মজার একটা গল্প বলি। এইলিয়েন বা ভিন গ্রহের প্রানী নিয়ে অ্যামেরিকানদের আগ্রহের কথা সবারই। নানা টিভি সিরিয়াল, মুভি, সাইন্স ফিকশান বই এমনকি হ্যালোউইনের পোশাকেও এইলিয়েনদের উপস্থিতি। তবে এখানেই শেষ না। অ্যামেরিকানরা এইলিয়েনদের নিয়ে এতোটাই ফ্যাসিনেটেড যে তারা রীতিমতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে মহাবিশ্বে এইলিয়েনদের খুঁজে বেড়ায়।
.
আর এইলিয়েনদের খোজ করার এই কাজটা যে সংস্থাটা করে সেটা হল S.E.T.I Institute [Search for Extraterrestrial Intelligence]। S.E.T.I থেকে অনেক ধরণের কাজ করা হলেও তাদের মূল কাজ হল মহাবিশ্বের অন্য কোথাও কোন বুদ্ধিমান প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না টা খুজে বের করার চেষ্টা করা।
.
কিন্তু মহাবিশ্বের কোন এক কোণায় কোণ এক বুদ্ধিমান প্রানী যদি থেকেও থাকে তাহলে পৃথিবীতে বসে কিভাবে আপনি তা বের করবেন? এই সমস্যার সমাধানের সেটির বিজ্ঞানীরা একটা সুন্দর সমাধান বের করলেন।
.
যদি কাদামাটির উপর দিয়ে আপনি হেটে যান তাহলে যেমন মাটিতে আপনার পায়ের ছাপ পড়বে. যেই ছাপের দিকে তাকালে বোঝা যাবে কেউ একজন এখান দিয়ে হেটে গেছে। কারন কাঁদার বুকে নিজে নিজে মানুষের পায়ের ছাপের আকৃতির গর্ত তৈরি হয়ে যায় না। অর্থাৎ আপনি যখন সেখানে উপস্থিত থাকবেন না, তখনও আপনার উপস্থিতির নিদর্শন সেখানে থেকে যাবে। এক্ষেত্রে কাঁদার উপর তৈরি হয়া পায়ের ছাপের মাধ্যমে।
.
একইভাবে বুদ্ধিমত্তারও কিছু নিদর্শন আছে। যেমন আপনি যদি মহাবিশ্বের কোন প্রান্তে বেতার তরঙ্গ, এক্স-রে, তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মি – এধরনের কিছু অস্তিত্ব দেখা যায় তাহলে ধারণা করা যেতে পারে কোন বুদ্ধিমান প্রানীর কারনে এগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি। আবার বুদ্ধির একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল প্যাটার্ণ রেকোগনিশান। যেমন আমি যদি একটা দেয়ালে ০,১,১,২,৩,৫,৮,১৩,___ এরকম লিখে রেখে যাই এবং পরের দিন এসে দেখি শূন্যস্থানে ২১ লেখা আছে। তাহলে আমি ধরে নেব কোন বুদ্ধিমান প্রানী এটা করেছে।
.
আমি এমন একটা নাম্বার সিরিয লিখেছি যেখানে প্রতিটি সংখ্যা হল তাদের আগের দুটি সংখ্যার যোগফল। এই সিরিজ সম্পূর্ণ করতে হলে অবশ্যই প্রথমে সিরিজটিকে বুঝতে হবে এবং তারপর একে পূর্ণ করা যাবে। এটা হল প্যাটার্ন চিনতে পারার একটা উদাহরণ। সুধু বুদ্ধিমান প্রানীরাই প্যাটার্ণ চিনতে পারে।
.
ভিন গ্রহনের বুদ্ধিমত্তার খোঁজে সেটি বিভিন্ন ধরণের প্যাটার্ন, কোড, এগুলোর ব্যবহার করে, এবং মহাবিশ্বে এই ধরণের প্যাটার্ন বা কোডের খোজ করে। দশকের পর দশক সেটি মহাবিশ্ব বুদ্ধিমান প্রাণীর খোজ করে বেড়াচ্ছে। নিজেরা কোড, প্যাটার্ন পাঠাচ্ছে। কোড, প্যাটার্ন খুজছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য।
.
কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির আই. শ্চারবাক ও ম্যাক্সিম এ. মাকুকভ এক অদ্ভুত এবং অসাধারন কাজ করে বসলেন। বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব নির্নয়ের জন্য যে মাপকাঠি S.E.T.I তে তৈরি করা হয়েছ, তারা ঠিক করলেন সাম্প্রতিক গবেষণার ফলে ডি.এন.এ. এর যে ডেইটাগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলোর উপর ঐ ক্রাইটেরিয়া বা নির্নায়ক গুলো প্রয়োগ করার। সহজ ভাষায় মহাবশ্বের দিকে তাকিয়ে বুদ্ধিমত্তার যে নিদর্শন খোজা হচ্ছিলো, তারা ঠিক করলেন ডিএনএ-র মধ্যে তা খোজার।
.
ফলাফল? “WOW!!!!” [১]
.
তারা দেখলেন ডি.এন.এ –তে যে প্যাটার্ন বিদ্যমান তা কেবল মাত্র বুদ্ধিমান সত্ত্বা দ্বারাই সৃষ্টি সম্ভব। আর কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার ফলে নিছক এলেমেলো বিবর্তন (undirected natural selection by means of random mutation) বা র্যান্ডম ভাবে এমন প্যাটার্ন তৈরি হবার সম্ভাবনা ১/১ ট্রিলিয়নের চেয়েও কম।
.
এ থেকে এটাই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে ডিএনএ – বিক্ষিপ্ত বা এলেমেলোভাবে সৃষ্ট না। বরং একজন অতি বুদ্ধিমান সত্ত্বার সুক্ষাতিসুক্ষ নকশার ফল।
.
অ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্ট ভ্লাদিমির আই. শ্চারবাক ও ম্যাক্সিম এ. মাকুকভ তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন Icarus [২] নামের প্রথম সারির peer-reviewed জার্নালে। এই জার্নালটি peer-reviwed হবার কারনে অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পুনঃপঠিত হবার পর, তাদের গবেষনার পদ্ধতি ও উপসংহার বিশ্লেষিত হবার পর, তাদের সম্মতিক্রমেই এই গবেষণাপত্রটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
.
আপনি বা আমি হয়তো এই অসাধারন খবরটা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না, কারন স্বাভাবিকভাবে আমরা এই ধরনের জার্নালের খোজখবর রাখি না। আর মেইন্সট্রিম মিডিয়া আপনাকে এই খবর গুলো দেবে না কারন মেইন্সট্রিম মিডিয়া জীবনের উৎস সম্পর্কে একটি ম্যাটেরিয়ালিস্টিক বা বস্তুবাদী ব্যাখ্যাকে সত্য হিসেবে প্রচার করতে বদ্ধ পরিকর। আর নাস্তিকরা তো অবশ্যই এধরনের বিষয়গুলো চেপে যাবে, কারন প্রথমত তারা নিজেরা বিজ্ঞানমনস্কতার দাবি করলেও বেশিরভাগই তেমন একটা বিজ্ঞান বোঝে না। আর দ্বিতীয়ত তারা সৎ ভাবে বিতর্ক করে না। তাদের বিতর্কে উদ্দেশ্য থাকে সত্য-মিথ্যা, গালিগালাজ সব কিছু মিলিয়ে যেকোন মূল্যে তর্কে জেতা।
.
কিন্তু আপনি নিজে একটু ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখুন। এতোদিন ধরে মহাবিশ্বের দিকে, বুদ্ধিমত্তার খোজে শুন্যতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখার পর, যখন আমাদের সবার মাঝে থাকা ডিএনএ – এবং জেনেটিক কোডের দিকে তাকানো হল, যখন সেখানে বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন এখন বুদ্ধিমান সত্ত্বার সিগনেচার খোজা হল তখন সেখানে তা পাওয়া গেল যা এতোবছর শুন্যতায় পাওয়া যায় নি।
.
একই সাথে এটাও প্রমাণ হল অনিয়ন্ত্রিত, এলেমেলো বিবর্তন, natural selection by means of randaom variation - এই কোন কিছু দিয়ে ডিএনএ এবং জেনেটিক কোডের এই জটিলতাকে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাহলে কোন সেই মহান সত্ত্বা যিনি এই অতিসুক্ষ সৃষ্টি করেছেন?
.
তারা সত্যবাদী হলে এ রকম একটা কালাম তারা নিয়ে আসুক না কেন।
তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? নাকি তারা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী নয়।
তোমার রবের ভান্ডার কি তাদের নিকট রয়েছে, না তারা এ সমুদয়ের নিয়ন্তা? নাকি তাদের কাছে, সিঁড়ি আছে যাতে তারা (আকাশে উঠে যায় আর গোপন কথা) শুনে থাকে? থাকলে তাদের (সেই) শ্রোতা স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করুক। [সূরা আত-তূর, ৩৪-৩৮]
==========================
১) The “Wow! signal” of the terrestrial genetic code. Vladimir I. shCherbak, Maxim A. Makukovb
অ্যাবস্ট্রাক্টের কিছু অংশ উদ্ধৃত করা হলঃ আমরা এখানে দেখাচ্ছি এই পার্থিব কোড [অর্থাৎ ডিএনএর জেনেটিক কোড] কি সুক্ষ, সুনির্দিষ্ট সুবিন্যস্ততা প্রকাশ করছে। আমরা যাকে কোন বুদ্ধিমত্তা থেকে উৎসারিত Informational Signal বলি এই কোড তার সকল বৈশিষ্ট্য পূরন করে। এই কোডের সাধারণ বিন্যাস থেকে একই সাংকেতিক ভাষার গাণিতিক ও চিত্রলিপি আকারের রূপ প্রকাশ পায়। সুক্ষ, নির্দিষ্ট ও নিয়মানুগ এই প্যাটার্নগুলো থেকে মনে হয় এগুলো সুনির্দিষ্ট লজিক এবং নন-ট্রিভিয়াল কম্পিউটিং এর ফলাফল কোন sochastic (অর্থাৎ random) প্রক্রিয়ার ফলাফল না। ডিএনএ –এর জটিলতা নিছক দৈবক্রমে ও বিবর্তন প্রকিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট এই নাল হাইপোথিসিসটি প্রত্যাখ্যাত কারন এতে P এর মান আসে ১/১০^(১৩) এর চেয়েও ছোট। [(the null hypothesis that they are due to chance coupled with presumable evolutionary pathways is rejected with P-value < 10 (exp) –13]
.
ডিএনএ এবং জেনেটিক কোডে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ও সহজেই প্রতিভাত হয় যা অপ্রাকৃত। যেমন the symbol of zero, the privileged decimal syntax and semantical symmetries. এছাড়া এই সংকেত থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য সহজ যুক্তি নির্ভর কিন্তু abstract operations এর প্রয়োজন। যে কারনে কোন ভাবেই এই প্যাটার্নগুলো ধাপে ধাপে প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎসারিত এমন বলা যায় না।
.
২) Icarus Issue available online March 6, 2013. Wikipedia: http://en.wikipedia.org/wiki/Icarus_(journal)
==============================
লেখকঃ সত্যকথন ডেস্ক
অফিসিয়াল ওয়েব সাইট ঃ shottokothon.com এবং response-to-anti-islam.com
ফেসবুক পেজঃ fb.com/shottokothon1
Post a Comment