যাকাতুল ফিতর : ইসলামের একটি মৌলিক বিষয়

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক বিষয়। সুমহান আল্লাহ সুবাহানওয়া তাআ'লা রাসূল(সা:) কে যাকাত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা রাসূল (সা:) এর পরবর্তী খলিফাগণও প্রচলিত রেখেছিলেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় যাকাত দেওয়া প্রত্যেক মুসলিম সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ফরয। তাই যাকাতকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাইতো আবূ বকর (রা:) এর জমানায় যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া যাকাত প্রদান ব্যাতীত সম্পদ পবিত্র হয় না। আর যারা যাকাত প্রদান করে আল্লাহ তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন। আর ঈদের সালাতের পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে যার পরিমাণ হবে এক'সা পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য/যব/খেজুর/পনির/কিসমিস।

মহান আল্লাহ বলেন,
"নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।"-(বাক্বারাহঃ ২৭৭)

"(হে নবী!) তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে পার এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে।" -( সূরা আত তাওবাহঃ ১০৩)

"সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং যাকাতকে বর্ধিত করেন।"-(বাক্বারাহঃ ২৭৬)

রাসূল(সা:) বলেন,
"আল্লাহ যাকে ধন সম্পদ দান করেছেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন ঐ ধন-সম্পদ তার জন্য একটি টাক মাথাওয়ালা বিষধর সাপে রুপান্তরিত করা হবে।"-(বুখারীঃ ১৩১২, আ: প্রকাশনী)

আবূ বকর (রা:) ঘোষণা করেছিলেন,
"যদি তারা যাকাতের মালের একটি উষ্ট্রীর বাচ্চা বা রজ্জুর একটা খণ্ড আদায় করা থেকেও বিরত থাকে তবুও আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।"- (বুখারীঃ১৩০৯, আ:প্রকাশনী)

যাকাতুল ফিতর কে দিবে?

"যার কাছে ঈদের দিন স্বীয় পরিবারের একদিন ও একরাতের ভরণ পোষণের খরচ বাদে এক সা' পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী থাকবে তার উপরই যাকাতুল ফিতর ফরয হবে। যার উপর যাকাতুল ফিতর ফরয তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন তেমনি নিজের পোষ্যদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন।" -(কিতাবুল উম-ইমাম শাফেঈ, আল মাজমু আন্নভবী, ফিকহুস সুন্নাহ)

যাকাতুল ফিতর কি হবে?

আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন, "আল্লাহর নবী (সা:) এর যুগে ঈদুল ফিতরের দিন আমরা ফিতরা বাবদ (মাথাপিছু) এক সা' পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য প্রদান করতাম। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, তখন আমাদের খাবার ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খুরমা।"-(বুখারীঃ ১৪১৩, আ: প্রকাশনী)

যাকাতুল ফিতর এর পরিমাণ:-

তবে নবী (সা:) এর যুগের এক সা' -তে সবচেয়ে ভাল গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম হয়। এক সা' চাল প্রায় ২ কেজি ২০০ গ্রাম হয়। আবার ১ সা' (খেজুর, যব, কিসমিস, পনির, গম, চাউল) ২ কেজি ২২৫ গ্রামের বেশি নয়। -( ইসলামের যাকাত বিধান ২য় খণ্ড ইসলামিক ফাউ. ৪৯৫ পৃষ্ঠা)

এছাড়া কোন ব্যক্তির নিকট তার পরিবারের ভরন-পোষণ ব্যতীত যদি কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৯৫ গ্রাম) রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদ একবছর স্হায়ী থাকে তাহলে তার সম্পদের ২.৫% যাকাত প্রদান করতে হব। খাদ্য শস্যের নিছাব পাঁচ অসাক্ব, যা হিজাযী ছা‘ অনুযায়ী ১৯ মণ ১২ সেরের কাছাকাছি । এতে ওশর বা এক দশমাংশ নির্ধারিত। সেচ পানিতে হ’লে নিছফে ওশর বা ১/২০ অংশ নির্ধারিত। গবাদি পশুর ক্ষেত্রেঃ উট ৫টিতে একটি ছাগল; গরু-মহিষ ৩০টিতে ১টি দ্বিতীয় বছরে পদার্পণকারী বাছুর; ছাগল-ভেড়া-দুম্বা ৪০টিতে একটি ছাগল।

"আর এক্ষেত্রে হানাফী ওলামায়ে কেরামগণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের মধ্যে বাজারে যেটার মূল্য কম থাকবে সেটার নিসাবের সাথে মিলাতে বলেছেন। এতে গরীবদের লাভের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়।"- (ফিকহী মাকালাত ১/৩১)

"বেশিরভাগ মুহদ্দিসীন ও সালাফি আলেমগণ নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ের মালের যাকাত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে স্বর্ণের নিসাবকে মূল নিসাব হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।"- (ফিকহুস সুন্নাহ ২/২০)

পবিত্র কুরআনে সূরায়ে তওবা ৬০নং আয়াতে ফরয ছাদাক্বা সমূহ ব্যয়ের আটটি খাত বর্ণিত হয়েছে। যথা-
১.ফক্বীরঃ নিঃসম্বল ভিক্ষাপ্রার্থী,
২.মিসকীনঃ যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহ্যিকভাবে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়,
৩. ‘আমেলীনঃ যাকাত আদায়ের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ,
৪.ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তিগণ।অমুসলিমদেরকে ইসলামে দাখিল করাবার জন্য এই খাতটি নির্দিষ্ট,
৫. দাসমুক্তির জন্য। এই খাত বর্তমানে শূন্য। তবে অনেকে অসহায় কয়েদী মুক্তিকে এই খাতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন (কুরতুবী),
৬.ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিঃ যার সম্পদের তুলনায় ঋণের অংক বেশী। কিন্তু যদি তার ঋণ থাকে ও সম্পদ না থাকে, এমতাবস্থায় সে ফক্বীর ও ঋণগ্রস্ত দু’টি খাতের হকদার হবে,
৭. ফী-সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
৮. দুস্থ মুসাফির বা পথিমধ্যে কোন কারণবশতঃ পাথেয় শূন্য হয়ে পড়লে পথিকগণ এই খাত হ’তে সাহায্য পাবেন। যদিও তিনি নিজ দেশে বা বাড়ীতে সম্পদশালী হন।

Post a Comment

Previous Post Next Post