকে, তবুও ওরা একথাই বলবে যে, নিশ্চিত আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে অথবা আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।" (সূরা হিজর- ১৪-১৫)
.
মানুষ কেনো নাস্তিক সাজতে চায় তার সহজ একটা কারণ বলছি- মানুষ যখন নিজের মন মত, খেয়াল খুশি মত, প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে গিয়ে দেখে ধর্ম সেইখানে মূল বাধা, ধর্ম সেখানে সেইগুলোকে ডিসিপ্লিন এর মধ্যে আনতে বলে সেই অনুযায়ী চলতে বলে, সেই জন্য তার বিরুদ্ধে অন্তর কে তৈরি করতে আর নিজের খেয়াল খুশি মত চলতে বিপরীত এক শক্তিশালী অবস্থান এর দরকার হয়, আর তখনই মানুষ নাস্তিকতা কে ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের আদর্শ হিসেবে বেছে নেয়ার চেষ্টা করে।
.
কেনোনা পাপ করতে গিয়ে তার মনে যে আঘাত, কষ্ট অনুভূত হয়, তার প্রতি অন্তর কে সহনীয় করে তুলতে আর পাপ চালিয়ে যেতে অন্তর কে পাপ এর কষ্ট বিরোধী খাবার খাওয়াতে হয়, আর সেখান থেকেই নাস্তিকতার উৎপত্তি ঘটে। কোন মানুষের পক্ষেই নাস্তিক হওয়া আসলে সম্ভব নয়। কেনোনা স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস মানুষের স্বভাবজাত এক বৈশিষ্ট্য। সাইন্স নিজেও ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে পারেনা- যেটা কে বলা হয় “গড মলিকিউল”।
.
স্রষ্টার অস্তিত্ব সত্যিকার অর্থে অন্তরে ধারণ করতে তাকে নিজের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান, স্ট্যান্ডার্ড আর অস্তিত্বের প্রয়োজনেই তার দেয়া নিয়ম কানুন পালনের মধ্য দিয়ে খুঁজতে হয়, অনুধাবন করতে হয়। তথ্য প্রমাণ, নিজস্ব যুক্তির মারপ্যাঁচে স্রষ্টাকে নিজের মত অস্বীকার করা মানেই নিজের স্বার্থ বাঁচাতে সুবিধাবাদী নাস্তিক সাঁজা!
------------
লেখক - মাহফুয আল-আমিন

অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ Click Here  এবং Click Here

ফেসবুক পেজঃ Click Here

Post a Comment

Previous Post Next Post