আমি তো অনেক খারাপ হয়ে গেছি!

: দোস্ত, আযান দিতেসে, চল। নামায পইড়া আসি।

: দোস্ত তুই যা, আমি ওয়েট করতেসি।

: আরে বেটা, ৫মিনিট লাগবে, চল, কি আর হইব।

: নাহ, দোস্ত, কালকে ফুটবল খেলছি, পায়ে ব্যাথা, তুই যা।

: ভাই, বিনা কারণে, দাঁড়াই থাকতে পারবি, আর নামায পড়তে পারবি না, এটা কোনো কথা! চল বেটা!

(টেনে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করার পর)

:দোস্ত, তুই যা, অনেক দিন নামায পড়িনা, এখন আর ইচ্ছা করলেও আগের নামায মতো পড়া হয় না, আমার জন্যে একটু দোয়া করিস, আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছি।

(দোস্ত প্রচণ্ড মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকল, আমিও মন খারাপ করে অজু করতে চলে গেলাম)



আমরা যারা একটু একটু নামাযে সিরিয়াস হতে শুরু করেছি, আযান দিলে বিনা কারণে ঘরে বসে থাকতে পারি না, তাদের জন্যে খুবই কমন একটা ‘scenario’

আমাদের সবার ই নিশ্চয়ই উপরের যেকোনো একটা character হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে, এই লেখাটা সেই সব ‘অনেক খারাপ হয়ে যাওয়া’ বন্ধুদের জন্যে।

(আমি শুধু কয়েকটা আয়াত আর সুন্দর হাদিস শেয়ার করবো, যার যেভাবে ইচ্ছা কপি করতে পারনে, অথবা বন্ধুদের ইনবক্স এ আয়াত/হাদিস গুলো শেয়ার করতে পারেন, অনেক লিখা আমি অন্য ভাইদের থেকে কপি করেছি। আমার আর ওই ভাইদের জন্যে দোয়া প্রার্থী।)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ


আল্লাহ বলেছেন,
“আমার বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা রাখে আমি তার সাথে সেরূপ আচরণ করি এবং বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গী হই।যদি সে আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। যদি সে আমাকে জামাতে সমবেতভাবে স্মরণ করে আমিও তাকে তাদের চেয়ে উত্তম জামাতে স্মরণ করি। যদি বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে চার হাত অগ্রসর হই। আর যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে তাহলে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাই”।
-সহীহ মুসলিম ২/৩৪১



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

মহান আল্লাহ বলেছেন,

“হে আদম সন্তান!
যতক্ষন পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকতে থাক এবং আমার আশা পোষণ করতে থাক সে পর্যন্ত আমি তোমাকে মার্জনা করতে থাকি, তোমার যত পাপই হোক না কেন। আর আমি কোন ভয় করি না।

হে আদম সন্তান!
যদি তোমার পাপরাশি আসমান পর্যন্তও পৌছে, তারপর তুমি আমার কাছে মাফ চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিই এবং আমি কাউকে গ্রাহ্য করি না।

হে আদম সন্তান!
যদি তুমি আমার কাছে পৃথিবী পরিমাণ পাপ নিয়ে আস আর আমার কোন অংশী স্থির (শিরক) না করে আমার সাথে সাক্ষাত কর, নিশ্চয়ই আমি সে পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।”

[তিরমিযী, তিবরানী ও বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আবূ যর (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

নিশ্চয় কোন বান্দা পাপ করে, অতঃপর বলে,
“আমার প্রতিপালক! আমি পাপ করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন।”

তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা কি জানে যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন?” তিনি বলেন, “আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।”

তারপর যতদিন আল্লাহ চান ততদিন সে পাপ করা থেকে নিবৃত থাকে। তারপর সে পাপ করে এবং বলে, “হে আমার রব! আমি আরও একটি পাপ করে ফেলেছি, আমায় আপনি ক্ষমা করুন।”

তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা জানে কি যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন? সুতরাং নিশ্চয় আমি তাকে মাফ করে দেই। অতঃপর সে তার ইচ্ছেমত আমল করুক।”

[আহমদ ও শায়খাইন হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন]



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

জিবরাঈ’ল (আ) আমাকে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ সম্পর্কে জানিয়েছেন, আল্লাহ্‌ বলেছেন,

“আমার ইযযত, জালাল ও একত্বের কসম! আমার সাথে আমার বান্দাগণের যে প্রয়োজন রয়েছে এর কসম! এবং আমার আরশের উপর আসন নেয়ার কসম! নিশ্চয় আমি আমার সে বান্দা ও বান্দিকে শাস্তি দিতে লজ্জাবোধ করি যারা ইসলামে অবস্থান করে বয়-বৃদ্ধ হয়েছে।"

অতঃপর রাসূল ﷺ কাঁদতে শুরু করলেন।
আরয করা হল, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ! আপনি কাদছেন কেন?"

তিনি বললেন, “আমি সে ব্যক্তির জন্য কাঁদি, যার জন্য আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন। অথচ মহান আল্লাহর সম্মুখে সে লজ্জিত হয় না।”


[খালীল ও রাফিঈ’ এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন]



ওহে যারা ঈমান এনেছ! সাহায্য কামনা করো ধৈর্য ধরে ও নামায পড়ে! নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সবুরকারীদের সাথে আছেন। - [সূরা আল ববাকারাহ, আয়াত: ১৫৩]


পরিশেষে, দ্বীন পালনে নিয়মিত হওয়ার জন্যে আমাদের উচিত আল্লাহ্‌র কাছে নিয়মিত কিছু দোয়া করা, মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা


"হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।" [সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৮]


Writer: Touhidul Islam Udoy

2 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post