● ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পরিত্যাগ করা:
শরীয়তসম্মত ওজরগুলো ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পরিত্যাগ করা অত্যন্ত বড় গুণাহের কাজ এবং এই পাপকাজ সম্পাদনকারীকে খাঁটি মনে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে। যদি সে সাওম শুরুই না করে, তবে তার কোন কাযা নেই (তার জন্য একমাত্র তাওবার রাস্তা রয়েছে)। কেননা সাওম নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত ইবাদাত। সেই সময় অতিক্রান্ত হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর যদি কেউ ফরয সাওম শুরু করে বিনা কারণে তা ভেঙ্গে ফেলে তবে তাওবার পাশাপাশি তা পরবর্তীতে আদায় করতে হবে। কেননা ফরয ইবাদাত শুরু করলে তা পূর্ণ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তাই এক্ষেত্রে মানতের মতো, যা পূরণ করতে মানতকারী বাধ্য। আর এজন্যই রমাদানের দিবসে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফফারা দেওয়ার পাশাপাশি কাযা আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছেন: 'তার পরিবর্তে একদিন সাওম পালন কর।' (ইবনে মাজাহ)
- মাজমূ ফাতাওয়া আশ শায়খ আল উসায়মীন, ১৯/১০৯
● রোযাদার যদি রমাদানে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় তবে তার কাফফারা হল:
১. দাস (মুমিন দাস) মুক্ত করা।
২. তা সম্ভব না হলে টানা ২ মাস সাওম পালন করা।
৩. তা সম্ভব না হলে ৬০ জন মিসকীন খাওয়ানো।
৪. যদি মিসকীন খাওয়ানোর সামর্থ্য না থাকে, তবে কিছুই করতে হবে না এবং পরবর্তীতে সামর্থ্য হলেও তা আদায় করতে হবে না। কেননা আল্লাহ্ তা'আলা বলেন: 'আল্লাহ্ কাউকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে বেশী বুঝা চাপান না।' -(সূরা আত তালাক, আয়াত: ৭) 'অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর...।' -(সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬)
দেখুন: সহীহুল বুখারী: ১৯৩৬; মুসলিম: ১১১১
□ যদি এই কাজে স্ত্রীর সম্মতি থাকে, তবে উভয়ের ওপর কাফফারা ও কাযা বাধ্যতামূলক। যদি এই কাজে স্ত্রীর পক্ষ থেকে অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও জোরপূর্বক করা হয় তবে স্ত্রীর রোজা ভঙ্গ হবে না, স্ত্রীকে কাযা বা কাফফারা কোনটাই আদায় করতে হবে না। -(আশ শারহু আল মুমতি, ৬/৪০২-৪০৩)
□ মিসকীন খাওয়ানোর বিবরণ ইতোপূর্বে বর্ণিত ফিদয়ার মতই, তবে পার্থক্য হলো, এক্ষেত্রে ৬০ জন স্বতন্ত্র মিসকিনকে খাওয়াতে হবে, ১ জনকে একাধিক জনের ফিদয়া দেয়া যাবে না। -(সৌদি স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়া সমগ্র)
□ সাওম একটানা দু'মাস পালন করতে হবে, মাঝখানে ভঙ্গ করলে নতুন করে শুরু করতে হবে । তবে যে সমস্ত ওযর বা কারণে রামাদানের সাওম ভঙ্গ করা বৈধ হয়, সে সমস্ত কারণে একটানা দু'মাস সাওমে ছেদ পড়লে অসুবিধা নেই। তবে কেবল সাওম ভঙ্গ করার জন্যই যদি সফর করে, তবে তা ওযর হিসেবে গণ্য হবে না। তেমনি টানা দু'মাসের মাঝে ঈদের দিন কিংবা আইয়ামে তাশরীক (যুলহিজ্জার ১১, ১২, ১৩ তারিখ) পড়ে গেলে সেই দিনগুলো বাদ দিতে হবে এবং দু'মাস হওয়ার ঠিক পরপরই সেই কয়দিনের সাওম পালন করতে হবে। -(আশ শারহু আল মুমতি, ৬/৪১৪)
□ একটানা দু'মাস গণনা করতে হবে চন্দ্র মাসের হিসেবে। উদাহরণ স্বরূপ কেউ যদি শাওয়ালের ৫ তারিখ সাওম শুরু করে, তবে তাকে বাকী শাওয়াল, সম্পূর্ণ যুল'ক্বাদ এবং যুল'হিজ্জাহ মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত সাওম পালন করতে হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে ২ মাসে ৫৮ দিনও হতে পারে। -(আশ শারহু আল মুমতি, ৬/৪১৩-৪১৪)
Post a Comment