টয়লেট বা বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে দুআ পাঠ: গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা


প্রশ্ন: টয়লেট বা বাথরুমে প্রবেশের পূর্বে কোন দুআ পড়তে হয়? আমি শুনেছি, পেশাব-পায়খানা করার উদ্দেশ্যে টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়লে জিন-শয়তান আর ব্যক্তির মাঝে পর্দা পড়ে যায়। কিন্তু গোসল করতে গেলেও কি দোয়া পড়লে শয়তান আর ব্যক্তির মাঝে পর্দা পড়বে?
আর পেশাব-পায়খানা ছাড়া অন্য কোনো কাজে টয়লেটে প্রবেশ করলেও কি দুআ পাঠ করতে হবে?

উত্তর:

টয়লেট হল নাপাক স্থান। এখানে মানব জাতির দুশমন নাপাক জিন-শয়তানরা ওঁৎ পেতে বসে থাকে মানুষের ক্ষয়-ক্ষতি করার জন্য। তাই এদের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দুআ পাঠ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

সুতরাং আমরা আমাদের প্রয়োজন পূরণ তথা পেশাব, পায়খানা, ওযু, গোসল ইত্যাদি কাজে বাথরুমে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশের পূর্বে হাদিসে বর্ণিত দুআ পাঠ করা কর্তব্য।

নিম্নে এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত দুআ সমূহ বর্ণনা করা হল:

▪আলী ইবনে আবি তালিব রা. থেকে বর্ণিত :
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : قَالَ سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي آدَمَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمْ الْخَلَاءَ أَنْ يَقُولَ بِسْمِ اللَّهِ
رواه الترمذي (606) وصححه الألباني
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন জিন শয়তানের চোখ ও বানী আদমের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হল: বিসমিল্লাহ-"আল্লাহর নামে প্রবেশ করছি" বলা। [সহীহ : তিরমিযী ৬০৬, সহীহুল জামি‘ ৩৫১১]

অর্থাৎ টয়লেটে প্রবেশের সময় 'বিসমিল্লাহ' পাঠ করলে জিন-শয়তানদের দৃষ্টির সামনে পর্দা ফেলে দেয়া হয়। ফলে তারা আর মানুষের লজ্জাস্থান দেখতে পায় না।

▪অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ هذِهِ الْحُشُوْشَ مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا أَتى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَاِبْنُ مَاجَةَ
যায়দ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "এসব টয়লেটে জিন-শয়তানরা উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যারা টয়লেটে যাবে তারা যেন এ দু'আ পড়ে :
أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ.
“আ'উযু বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস”
"আমি আল্লাহর নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।"
[সহীহ : আবু দাউদ ৬, ইবনে মাজাহ্ ২৯৬, সহীহুল জামি‘ ২২৬৩।]

▪অপর বর্ণনায় এসেছে:
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টয়লেটে প্রবেশ কালে বলতেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
"আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস"
"হে আল্লাহ! তোমার নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।" (বুখারি ও মুসলিম)

মোটকথা, কেউ যদি পেশাব, পায়খানা, গোসল বা অন্য কোনো কাজের উদ্দেশ্যে টয়লেটে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তার জন্য সুন্নতি নিয়ম হল, প্রবেশের পূর্বে প্রথমে বিসমিল্লাহ পাঠ করা অত:পর এ দুআ পাঠ করা:
“আ'উযু বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস”
অথবা
"আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবাইস।"
তাহলে আল্লাহ তাআলা তার লজ্জাস্থানকে শয়তানের দৃষ্টি থেকে এবং তাকে শয়তানের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ। অন্যথায় শয়তান মানুষকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মানবজাতির দুশমন শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব)

Post a Comment

Previous Post Next Post