আল্লাহ তাআ’লা ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন



(১) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গুনাহ করছ, আর আমি তোমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।” সহীহ মুসলিমঃ ২৫৭৭।

(২) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত (কিয়ামত পর্যন্ত) প্রত্যেক রাতে তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করবেন, যাতে দিনের গুনাহগার তাওবা করে। আবার তিনি দিনের বেলায় ক্ষমার হাত প্রসারিত করবেন, যাতে রাতের গুনাহগার তাওবা করে।” মুসলিম, হাদিস নং- ৭১৬৫।

(৩) আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, "আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, "হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, তুমি যা-ই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দেব- আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে (আখেরাতে) সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো।" সুনানে আত-তিরমিযীঃ ৩৫৪০। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী রহি'মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।।

(৪) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি! (হে মানুষেরা!) যদি তোমরা কোন পাপকাজ না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে (দুনিয়া থেকে) সরিয়ে নেবেন এবং এমন এক জাতির আবির্ভাব ঘটাবেন যারা পাপ করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। আর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।” সহীহ মুসলিমঃ ২৭৪৯।

(৫) আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে এই কথা বলতে শুনেছি যে, “এক বান্দা গুনাহ করল। তারপর সেই (গুনাহগার বান্দা) বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমিতো গুনাহ করে ফেলেছি। তাই আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও।” এই কথার উত্তরে তার প্রতিপালক বললেন, “আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক রয়েছে, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। সুতরাং, আমি আমার বান্দাকে আমি মাফ করে দিলাম।” তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছে অনুযায়ী কিছুকাল অবস্থান করল এবং সে আবার গুনাহর কাজে জড়িয়ে পড়লো। তখন (সেই গুনাহগার) বান্দা আবার বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমিতো আবার গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ তুমি মাফ করে দাও।” তখন আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন।” এরপর সেই বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল সে অবস্থায় থাকল। আবারও সে গুনাহতে জড়িয়ে পড়লো। সে বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমিতো আরো একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ তুমি মাফ করে দাও।” তখন আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং এর কারণে শাস্তিও দেন। সুতরাং, আমি আমার এই বান্দাকে মাফ করে দিলাম।” তিনি এই কথাটি তিনবার বললেন।” সহীহ বুখারীঃ ৭৫০৭, সহীহ মুসলিমঃ ২৭৫৮।

(৬) দুনিয়াতে যেই বান্দা বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে, বিচারের দিন সে তার আমলনামা দেখে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করবেঃ

আবদুল্লাহ ইবনু বুসর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি, (বিচারের দিন) যার আমালনামায় ইস্তিগফার বেশি পাওয়া যাবে।” সহীহ : ইবনু মাজাহঃ ৩৮১৮, শুআ’বুল ঈমানঃ ৬৩৮, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আত-তারগীবঃ ১৬১৮, সহীহ আল জামিঃ ৩৯৩০।

যুবায়র বিন আওয়্যাম থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, (বিচারের দিন) তার আমালনামা তাকে আনন্দ দিক, তাহলে সে যেন তার আমালনামাতে ইস্তিগফার বৃদ্ধি করে।” ত্ববারানী আওসাত গ্রন্থে, হায়সামী বলেন, এই হাদীসের সানাদের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য, ইমাম বায়হাক্বীও এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুনযিরী বলেন, এর সনদে কোন দোষ নেই।

(৭) আল্লাহ খুব খুশী হন যখন তাঁর কোন বান্দা তোওবা করে (তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে)। আল্লাহ খুশী হলে আর কোন কল্যাণের ঘাটতি হবে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ খুব খুশী হন যখন কোন বান্দা তাঁর দিকে তোওবা (প্রত্যাবর্তন) করে। (কোন বান্দা তোওবা করলে আল্লাহ) ঐ ব্যক্তির চাইতেও বেশী খুশী হন, যে কোন এক মরুভূমিতে সফর করছিল। এমন সময় এক স্থানে বিশ্রামের জন্য সে তার সওয়ারী থেকে একটু নামে। ঐ সওয়ারীর উপর তার খানাপিনা ছিল। সে গাছের একটু ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। যখন জেগে উঠে দেখে যে, তার বাহনটি কোথায় চলে গেছে। সে এর খোঁজ করতে থাকে। এক উঁচু টিলাতে উঠেও দেখতে পায় না। এরপর আরেক টিলার উপর উঠে কিন্তু সেখান থেকেও তা দেখতে পায়না। এরপর যখন প্রচন্ড তাপ ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে, তখন বলে, আমি যেখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম সেখানে গিয়ে শুয়ে থাকবো মরণ না আসা পর্যন্ত। অতঃপর গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ে এবং বাহনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যায়। এ অবস্থায় একবার সে মাথা উঠিয়ে দেখে যে, তার শিয়রে সেটি দাঁড়িয়ে আছে তার লাগাম মাটিতে ছেঁচড়াচ্ছে, যার উপর তার খানাপিনা ছিল। সে তখন দ্রুত গিয়ে তার লাগাম ধরে এবং প্রচন্ডভাবে খুশি হয়। কোন ব্যক্তি তোওবা করলে মহান আল্লাহ এই লোকটির খুশীর চাইতেও বেশী খুশী হন।” এই ঘটনাটি বিভিন্ন বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, দেখুন তারতীবু সাহিহুল জামেঃ ৪/৩৬৮।

(৮) মুমিন বার বার পাপ করলেও সে তোওবা করে, পাপের উপর অটল থাকেনা। আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “এমন কোন মুমিন বান্দা নেই যার এমন একটি পাপ আছে যাতে সে অভ্যাসবশত বার বার জড়িয়ে পড়ে, অথবা এমন পাপ যার উপর সে অবিচল থাকে, ছাড়তে পারে না, যতক্ষন না সে দুনিয়া ছেড়ে চলে না যায়। (জেনে রাখো) নিশ্চয়ই মুমিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে তাকে পরীক্ষায় ফেলা হয়, আর সে তাওবা করে, কিন্তু আবার ভুলে যায়। কিন্তু যদি তাকে উপদেশ দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় তবে সে তা গ্রহণ করে।” আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারানীঃ ১১৮১০, শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলাহ সহীহাহ।

Post a Comment

أحدث أقدم