'বেলা ফুরাবার আগে' বই রিভিউ - ১

বই: বেলা ফুরাবার আগে
লেখক: আরিফ আজাদ
রিভিউ: নিশাত তাসনীম

কিভাবে বইটির সম্পর্কে লিখব বুঝতে পারছি না। তবুও নিজের অগোছালো কথাগুলোই লিখলাম।

আগে মনে হতো আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা হয়তো আমাকে ভুলে গেছেন। হয়তো তিনি রাগও করেছেন। কিন্তু আজকের স্থানে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে তিনি আমাকে এতটুকু ও ভুলে যান নি। বরং আমিই মাঝে মাঝে তার স্বরণ থেকে গাফেল হয়ে যাই। সব কাজে তার উপর ভরসা করতে ভুলে যাই।

বেলা ফুরাবার আগে বইটি কেনার আগে এক বান্ধুবির সাথে দেখা। তাকে এ ব্যাপারে জানালে সে দ্রুত বইয়ের জন্য টাকা বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। ওরও একটা বই লাগবে। তখন বেশ কয়েকজনের জন্য একসাথেই বই কিনেছি। এরপর থেকে আমাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কেউ কেউ ফোন করছে আবার কেউ কেউ সামনাসামনি। হারাম রিলেশনশিপ নিয়ে ঝড় উঠে গেছে।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করব?কোনো কোনো স্থানে বইটি অনেক ঝড় তুলেছে। তবে এই ঝড় যে এতো প্রবল তা মুখোমুখি না হলে বোঝা কঠিন। কিন্তু এর চেয়েও বড় ঝড় উঠেছে আমার মনে।

" আল্লাহুমা ইন্নী আসআলুকাল আফিয়াহ" দোয়াটার সাথে পরিচিত থাকলেও তেমন ভাবে আমল করা হতো না। কিন্তু এই বইয়ে এর গুরুত্ব পড়ে আমিও আমল শুরু করলাম। হাটতে, চলতে সবসময়ই বলতাম। খুব অদ্ভুত ভাবে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাকে সাহায্য করছে।

দোয়া কবুলের ঘটনা -

১.

সেমিস্টার ফাইনাল প্রাকটিকাল চলছে। অসুস্থতার জন্য কিছুদিন ক্লাস করতে পারিনি বিধায় খুব ভয়ে ছিলাম। যাই হোক পরীক্ষার দিন সকাল থেকেই আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে দোয়া পড়ে যাচ্ছি। গ্রুপ বিভাজনের সময় আলহামদুলিল্লাহ একজন ভালো স্টুডেন্ট আমার সাথে পড়লো। এক্সপেরিমেন্ট গুলো খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো। এরপর শুরু হলো ভাইভা।

ভাইভা ভালো না হলে মার্কস পাওয়া যায় না। গতবারেও আমি প্রাকটিকালে এ প্লাস পাই নি। অবশেষে কয়েকজন ভাইভা দেয়ার পর দেখলাম অবস্থা খুবই খারাপ। এক্সটার্নাল পুরো অর্গানিক, ইন অর্গানিক সব বই থেকেই প্রশ্ন করছে। আমি শুনে খুব ভীত হয়ে গেলাম। হতাশ হয়ে এবারেরও এ প্লাসের আশা মন থেকে ছেড়ে দিলাম।

এরই মধ্যে আমার এক বান্ধবী আমার খাতা চাচ্ছে। যখন দিলাম তখন ও আমার সামনে খাতায় একটা বিক্রিয়া লিখল। আমি সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। এই পর্যন্তই।

আমি ভাইভার হলে কলম নিয়ে বসে আছি। স্যার বলছেন কি হলো বিক্রিয়া দুটো লিখ? সত্যি বলতে কি এই বিক্রিয়া দুটো আমি পড়ে আসিনি।কিভাবে লিখব বুঝতে পারছি না। পুরোটাই আল্লাহ ভরসা। দোয়া অনবরত চলছেই। হঠাৎই আমার স্মৃতিতে একটা বিক্রিয়া ভেসে উঠলো। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম কোনো দিনই আমার স্মৃতিতে এভাবে পড়া ভেসে উঠে না। আর এটা সেই বিক্রিয়া যেটা আমার বান্ধবী আমার খাতায় লিখেছিল। আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। হাউ ইটস পসিবল।

যেখানে একটি বিক্রিয়া কয়েকবার লিখলেও আমার মনে থাকে না। সেখানে এবার দেখাতে কিভাবে আমার স্মৃতিতে ভাসছে? আল্লাহু আকবার!

কিন্তু পরের বিক্রিয়া টা তো ও খাতায় লিখে নি। এবার কি হবে? আগের মতোই আমার স্মৃতিতে আরেকটি বিক্রিয়া ভেসে উঠলো। খুব অবাক হয়ে গেলাম। ভাইভার আগেই আমার আরেকটা ফ্রেন্ড আমার সামনে দিয়ে আরেকজনের কাছে একটা বিক্রিয়ায় যৌগগুলোর নাম শুনে নিয়েছে। আমি জাস্ট একবার দেখেছি। অদ্ভুত ভাবে এই না পড়া বিক্রিয়াটাও আমার স্মৃতিতে ভাসছিল। আল্লাহু আকবর। 
এরপর আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে।

২.

ফিজিক্স ৩ পরীক্ষা -
সবচেয়ে কঠিন। সবাই পাশ নিয়ে টানাটানিতে থাকে। আমিও ভাইভার প্রিপারেশন না নিয়ে রিটার্নে পাশ করার চিন্তা করছিলাম। তাই ভাইভার প্রিপারেশন জিরো ছিল। কিন্তু কোনো অবস্হাতেই দোয়া করা ছাড়ি নি। আমার হৃদয় টা দোয়ায় ঝুলে ছিল।

পরীক্ষার দিন সকালেই ডিপার্টমেন্টে ঢুকতেই এক্সটার্নালের মুখোমুখি হলাম। আমি চিনতে পারিনি। কিন্তু স্যার হাঁক ছুড়ায় বুঝতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ রিটার্ন পরীক্ষা এতো ভালো হয়েছে বোঝাতে পারব না। অনেকে তো ইয়া নাফসি শুরু করেছে।কারণ প্রতিটি বেঞ্চে একজন করে বসানো সাথে আলাদা আলাদা প্রশ্ন।

এক্সপেরিমেন্ট হলে যখন যৌগিক দোলক করছিলাম তখন এক্সটার্নাল এসে এই এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করলো। আলহামদুলিল্লাহ আমিও উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

এরপর ভাইভা শুরু হলো। কি এক্টা অবস্থা মনে হচ্ছে বিসিএসের ভাইভা নিচ্ছে। এক্সটার্নাল পাশে বসে আছে ক্লাস টিচার ভাইভা নিচ্ছে। ভয়ে কলিজা কাঁপছে। ইতিমধ্যেই আমার ডাক পড়েছে। কোনো রকম ভয়ে কাচুমাচু হয়ে স্যারের সামনে বসলাম। আমি বসতেই এক্সটার্নাল আমার দিকে একজন তাকিয়ে বলল,
-" স্যার ওকে ছেড়ে দিন। আমি ওর ভাইভা নিয়েছি।"
আমি যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তার মানে এক্সপেরিমেন্টের সময় স্যার আমার ভাইভা নিচ্ছিল। আল্লাহু আকবার!

এই হলো একাডেমিক ব্যাপার। এছাড়াও অনেক ঘটনা আছে যেখানে আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাকে সবসময়ই সাহায্য করেন।

৩.

কারনবশত ছোট বোনের মনটা কয়েকদিন থেকেই প্রচন্ড খারাপ। আম্মুও বাসায় নেই। কয়েকদিন শতো চেষ্টা করেও আমি ওর মন ভালো করতে পারিনি। হঠাৎই দোয়াটার কথা মনে পড়লো। এক মূহুর্তও দেরি না করে তৎক্ষনাৎ এই দুয়া পরে ওর মন ভালো করার জন্য প্রার্থনা করলাম। ওর জন্য আফিয়াহ চাইলাম। একটু পর আজান হলো সালাত আদায় করলাম। তখনই ছোট বোন দৌড়ে আসলো আমার কাছে। মুখটি তার হাস্যোজ্জ্বল। অতঃপর আমাকে একটু জড়িয়ে বলল,
-" আপু তুমি ঠিকই বলেছিলে আল্লাহ যেটা করেন সেটাতে নিশ্চয়ই কোনো কল্যাণ আছে। "

আমার তো শুধুই অবাক হওয়ার পালা। দুয়ার কত বড় শক্তি। সুবহানআল্লাহ! এতদিন অনেক চেষ্টা করেও যেটা করতে পারলাম না। অথচ দুয়া করার একটু পরেই সেটা সম্ভব হলো।

এছাড়াও এইরকম অনেক ঘটনা নিয়মিত ঘটেই চলেছে। একদিন শহরের রাস্তায় অটোতে ভুল করে ব্যাগ রেখে বাড়িতে চলে এসেছিলাম। যেই রাস্তায় অসংখ্য অটো চলাচল করে। ব্যাগে অনেক দামী জিনিসপত্র ছিল। কিন্তু আমার পরিচয় পাওয়া যাবে এমন কিছুই ছিল না। ফিরে গিয়ে দেখি অটো সেখান থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আল্লাহু আকবর খুব অদ্ভুত ভাবে আমি ব্যাগটা ফেরত পেরেছি।

আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এখনো আমাকে সাহায্য করেই চলেছেন। আর আমিও অন্যকে এই দোয়ার পরামর্শ দেই। এছাড়াও আমার সেই ফ্রেন্ডদের জন্য এই দোয়ার মাধ্যমেই প্রার্থনা করেছি।

তার কয়েকদিনের মধ্যেই ফোন আসল।

-" নিশাত আমি এখন অনেক ভালো আছি। এখন অনেক পাপ থেকে হালকা লাগছে। প্রথমত বেলা ফুরাবার আগে বইটি আমাকে হেল্প করেছে। আর বাকী সাহায্য টা তুমি করেছ। "

এরা দুজনেই হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড। আমি দুজনের জন্যই আল্লাহর কাছে আফিয়াহ চেয়ে দুয়া করতাম। এখন বইটা দুজনেই পড়েছে আলহামদুলিল্লাহ। 
হারাম রিলেশনশিপ একটা নেশার মতো। চাইলেই এর থেকে বের হয়ে আসা যায় না।

কিন্তু তারা দুজন এখন আর ফোনে কথা বলে না। আল্লাহর জন্যই এই ত্যাগ। আলহামদুলিল্লাহ।

মনে রাখতে হবে, দোয়া করার সময় অবশ্যই মন থেকে চাইতে হবে। আর সেটা যেন নেক নিয়তে হয়। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আরিফ আজাদ ভাই সহ তার পরিবারের সকলকে সেই সাথে মুসলিম উম্মাহকে আফিয়াহ দান করুন।

Post a Comment

أحدث أقدم