পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।' (সুরা বনি ইসরাইল-১)
'ইসরা' অর্থ রাতে নিয়ে যাওয়া। আয়াতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। আর সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর, তা-ই মিরাজ। এ আয়াতে 'ইসরা' আর মিরাজ সুরা নাজমে এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
ইবনে কাসির তাঁর তাফসিরে এ আয়াতের তাফসির এবং সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন, সত্য কথা হলো, নবী (সা.) ইসরা সফর জাগ্রত অবস্থায় করেন, স্বপ্নে নয়। মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এ সফর বোরাকযোগে করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের দ্বারে উপনীত হয়ে তিনি বোরাকটি অদূরে বেঁধে নেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের মসজিদে প্রবেশ করে কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এরপর সিঁড়ির সাহায্যে প্রথম আকাশ, তারপর অন্যান্য আকাশে যান। ওই সিঁড়িটির স্বরূপ সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। যাহোক, প্রতিটি আকাশে সেখানকার ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান এবং ষষ্ঠ আকাশে হজরত মুসা (আ.) ও সপ্তম আকাশে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর তিনি পয়গাম্বরগণের স্থানগুলোও অতিক্রম করে যান এবং এক ময়দানে পৌঁছেন, সেখানে ভাগ্যলিপি লেখার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন, সেখানে আল্লাহর নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি ও নানা রঙের প্রজাপতি ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিল। সেখানেই তিনি একটি দিগন্তবেষ্টিত সবুজ রঙের পালকির ন্যায় 'রফরফ' ও বায়তুল মা'মুরও দেখেন। বায়তুল মা'মুরের কাছেই কাবার প্রতিষ্ঠাতা হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। এই বায়তুল মা'মুরে দৈনিক ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের বারবার প্রবেশ করার সুযোগ আসবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বচক্ষে জান্নাত ও দোজখ দেখেন। সে সময় তাঁর উম্মতের জন্য প্রথমে ৫০ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ হয়। এরপর তা কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেওয়া হয়। এর দ্বারা সব ইবাদতের মধ্যে নামাজের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। এরপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন আকাশে সেসব পয়গাম্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাঁরাও তাঁর সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাসে নামেন। তাঁরা এখান থেকেই বিদায় নেন এবং রাসুল (সা.) বোরাকে সওয়ার হয়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কায় পৌঁছে যান।
লেখক : মুহাদ্দিস, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ
বহুরহস্যপূর্ণ অাজ বিজ্ঞানের জন্য বৈজ্ঞানিক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে ভবিষ্যতে আরও এর গুঢ়রহস্য জানা যাবে।
ReplyDeletePost a Comment