১. ফজর সলাতের সঠিক সময়ঃ
রসূল (স.) কোন সময় ফজরের সলাত আদায় করতেন, তা নিম্নের হাদিসগুলোতে বর্নিত হয়েছে-
(১) আয়েশা (রা.) বলেন, “আল্লাহর রসূল (স.) যখন ফজরের সলাত শেষ করতেন তখন নারীরা চাদরে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে ঘরে ফিরতেন। অন্ধকারের দরুণ তখন তাদেরকে চেনা যেতো না।” -সহীহুল বুখারী (হা/৮৬৭:তাওহীদ প্রকাশনী)
(২) আয়েশা (রা.) থেকে বর্নিত, “আল্লাহর রসূল (স.) অন্ধকারে ফজরের সলাত আদায় করতেন। অতঃপর মুমিনদের স্ত্রীগণ চলে যেতেন, অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেতো না অথবা পরস্পরকে তারা চিনতে পারতনা।” -সহীহুল বুখারী (হা/৮৭২:তাওহীদ প্রকাশনী)
(৩) আয়েশা (রা.) বর্নিত। তিনি বলেন, “মুমিন মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রসূল (স.)-এর সঙ্গে ফজরের জামা’আতে হাযির হতেন। অতঃপর সলাত আদায় করে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন। কিন্তু অন্ধকারের কারণে তাদেরকে কেউ চিনতে পারত না।” -সহীহুল বুখারী (হা/৫৭৮:তাওহীদ প্রকাশনী)
(৪) আনাস ইবনু মালেক (রা.) বলেন, “রসূল (স.) …. ফজরের সলাত আদায় করতেন যখন ফজর উদিত হত তখন থেকে দৃষ্টি প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত।” –সূনানে নাসাঈ (হা/৫৫২: হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী)
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রা.), আমরা একদা জাবের (রা.)-কে রসূল (স.)-এর সলাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি (স.) বললেন, “…. আর ফজর সলাত আদায় করতেন অন্ধকারে।” –আবূ দাউদ (হা/৩৯৭: আলবানী একাডেমী)
(৬) রসূল (স.) ফজরের সলাত এমন সময় পড়তেন, “যখন আমাদের কেউ পার্শ্বে বসা ব্যক্তিকে চিনতে পারত না, যাকে সে আগে থেকেই চিনে। তিনি ফজর সলাতে ৬০ থেকে ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করতেন।”-সহীহুল বুখারী (হা/৫৪১:তাওহীদ প্রকাশনী)
(৭) রসূল (স.) “ফজরের সলাত একবার অন্ধকারে পড়েছিলেন। অতঃপর একবার পড়তে পড়তে ফর্সা করে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রসূল (স.)-এর সলাত ছিল অন্ধকারে। তিনি আর ফর্সা করতেন না।”–আবূ দাউদ (হা/৩৯৪: আলবানী একাডেমী)
২. যোহরের সলাতের সঠিক সময়ঃ
১) রসূল (স.) বলেন, “যোহরের সলাতের ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ঢলে যাবে। কোন ব্যক্তির ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ আছরের সময় হওয়া পর্যন্ত…।” -সহীহ মুসলিম (হা/১২৭৫: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২৬২: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(২) আবু বারযাহ (রা.) বলেন, “যখন সূর্য ঢুলে পড়ত তখন রসূল (স.) যোহরের সলাত আদায় করতেন। আর আছর সলাত এমন সময় আদায় করতেন যে, আমাদের কেউ সলাত আদায় করে মদীনার দূর প্রান্তে চলে যেত এবং ফিরে আসত অথচ সূর্য উজ্জ্ব থাকত।” -সহীহুল বুখারী (হা/৭৭১:তাওহীদ প্রকাশনী) এবং আবূ দাউদ (হা/৩৯৮: আলবানী একাডেমী)
(৩) আবু যার গেফারী (রা.) বলেন, “আমরা এক সফরে রসূল (স.)-এর সাথে ছিলাম। মুওয়াযযিন যোহরের আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তখন রসূল (স.) বললেন, তুমি ঠান্ডা কর। অতঃপর যখন আযান দেওয়ার ইচ্ছা করেন, তখন আবার বললেন, তালূল দেখা পযন্ত দেরী কর। অতঃপর তিনি বললেন, গরমের প্রকোপ জাহান্নামের তাপ। সুতরাং যখন গরম বেশী হবে তখন তোমরা সলাত দেরী করে পড়।”- সহীহুল বুখারী (হা/৫৩৯: তাওহীদ প্রকাশনী)
৩. আসরের সলাতের সঠিক সময়ঃ
(১) আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, “আল্লাহর রসূল (স.) আসরের সলাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকতো। সলাতের পর কোন গমনকারী ‘আওয়ালী‘র দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের নিকট পৌছে যেতো, আর তখনও সূর্য উপরে থাকতো। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মাদীনাহ হতে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে।”-সহীহুল বুখারী (হা/৫৫০: তাওহীদ প্রকাশনী)
(২) আয়েশা (রা.) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, “আল্লাহর রসূল (স.) এমন সময় আসরের সলাত আদায় করেছেন যে, সূর্যরশ্মি তখনো তার ঘরের মধ্যে ছিল, আর ছায়া তখনো তার ঘর হতে বেরিয়ে পড়েনি।”- সহীহুল বুখারী (হা/৫৪৫: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/৫১৮ প্রকাশনী- ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৩) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রা.) হতে বর্নিত। তিনি বলেন, “আমরা রনূল (স.)-এর সাথে আসরের সলাত আদায় করে উট যবেহ করতাম। তারপর সে গোশত দশ ভাগে ভাগ করা হত এবং সূর্যাস্তের পূর্বেই আমরা রান্না করা গোশত আহার করতাম।” -সহীহুল বুখারী (হা/২৪৮৫: তাওহীদ প্রকাশনী); (হা/২৩২৩ প্রকাশনী- ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৪) আলা ইবনু আব্দুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। বছরাতে তিনি একদিন যোহরের সলাত আদায় করে ফেরার সময় আনাস ইবনু মালেক (রা.)-এর বাড়ীতে গেলেন। আর মসজিদের পার্শ্বেই তার বাড়ী ছিল। রাবী বলেন, “আমরা যখন তার কাছে গেলাম, তখন তিনি বললেন, তোমরা কি আছরের সলাত আদায় করেছ? আমরা বললাম, এই মাত্র আমরা যোহরের সলাত আদায় করে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা আছরের সলাত আদায় করে নাও। অতঃপর আমরা চলে গেলাম এবং সলাত আদায় করলাম। আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন তিনি বললেন, আমি রসূল (স.) কে বলতে শুনেছি যে, ঐ সলাত হল মুনাফিকের সলাত যে বসে বসে অপেক্ষায় থাকে। যখন সূর্য লাল হতে থাকে এমনকি শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে যায়, তখন সে দাড়ায় এবং চারটি ঠোকর মারে। সে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।” -সহীহ মুসলিম (হা/১২৯৯: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২৮৬ :ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৫) ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রসূল (স.) বলেছেন, জিবরীল (আ.) কা‘বার নিকট দুইবার আমার ইমামতি করেছেন। একবার তিনি আমাকে যোহর পড়ালেন যখন সূর্য ঢুলে পড়ল। আর তা ছিল জুতার দোয়ালির পরিমাণ। আসর পড়ালেন, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার একগুণ হল। মাগরিব পড়ালেন যখন ছায়েম ইফতার করে। আর ইশা পড়ালেন যখন লালিমা দূর হল। ফজর পড়ালেন যখন ছায়েম ব্যক্তির উপর খানাপিনা হারাম হয় (সাহারীর সময়ের পর)।
৪. মাগরিব সলাতের সঠিক সময়ঃ
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূল (স.) বলেছেনঃ ….মাগরিবের সলাতের সময় থাকে সুর্যাস্তের পর থেকে সন্ধা গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তে উদ্ভাসিত লালিমা অন্তহিত না হওয়া পর্যন্ত।” -সহীহ মুসলিম (হা/১২৭৫: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২৬২: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(২) রাফি ইবনু খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূল (স.) এর সাথে মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। অতঃপর (সলাত শেষে) আমাদের কেউ তীর ছুড়ে তা পতিত হওয়ার জায়গা দেখতে পেত (অর্থাৎ ওয়াক্তের প্রথমেই শীঘ্র শীঘ্র সলাত আদায় করা হত)।” -সহীহ মুসলিম (হা/১৩২৭: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২১৪: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫. ইশার সলাতের সঠিক সময়ঃ
মাগরিবের সলাতের সময়ের পর থেকে ইশার সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্য রাত পর্যন্ত থাকে। সমস্যাজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রসূল (স.) ইশার সলাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতের। তাই মারিবের পরপরেই ইশার সলাত পড়া উচিত নয়, যা এদেশে চালু আছে।
(১) রসূল (স.) বলেছেন, “যখন সূর্য ঢুলে যায়, তখন যোহরের সময় শুরু হয়। কোন ব্যক্তির ছায়া তার দৈর্ঘ্যের সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত উক্ত সময় থাকে। অর্থাৎ আছরের সময় উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের সময় (সুর্যাস্ত হতে) লালিমা দূর হওয়া পর্যন্ত। আর ইশার সময় রাত্রির মধ্য ভাগ পর্যন্ত। আর ফজর সলাতের সময় ঊষার উদয় হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। যখন সূর্য উঠবে, তখন সলাত থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্যোদয় হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্য দিয়ে।” -সহীহ মুসলিম (হা/১২৭৫: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১২৬২: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(২) আয়েশা (রা.) বলেন, “রসূল (স.) একদা রাত্রির অর্ধেক পর্যন্ত সলাত দেরী করলেন। এমনকি মসজিদের মুছল্লীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হল। অতঃপর তিনি বের হয়ে সলাত আদায় করেন। তারপর বললেন, আমি যদি আমার উম্মতের উপর ভারী না মনে করতাম, তবে এই সময়টাই ইশার সলাতের সময় হত।” সহীহ মুসলিম (হা/১৩৩১: হাদীস লাইব্রেরী), (হা/১৩১৮: ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
* বিতির ফযরের আগে পড়তে না পারলে ফযরের পরে বা সকাল বেলায় সুযোগ মতো পড়া যাবে। এনিয়ে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে সকাল বেলা বিতির কাযা পড়েছেন (তাবারানী)।
Post a Comment