'কুররাতু আইয়ুন' বই রিভিউ


বইঃ কুররাতু আইয়ুন-যে জীবন জুড়ায় নয়ন
লেখকঃ ডা: শামসুল আরেফীন
সম্পাদনাঃ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ
প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল আসলাফ
প্রচ্ছদঃ আবুল ফাতাহ মুন্না
কলেবরঃ ১১৮ পৃষ্ঠা
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৭৫ টাকা

স্মরণিকা:
—————
মুসলিম সন্তান মুসলিম থাকবে কি না, কাফের সন্তান মুসলিম হবে কিনা - দুটোই নির্ভর করে একটা আমলের উপর - দাওয়াহ। সব নবীর উম্মত গোমরাহ হওয়ার পূর্ব মুমুসলিম ছিলো ।দাওয়র অঅভাবে কাফের হয় গেছে মুসলিমদের পরবর্তী প্রজন্ম। আবার নবী এসেছেন। দাওয়হ শুরু হয়েছে, কাফেরের সন্তানেরা মুসলিম হয়ছেন। দাওয়হ নানা থাকলে মুসলিম বংশের সন্তানও নাস্তিক-মুরতাদ হয় যাবে। এই কিতাবের দ্বারা আল্লাহর কাছে যে বদলা আশাকরি, তা বন্টিত হোক আমাদের পূর্বপুরুষদের সেই লোকগুলোর আমলনামায়, যারা প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন সব কিছুর বিনিময়ে। আরও বন্টিত হোক তাদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে, যারা বংশ পরম্পরায় চালু রেখেছেন দাওয়হকে, যার কারনে আজ আমরা মুসলিম; আমরাও এই দাওয়হ চাচালু রাখবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের পরবর্তী বংশদরদের আমরা বেঈমান দেখতে চাই না।

স্নরণিকা দেখে আশাকরি বুঝতে পেরেছেন লেখক বইটিতে কতটা দরদ দিয়ে কি দিতে যাচ্ছেন।

ভূমিকাসহ বইটিতে মোট ১১ টি টপিক নিয়ে লেখক আমাদের জন্য আদর মিশ্রিত দাওয়াহ বা পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছেন।


পহেলা টপিক, পরিবারে দাওয়াহ:

আমরা অনেকেই আছি পরিবারের বাহিরে দাওয়াহর কাজে সফল হলেও পরিবারে দাওয়াত দিতে ব্যর্থ হই বা সুকৌশল অবলম্বন করতে পারি না। এই টপিক পড়লে আপনি পরিবারের দাওয়াতের ভিন্ন ভিন্ন অসাধারণ কিছু কৌশল রপ্ত করতে পারবেন।
এই ধরুন পিতামাতাকে কিভাবে দাওয়হ দিবেন, নিজের স্ত্রীকে কিভাবে দাওয়াহ দিবেন, স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে দাওয়াহ দিবেন এবং বয়স্ক সন্তানকে কিভাবে দাওয়াহ দিবেন।


২য় টপিক, বিয়ে:

বিয়ের কথা শুনলে আমাদের অনেক চেহারা যেমন উজ্জ্বল হয় উঠে আবার অনেকের আবার ভয় কিকিছুটা মলিন হয়ে যায়। কিন্তু লেখক এইখানে বিয়ের প্রসঙ্গটা কে এত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন যে আপনি বিয়ের প্রকৃত সংজ্ঞা খুঁজে পাবেন ইনশাআল্লাহ। এই ধরুন আপনি বিবাহ পরবর্তী সুখী জীবন কাটাতে বিয়ের পূর্ব কি কি বদঅভ্যাস গুলো ছেড়ে দেওয়া উচিত এবং কিভাবে ছাড়বেন পদ্ধতিগুলো তুলে ধরেছেন।

তারপর পাত্রী দেখা থেকে শুরু করে কেমন পাত্রী নির্বাচন করবেন খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।
পাত্রী নির্বাচন শেষে ইসলামী শরীয়তের অনুমোদিত পদ্ধতিতে কিভাবে বিবাহ কার্য সম্পাদন করবেন এবং ইসলামে শরীয়তের নিষিদ্ধ কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত যে সব কু প্রথা আমাদের সমাজে চালু আছে তা থেকে বের হয়ে আল্লাহর হুকুম ও নবীজীর সুন্নাহর অনুসরণ করে কিভাবে দাম্পত্য জীবনে বারাকাহ ব্যবস্থা করবেন তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।


৩য় টপিক বরফ গলবেই:

বরফ গলবেই নাম শুনে আশাকরি বিষয়টা কি নিয়ে হতে পারে। বিয়ের পরে যখন ফ্যামিলিতে নববধুকে কিভাবে শশুর শাশুড়ির সাথে একটা সু সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় এক্ষেত্রে ছেলে হিসেব আপনার কি কি দায়িত্ব তা অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক এবং একই সাথে (বোনদের জন্যে) স্ত্রী হিসেবে কিভাবে স্বামীর শ্রম লাগব করে পরিবারের সামলানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে কিভাবে পরিবারের মধ্যে সুখের স্রোত ধারা প্রভাহিত করবেন তার সুন্দর দিক নির্দেশনা।
এবং মায়েদের আচারন কেমন হবে পুত্র বধুর সাথে তাও বিষাদ ভাবে তুলে ধরেছেন।


৪র্থ টপিক, আঁতুঘড় : ভেতরে ও বাহির:

সন্তানের তারবিয়াহ জন্মের পরে না, বরং শুরু হয় জন্মের আগ থেকেই। গর্ভধারনেরও আগ থেকে। সন্তান কেমন হবে, তা আল্লাহ নির্ধারিত তাকদীর, গায়েবের চাবি। তবে আমরা চেষ্টার জন্য জবাবদিহি করবো, তাকদিরের জন্য না।
লেখক এইখানে তুলে ধরেছেন সর্ব প্রথম নেক সন্তানের জন্য নিয়ত করা থেকে শুরু করে স্বামী ও স্ত্রীর জীবন যাত্রার পরিবর্তন, আদব ও সুন্নত
বজায় রেখে কিভাবে সহবাস করবেন। বাচ্চা গর্ভে আসার পর গর্ভবতী মায়ের গুনাহ থেকে কিভাবে দূরে থাকবে এবং নেক আমলের পদ্ধতি। আরো আলোচনা করা হয়েছে গর্ভবতী মায়ের যত্ন, খাবারদাবার, প্রসবকাল এবং প্রসব পরবর্তী করনীয়- ডান কানে আযান দেওয়া,বাম কানে ইকামত এবং নবীজীর সুন্নাহ অনুযায়ী 'জন্মাবার পরই মিষ্টিমুখ, ' ইত্যাদি। আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


৫ম টপিক, মানবশিল্প:

লেখক শুরুতেই তুলে ধরেছেন লেখকের পরিবার ও মেয়ের যত্নে উনার স্ত্রী কত পরিশ্রম করে থাকে সকাল থেকে রাত অবধি। খাদিজার(লেখকের মেয়ের নাম) মায়ের কষ্ট তার বাবার(লেখকের) চোখে এইভাবে ধরা দিয়েছে - কোন অভিযোগ নেই, কোন অপারগতা নেই। সাময়িক বিরক্ত যে নেই, তা নয়। তবে তাতে দু'চামচ মমতা মেশানো থাকে।

এরপরেই লেখক আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার ছোটবেলায় ঠিক একই ভাবে আপনার মা বাবা আপনাকে পরম যত্নে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। মুহূর্তে মধ্যে মা বাবার জন্য আপনার হৃদয়ে ভালবাসার ঝড় উঠবে, ইনশাল্লাহ।

সন্তানের প্রতিপালনের জন্য লেখক মায়েদের কে দিয়েছে মানব শিল্পের মর্যাদা। কিন্তু এখানে সবচাইতে বড় বাধা হচ্ছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজের দালাল গুলো তারা নারীদের শিখিয়ে দিয়েছে, ঘরে থাকো মানে তুমি অকম্না, বেকার। কিন্তু এখানেই তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য শক্ত হাতে কলম ধরেছেন, আপনার চিন্তার জগৎকে নাড়িয়ে দিবে । যাতে করে আপনার স্ত্রী ঘরে থাকে বলে আপনি একটুও হীনমন্যতায় না ভোগেন। লেখকের আকুতি, ভাইজান - আপনার স্ত্রীর কারনে আপনার সন্তানের টিচার - খরচ, ডাক্তার-খরচ, ডে-কেয়ার খরচ, আরও কত খরচ বেঁচে যায়, সেটা চোখে পড়ে না। মাস শেষে যে টাকাটা আপনি ব্যাংকে রেখে স্বপ্নের জাল বোনেন, ভাই ওটাই আপনার স্ত্রীর ইনকাম। মানব শিল্পের পিছনে বেঁচে যাওয়া মূল্যটাই জমানোর মওকা মিলে আপনার।

একই সাথে লেখক নারীদের চাকরি - ব্যাবসা করার পক্ষে কর্ম পদ্ধতি খুব সুন্দরভাবে অবতারণা করেছেন - নারীকে পেশা নেবার অনুমোদন ইসলাম দেয়। তবে সে পেশা অফিসে পুরুষ কলিগদের সাথে ৯-৫টা পর্যন্ত দাসত্ব না। সেটা ঘরোয়
পরিবেশে, স্বাধীনভাবে, ইচ্ছেমতো, যে দিন ভালো লাগে পেশা করলাম, যে দিন ভালো লাগছে না, করলাম না এবং সৃষ্টিশীল কাজ---ডাটা এন্ট্রি বা কেরানিগিরি না।
এবং নারীবাদী এজেন্ডাগুলোতে মুসলিম মেয়েরা পা দেওয়ার মূল কারণ এবং এক্ষেত্রে আমাদের পুরুষেদের করনীয় গুলো কি কি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন।


৬ ষষ্ঠ টপিক, সন্তানের তারবিয়াহ:

সন্তানের শিক্ষার তো অনেক ব্যবস্থা আছে, কিন্তু দীক্ষাটা কিভাবে হবে? সচেতন বাবা মাত্রই এই প্রশ্নটি যে কোন সচেতন বাবা মা বুঝতে পারলেও যারা সন্তানের অনেক বাবা এই সম্পর্কে উদাসীন থাকে।
বাচ্চাকে প্রাথমিক শিক্ষা কিভাবে শুরু করবেন এবং কিভাবে শিশুর মনে ইসলামের আকিদর
বীজ বপন করবেন তা জানতে হলে আপনাকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে সন্তানের তারবিয়াহ এই টপিকটি পড়তে হবে। যেখানে আপনি পাবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন নাবালক চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে এবং লোকমান হাকিম কিভাবে আকিদা ও নসিহত শিখিয়েছেন ।


৭ম টপিক, সন্তানের শিক্ষাঃ

দ্বীনী কমিউনিটির মা - বাবাদের একটা অন্যতম পেরেশানির হচ্ছে সন্তানের শিক্ষা। কোন আলমকে কখনো এই বিষয়টি কখনো খুব একটা পেরেশান হতে দেখা যায় না। কিন্তু জেনারেল শিক্ষিত অভিভাবককে সর্বক্ষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয়।

এই টপিকটা আপনার পেরেশানির পরিমাণ পুরোটা না হলে অনেকাংশেই দূর করবে, ইনশাআল্লাহ।


৮ম টপিক: দ্বিতীয় ভাবনা:

আমাদের দেশে ইসলামিক শিক্ষা অর্জন করার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে আমরা বিবেচনা করি সব সময় মাদ্রসা শিক্ষা থেকে , ব্যাপারটা আমরাও স্বীকার করি। কিন্তু একটা বড় অংশ যারা জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে তাদের অনেকেই ইসলামের অনেক মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জানার ঘাটতি থাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য যারা দ্বীনি খেদমতের পিছনে অর্থ ব্যয় করতে চায় তাদের জন্য রয়েছ, অঅসাধারন একটি কর্মপন্থা যাতে করে এই বৃহৎ জেনারেল শিক্ষিতদের কে দুনিয়ার মোড়কে দ্বীন গিলিয়ে দেওয়া যায়। তখন মাদ্রসা শিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আলেম যেমন বের হবে একই সাথে এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে দীনদার মানুষ।


৯ম টপিক, ইসলাম বিরোধী নাস্তিক্যবাদ: প্রস্তাবিত কর্মপদ্ধতি:

অনলাইনে অনেক ভাই আলহামদুলিল্লাহ বেশ দরদী। আল্লাহ এই দরদকে উম্মতের ফায়দায় ব্যবহার করুন, তারা নাস্তিকেদের পোস্টে কমেন্টের পর কমেন্ট করতে থাকেন। তার চেয়েও বেশি ব্রেনওয়ার্ক করতে থাকেন, বিতর্ক করতে থাকেন। শেষ অবধি ফলাফল কি?

নাস্তিকটা যে প্রশ্নটা তুলেছে, সেটা তো সে জানার জন্য তোলেনি। জানতেই যদি চাইতো, তবে সে পোস্ট দিতো না। উপযুক্ত লোকের কাছেই প্রশ্নটা করতো। সে প্রশ্নটা করেছে ট্রল করার জন্য। আপনি কমেন্টে সময় ব্যয় করেছেন মানেই সে সফল, সে আপনাকে কষ্ট দিতে পেরেছে। আপনি Angry React দিচ্ছেন, সে খুসি এটাই সে চেয়েছিলো ।

অনেক সময় দেখা যায় আমরা নাস্তিকেদের বুঝাতে না পারলে আমাদের নিজেদের উপর মেজাজ খারাপ হয়ে যায় বা তাদের ইসলাম বিরোধী কথা শুনলে আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপনার মুখ দিয়ে গালিগালাজ বের হয় যেতে পারে। আলটিমেটলি নিজের আমল নামাতে গুনাহ যুক্ত হবে তাতে লাভ কি হলো?
অনেক সময় ইসলাম সম্পর্কে কম জানা ব্যক্তি তাদের সাথে তর্ক করতে গিয়ে তাদের গর্তে পা দিয়ে নিজেই ঈমান হারা হয়ে যায়, এই সম্পর্কে কয়েকটি বাস্তব উদাহরন টেনে এনেছেন এই অধ্যায়। এজন্য যারা আম পাবলিক লেখক তাদের কে পরামর্শ দিয়েছেন -
- নাস্তিকদের আইডি আনফলো/আন ফ্রেন্ড করে দিন।

- সব নাস্তিক পেইজে আনলাইক করে দিন।

-সব নাস্তিক তর্ক বিতর্ক গ্রুপে আনফলো করে দিন।

-নাস্তিকদের তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দিন, পারলে দুআ করেন, গালি দেবো না একদম।

-কোন নাস্তিক তর্কাতর্কি করার চেষ্টা করলে জবাব দেবো না। ঠিক আছে ভাই, তুমি তোমার মতো আর আমি আমার মতো।

-প্রশ্নের ভঙ্গি দেখে যদি মনে হয় আসলেই সে জানতে চায়, তবে লিংক, বই ইত্যাদি দেবো। আপনার জবাবের চেয়ে লিংক, বই এগুলোতে সে বেশি ভাবনার সুযোগ পাবে।

-ওদের স্ট্যাটাসে আপনার কমেন্ট, React, ফলো শেয়ার এগুলোতে ওদেরই লাভ হয়। পাবলিসিটি বাড়ে, নিউজ ফিডে উপরে চলে আসে।

-ব্যাক্তিগত ইলম চর্চার উপর গুরুত্ব দিবো।

-আরিফ আজাদ, মুশফিক মিনার, সত্যকথন, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড সমগ্র রাখবেন । সবার পড়র দরকার নেই,যার ওয়াসওয়াসা হয়, কেবল তিনি পড়বেন।

-আকিদার ব্যাপারে সঠিক ধারণা রাখবো, আলেমগণের সাথে ওঠাবসা করবো। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাদের পরামর্শ নেবো।


১০ম টপিক, অর্থময় জীবনঃ

দাওয়াতের ক্ষেত্রে একজন দা'ঈর নমনীয়তা, কৌশল এবং ধৈর্য অবলম্বনে কিভাবে সহজে সাফল্য এসে ধরা দেয় তার বাস্তব একটি উদাহরন তুলে ধরেছেন, মুফতি তালহার চুয়াডাঙ্গা সফরের অসাধারণ সাফল্য।
উত্তম আখলাকের মাধ্যমে অনেক সময় মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়, যা অনেক সময় লম্বা লম্বা বয়ানের মাধ্যমে হয় না। লেখক এই অধ্যায় একজন দা'ঈর গুনাবলী সংক্ষিপ্ত করে হলেও খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।


১১তম টপিক, একটি পরীক্ষাঃ
উপেক্ষার উপাখ্যান (একজন অমুসলিম ভাইয়ের প্রশ্নের জবাবে লিখিত) :

এই বিশ্বচরাচরের একজন অভিভাবক আছেন, তিনি স্রষ্টা, তিনিই সত্ত্বাধিকারী, আমরা তার সম্পত্তি, বানানো জিনিস। তিনি মৃত-অজীব নন। জবাব দেন, সাহায্যে করেন, বাবা মায়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন এবং বেশি কনসার্নড। তিনি আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন, বাপের সব সিদ্ধান্ত যেমন সন্তান বোঝে না, ঠিক আল্লাহর সকল চিন্তাধারাও মানব জাতির এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক বোঝার ক্ষমতা থাকবে না স্বাভাবিকভাবেই।

পরীক্ষা হলো কার কাজটা, সবচাইতে সুন্দর হয় - আহসানু - আমালা । কে বাবা মায়ের সাথে, স্ত্রীর সাথে, প্রতিবেশীর সাথে, গরিবের সাথে, পিচ্চি ওয়েটারের সাথে, কাজের মেয়ের সাথে, নিজ ওয়াদা - আমানত, মানে নিজের সাথে এবং নিজ মালিক স্রষ্টার সাথে সবচেয়ে সুন্দর করে। পরীক্ষার সময় লাইফ টাইম।

এই সুন্দর ব্যাবহারের আচরনের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মার্ক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর আচরন ।তার আচরনের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে সবার। যত কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে তত মার্কস উঠবে।
কিন্তু এই পথে আমাদের একমাত্র বাধা হচ্ছে ইবলিশ সয়তান। লেখক সয়তানের প্ররোচনাতে কিভাবে যুগে যুগে মানুষ ধর্মের বিকৃতি ঘটিয়েছে তা তুলে ধরেছেন এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত তা কুরআনের সূরা আনআম এর আয়াত ১০৮ এর উদৃতি দিয়ে তুলে ধরেছেন।

এবং একজন অমুসলিম কে দাওয়াত দিয়ে লেখক যে ঘটনার মুখোমুখি হয়ছেন এবং অমুসলিমের দাওয়াতের সময় সাহাবীদের কর্মপন্থা কেমন ছিলো তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

একটা কুকুর বিড়াল আগুনে পুড়তে থাকলে তাকে বাঁচানো মানবতার দাবি। সেখানে মানুষ, আমারই অমুসলিম ভাই প্রশ্নের ভুল উত্তরের কারনে অনন্ত কাল নরকের ৭০ গুন তেজের আগুনে পুড়বে, এটা আমরা কিভাবে সহ্য করি! অমুসলিম তো আমাদেরই রক্তের ভাই-এক আদমের সন্তান।

লেখকের শেষ আকুতি এমন ছিলো, এখন বলুন দাওয়াত কি অপমান, নাকি আকুতি-সম্পর্কের দাবি, শেষ চেষ্টার আবেগ? আমার জবাব শেষ। এটাই সংক্ষিপ্ত। নইলে বুকের যে কষ্টটা, আকুতিটা, ব্যাথা- সেটা লিখতে গেলে কলম সইতে পারতো না, পারবেও না।


বইয়ের কিছু আকর্ষণীয় দিক:

১) লেখক অত্যন্ত আবেগ দিয়ে লিখেছেন। তাই লেখার ধরন সহজবোধ্য।

২) বইয়ে টীকার ব্যাবহার করা হয়েছে। অনুবাদক নানা তথ্যবহুল সূত্র যোগ করে আলোচনাকে বোধগম্য ও প্রাসঙ্গিক রাখতে চেষ্টা করেছেন।

৩) বইয়ের প্রচ্ছদ সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়।ক্রিম কালারের পেজ কোয়ালিটি।


উপসংহার:
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ওঅসাধারণ একটি বই। যা আমাদের সবার পড়া উচিত, আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন, একই সাথে বইয়ের লেখক, প্রকাশনী এবং বইয়রআ সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহতায়ালা যেন কবুল করেন, আমিন।

Review writer: SI Mithu

Post a Comment

أحدث أقدم