বড়ই পিকুলিয়ার দুটি প্রশ্ন।
একটার উত্তর হলো "কারণ"। অন্যটার হলো "প্রসেস" বা "প্রক্রিয়া"।
.
আধুনিক যুগের নব্য মডারেট মুসলিমরা বা আর্টস,কমার্স,সাহিত্য প্রভৃতি ব্যাকগ্রাউন্ডের "তুখোড় বিজ্ঞানী"রা যখন শুধুমাত্র বিজ্ঞানেরই আলোকে সবকিছুকে আলোকিত করে ফেলে ব্যাখ্যা করতে যায়,তখন তারা ভুলে যায় যে বিজ্ঞান জিনিসটা দাঁড়িয়েই আছে মূলত পর্যবেক্ষণের ওপরে। আর প্রকৃতপক্ষে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেবলমাত্র অতীব ক্ষুদ্র অংশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত। যার কারনে কিছু বিজ্ঞানীরা তো বলেন যে এই বিশ্বজগত হলো অসীম,আর কিছু বলেন তা এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের যা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব তার আরও ২০গুণ বেশি।
.
কাজেই পর্যবেক্ষণ নেই,তো এই "বিশেষ জ্ঞান"-এর কোমড়ে জোরও খুঁজতে গেলে দেখা যাবে নেই।
.
এরই ফলে দেখা যায় যে বাঘ,পেঁচা প্রভৃতির মুখোশ নিয়ে মঙ্গল কামনা করতে বের হওয়া এই প্রবল বিজ্ঞানমনস্ক সম্প্রদায়,কোন একটা ঘটনা কি কারণে ঘটে বিপুল বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভিত্তিতে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে "কেন" ও "কিভাবে"-এর মধ্যে লেজে-গোবরে পাকিয়ে একেবারে বীভৎস এক পরিস্থিতির জন্ম দেয়,যা তারা নিজেরাও জানে না;বা জানলেও হয়তো আস্তে করে চেপে যায়,আল্লাহ ভাল জানেন।
.
যেমন উদাহরণস্বরূপ প্রশ্ন করা হলো - বৃষ্টি কেন হয়?
.
এদের ব্যাপারে একটা কথা বলাই বাহুল্য,যে এরা কিছু জানুক আর নাই জানুক;পান্ডিত্য জাহির করার ক্ষেত্রে সবার আগে গলা বাড়িয়ে ছুটে আসে।তা কেউ এদের কাছে জবাব চাক বা না-ই চাক।
.
বৃষ্টি কেন হয়-জবাবে দেখা যাবে কথার তুবড়ি ছুটে গেছে। এর মধ্যে দু-একটা কথার মর্মোদ্ধার করা সম্ভব হলে বোঝা যাবে,যে তারা বলার চেষ্টা করছে -
.
"সূর্যের তাপে পানি উপরে উঠে,উঠে নিম্নতাপমাত্রায় জমে,তারপর ওজনের ভারে নিচে নেমে আসে" ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
কিন্তু বাতাস যত উত্তপ্ত হয় ততই হালকা হয়ে উপরে উঠতে থাকে, অর্থাৎ বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে থাকে হালকা উত্তপ্ত বাতাস। নিচে ভারী তুলনামূলকভাবে শীতল বাতাস। তাহলে উত্তপ্ত বাতাস ঠান্ডা হয় কীভাবে,বা এসবের মধ্যে শিশিরাঙ্ক নামক বস্তুর কাজই বা কী - এসব কিছু এদেরকে জিজ্ঞেস না করাই উত্তম হবে আল্লাহু 'আলাম।
.
কারণ এদেরকে বৃষ্টি হবার কারণ জিজ্ঞেস করায় আপনি অলরেডী উত্তর পেয়েছেন বৃষ্টি হবার প্রসেস বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
.
আবার যেমন ভূমিকম্প।
.
সবার আগে দৌঁড়ে এসে জ্ঞানের পসরা খুলে বসে বলবে,"টেকটোনিক প্লেটে প্লেটে সংঘর্ষের কারণে মাটি কেঁপে উঠেছে। এখানে অন্য কিছু মনে করার অবকাশ নেই। ওসব মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা"।
.
ফলাফল একই‚ঘুরেফিরে আবারও সেই "ফির পেহলে সে"।
.
মানে ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে,আপনার কোন এক বন্ধুকে হঠাৎ কক্সবাজারে ঘুরতে দেখে আপনি জিজ্ঞেস করলেন "এখানে কেন?"
আর সে উত্তরে বললো "কক্সবাজারে আসার বাসে চড়েছি,বাস এখানে এসে নামিয়ে দিয়েছে,তাই এখানে"।
.
কিন্তু না‚এক্ষেত্রে যেকোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই থামিয়ে দিয়ে বলবেন -
.
"না না,কক্সবাজারে যাবার এটা তো কোন কারণ হতে পারে না;এটাতো সে ব্যক্তি কিভাবে এখানে এসেছে তা বলা হলো। কারণ তো হবে হয়তো বেড়ানো,বা আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করা বা অন্য কিছু"।
.
আসল ব্যাপারটা ঠিক এই জায়গায়।
.
বৃষ্টি বা ভূমিকম্প-এদেরকে আপনি একটু গলার জোর বাড়িয়ে বলুন যে প্রসেস না, এ ব্যাপারগুলোর কারন সম্পর্কে বলতে। দেখবেন বিজ্ঞানমনস্করা শোলমাছের মত পিছলে যাবার ধান্দায় আছে।
.
বিশ্বজগত সৃষ্টির কারণ জিজ্ঞেস করার পর বিং ব্যাং-এর মুখস্থ বুলি কপচানো শুরু করলে হালকা করে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলুন -
কিভাবে না,কেন সৃষ্টি হয়েছে তা বলতে। দেখবেন বিজ্ঞানীরা নিশ্চুপ।
.
কেন জন্মেছে? এ প্রশ্ন এদেরকে জিজ্ঞেস করলেও দেখা যাবে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর নিষেকের কাহিনী শুরু করেছে। কেন মারা যাবে? জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে ব্রেইনডেড হবার বুলি আওড়াচ্ছে।
.
আসলে এরা সবসময়ই কনফিউশনে থাকে;এদের জীবনটা চলেও কনফিউশনে,শেষও হয় কনফিউশনে।
.
এরাই শাইত্বানের অন্যতম হাতিয়ার;তার নিজের দল ভারী করার জন্য,মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে করে আসা তার অভিশপ্ত ওয়াদা পূরণের জন্য।
.
.
কাজেই চিন্তা করুন,মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হউন।
জানুন যে বিশ্বজগতের সৃষ্টি কোন অ্যাক্সিডেন্ট নয়,বা মালিকুল মুলকের কোন ক্রীড়াকৌতুক নয়।
.
■আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে,তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করি নি।
-সূরাহ আল আম্বিয়া,১৬
.
জানুন যে আপনার জন্ম বা মৃত্যু আপনার জন্য পরীক্ষা‚কখনোই কারণহীন বা উদ্দেশ্যহীন নয়।
.
■পূণ্যময় তিনি যাঁর হাতে রাজত্ব,এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাশালী।
■যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন,যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ।এবং তিনিই সর্বশক্তিমান,ক্ষমাময়।
-সূরাহ আল মুলক,১ ও ২
.
চিন্তা করুন…
■…এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন,যাতে তোমরা চিন্তা করো।
-সূরাহ আল বাক্বারা,২১৯ এর শেষাংশ
.
■…এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্যে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন-যাতে তোমরা চিন্তাভাবনা করো।
-সূরাহ আল বাক্বারা,২৬৬ এর শেষাংশ
.
■…আপনি বলে দিন:"অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে?তোমরা কি চিন্তা করো না?"
-সূরাহ আল আনআম,৫০ এর শেষাংশ
.
■…আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন।তোমরা কি চিন্তা করো না?
-সূরাহ আল আনআম,৮০ এর শেষাংশ
.
■…নিশ্চয়ই আমি প্রমাণাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্য,যারা চিন্তা করে।
-সূরাহ আল আনআম,৯৮ এর শেষাংশ
.
■…ইনিই আল্লাহ,তোমাদের রব;কাজেই কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো।তোমরা কি কিছুই চিন্তা করো না?
-সূরাহ ইউনুস,৩ এর শেষাংশ
.
■তিনিই ভূমণ্ডলকে বিস্তৃত করেছেন,এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়-পর্বত ও নদনদী এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দুটি করে প্রকার সৃষ্টি করেছেন।তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন।এতে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে,যারা চিন্তা করে।
■এবং যমীনে বিভিন্ন শস্যক্ষেত্র রয়েছে-একটি অপরটির সাথে সংলগ্ন এবং আঙুরের বাগান আছে আর শস্য ও খর্জুর রয়েছে-একটির মূল অপরটির সাথে মিলিত এবং কতক মিলিত নয়।এগুলোকে একই পানি দ্বার সেচ করা হয়।আর আমি স্বাদে একটিকে অপরটির চাইতে উত্কৃষ্টতর করে দেই।নিশ্চয়ই,এগুলোর মধ্যে নিদর্শন আছে তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।
-সূরাহ আর রা'দ,৩ ও ৪
.
■…আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন,যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।
-সূরাহ ইবরাহীম,২৫ এর শেষাংশ
.
■এটা (ক্বুরআন) মানুষের জন্য একটি সংবাদনামা এবং যাতে এতদ্বারা ভীত হয় এবং যাতে জেনে নেয় যে উপাস্য তিনিই-একক;এবং যাতে বুদ্ধিমানেরা চিন্তাভাবনা করে।
-সূরাহ ইবরাহীম,৫২
.
■তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিছেয়েন,সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তাভাবনা করে।
-সূরাহ আন নাহল,১৩
.
■যিনি সৃষ্টি করেন,তিনি কি তার সমতুল্য যে সৃষ্টি করতে পারে না?তোমরা কি তবে চিন্তা করবে না?
-সূরাহ আন নাহল,১৭
.
■আমি এই ক্বুরআনকে নানাভাবে বুঝিয়েছি,যাতে তারা চিন্তা করে।অথচ এতে তাদের কেবল বিমুখীতাই বৃদ্ধি পায়।
-সূরাহ আল ইসরা,৪১
.
■তারা কি এই কালাম সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে না?…
-সূরাহ আল মু'মিনূন,৬৮ এর প্রথমাংশ
.
■…বলুন:"যারা জানে এবং যারা জানে না,তারা কি সমান হতে পারে?"চিন্তাভাবনা কেবল তারাই করে,যারা বুদ্ধিমান।
-সূরাহ আয-যুমার,৯ এর শেষাংশ
.
■তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নির্দশনাবলী দেখান এবং তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে নাযিল করেন রুযী।চিন্তাভাবনা তারাই করে,যারা আল্লাহর দিকে ঋজু থাকে।
-সূরাহ গাফির,১৩
.
■তারা কি ক্বুরআন সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে না,না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?
-সূরাহ মুহাম্মাদ,২৪
.
■যদি আমি এই ক্বুরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম,তবে তুমি দেখতে যে,পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা'আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে।আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি,যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।
-সূরাহ আল হাশর,২১
======================
লেখকঃ মোহাম্মাদ মশিউর রহমান
অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com এবং response-to-anti-islam.com
ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1
Post a Comment