বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একটি প্রতারণা


খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) এই যুব সমাজের জন্য ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষে কত সুন্দর কিছু কথা বলেছেন। যা উনার এক ভিডিও লেকচার থেকে নিচে লেখা হলো-


আসলে আজ থেকে ২০ বছর আগেও মানুষ এই দিবসের কথা জানত না, এখন এই দিবস জানেনা এমন বাঙ্গালী নেই, আমরা এই দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন আঙ্গিকে বুঝার চেষ্টা করি...


প্রথম কথা হল বিশ্ব ভালবাসা দিবস বলা হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে, এটা এক ধরনের প্রতারনা বলা চলে কারন আমরা যখন ইংরেজিতে খুজতে যাই বিশ্ব ভালবাসা দিবস, ওয়ার্ল্ড লাভ ডে বা এই ধরনের কোন স্বীকৃতি পরিভাষা কোথাও পাওয়া যায়না। এটার ইংরেজি নাম বা অরিজিনাল নাম হল সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে, যার সহজ অর্থ সাধু ভ্যালেন্টাইনের দিবস, এখন এই নাম থেকে তোমরা সহজেই বুঝতে পারছ যে এটা একটা ধর্মীয় দিবস, একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের বুজুর্গদেরকে তারা সেন্ট বলে বা সাধু, এই সকল সেন্টদের দিবস উপলক্ষে তারা বিভিন্ন উৎসব করে থাকেন।


প্রথমত এটা একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষদের ধর্মীও উৎসব। আর মুসলমানদের জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং এটা ইমান বিধ্বংসী।


মনে করো আমাদের প্রতিবেশী হিন্দু ভাইয়েরা, তাদের একটা ধর্মীয় উৎসব আছে সরস্বতী পুজা, এখন যদি এটাকে আমরা বিশ্ব শিক্ষা দিবস নাম দিয়ে উদযাপন করি তাহলে কোনো মতেই এটাকে আমরা নৈতিক বলতে পারিনা। কারণ এটা একটা নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্মীয় উৎসব।


যেমন আমাদের আছে কুরবানির ঈদ, এটাকে বিশ্ব খাদ্য উৎসব বলে যদি হিন্দু দেরকে অন্য দেরকে এটা পালন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, কৌশলে তাদের দিয়ে এই কুরবানির ঈদ পালন করানো হয় এটাও অনৈতিক হবে।


ঠিক তেমনি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে বা সাধু ভ্যালেন্টাইন দিবস/ সাধু ভ্যালেন্টাইনের ওরস/ সাধু ভ্যালেন্টাইনের বার্ষিকী উপলক্ষে এটাকে প্রতারনা মূলক ভাবে বিশ্ব ভালবাসা দিবস অনুবাদ করে ধর্মীয় দিবসটাকে সেকুলার রূপ দিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলন করা হচ্ছে বা চালু করা হচ্ছে।


এটা নিঃসন্দেহে প্রতারনা। এর মাধ্যমে একটা ধর্মীয় দিবস সেকুলার দিবস মানে ধর্মহীন একটা সাধারণ আনন্দের দিবসে পরিনত হয়েছে ফলে অন্যান্য ধর্মের মানুষেরা খৃস্টান ধর্মের দিবসটা পালন করে তাদের ধর্মকে ক্ষতি গ্রস্ত করছে, ঈমান নষ্ট করে ফেলছে। দুর্ভাগ্যবসত এই বিশ্ব ভালবাসা দিবসের নামে নামাজি বেনামাজি দ্বীনদার বেদ্বীনদার ইসলাম পন্থী অনিসলাম পন্থী সবাই এই দিবসটা পালন করতে শুরু করেছেন আমাদের দেশে, আর এটা হল এই দিবস পালনের প্রথম পর্যায়।


দ্বিতীয় বিষয়টা ভালো করে বুঝো, ভালবাসা অনেক রকমের আছে, যেমন মনে করো মাকে ভালবাসা সন্তানকে ভালবাসা দেশকে ভালবাসা দরিদ্রকে ভালবাসা এগুলোও কিন্তু ভালবাসা। কিন্তু বিশ্ব ভালবাসা দিবসে কোন ভালবাসাকে প্রমোট করা হচ্ছে? কোন ভালবাসাকে?  অশ্লীল ভালবাসাকে, অর্থাৎ নারী পুরুষের জৈবিক ভালবাসাকে?


এখন এই যে ভালোবাসা দিবসের নামে যেটাকে প্রমোট করা হচ্ছে সেটা কী? নারী পুরুষের জৈবিক ভালবাসা। আর মুসলমানের জন্য এটা ভয়ঙ্কর। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,


الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّه ُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُون


"যারা চায় যে মুসলমানদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পরুক তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে ভয়ংকর শাস্তি ও আখেরাতে রয়েছে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি।" (সুরাহ নুর, আয়াত : ১৯)


কারন অশ্লীলতা ছড়ানোর অর্থই সভ্যতা ধ্বংস করে দেওয়া।


দ্বিতীয় বিষয়টা বুঝলে তোমরা, প্রথম হল এটা অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব, এটা উদযাপন করলে মুসলমানদের ইমান নষ্ট হবে। দ্বিতীয় হল এটার মাধ্যমে অশ্লীলতা/অশালিনতাকে প্রমোট করা হচ্ছে, একজন মুসলমান অশালিনতা প্রমোট করতে পারেনা। তাহলে তার দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তি হবে, তার পারিবারিক জীবনে শাস্তি আসবে, সামাজিক জীবনে শাস্তি সে মরনের আগে অনুভব করবে,মরন যন্ত্রণা ভোগ করবে।


এই দিবস পালন করা মানে খৃষ্ট ধর্ম পালন করা, এটা কোন মুসলমান করতে পারেনা। এজন্য আমরা মাঝে মাঝে বলি যে ভ্যালেন্টাইনস দিবসে গিফট দেওয়া পেপ্সি খাওয়া র‍্যালি করার চেয়ে এক দশ বিশ কেজি শূয়রের গোস্ত কিনে ভুনে খেলে গুনাহ অনেক কম হবে কারণ প্রথম কথা শুয়রের গোস্ত খেলে কেউ হালাল জেনে খায় না। গুনাহ হয় বুঝে একবার খেলো।


কিন্তু এই যে খ্রিষ্ট দিবস পালন করছে হালাল জেনে, দ্বিতীয়ত এটা অন্য ধর্মের উৎসব কথা বুঝছ না? তৃতীয়ত একবার শুয়রের গোস্ত খেলে প্রতিদিন এটা খাওয়ার লোভ হয়না, এত মজা শুয়রের গোস্ত মনে হয় না, যা আমরা শুনি।


কিন্তু অশালিনতায় একদিন গেলে পরের দিন আবার মনে হয় যাবো, আবার এই তারুন্যের কারণে অশালীনতা তার মাথায় ঘুরতে থাকে। তার স্বাভাবিক বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়, এই জন্য আমরা সবাই এই দিবস পালনকে বর্জন করব এবং এটা বর্জনের দাওয়াত দিবো এটা বর্জন করতে মানুষদেরকে বলব।


নারী পুরুষের জৈবিক ভালবাসা প্রমোট করা লাগেনা, এটা এমনিই প্রমোটেড। এটাকে কনট্রোল করতে হবে। আর যেটা প্রমোটেড নয় সে গুলোকে প্রমোট করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সেই তৌফিক দেন।

Post a Comment

أحدث أقدم