গৃহিণীদের রমযান পরিকল্পনা

রামাযান এলেই রামাযান কে স্বাগত জানানোর জন্য ,রামাযানকে সুন্দরভাবে পালন করার জন্য আমরা কত রকম পরিকল্পনা করে থাকি আরো সাথে থাকে ঈদের বাড়তি আনন্দ । রামাযান পালন আর ঈদের আনন্দ এ সব কিছু মিলিয়ে প্রতিটা গৃহিণীর মনে থাকে অন্যরকম একটা ভালোলাগা আর এ ভালোলাগার পুরো আনন্দ পেতে সারা মাস জুরে থাকে ব্যস্ততা যা সব কিছুকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নতুনত্ব আনার একটা প্রচেষ্টা । কিন্তু অনেক গৃহিণী রামাযানের শুরুতেই অপরিকল্পনার কারনে কিছুটা তালগোল পাকিয়ে ফেলেন করি করছি করব করতে করতেই এ মাস টা শেষ হয়ে যায় , শেষে আফসোস থেকে যায় , ইসস! কিছুই করতে পারলাম না ।


সেজন্য সব গৃহিণীদের অবশ্যই বিশেষ কিছু কিছু পরিকল্পনা করতে হয় যাতে রামাযান এবং ঈদের আনন্দ দুটাই পুরু পুরি উপভোগ করে মনে প্রশান্তি পাওয়া যায়। রামাযান যেহেতু আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত পাওয়ার মাস তাই পুরু রামাযান কিভাবে পালন করে এ মাসটাকে অর্থবহ করে তোলা যায় তারজন্য চাই বিশেষ কিছু পরিকল্পনা –


রামাযান শুরু হওয়ার আগের পরিকল্পনা :–

১) রামাযান শুরু হওয়ার আগেই ঘরবাড়ি পরিস্কার করার কাজ সেরে রাখুন , ঘরে সাজিয়ে রাখা শোপিস ,ফুল ,  পর্দা , রান্নাঘরের কেবিনেট ,রেফ্রিজারেটর ,ওভেন ইত্যাদি ।

২) রামাযানের আগেই মুদি দোকানের সব কেনা কাটা করে নিন এবং সব গুছিয়ে রাখুন প্রয়োজনে কৌটার গায়ে জিনিস পত্রের নাম লিখে রাখুন যেন দরকারের সময় অযথা খুঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট না করতে হয় ।
৩) যে জামা কাপর গুলি অনেক দিন জমিয়ে রেখেছেন লন্দ্রিতে দিবেন বা বাসায় ধুয়ে নিবেন সেগুলি ধুয়ে ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে রাখুন নয়তো এগুলির জন্য আপনাকে পরিশ্রম এবং টেনশন দুটাই করতে হবে ।
৪) বাইরের ভেজাল খাবার না খেতে চাইলে রমজানের আগে কিছু কিছু খাবার দু চার দিন এক সপ্তাহের জন্য রান্না করে ফ্রিজ আপ করে রাখতে পারেন ,যেমনঃগোস্তের কিমা ,ছোলা সিদ্ধ,মিষ্টি দই ।এতে করে ঘরের বানানো নির্ভেজাল খাবার খেতে পারবেন এবং কয়েকদিনের জন্য ফ্রী থাকবেন যাতে এই সময়টা ইবাদাতের কাজে লাগাতে পারেন ।
৫) সারা মাস জুরে চলে ঈদের কেনা কাটার ব্যস্ততা ।এই ঝামেলা থেকে মুক্তি রমজান শুরু হওয়ার আগেই পরিবারের সবার জন্য লিস্ট করে ঈদের কেনা কাটা সেরে ফেলুন ,এতে একদিকে যেমন সময়কে সুস্থ ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন তেমনি বাড়তি খরচ থেকেও মুক্তি পাবেন ।


রামাযানের দিনগুলি আমরা কিভাবে কাটাতে পারি তার পরিকল্পনা–


১) প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজ নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করুন , সুন্নত এবং নফল ইবাদাত আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিন ।সন্তানদেরকেও ইবাদতে অভ্যাস গড়ে তুলুন ।রামাদানের শেষ দশ দিনে ইবাদাত যেন বেশি বেশি করতে পারেন তারজন্য আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করুন ।
২) শুধু মাত্র কোরআন খতমের দিকে লক্ষ্য না রেখে কোরআন অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করবেন ।যাতে আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআন আমাদের জন্য কেন নাযিল করেছেন ,জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে কি কি বিধি বিধান রয়েছে সেটা বুঝতে পারেন ।
৩) সন্তানদের রোজা রাখার জন্য তাগিদ দিবেন ,গেমস কম্পিউটার চালানো থেকে তাদের বিরত রেখে কোরআন পড়ার প্রতি উৎসাহ দিবেন এবং নিজে তাদের সাথে বসবেন ।
৪) আমরা কেও ভুল ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে না তাই নিজের দোষ গুলি খুজে বের করুন ,অন্যের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং অন্যকে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন ।গীবত চোগলখুরি আর ঝগড়া বিবাদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন ।
৫)খাবার দাবারের কাজে নিজেকে এতটা ব্যস্ত রাখবেন না যাতে আপনি ক্লান্ত হয়ে পরেন এবং রাতের তারাবী নামাজ পরতে অলসতা বোধ করেন ।তাই যতটা সম্ভব খাবার তৈরিতে এবং পরিশ্রমের মাঝে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করবেন ।
৬) সেহরি খাওয়াটা একটা সুন্নত তাই রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমায়ে ক্লান্তি দুর করুন এবং সেহরি খাওয়ার প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করুন ।
৭) অযথা সারা রাত জেগে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটানোর পরিকল্পনা বাদ দিন ।
৮) নিজেদের ইফতার থেকে প্রতিদিন অন্তত একজন রোজাদারকে ইফতারী করানোর চেষ্টা করুন, অবশ্যই নিজেদের গরীব আত্মীয় -স্বজনদের থেকে আগে নির্বাচন করবেন , যতটা সম্ভব গরীব আত্মীয় স্বজনদের যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন ।
৯) ইফতারীর সময় কিছুটা হাতে রেখে ইফতারী তৈরির কাজ শেষ করবেন যেন পরিবারের সবার সাথে বসে একসাথে ইফতারী করতে পারেন ।
১০) আত্ন সমালোচনা করে নিজের সকল গুনাহ, ভুল-ক্রুটির জন্য আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি মনে তওবা করুন এবং শিরক বিদআত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে হিদায়েত প্রার্থনা করুন ।
১১) নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এ মাসে দান সাদাকা করার চেষ্টা করুন ।যাকাত ফিতরা আদায় করুন ।
১২) ঘরের বিভিন্ন কাজের ফাকে ফাকে বিভিন্ন সুন্নতই জিকির আযকার করে আপনার নেকির পরিমান বাড়ানোর চেষ্টা করুন ।
১৩)একজন মুসলিমাহর প্রাত্যহিক জীবন কেমন হওয়া উচিৎ! দিনের একটা অবসর সময় বেছে নিয়ে আপনার কাছের বান্ধবীদের সাথে নিয়ে বসে আলোচনা সমালোচনা করুন এবং নিজেদেরকে একজন উন্নত মুসলিমাহ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একে অন্যকে অনুপ্রেরনা দিন ।
১৪) সহীহ শুদ্ধ ভাবে দ্বীনের জ্ঞান লাভের চেষ্টা করুন । দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কোন সুযোগ পেলে সেটা হাতছারা করবেন না যথাসাধ্য চেষ্টা করুন সহীহ ভাবে অন্যকে জানাতে ।

১৫) রোজা থাকা অবস্থায় দোয়া কবুল হয় তাই এ সময় বেশি বেশি করে দোয়া করুন ,নিজের জন্য ,পরিবারের জন্য ,বাবা-মায়ের জন্য ,সকল মুমিন মুসলিমদের জন্য ।


এবং দোয়া করুন এ পরিকল্পনাগুলি যেন সার্থক ভাবে পালন করে সফল হতে পারেন ।


পরিশেষে আরো একটি পরিকল্পনা থেকে যায় সেটা হল -এ মাসে নিজেকে যেভাবে চালিয়ে নিয়েছেন পরবর্তী দিনগুলিও যেন সেভাবে চালানোর চেষ্টা করতে পারেন এর জন্য একটা পরিকল্পনা ।কিন্তু সে পরিকল্পনা হোক আপনাদের নিজেদের জীবনে যার যার সুযোগ সুবিধা মতো । আল্লাহ আমাদের সবার পক্ষ্ থেকে রমজান কবুল করুক এবং তার দ্বীনের উপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করুক -আমীন ।

প্রবন্ধটি নেওয়া হয়েছে “ফেসবুকে দাওয়াহ” পেইজ থেকে।



Post a Comment

Previous Post Next Post