প্রেম এবং তার পরিশুদ্ধি!!!


[বি:দ্র: লেখার মাঝে পাঠককে "তুমি" বলে সম্বোধন করা হয়েছে লেখনির ভাষাকে আকর্ষণীয় করার জন্য। যদি এরূপ সম্বোধনে কেউ অপমানিত বোধ করেন বা বিব্রত হন, তাহলে আমি এর জন্য আপনাদের কাছে আগে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
-আহমেদ আলি]
.
=> প্রেমে পড়ার বিষয়টা আসলে কী?:
ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রেম একটি মারাত্মক রোগ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এটা বুঝতে পারে না।
.
তুমি পরিবারে তোমার মা-বাবা আর আত্মীয়দের মাঝে বেড়ে ওঠো এবং সাধারণত তাদেরকে সহজ ও স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করো। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তুমি হয়ত এমন কারও সন্নিকটে আসো যে বিশেষভাবে তোমার পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

তুমি সেই বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির মধ্যে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাও এবং তার চেহারা, মনোভাব, কথা-বার্তা এবং আনুষঙ্গিক নানান বিষয় তোমার চিন্তাকে প্রভাবিত করে এবং তোমার মনে হতে থাকে যেন তুমি মনের মধ্যে এক ধরণের আনন্দ অনুভব করছো। যতই তুমি বিপরীত লিঙ্গের সেই মানুষটির দিকে তাকাও আর তার সাথে অবাধে মিশতে থাকো, ততই তুমি তার সঙ্গ লাভের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ো। আর তাই যখন তুমি একাকী অবস্থান করছো, তোমার মনের মধ্যে সেই বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিত্বটিই যেন জায়গা দখল করে বসে থাকে। তার সঙ্গ না পেয়ে তোমার মনে হতে থাকে, তুমি যেন অগ্নিতে দগ্ধ হচ্ছো।
.
=> এটি আসলে কী ধরণের কামনা?:
.
এই বিষয়টাকে চিহ্নিত করা আসলেই কঠিন। বিভিন্ন সময় এটি বিভিন্ন ভাবে ক্রিয়াশীল হয়। কখনও কেবল বিপরীত লিঙ্গের সৌন্দর্যে কেউ আকৃষ্ট হতে পারে, কখনও আকর্ষণ কেবল কথা-বার্তার মধ্য দিয়েও আসতে পারে, কখনও তা হাটা-চলার ভঙ্গিমা বা চোখের চাহনি থেকেও হতে পারে, আবার কখনও কেউ কারও কোনো বিশেষ অঙ্গের প্রতিও আকৃষ্ট হতে পারে, কখনও আকর্ষণ চলার শব্দ থেকে বা শরীরে লাগানো সুগন্ধি বা পারফিউম থেকে আসতে পারে প্রভৃতি। কিন্তু সব সময় সরাসরি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চিন্তা এক্ষেত্রে জাগ্রত হয় না, বরং যৌন আকাঙ্ক্ষার সাথে বন্ধুত্ব এবং অবাধে মেলামেশার তীব্র ইচ্ছাটাও এখানে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এই পরিস্থিতিতে যদি এরূপ প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলতেই থাকে এবং তা আসক্তিতে পরিণত হয়, তবে তুমি যার প্রেমে পড়েছো তার প্রতি ধীরে ধীরে নিজেকে সমর্পণ করবে; বা অন্যভাবে বললে, তুমি তীব্র কামনা এবং অনুরাগের দরূণ সেই ব্যক্তিত্বের দাসত্বে পতিত হবে যে তোমার মনোজগতের রাজত্বকে হরণ করেছে।
.
=> এসবের কারণটা আসলে কী?:
.
এখানে আসল কারণ যেটা থেকে এত কিছুর উদ্ভব হল সেটা হল "হিজাব ভঙ্গ করা"("হিজাব" হল ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শালীনতা বজায় রাখার সুনির্ধারিত উপায়)। শালীনতা সম্পন্ন বস্ত্র দ্বারা শরীরকে ঢাকা, চোখের চাহনি, চলন-বলন এবং প্রতি মুহূর্তের আচরণ এবং মনোভাবে শালীনতা বজায় রাখা হিজাবের পদ্ধতিগত বিষয়গুলির অঙ্গ। যদি হিজাব পালনের ক্ষেত্রে এর একটি অংশও বিঘ্নিত হয়, তবে সেখানে আকর্ষণ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রেম এধরণের আকর্ষণ থেকে জন্মায় এবং আমার মতে এই আকর্ষণ তিন ধরণের হতে পারে:
.
১) দেহ ও মনের প্রতি সমান আকর্ষণ;
২) দেহের প্রতি অধিক আকর্ষণ, মনের প্রতি কম আকর্ষণ;
৩) দেহের প্রতি কম আকর্ষণ, মনের প্রতি অধিক আকর্ষণ।
.
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যেকোনো এক প্রকারের আকর্ষণ কোনো এক নির্দিষ্ট মুহূর্তে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল হতে পারে। আর এধরণের আকর্ষণ মনকে দুর্বল করে দেয় এবং চিন্তা ও অনুভূতিকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা দ্বারা পূর্ণ করে তোলে। এসব কিছু আসলে শুরু হয় আমাদের জ্ঞান-ইন্দ্রিয়ের অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে (এবং বিশেষ ভাবে বিপরীত লিঙ্গের সৌন্দর্য উপভোগের মাধ্যমে চোখের অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে)।
.
যখন কেউ তার ইন্দ্রিয়ের অপব্যবহার করে, তখন সেখান থেকেই তার হিজাব ভঙ্গ হওয়া শুরু হতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো তরুণ ছেলে হঠাৎ ফ্যাশনওয়ালা পোশাক পরা কোনো সুন্দরী মেয়েকে দেখে, তবে, হয় সে আবার তার দিকে তাকিয়ে তাকে ক্রমাগত দেখেই যেতে পারে, নয়ত সে নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে পরবর্তী বার তাকে দেখা থেকে বিরত হতে পারে।
এখন যদি সে মেয়েটাকে দেখতেই থাকে, তবে তার(ছেলেটার) মন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সে(ছেলেটা) নিজের কামনার দাসত্বে পতিত হবে যা তার মানসিক পীড়াতে রূপান্তরিত হবে। সেই মুহূর্তে মাথায় যুক্তি কাজ করবে না এবং সে বুঝতে ব্যর্থ হবে যে, কামনার তীব্রতা থেকে মুক্তি পেতে দৃষ্টিকে সংযত করা উচিৎ কারণ তখন তার মন আনন্দ উপভোগের কাজে ব্যস্ত।
.
এই অনুভূতির মুহূর্তে অধিকাংশ ব্যক্তিই মনে করে যে, এটাই হল আসল শান্তি আর তাই এটা অবশ্যই সঠিক কাজ। এরকমটা ভাবার কারণ হল, তাদের মন তখন তাদের কামনার পিছনে ছুটে বেড়ানোর জন্য তাদেরকে প্ররোচনা দিতেই থাকে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো শান্তিই প্রদান করে না। বরং এটি হরমোনের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ প্রকাশভঙ্গিকেই তুলে ধরে যা ক্রিয়াশীলতা লাভ করে জ্বলন্ত অগ্নির ন্যায়।
ফলস্বরূপ, মনের শান্ত অবস্থা রূপান্তরিত হয় উত্তেজনাপূর্ণ অনুভূতিতে এবং এই উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করা হয় কামনাসুলভ উপভোগের মাধ্যমে।
.
কিন্তু যখন তুমি ভাবছো যে এই উপভোগের মাধ্যমে তুমি তোমার উত্তেজনা কমাতে পারবে, তখন তুমি পড়ছো আরও একটি ফাঁদে!
কারণ এরূপ উপভোগ তোমার কামনাকে পূর্বের তুলনায় বর্ধিত করে এবং এই উপায় অবলম্বনে তুমি কখনই সন্তুষ্ট হতে পারো না বিধায় তোমার উত্তেজনা আরও অধিক হারে বেড়ে ওঠে।
তাহলে কীভাবে কেউ বলতে পারে যে, 'এই কামনার পিছনে ছুটে বেড়ানোটাই হল শান্তির পথ' !!!
.
কামনা হতে উদ্ভূত এরূপ মানসিক পীড়া প্রেমে রূপান্তর লাভ করে এবং তুমি পতিত হও তোমার আকাঙ্ক্ষা ও তোমার প্রেমের মানুষটির দাসত্বের বেড়াজালে। একারণেই মহান সৃষ্টিকর্তা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন যে, মানুষকে জ্ঞান-ইন্দ্রিয় ও অন্যান্য অঙ্গ প্রদান করা সত্ত্বেও ন্যায়পরায়ণতার পরিবর্তে উত্তম জীবনব্যবস্থা ও ইবাদত(একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য ও তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ) প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে সে প্রায়শই বেছে নেয় অধার্মিকতার পথ।
.
"আমি কি তাকে দু’টো চোখ দিই নি?
আর একটি জিহ্বা আর দু’টো ঠোঁট?
আর আমি তাকে (পাপ ও পুণ্যের) দু’টো পথ দেখিয়েছি।
(মানুষকে এত গুণবৈশিষ্ট্য ও মেধা দেওয়া সত্ত্বেও) সে (ধর্মের) দুর্গম গিরি পথে প্রবেশ করল না।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৯০:৮-১১)
.
=> প্রেমের পরিশুদ্ধি:
.
আল্লাহ তায়ালা(মহান সৃষ্টিকর্তা) কোরআনে বলছেন যে, তিনি মানব জাতিকে পবিত্রতার পথ প্রদর্শন করেছেন এবং যে ব্যক্তি এই পবিত্রতার এই পথ অবলম্বন করে চলবে, আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সেই ব্যক্তি হবে সফলকাম।
.
"শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর,
অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন,
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৯১:৭-১০)
.
ইসলাম প্রেমকে পরিশুদ্ধ করতে বিবাহের পথ দেখিয়ে দেয়। যদি কেউ বিবাহে অসমর্থ হয়, তবে তাকে সওম(ইসলাম অনুযায়ী খাদ্য ও বিভিন্ন বিষয় হতে সংযমের সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া) পালন করতে হবে কামনাকে সংযত রাখার জন্য।
.
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
"হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে।"
(সহীহ বুখারী)
.
তাই বিয়ে বা বিবাহ করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি অনুমোদিত উপায়ে বিপরীত লিঙ্গের সাহচর্য লাভ করে যা তার কামনাকে নিয়মনিষ্ঠ উপায়ে পূরণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এভাবে কারও আবেগপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা প্রশমিত হয় কেননা বিবাহ তার জীবনের কাঠামোকে এরূপ নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে পরিবর্তিত করে যে, এটি তাকে সাহায্য করে অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে।
.
তদুপরি, ভালোবাসার প্রায়োগিক প্রকাশভঙ্গি কীরূপ হওয়া উচিৎ তাও বর্ণিত হয়েছে, যার অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের চিন্তা ও অনুভূতিতে পবিত্রতা আনা এবং সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী হওয়া সম্ভব।
.
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
.
"তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেঃ
১) আল্লাহ্(সৃষ্টিকর্তা) ও তাঁর রাসূল(নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া;
২) কাউকে একমাত্র আল্লাহর(সৃষ্টিকর্তার) জন্যই ভালবাসা;
৩) 'কুফরী'-তে প্রত্যাবর্তনকে ('কুফরী' বলতে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা বোঝায়) আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপছন্দ করা।"
(সহীহ বুখারী)
.
এখানে প্রেমকে পরিশুদ্ধ করার কৌশল সমূহ বিবৃত হয়েছে।
(সেগুলো হচ্ছে) সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর প্রেরিত রাসূল(সত্যের সর্বশেষ বার্তাবাহক নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা। আর সেটি সম্ভব হবে একমাত্র 'আল্লাহ তায়ালা'(সত্য সৃষ্টিকর্তা) এর নিকট নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণের মাধ্যমে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশগুলি পালনের মাধ্যমে।
.
অন্য কাউকে ভালোবাসতে হবে কেবলই আল্লাহ(সৃষ্টিকর্তা) এর খাতিরে।
.
আর কুফরী বা সত্য প্রত্যাখ্যানকে অপছন্দ করতে হবে ঠিক তেমনভাবেই, যেমনভাবে কেউ অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে।
.
এই পথ অবলম্বনের মাধ্যমে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজের ইচ্ছাশক্তি সমর্পণের মধ্য দিয়ে নিজ কামনা ও অন্য ব্যক্তিদের দাসত্ব হতে মুক্তি লাভ সম্ভব।
.
সৃষ্টিজগতের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণের এই পথের অনুসরণ অন্তরে বারবার এই নির্দেশেরই প্রতিধ্বনিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, "তুমি তো অন্য কোনো ব্যক্তিত্বের নও, বরং তোমার প্রতিপালক আল্লাহ এরই একমাত্র অনুগত দাস!"
.
আর এই প্রক্রিয়াতেই কেউ তার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হিজাবকে সঠিকভাবে পালন করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে এবং নিজের জ্ঞান-ইন্দ্রিয়, চিন্তা এবং ইচ্ছাশক্তিকে যথাযথ উপায়ে শালীনতার সাথে ব্যবহারের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।
.
এভাবেই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশের প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে যে কেউ জীবনে চলার পথে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে অগ্রসর হয় যে, 'আমাকে আমার সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে, আমার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নয়'।
একারণেই মহান আল্লাহ(সৃষ্টিকর্তা) 'মুমিন'-দেরকে(সত্য বিশ্বাসীদেরকে) নির্দেশ দিয়েছেন পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে প্রবেশ করতে যাতে করে তারা ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জগতের অন্য সকল বন্ধনের শৃঙ্খল হতে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়।
.
"হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:২০৮)
.

লেখকঃ আহমেদ আলী(ভারত) [ফেসবুক id: Ahmed Ali]

অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ Click Here  এবং Click Here

ফেসবুক পেজঃ Click Here

Post a Comment

Previous Post Next Post