ফিলিস্তিনে রক্তপাত ও এর অধিবাসীদের উচ্ছেদের আসল কারণ কী?


.
গতদিনের লেখায় ফিলিস্তিনি ভুখণ্ডের প্রতি ইহুদিদের দাবির কারণ ও পশ্চিমা খ্রিষ্ট ধর্মবিশ্বাসীদের নির্লজ্জ সমর্থনের কারণ আলোচনা করেছিলাম। লেখাটির লিঙ্কঃ https://goo.gl/N44B3Z। আজকের লেখায় ফিলিস্তিন দখলের ব্যাপারে বাইবেলের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করব।
ইহুদি জাতি কী করে মিসরে ফিরআউনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ফিলিস্তিনের দিকে যাত্রা করে এবং পরিশেষে আবার ফিলিস্তিন অধিকার করে, তার বিস্তারিত বিবরণ বাইবেলে আছে। মুসা(আ) এবং বনী ইস্রাঈলের নামে যে কাহিনীগুলো বিকৃত গ্রন্থ বাইবেলে লেখা আছে, তাতে সুস্পষ্ট উপায়ে ইহুদি রাষ্ট্র স্থাপনের ইতিহাস ও উপায় বর্ণনা করা আছে। ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কাছে সেগুলো হচ্ছে ‘ঈশ্বরের বাণী’ ও ‘পথনির্দেশ’। চলুন দেখি বাইবেলের কাহিনী অনুযায়ী কিভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

(বিকৃত)বাইবেলের কাহিনী অনুযায়ী মোশি {মুসা(আ)/Moses} বনী ইস্রাঈলের মানুষদের নিয়ে যখন পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন আশপাশের অনেকগুলো জাতিকে ঈশ্বরের নির্দেশে নৃশংসতম উপায়ে নির্যাতন করেন এবং তাদের উপর গণহত্যা চালিয়ে তাদেরকে একেবারে ধ্বংস করে দেন (আসতাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ)। কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ ঠিক তাই বলছে। আগের লেখাতেই আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ(Tanakh) এর বইগুলোকে খ্রিষ্টানরাও ঈশ্বরের বাণী বলে বিশ্বাস করে এবং তারা সেগুলোকে তাদের বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old testament) অংশে রেখেছে। অর্থাৎ খ্রিষ্টান বাইবেলের Old testament অংশের বইগুলো ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কমন ধর্মগ্রন্থ। বাইবেলের Old testament অংশের ‘দ্বিতীয় বিবরণ’(Deuteronomy) গ্রন্থের ২য় অধ্যায়ে বলা হয়েছে যেঃ মুসা(আ) এর অনুগত বনী ইস্রাঈলীরা হিষ্বোন অঞ্চলের রাজা সীহোনকে পরাজিত করেন। এবং #প্রভু_ঈশ্বরের_নির্দেশে তারা সে অঞ্চলের পুরুষ, স্ত্রীলোক এবং ছোট শিশু সকলকে মেরে ফেলেন। বাইবেলের ভাষ্যমতে---
.
“ কিন্তু প্রভু আমাদের ঈশ্বর সীহোনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমরা রাজা সীহোন, তার পুত্রদের এবং তার সমস্ত লোকদের পরাজিত করেছিলাম।
সেই সময় রাজা সীহোনের সব শহরগুলোই আমরা অধিকার করেছিলাম। প্রত্যেক শহরের সমস্ত লোকদের, সকল পুরুষদের, স্ত্রীলোকদের এবং ছোট ছোট শিশুদের আমরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম। আমরা কাউকেই জীবিত ছেড়ে দিই নি!
ঐ সমস্ত শহরগুলো থেকে আমরা কেবলমাত্র গবাদিপশু এবং মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী নিয়েছিলাম।“
[বাইবেল, দ্বিতীয় বিবরণ(Deuteronomy) ২:৩৩-৩৫; লিঙ্ক থেকে চেক করে দেখতে পারেনঃ https://goo.gl/ACLG7n ]
.
এরপর তারা পরবর্তী রাজ্য বাশনের রাজা ওগকে পরাজিত করেন এবং #প্রভু_ঈশ্বরের_নির্দেশে তারা সে অঞ্চলেরও নারী, পুরুষ, এবং ছোট শিশু সকলকে হত্যা করেন। বাইবেলের ভাষ্যমতে---
.
“৩ “সেই কারণে প্রভু আমাদের ঈশ্বর বাশনের রাজা ওগকে পরাজিত করতে সাহায্য করেছিলেন। আমরা তাকে এবং তার সমস্ত লোকদের পরাজিত করেছিলাম। তাদের আর কেউই বাকী ছিল না।
… …
৬ হিষ্বোনের রাজা সীহোনের শহরগুলিকে আমরা য়েভাবে ধ্বংস করেছিলাম, সেভাবেই এদেরও ধ্বংস করেছিলাম। প্রত্যেকটি শহরকে এবং সেখানে বসবাসকারী সমস্ত লোকদের এমনকি সমস্ত স্ত্রীলোকদের এবং শিশুদের আমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছিলাম।
৭ কিন্তু ঐ সমস্ত শহরের সমস্ত গোরু এবং সমস্ত মূল্য়বান দ্রব্যসামগ্রী আমরা নিজেদের জন্য রেখে দিয়েছিলাম।“
[বাইবেল, দ্বিতীয় বিবরণ(Deuteronomy) ৩:৩-৭; লিঙ্কঃ https://goo.gl/WdLf6w]
.
পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের দিকে এগিয়ে যাবার পথে যেসব জাতি পড়বে, বাইবেলের ঈশ্বর নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে এবং কোন প্রকার ক্ষমা প্রদর্শন না করতে। অর্থাৎ ঐসব জাতিকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে দেবার ফর্মুলা বা Ethnic cleansing। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। এটিই হচ্ছে ‘পবিত্র’ বাইবেল অনুযায়ী ইহুদিদের promised land দখল করার নিয়ম। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে বাইবেল থেকেই দেখুনঃ---
.
“প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, যখন তোমাদের নেতৃত্ব দিয়ে সেই দেশে নিয়ে যাবেন, যে দেশে তোমরা অধিগ্রহণের জন্য প্রবেশ করছো, তখন প্রভু তোমাদের সামনে অনেক জাতিকে দূর করে দেবেন – য়েমন হিত্তীয়, গির্গানীয, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয় তোমাদের থেকে অনেক বড় এবং অনেক শক্তিশালী সাতটি জাতি।
প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর, এই জাতিগুলোকে তোমাদের কাছে সমর্পণ করলে পরে তোমরা তাদের পরাজিত করবে এবং তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে। তাদের সঙ্গে কোনোরকম নিয়ম কোরো না। তাদের ক্ষমা প্রদর্শন করো না।"
[বাইবেল, দ্বিতীয় বিবরণ(Deuteronomy) ৭:১-২; লিঙ্কঃ https://goo.gl/5inHjZ]
.
বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনে মুসলিমদের সাথে ইহুদিরা যা করছে, তা কি বাইবেলের এইসব বিধানেরই প্রতিচ্ছবি নয়? 
.
বাইবেলের ঈশ্বরের নির্দেশে ইহুদিরা মিদিয়ন অঞ্চলের সকল ছেলে শিশু এবং বিবাহিত নারীকে হত্যা করে। আর যে সকল বাচ্চা মেয়ে কখনো যৌন কাজ করেনি অর্থাৎ কুমারী, তাদেরকে ভোগের জন্য নিয়ে আসে। তারা বিপুল পরিমাণে গরু-ছাগল এবং অন্যান্য গবাদী পশু লুটপাট করে নিয়ে আসে। সেই সাথে বন্দী করে আনে ৩২,০০০ কুমারী অল্প বয়সী মেয়েকে। অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, কিন্তু এটাই বাইবেল অনুযায়ী পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের দিকে যাত্রাকারী ইহুদিদের প্রতি #ঐশ্বরিক_নির্দেশ। বাইবেলের গণনাপুস্তক(Numbers) এর ৩১ নং অধ্যায়ে এর বিশদ বিবরণ আছে। লিঙ্কঃ https://goo.gl/GKhys5
অনেক খ্রিষ্টান মিশনারী বলতে চায় ইসলাম নাকি মানুষকে দাস বানাতে উৎসাহিত করে। ইসলামে গনিমতের মাল নিয়েও তাদের কটুক্তির শেষ নেই। তারা কি বাইবেলের এই বিধানগুলো দেখে না? অথচ ইসলাম কখনো এই রকম উপায়ে হত্যা, লুটপাট ও বন্দী করার নির্দেশ দেয়নি। ইসলামে জিহাদের বিধান, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভের উপায় বাইবেল থেকে অনেক ভিন্ন।
.
বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী মুসা(আ) এর জীবদ্দশাতে বনী ইস্রাঈল ফিলিস্তিন পর্যন্ত আসতে পারেনি। তাঁর উত্তরাধিকারী ইউশা বিন নুন(আ) {যিহোশূয়/Joshua} এর নেতৃত্বে তারা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। ফিলিস্তিনে আসার অবশিষ্ট পথটিতে ঈশ্বরের নির্দেশে তাদের দ্বারা আরো ভয়াবহ সব নিষ্ঠুরতার বিবরণ বাইবেলে পাওয়া যায়। যিহোশূয়(যোশুয়া/Joshua) ২:৮-২১ এ উল্লেখ আছে বনী ইস্রাঈলের কারণে স্থানীয় জনগণ কী নিদারুণ ভয়ে দিন যাপন করত [বাইবেল থেকে সংশ্লিষ্ট অংশের লিঙ্কঃ https://goo.gl/9MBhg5] যিহোশূয়(যোশুয়া/Joshua) ৬:১৭-২২ এ উল্লেখ আছে বনী ইস্রাঈলের লোকেরা কিভাবে যিরীহো(Jericho)শহরের সকল যুবক যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরু, মেষ, গাধা সকলকে মেরে ফেলে এরপর সমস্ত শহর জ্বালিয়ে দেয়। [লিঙ্কঃ https://goo.gl/81dQQW ; https://goo.gl/cEfSRd] যিহোশূয়(যোশুয়া/Joshua) ৮:১-২৯ এ উল্লেখ আছে বনী ইস্রাঈল কিভাবে অয় শহরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দেয়, সেখানকার ১২,০০০ নারী-পুরুষকে হত্যা করে এরপর ইউশা বিন নুন(আ) {যিহোশূয়/Joshua} সেখানকার রাজাকে মেরে গাছের সাথে সারাদিন ঝুলিয়ে রাখেন [লিঙ্কঃ https://goo.gl/5CrVkn]। কোন নৃশংস কাহিনীর হলিউডী ছবি নয়; এটি পৃথিবীর সব থেকে বেশি মানুষের অনুসৃত ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের কাহিনী।
.
ফিলিস্তিনে ঈশ্বরের ওয়াদাকৃত বনী ইস্রাঈলের promised land দখলের জন্য এমনই ভয়ঙ্কর সব উপায় বাইবেলে বর্ণনা করা আছে যেগুলো চিন্তা করলেও গা শিওরে ওঠে। ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীদের ‘পবিত্র’ ধর্ম গ্রন্থে এমন ইতিহাসই লেখা যা আছে, যাতে নবী-রাসুলগণ গণহত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতনের দ্বারা অনেকগুলো জাতিকে সম্পূর্ণরূপে নির্মুল করে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করেন (নাউযুবিল্লাহ)। আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসুলের নামে এই সকল অপবাদ ও মিথ্যাচারের নিপাত করুন। আজকের দিনে ইহুদিদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের জুলুম-নির্যাতন এবং তাতে খ্রিষ্টীয় পশ্চিমাদের মদদ প্রদানের রহস্য কি এবার বোঝা যাচ্ছে?
.
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমি ধরে রাখার ব্যাপারেও বাইবেলের কিছু ফর্মুলা আছে। বাইবেল বর্ণনা করেছে কিভাবে নবী-রাসুলগণ ফিলিস্তিনের দখলকৃত ভূমির শক্তি সংহত করতেন। বাইবেলে ২ শামুয়েল(2 Samuel) ১২:২৯-৩১ এ বলা আছে যে, ইহুদিদের বাদশাহ দাউদ(আ) রাব্বা শহর আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করেন এবং সেখানের লোকদের বের করে এনে তাদেরকে করাত, কুড়াল এইসব অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলেন, তাদেরকে ইটের ভাটার ভেতর ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন(নাউযুবিল্লাহ)। আম্মোনীয়দের সকল শহরেই তিনি এই কাজ করেন [লিঙ্কঃ https://goo.gl/1uHGmA ; https://goo.gl/8g3BNw ]। এই হচ্ছে ইহুদি সাম্রাজ্য সংহত করার বাইবেলীয় ফর্মুলা।
বাইবেল বলে যে এই ফর্মুলা সর্বযুগের জন্য অনুসরণীয়। ইহুদি তানাখ/খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের গীতসংহিতা{সামসঙ্গীত/জবুর শরীফ/Psalms} ১১৯:১৬০ এ বলা আছে যে—ঈশ্বরের সকল আইনই সত্য এবং এগুলো চিরকাল কার্যকর থাকবে [লিঙ্কঃ https://goo.gl/YorxH4 ; https://goo.gl/MHdRTQ ]। বাইবেলের নতুন নিয়মে(New Testament) যিশু খ্রিষ্ট বলছেন যেঃ পূর্বের সকল নবী-রাসুলের আইন চিরকাল কার্যকর থাকবে এবং তিনি সেগুলো প্রতিষ্ঠা করতেই এসেছেন[লিঙ্কঃ https://goo.gl/p89UvN]। এর সাথে প্রতিধ্বনী করে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সেইন্ট পল বাইবেলের ২ তিমথীয়(2 Timothy) ৩:১৬-১৭তে বলেছে-- পূর্বের কিতাবের কথাগুলো ঈশ্বরের থেকে এসেছে এবং এগুলো মানুষের জন্য উপকারী [লিঙ্কঃ https://goo.gl/JRzQAQ]। 
.
পাশবিক, ভয়াবহ, নৃশংস, বর্বর---কোন শব্দমালা দিয়েই ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিকৃত গ্রন্থ বাইবেলের এই সকল ফর্মুলাকে বিশেষায়িত করা যাচ্ছে না। যে সকল অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণ চিন্তা করলেও শরীর শিওরে ওঠে, এই সকল জিনিসকে তারা “ঈশ্বরের বিধান”(!) ও “নবী-রাসুলের কর্ম”(!) বলে বিশ্বাস করে কেননা এগুলো তাদের ধর্মগ্রন্থে আছে। ফিলিস্তিনে আজ তারা যা করছে, এগুলো তাদের ধর্মগ্রন্থেরই প্রতিফলন। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থের নির্দেশ হুবহু বাস্তবায়ন করলে ফিলিস্তিনিদের উপর যে আরো দুর্ভোগ নেমে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। নাউযুবিল্লাহ।
.
তার নিজ হাতে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ রচনা করে এগুলোকে “ঈশ্বরের বাণী” বলে চালাচ্ছে এবং বানোয়াট বিধানের দ্বারা হীন স্বার্থ হাসিল করছে। তাদের বিকৃত গ্রন্থ সম্পর্কে আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
.
" তারা কি এতটুকুও জানে না যে, আল্লাহ সেসব বিষয়ও জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে?
তাদের কিছু লোক অক্ষরজ্ঞানহীন। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, "এটা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে"--যাতে এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য লাভ করতে পারে।
অতএব আফসোস তাদের হাতের লেখার জন্য এবং আফসোস, তাদের উপার্জনের জন্যে।
(কুরআন, বাকারাহ ২:৭৭-৭৯)
.
আল কুরআনেও মুসা(আ) এবং বনী ইস্রাঈলের পবিত্র ভূমির দিকে যাত্রার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কুরআনের বর্ণনা আর বাইবেলের বর্ণনায় বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আল কুরআনে বাইবেলের নৃশংসতার ছিঁটেফোটাও নেই! 
আল কুরআনে মুসা(আ) এর সঙ্গে বনি ইস্রাঈলকে পবিত্র ভূমিতে ঢুকবার নির্দেশের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে। নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা, জোর-জবরদস্তি, অগ্নি সংযোগ এমন কোন কিছুরই উল্লেখ নেই বরং এর উল্টোটাই উল্লেখ আছে। সেই সাথে এটাও উল্লেখ আছে যে জালিম লোকেরা আল্লাহর সেই নির্দেশকে বিকৃত করেছিল। ---
.
“আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এই জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নীচু করে। আর বল-- ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয়ই আমি সৎকর্মশীলদেরকে বাড়িয়ে দেব’।
অতঃপর যালিমরা পবিবর্তন করে ফেলল সে কথা যা তাদেরকে বলা হয়েছিল, ভিন্ন অন্য কথা দিয়ে। ফলে আমি তাদের উপর আসমান থেকে আযাব নাযিল করলাম, কারণ তারা পাপাচার করত।“
(আল কুরআন, সুরা বাকারাহ ২:৫৮-৫৯; লিঙ্কঃ https://goo.gl/Epv4uv)
.
একই রকম কথা উল্লেখ আছে সুরা আরাফ ৭:১৬১-১৬২ আয়াতে [লিঙ্কঃ https://goo.gl/UQAMSD]। 
কোথায় বাইবেলের ধংসাত্মক প্রবেশ আর গণহত্যার কাহিনী আর কোথায় আল কুরআনের মাথা নিচু করে ‘ক্ষমা’র কথা বলে প্রবেশের কাহিনী! এরপরেও তারা বলতে চায় যে কুরআন সন্ত্রাস শেখায় আর বাইবেল শান্তির কথা বলে! সুবহানাল্লাহ। তাদের দাবি আর সত্যের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ।
.
সুরা মায়িদাহ ৫:২১-২৪ আয়াতে উল্লেখ আছে যে--- বনী ইস্রাঈলকে পবিত্র ভূমিতে ঢুকতে বলা হলে তারা সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের বের করে দিয়ে দিয়ে এরপর সেখানে ঢুকবার বায়না ধরে! {ঠিক যেভাবে আজও তারা ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে তা দখল করতে চাচ্ছে} এরপরেও আল্লাহর উপর ভরসা করে সেখানে ঢুকতে বলা হলে তারা উল্টো বলে দেয় যেঃ মুসা(আ) এবং তাঁর প্রভু যেন সেখানে গিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে লড়াই করেন! নাউযুবিল্লাহ। কুরআনের বিবরণে মোটেও স্থানীয় অধিবাসীদের উপর জুলুম করার বিবরণ নেই লিঙ্কঃ https://goo.gl/4indVA
.
ইসলামে কোন অবস্থাতে এমনকি যুদ্ধের ময়দানেও মুশরিক(polytheists)দের সাথে নৃশংসতা করার অনুমতি নেই। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারী-শিশু, পলাতক ও নিরস্ত্রদের হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে [রেফারেন্সঃ আবুদাঊদ হা/২৬৬৯, মুসনাদ আহমাদ হা/১৫৬২৬, ১৬৩৪২; সম্পূর্ণ হাদিসগুলো দেখুন এই লিঙ্ক থেকেঃ https://goo.gl/HEgjd8]। নবী মুহাম্মাদ(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যুদ্ধের জন্য কোন অভিযান প্রেরণ করতেন তখন বিশ্বাসঘাতকতা করা, চুরি করা, কারো অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃত করা, শিশু হত্যা করা—এসব কাজ থেকে নিষেধ করতেন। যুদ্ধের সময়ে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করা হত। যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করত, তাহলে যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, তাদেরকে অন্য সকল মুসলিমদের মত সমান সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা করা হত। আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করত, তাহলে তাদেরকে যৎসামান্য জিজিয়া কর প্রদানের আহ্বান জানা্নো হত। যদি তারা সম্মত হত, তাহলে আর কোন প্রকার যুদ্ধ হত না। এমনকি এরপরেও যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দুর্গের ভেতর থেকে শত্রুরা আল্লাহর যিম্মাদারি এবং নবীর(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিম্মাদারি লাভের আশা করলে{অর্থাৎ নিরাপত্তা চাইলে} তাদের জন্য আল্লাহর যিম্মাদারি এবং নবীর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিম্মাদারি দান করবার নির্দেশ আছে। [রেফারেন্সঃ মুসনাদ আহমাদ ১৭৬২৮, মুসলিম ১৭৩১, তিরমিযী ১৩০৮, ১৬১৭, আবূ দাউদ ২৬১২; হাদিসগুলোর লিঙ্কঃ https://goo.gl/CrFmyM]। এর সঙ্গে বাইবেলের ঈশ্বরের বিধানের তুলনা করুন---নারী, পুরুষ, শিশু, গবাদী পশু সবাইকে হত্যা করা, শহর জ্বালিয়ে দেওয়া, অন্যের ভূমি এভাবে দখল করে নেওয়া। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে অন্য ধর্মগুলোর সাথে ইসলামের পার্থক্য।
.
ফিলিস্তিনি ভুখণ্ডে দখলদার ইস্রায়েল বাহিনীর জুলুম ও রক্তপাত এবং এই অন্যায় কাজে পশ্চিমাদের সহযোগিতার কারণ নিশ্চয়ই এতক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেছে। 
তা হচ্ছে-- ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল। 
বাইবেলের বিধানের কারণেই ইহুদিরা ফিলিস্তিনকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে, বাইবেলের বিধানগুলোর কারনেই ফিলিস্তিনের স্থানীয় অধিবাসী আরব মুসলিমদের জুলুম নির্যাতন করে, হত্যা করে তাদের ভূখণ্ড দখল করা হচ্ছে। আর খ্রিষ্টীয় পশ্চিমারাও এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছে। মূলত পশ্চিমাদের শক্তিতেই ইস্রায়েল শক্তিশালী। মুষ্টিমেয় ইহুদিদের পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না উসমানী খিলাফতকে(Ottoman Empire) পরাজিত করে ফিলিস্তিন দখল করা। ব্রিটিশরা উসমানীদের পরাজিত করার ফলেই তারা ঐ ভূখণ্ড দখল করার সুযোগ পেয়েছে। আমেরিকার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের পক্ষে কখনোই ঐ দখলকৃত ভূখণ্ড ধরে রাখা সম্ভব ছিল না। 
এই সমস্যার কারণ যেহেতু চিহ্নিত, সমাধাণও এ কারণে পরিষ্কার। আর তা হচ্ছে—ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বাতিল ও মিথ্যা মতবাদের চির অবসান এবং শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রতিষ্ঠা। এটাই এ সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধাণ। কুরআন ও হাদিসেও আমরা দেখি যে কিয়ামতের পূর্বে এই মতবাদগুলো নিশ্চিহ্ন হবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এই কাজ করবেন মাসিহ ঈসা(আ)।
.
আল্লাহ রাসূল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন আছে সেই সত্তার কসম! অবশ্যই এমন এক দিন আসবে, যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে অবতরণ করবে; ক্রুশ ভেঙ্গে চুরমার করবেন, শূকর নিধন করবেন, জিযিয়া কর বাতিল করবেন, মাল-সম্পদ এত বেশী হবে যে, (দান বা সাদকা) গ্রহণ করার মত লোক থাকবে না। সেই সময় একটি সিজদাহ্ দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার থেকেও উত্তম হবে।’’ (অর্থাৎ, কিয়ামত নিকটে জানার কারণে ইবাদত মানুষের কাছে অতি প্রিয় হবে।) 
এ হাদীস বর্ণনার পর আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে, ক্বুরআন কারীমের এ আয়াত পাঠ করতে পার, (وَإِنْ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ) অর্থাৎ, আহলে কিতাবদের [ইহুদি ও খ্রিষ্টান] মধ্যে প্রত্যেকে নিজ মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর[ঈসা(আ)] প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা নিসা-৪:১৫৯)
[বুখারীঃ কিতাবুল আম্বিয়া; হাদিস নং ৩৪৪৮; লিঙ্কঃ https://goo.gl/neAS6r
.
ফিলিস্তিন কেন মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
ফিলিস্তিনে রয়েছে আমাদের প্রথম কিবলাহ আল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস। এখান থেকেই রাসুল(ﷺ) মিরাজে গমন করেছেন, ইমামতি করে পূর্বের নবীদের সাথে সলাত পড়েছেন। বাইতুল মাকদিস হচ্ছে বিশ্বাসীদের ভূমি। এখন একমাত্র মুসলিমরাই শেষ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) ও পূর্বের সকল নবীদের প্রতি বিশ্বাসী জাতি। তাছাড়া আরব মুসলিমরা ঐ অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসী। স্থানীয় অধিবাসীদের অবশ্যই নিজ ভূমির উপর অধিকার আছে। স্থানীয়দের জোর করে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে বিজাতীয়দের তথাকথিত promised land দখল কিংবা থার্ড টেম্পল প্রতিষ্ঠা – এগুলো কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষের চিন্তা হতে পারে না। জেরুজালেম কেন মুসলিম উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফিজাহুল্লাহ) এর এই ফতোয়াটি পড়া যেতে পারেঃ https://islamqa.info/en/7726
.
আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে দিন এবং ফিলিস্তিন সংকটের দ্রুত সমাধাণ করে দিন।
.
===
লেখকঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার [ফেসবুক id: Muhammad Mushfiqur Rahman Minar]

অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com  এবং response-to-anti-islam.com

ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1

Post a Comment

Previous Post Next Post