রেস্টুরেন্ট মালিকের জন্য রমজানের দিনের বেলায় বে-রোজদার লোক ও অমুসলিমদের নিকট খাবার বিক্রি করা জায়েয কি?


প্রশ্ন: আমি একটি অমুসলিম দেশে প্রবাসী। এখানে আমার ছোট একটি রেস্টুরেন্ট আছে। মুসলিমদের মধ্যে কিছু কিছু বে-রোজদার (তাদের সংখ্যা অনেক) দুপুর বেলায় আমার রেস্টুরেন্টে খেতে চায়। এ সকল বে-রোজদার ও অমুসলিমদের নিকট খাবার বিক্রি করার হুকুম কি ?
উত্তর:

 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

 এক:
ইতিপূর্বে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনেকগুলো প্রশ্নোত্তরে কুফরি-রাষ্ট্রে বসবাসের ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। কারণ এতে করে ব্যক্তির নিজের ও তার পরিবারের দ্বীনদারি হুমকির সম্মুখীন হয়; ব্যক্তি তার সন্তানদেরকে আশানুরূপভাবে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে না। চাকুরীর সুলভতার কারণে কুফরি রাষ্ট্রে অবস্থান করা- গ্রহণযোগ্য অজুহাত নয়।


দুই:
রমজান মাসের দিনের বেলায় কাউকে খাবার খেতে দেয়া আপনার জন্য জায়েয নয়। তবে সে ব্যক্তির রোজা-ভঙ্গ করার শরিয়তসম্মত কোন ওজর থাকলে; যেমন অসুস্থ হলে বা  মুসাফির হলে ভিন্ন কথা। এই হুকুমের ক্ষেত্রে মুসলিম ও কাফেরের মাঝে কোন তফাৎ নেই। বে-রোজদার মুসলিম রোযার রাখার জন্য আদিষ্ট। রোজা ভঙ্গ করার কারণে সে গুনাহগার হবে। রমজান মাসের দিনের বেলায় তাকে পানাহার করতে দেয়ার মানে গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে তাকে সহযোগিতা করা। অনুরূপভাবে কাফের ব্যক্তিও সিয়াম পালন ও সমস্ত ইসলামী অনুশাসন পালন করার ব্যাপারে আদিষ্ট। তবে আমলের আগে তাকে দুই সাক্ষ্যবাণী (শাহাদা) উচ্চারণ করে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। কেয়ামতের দিন কাফেরকে তার কুফুরির কারণে যেমন শাস্তি দেয়া হবে তেমনিভাবে ইসলামী শরিয়তের অন্যান্য অনুশাসনগুলো পালন না করার কারণেও শাস্তি দেয়া হবে। এতে করে জাহান্নামে তার শাস্তি অনেক বেড়ে যাবে।

 ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সঠিক মত হলো -যে মতের পক্ষে মুহাক্বিক (সূক্ষ্ম বিশ্লেষক) ও অধিকাংশ আলেম রয়েছেন- “কাফেরেরা শরিয়তের শাখা-বিষয়সমূহেরও ব্যাপারে আদিষ্ট। মুসলমানদের উপর যেমন রেশম হারাম তেমনিভাবে কাফেরদের উপরেও তা হারাম।” সমাপ্ত [শরহে মুসলিম (১৪/৩৯)]

 শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল-উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কাফের তো শরয়ি বিধিবিধান পালনের জন্য আদিষ্ট নয়; তাহলে কিভাবে কেয়ামতের দিন কাফেরের বিচার করা হবে?

তিনি উত্তরে বলেন:

এ প্রশ্নটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তিতে করা হয়েছে যে দৃষ্টিভঙ্গিটি সঠিক নয়। কারণ একজন মুমিন যা যা করার জন্য আদিষ্ট একজন কাফেরও তা তা করার জন্য আদিষ্ট। তবে দুনিয়াতে কাফেরকে বাধ্য করা হচ্ছে না। কাফের যে, শরয়ি বিধিবিধান পালনের জন্য আদিষ্ট এর দলীল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী:

 ( إلا أصحاب اليمين . في جنات يتساءلون . عن المجرمين . ما سلككم في سقر . قالوا لم نك من المصلين . ولم نك نطعم المسكين . وكنا نخوض مع الخائضين . وكنا نكذب بيوم الدين )

(৩৯)কিন্তু ডানদিকস্থরা, (৪০) তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। (৪১) অপরাধীদের সম্পর্কে (৪২) বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? (৪৩) তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না, (৪৪) অভাবগ্রস্তকে আহার দিতাম না, (৪৫) আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। (৪৬) এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।[৭৪ আল-মুদ্দাসসির: ৩৯-৪৬] যদি নামায ত্যাগ ও মিসকীনদেরকে খাওয়ানো ত্যাগ করার কারণে তারা শাস্তিপ্রাপ্ত না হতো তাহলে তারা প্রশ্নের জবাবে সে বিষয়গুলো উল্লেখ করত না। কারণ সে অবস্থায় এগুলো উল্লেখ করা নিরর্থক। অতএব, এটাই দলীল যে, ইসলামের শাখা-বিষয়সমূহ ত্যাগ করার কারণে তারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। এ বিষয়টি নকলি দলীল দ্বারা যেমন প্রমাণিত, তেমনি যুক্তির মাধ্যমেও প্রমাণিত। আল্লাহ যদি তাঁর মুমিন বান্দাকে তাঁর দ্বীনের কোন একটি ওয়াজিব দায়িত্ব পালনে ত্রুটি হওয়ার কারণে শাস্তি দেন, তবে কাফেরকে কেন শাস্তি দিবেন না? বরং আমি আরেকটু যোগ করে বলতে পারি যে, আল্লাহ কাফেরকে খাদ্য-পানীয় ইত্যাদি যত নেয়ামত দিচ্ছেন সেসবের জন্যেও তাকে শাস্তি দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:

( ليس على الذين آمنوا وعملوا الصالحات جناح فيما طعموا إذا ما اتقوا وآمنوا وعملوا الصالحات ثم اتقوا وآمنوا ثم اتقوا وأحسنوا والله يحب المحسنين )

“যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন গুনাহ নেই যখন ভবিষ্যতের জন্যে সংযত হয়েছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। এরপর সংযত থাকে এবং ঈমান রাখে। এরপর সংযত থাকে এবং সৎকর্ম করে। আল্লাহ সৎকর্মীদেরকে ভালবাসেন।” [৫ আল-মায়েদা : ৯৩] এই আয়াতের মানতুক (প্রত্যক্ষ ভাব) হচ্ছে- মুমিনগণ যা আহার করেছে সে ব্যাপারে তাদের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর আয়াতের মাফহুম (পরোক্ষ ভাব) হচ্ছে-কাফেরেরা যা আহার করেছে সে ব্যাপারে তাদের গুনাহ হবে।” সমাপ্ত [মাজমূ ফাত্‌ওয়াশ-শাইখ ইবনে উছাইমীন (শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (২/ প্রশ্ন নং ১৬৪) ]

 উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়- রমজান মাসের দিনের বেলায় কোন অমুসলিমকে খাবার পরিবেশন করা কোন মুসলিমের জন্য জায়েয নয়। কারণ কাফেররা শরিয়তের শাখাগত বিষয়সমূহ পালনের ব্যাপারে আদিষ্ট।

 “নিহায়াতুল মুহতাজ” (৫/২৭৪) গ্রন্থে আলেমগণ হতে উল্লেখ করা হয়েছে যে তাঁরা রমজান মাসের দিনের বেলায় কাফেরদের কাছে খাবার বিক্রি করা হারাম সাব্যস্ত করেছেন।

 আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।


সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Post a Comment

Previous Post Next Post