মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি , কোন কিছুতে তার চাহিদা মেটে না। মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। মানুষকে পথভ্রষ্ট করার কৌশল অনেক পুরাতন। সময়ের সাথে ঘটনার ধরণ পাল্টিয়েছে কিন্তু কৌশল বদলায়নি। শয়তান মানুষকে লোভ দেখায় , যে কোন ব্যাপারে কৌতূহল জাগায় কখনও বা এমন কোন কাজ বা ঘটনাকে এমন ভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে তখন আমাদের মনে হয় এই কাজে অংশগ্রহণ বা সাহায্য করা ঈমানি দায়িত্ব।
মাঝে মাঝে শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ হাফিঃ এর islamqa ফতোয়ার সাইটটিতে যাই, মানুষের প্রশ্নগুলো দেখি কার কি সমস্যা এসব জানতে ভাল লাগে। প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যেমে ইসলামের বিভিন্ন বিধান সমন্ধেও জানা হয়। সে দিন এক ভাইয়ের প্রশ্ন দেখলাম , তার প্রশ্নের মধ্যে একরাশ হতাশা,নিজেকে শেষ করে দেবার প্রবণতা। ভেবে দেখলাম শয়তান এভাবে আমাদেরকেও মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে দিতে পারে।
প্রশ্ন: বর্তমানে আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছি। মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারছি না। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অথবা মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে ভাবতে পারছি না। তবে, তা সত্ত্বেও আমি এই মুহূর্তে মরতে চাই না। আল্লাহর কাছে আশা করছি, আমি যে পাপ করেছি তিনি তা ক্ষমা করে দেবেন।
আমার সমস্যাটা হল, বিগত কয়েক মাস ধরে আমি এক নারীর সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। তার সাথে কোন হারাম সম্পর্ক করার আমার কোনোরূপ ইচ্ছা ছিল না। তবে যে কারণে আমি তার কাছাকাছি এসেছি সেটা হল আমি তাকে বুঝাতে চেয়েছি যাতে সে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে সরে আসে। সে আত্মহত্যা করবে বলে মনস্থির করেছিল। সে উচ্চমাত্রার ট্যাবলেট গ্রহণ করত। আমি তাকে আত্মহত্যার পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য নানা উপদেশ ও চেষ্টা করতাম। আমার ইচ্ছা ছিল তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো। তবে যা ঘটল তা হলো- ক্রমান্বয়ে আমাদের মাঝে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলো। তবে আমরা কখনো যৌনকর্মে লিপ্ত হই নি। এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছাও আমার ছিল না। মহিলাটি বিবাহিত। সমস্যা হলো- সে দাবি করছে, আমি একবার তার সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছি। আমি তার কথা বিশ্বাস করি না। কেননা আমি কখনো আমার কাপড় খুলিনি। তবে সে ছিল অর্ধনগ্ন। আমার ভয় হচ্ছে, আমি গুনাহ করে ফেলেছি; যদিও আমি তার সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হই নি। তবে যদি সত্যি তার দাবি অনুযায়ী এরূপ কর্ম করে থাকি, তবে তো আমার রক্ষা নেই। আমি তাকে বিশ্বাস করি না; কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, সে আমার ভালো চায় না। আর তার আত্মহত্যার অভিনয়টি ছিল আমার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিছক একটি ছলনা।
বর্তমানে আমি খুবই উৎকণ্ঠিত। আমি ঘুমাতে পারি না, কোনো কিছু করতে পারি না। যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি তো শুধু তাকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম; আর কিছু চাইনি। তবে এখন আমার ভয় হচ্ছে- আমি নিজেকে নিজে ধ্বংস করার কারণ হয়েছি।
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ
এক: আপনাকে ঐ নারীর সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। আপনি যে গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়েছেন এর কারণ হচ্ছে- নারীদের সাথে সম্পর্ক করা ও তাদের সাথে একাকী অবস্থান করার ব্যাপারে আপনি শিথিলতা করেছেন। এ ধরনের পাপ আল্লাহর আযাব ও শাস্তিকে অবধারিত করে দেয়।
দুই: সে নারীর সাথে এবং অন্য কোন নারীর সাথে সম্পর্ক থাকলে স্থায়ীভাবে সে সম্পর্ক কর্তন করতে হবে। কেননা এ ধরনের অধিকাংশ সম্পর্কের শেষ পরিণতি হলো যিনা-ব্যভিচার অথবা অবৈধ ভোগ-উপভোগ। নাউজুবিল্লাহ। আপনার কথামতো যদিও শুরুতে সম্পর্কটা ছিল নিষ্কলুষ। তবে শয়তান মানুষের মাঝে রক্তের মতোই বিচরণ করে। আর জেনে রাখুন, বেগানা নারীর সাথে সম্পর্ককে কখনো নিষ্পাপ বলা যায় না। এখন আপনার উচিত হলো- অনতিবিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা; উত্তম তওবা। তওবা করার পদ্ধতি হল- যা ঘটে গেছে সে ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া। এই সম্পর্ক পরিপূর্ণভাবে ছিন্ন করা। অন্যকোনো হারাম সম্পর্ক কায়েম না করার ব্যাপারে অকপট প্রত্যয় গ্রহণ করা। এই খারাপ মহিলাটি আপনাকে ধাঁধায় ফেলে কনভিন্স করতে চাচ্ছে আপনি তার সাথে খারাপ কাজ করেছেন; যাতে করে ভবিষ্যতে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য সে এটাকে ছুতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যদি এ মহিলার দাবি অনুযায়ী তার সাথে খারাপ কাজ করেও থাকেন তাহলেও যেন শয়তান এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে এবং আল্লাহর রহমত থেকে আপনাকে নিরাশ না করে দেয়। অন্যথায় শয়তান আপনাকে কুপথে টেনে নিয়ে যাবে এবং খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে তুচ্ছ জ্ঞান করাবে। বারবার এ-কাজে লিপ্ত করাবে এবং একপর্যায়ে সে তওবা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে প্রবোধ দিবে। শয়তান এ ধরনের অনুভূতি আপনার মধ্যে বদ্ধপরিকর করতে চায়। তবে আল্লাহর রহমত সুপরিসর। তাই আপনি দ্রুত তওবা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আয-যুমার:৫৩]
যে ব্যক্তি সত্য ও খালেস তওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে জীবনকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তি এসব করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করে নেয়, ঈমান গ্রহণ করে এবং সৎকর্ম করে সে ছাড়া। আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আল-ফুরকান: ৮৬-৭০]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি একজন বেগানা নারীকে চুম্বন করে ফেলেছিল। এরপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ঘটনাটি তাঁর কাছে বর্ণনা করল। সে প্রেক্ষিতে কুরআনের এ আয়াতগুলো নাযিল হল: “আর তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে, নিশ্চয় ভালোকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ।”[সূরা হুদ:১১৪] লোকটি বলন: ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি শুধু আমার জন্য? তিনি বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে যে কেউ এ অনুযায়ী আমল করবে তাদের সবার জন্য। (অন্য এক বর্ণনায়) তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বেগানা নারীর সাথে ফাহেশা ছাড়া অর্থাৎ যৌনাঙ্গে যিনা করা ছাড়া আর সব কিছু করল।”[সহিহ মুসলিম, আত-তাওবা (৪৯৬৪)]
আপনি বেশি বেশি নেক আমল করুন, নামাজ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন। ভালো ও দ্বীনদার বন্ধুবান্ধবের সাথে উঠাবসা করুন; যাতে করে এ অবৈধ সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে। আর জেনে রাখুন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা উন্মুক্ত এবং মৃত্যুর গড়গড়া শুরুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবা কবুল করেন। অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে- বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন তার উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
উত্তর দিয়েছেন: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
Post a Comment