আমেরিকার একটি ভার্সিটি। সবাই বেশ খোলামেলা কাপড় পরে। এর মধ্যে হুট করে এক মেয়ে উদয় হলো যে নিকাব পরে ক্লাসে আসে। তবে এভাবে আসাটা একেবারে সহজে হয় না। বেশ টিটকারি হজম করতে হয়। চলে নানা তীর্যক মন্তব্য।
তবে পেছনে পেছনে ক্লাসমেটগুলো ঠিকই মেয়েটার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়। এই যুগে আমেরিকায় থাকা উঠতি এক মেয়ের বয়ফ্রেন্ড নাই, ড্রিংকস করে না, নাইটক্লাবে যায় না- কীভাবে সম্ভব! এ মেয়ে পৃথিবীর নাকি মঙ্গল গ্রহের! সামনে যতই বৈরিতাই দেখাক না কেন, পেছনে পেছনে ঠিকই তার প্রশংসা করতে বাধ্য হতো ওরা। বাধ্য হতো ওকে পছন্দ করতে।
ব্যাপারটা অদ্ভুত হলেও সত্যি। যখন কেউ সত্যিই আল্লাহকে ভয় করে চলে, তার রবকে ভালোবাসে, আল্লাহ তখন মানুষের মনে তার জন্যে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা ঢেলে দেন। তার বিরোধীদের কথা শুনলে হয়তো সেখানে ঘৃণার উদগীরণ দেখা যাবে কিন্তু মনে মনে ঠিকই তারা সে লোকের জন্যে শ্রদ্ধা রেখে চলে। সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর চেয়েও তার কথাকে বেশি বিশ্বাস করে। ইবনুল কায়্যিম (রহ) তাই উল্লেখ করেছেন-
من اتَّقى الله أحبه النَّاس وَإِن كَرهُوا
"যে আল্লাহকে ভয় করে মানুষ তাকে ভালোবাসবেই। এমনকি ভালোবাসতে অপছন্দ করলেও তাকে ভালোবাসবে।” (আল ফাওয়াইদ, ১/৫৪)
যে মেয়ের গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম তা এক শায়খের কাছ থেকে শোনা। গল্পের শেষটা বেশ হতাশার। মেয়েটা ক্লাসমেটদের কাছ থেকে টিটকারি শুনতে শুনতে অসহ্য হয়ে একদিন পর্দা ছাড়াই আমেরিকান পোশাকে ভার্সিটিতে চলে গেলো। ওর ক্লাসমেটরা তো হতভম্ব। মেয়েটা আশা করেছিল, সবাই ওকে এভাবে দেখে ওর রূপের প্রশংসা করবে। এসব নিনজা-মার্কা ড্রেস ছাড়ার কারণে ওর সাথে ভালোভাবে মিশবে।
তবে একেবারেই অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটল। ক্লাসমেটদের বেশ বড়ো একটা গ্রুপ ওর কাছে গেলো। বলল, "তুমি কি জানো সামনে যাই বলি না কেন, ভেতরে ভেতরে আমরা তোমাকে অনেক পছন্দ করতাম? তোমার সুন্দর আচরণ দেখে মুগ্ধ হতাম? অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিলো যে, আমরা সবাই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ আমরা ভেবেছিলাম ইসলামের কারণেই তুমি এত আলাদা। এত ভালো। কিন্তু এখন সে সিদ্ধান্ত বাদ দিয়েছি। কারণ, যে ধর্ম সামান্য কিছু সময় তোমাকে ভালো রাখতে পারল না, সেটা আমাদের কীভাবে সারাজীবন ভালো রাখবে?"
ভার্সিটি লাইফের শেষরাতে আমি জুনিওরদের একটা কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, কখনো তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে ছাড় দেবে না। মানুষ যত সুন্দর করে কথা বলুক আর যত উগ্রভাবেই বলুক। তোমাকে ওরা এসে বলবে, 'রাফি! চলো একটু ট্যুরে যাই, নাইট প্রোগ্রামে যাই, ক্লাসপার্টিতে যাই। তুমি মেয়েদের সাথে থাকলা না, সমস্যা কী? আমাদের সাথে থাকবা। আর নামাযের সময় হলে নামায পড়তে চলে যাবা।'
তুমি যদি ওদের কথা শুনে ওসব ফিতনার জায়গায় যাও, ওরা খুশি হবে। কিন্তু মনে মনে ভাববে, 'ওর মধ্যে ভেজাল আছে। না হলে হুজুর হয়ে এসব জায়গায় থাকে কীভাবে?' আর যদি তুমি ওদের না করে দাও, ওরা হয়তো খুব মন খারাপের ভাব দেখিয়ে চলে যাবে। কিন্তু অন্তর থেকে তোমাকে শ্রদ্ধা করবে। যারা চিন্তা করতে জানে, তারা তোমার এমন আচরণ নিয়ে ভাববে। কে জানে! একদিন নিজেই হয়তো এসব ভাবতে ভাবতে সে হেদায়েত পেয়ে যাবে।
তারা ভালো আচরণ করুক কিংবা খারাপ। বন্ধু হোক বা শত্রু। তারা আমাদের গভীরভাবে দেখছে। যদি নিজের জন্যে ভালো থাকতে ইচ্ছে না করে আল্লাহর দ্বীনের জন্য অন্তত আমরা ভালো থাকার চেষ্টা করতে পারি।
ওরা যাই বলুক, ভার্সিটিতে পড়ুয়া দ্বীনি ভাইয়েরা! কখনো নিজেদের ইনফিরিওর ভাববেন না। আপনার কাছে আল্লাহর দ্বীন রয়েছে। ভার্সিটিতে যেসব মাঠ কাঁপানো, অডিটোরিয়াম ঝাঁকানো, সিজি কোপানো তথাকথিত লিজেন্ড আছে, আপনি তাদের চেয়ে অনেক বেশি লিজেন্ড। অনেক বেশি সম্মানিত, যদি আপনার মধ্যে তাকওয়া থাকে।
ওরা আপনাকে নিয়ে উপহাস করে। 'জঙ্গি', 'খ্যাত', 'কাঠমোল্লা'- বলে। কিন্তু হারামের সাথে রাতদিন কাটিয়ে যখন হাঁফসে ওঠে, তখন ঠিকই ওদের ইচ্ছে করে ভালো হয়ে যেতে। আপনার মতো হুজুর হয়ে যেতে। জেনে রাখুন যদি আল্লাহকে ভয় করে চলেন, তবে তিনি ওদের অন্তরে আপনার জন্য শ্রদ্ধার বীজ গেঁথে দেবেন।
সে বীজ যাতে ইসলাম নামক মহীরুহে পরিণত হয়, সেটার জন্য হলেও আপনাকে ভালো থাকতে হবে।
Post a Comment