ইত্তেবায়ে সুন্নাহ্


আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ ١٣ ﴾ [النساء: ١١٣]
“আল্লাহ আপনার উপর কিতাব (আল-কুরআন) ও হিকমাহ নাযিল করেছেন।” [সূরা নিসা:১১৩]

অধিকাংশ আলেম হিকমাহর তাফসির করেছেন সুন্নাহ বলে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা ‘আলা বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]
“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।” [সূরা নিসা: ৫৯]

আর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়ায় তাঁর সুন্নাহ শরীয়তের দলিল হওয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা অত্যাবশ্যকীয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ جَهَنَّمَ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ٢٣ ﴾ [الجن: ٢٣]
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম, যেখানে সে চিরদিন অবস্থান করবে।” [সূরা জীন: ২৩]

রাসূলের অবাধ্যতা করলে তার জন্য শাস্তির বিধান সাব্যস্ত থাকায় প্রমাণিত হলো যে, সুন্নাহ অবশ্যই আল-কুরআনের মতই হুজ্জত (দলিল)। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ٧ ﴾ [الحشر: ٧]
“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।” [সূরা হাশর: ৭]

যদিও এটা ফাই (যুদ্ধ ব্যতীত অর্জিত) সম্পদের বণ্টনের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাই এর মাল ইজতিহাদ করে বণ্টন করেছেন, তথাপিও আমাদেরকে এ বিধান গ্রহণ করা ওয়াজিব, আর শরীয়তের আহকামের ক্ষেত্রে তো আরো বেশী অগ্রগণ্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ وَذَكَرَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا ٢١ ﴾ [الاحزاب: ٢١]
“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” [সূরা আল-আহযাব: ২১]

রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ বলতে বুঝায় দালালাতুল কুরআন (কুরআনের নস) মুতাবেক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব কাজ করেছেন ও তিনি নিজে যা সুন্নত করেছেন সে সব কাজ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম‘আর খুতবায়ে ঘোষণা করেছেন,
«أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ».
“অতঃপর উত্তম হাদীস (কথা) হলো আল্লাহর কিতাব, আর উত্তম হিদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত।”[1]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন:
«َعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذٌِ»
“তোমরা আমার সুন্নত ও আমার পরে হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের অনুসরণ করো, এগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরো”[2]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি যেন তোমাদের মাঝে কাউকে এমন না পাই যে, সে তার খাটের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে, আর আমি যা আদেশ দিয়েছি বা যা থেকে নিষেধ করছি তা তার কাছে পৌঁছলে সে তখন বলবে: এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি তারই অনুসরণ করি” জেনে রাখো, নিশ্চয় আমাকে কুরআন ও এর অনুরূপ একটি কিতাব (সুন্নাহ) দেয়া হয়েছে।[3]

মু’মিনের উচিত আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক নতুন কিছু সংযোগ করা থেকে বিরত থাকা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ থেকে কড়াভাবে নিষেধ করেছেন। জুম্মার খুতবায়ে এটি তিনি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন:
«أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللهِ، وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ، وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»
“অতঃপর উত্তম হাদীস (কথা) হলো আল্লাহর কিতাব, আর উত্তম হিদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত, সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত (নতুন আবিষ্কার) করা, আর সব বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।” সহীহ মুসলিমে এভাবে বর্ণিত হয়েছে[4]। আর নাসাঈর বর্ণনায় আছে, “সব ভ্রষ্টতা যাবে জাহান্নামে”[5]।

লেখক: শাইখ সালিহ আল উসাইমীন (রহ:)


-----------------------
[1] মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭।
[3] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৪ ও ৪৬০৫।
[4] মুসলিম, হাদীস নং ৮৬৭।
[5] নাসাঈ, কিতাবু সালাতিল ঈদাইন, বাবু কাইফাল খুৎবা, হাদীস নং (১৫৭৮); ইবন মাজাহ, আল-মুকাদ্দামাহ, বাবু ইজতিনাবিল বিদা‘ ওয়াল জাদাল, নং (৪৬)।

Post a Comment