ইসরা ও মিরাজের সফর আত্মিক ছিল না; বরং সাধারণ মানুষের সফরের মতো স্বশরীরেই ছিল- এ কথা কোরান ও হাদিসে প্রমাণিত। আলোচ্য আয়াতের প্রথমে 'সুবহানা' শব্দের মধ্যে এদিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা এ শব্দটি আশ্চর্যজনক ও বিরাট বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মিরাজ যদি শুধু আত্মিক, অর্থাৎ স্বপ্নজগতে সংঘটিত হয়, তবে তাতে আশ্চর্যের কী আছে। স্বপ্নে তো প্রত্যেক মুসলমান; বরং প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে সে আকাশে উঠেছে, অবিশ্বাস্য বহু কাজ করেছে। 'আবদ' শব্দে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ শুধু আত্মাকে আবদ বলে না; বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই আবদ বলা হয়। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মিরাজের ঘটনা হজরত উম্মে হানী (রা.)-এর কাছে বর্ণনা করলেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন এ কথা প্রকাশ করবেন না, তাহলে কাফেররা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করবে। ব্যাপারটি যদি নিছক স্বপ্নই হতো, তবে মিথ্যারোপ করার কী কারণ ছিল।
এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘটনা প্রকাশ করলেন, তখন কাফেররা মিথ্যারোপ করল এবং ঠাট্টা-বিদ্রূপ করল। এমনকি কত নও-মুসলিম এ সংবাদ শুনে ধর্মত্যাগী হয়ে গেল। ব্যাপারটি স্বপ্নের হলেও এত সব তুলকালাম কাণ্ড ঘটার সম্ভাবনা ছিল কি? তবে এ ঘটনার আগে এবং স্বপ্নের আকারে কোনো আত্মিক মিরাজ হয়ে থাকলে তা এর পরিপন্থী নয়। ইসরা সম্পর্কে সব মুসলমানের ঐকমত্য রয়েছে। শুধু ধর্মদ্রোহী যিন্দীকরা একে মানেনি। মিরাজ থেকে ফিরে এসে ভোরবেলা যখন নবীজি (সা.) রাতের সফরের ঘটনা শোনালেন, তখন কোরাইশ নেতারা তা অস্বীকার করতে লাগল। এত অল্প সময়ে মক্কা শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলো। তাদের মধ্যে যে এর আগে মসজিদে আকসা ভ্রমণ করেছে সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বায়তুল মুকাদ্দাসের কিছু বিবরণ শোনান দেখি। অমনি আল্লাহ তায়ালা মসজিদের বাস্তব চিত্র নবীজি (সা.)-এর সামনে হাজির করে দিলেন আর তিনি দেখে দেখে সব বলে দিলেন। (বুখারি-৪৭১০)
Post a Comment