আল্লাহর পরিচয় আমরা কিভাবে জানতে পারি?


বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
সকল সৃষ্টির মহান স্রষ্টা আল্লাহ। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর পবিত্র সত্তায় ও গুনাবলীতে কোন শরিক নেই। তিনি অদৃশ্য। দুনিয়ায় তাঁকে দেখার ক্ষমতা কারো নেই। কিন্তু আমাদের তাঁর পরিচয় জানতে হবে। কিভাবে আমরা আল্লাহর এই পরিচয় জানবো, কিভাবে তাঁকে চিনবো? যিনি অদৃশ্য তাঁকে কিভাবে চেনা যায়? এই পরিচিতির জন্য দ্বীন ইসলাম কি কোন পথের সন্ধান দেয়?

কর্মের অস্তিত্ব কর্তার অস্তিত্বের জানান দেয়ঃ
ধরুন আপনি বাসার সবাইকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলেন। যাওয়ার সময় বাসায় তালা লাগালেন। চাবিটা নিলেন নিজের পকেটে। এরপর বেড়ালেন, ঘুরলেন, অনেক মজা করলেন। তারপর বাসায় ফিরে দরজা ঠেলে ঢুকতেই বিস্ময়ে আপনার চোখ কপালে উঠে গেল। কারন পুরো বাসা এলোমেলো। যেটা যেখানে রেখেছিলেন সেখানে নেই। সোফাগুলো উল্টে রাখা! আপনি বুঝতে পারলেন এই কাজ কেউ না কেউ করেছে। আপনি আরো বুঝতে পারলেন বাসাতেই কেউ এসেছিল। আরো বুঝলেন হয়ত তার কাছে চাবি ছিল অথবা অন্যভাবে প্রবেশ করেছে।

এই যে এতগুলো বিষয় আপনার মাথায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে আসলো এগুলো কেন আসলো? কেন আপনি এভাবে ভাবলেন? কেন ভাবলেন না যে সোফাগুলো নিজে নিজেই উল্টে গেছে? কেন ভাবলেন না যে সবকিছু এলোমেলো নিজ থেকেই হয়েছে? কারণ এটা অসম্ভব। আপনি জানেন এগুলোর নিজস্ব শক্তি নেই। তাই কেউ না কেউই এসব করেছে।

আপনার এমন সিদ্ধান্তে আসা যে, জীবন্ত কেউ ঘরে প্রবেশ করে এতসব কান্ড ঘটিয়েছে তা কি আপনার প্রত্যক্ষদর্শনের বদৌলতে? আপনি কি তাকে দেখেছেন ঢুকতে? না। তবে? উত্তর, আমি তার কাজের প্রভাব দেখেছি। আপনি কিছু কর্ম দেখেছেন যেগুলো কারক ছাড়া ঘটা অসম্ভব। তাই আপনি সিদ্ধান্তে আসলেন নিশ্চয়ই কেউ না কেউ ঘরে ঢুকে এসব করেছে। এখানে আপনি কর্মের অস্তিত্ব থেকে কর্তার অস্তিত্বকে মেনে নিচ্ছেন।

কর্মের ধরন কর্তার গুণ সম্পর্কেও ধারনা দেয়ঃ
সহজ একটি উদাহরণ দিই। এই ফেসবুকে ব্যবহারকারী আছেন অনেক। অনেকেরই লিস্টে এমন ফ্রেন্ড থাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে তার পরিচিত না। এদের অনেকের হয়ত ব্যক্তিগত ছবিও নেই। নামও হয়ত অনেকের ভিন্ন। বয়সও ভিন্ন । দেশ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি লুকানো থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি কেউ অপরিচিত থেকে যায়? আমরা কি এতগুলো লোকের মধ্যে এক একজনকে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারি না? অবশ্যই পারি। কিন্তু কিভাবে?

একজন ফেসবুক ইউজারের লেখা, লাইক, কমেন্ট ইত্যাদি হলো তার কাজ। এই কাজগুলো তার মনোভাবের সাক্ষ্য বহন করে। খুব খুব খুব চৌকস (এখানে পরিচয় লুকাতে অতিশয় দক্ষ অর্থে) না হলে পরিচিতিটা বেরিয়ে পড়েই। দিন দিন একজনের লেখা পড়তে পড়তে, তার লাইক কমেন্ট দেখতে দেখতে আপনার মনের মধ্যে তার সম্পর্কে একটি ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। লোকটি কি বুদ্ধিমান নাকি বোকা, শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত, ইসলামিক মাইন্ডের নাকি না, বয়স কত হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধারণাগুলোর হয়ত শতভাগ সত্যতা থাকবে না, তবে ৬০-৭০ শতাংশ সঠিক হবেই। এভাবে আরো অনেকের ধারণাকে নিয়ে যদি মিশ্রণ করে নেয়া যায় তবে দেখা যাবে লোকটি সম্পর্কে ৮০-৯০ ভাগ সঠিক জানতে পারছেন। লোকটি কেমন? কী সে পছন্দ করে? কী সে অপছন্দ করে? ইত্যাদি খুব ভালোভাবেই জানা হয়ে যাবে। আসলে এভাবেই একজন মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে তার নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। প্রত্যেকেরই একটা একটা অদৃশ্য প্রোফাইল তৈরি হয়ে যায়। যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডাটা ঢুকতে থাকে আর ধারনাটা পরিষ্কার হতে থাকে।

[এ প্রসংগে বলা যায়, ফেসবুক যে আমাদের কাছে বিভিন্ন এক্টিভিটি সম্পর্কে এডভার্টাইজ করে, আমাদের বন্ধু সাজেশন দেয়, পেইজের সাজেশন দেয় এগুলো আমাদের সম্পর্কে তাদের প্রোফাইল দেখেই। তারা যাকে যেরকম মনে করে তাকে তেমন কিছুই সাজেস্ট করে]

এই ধারণাটা লোকটির সত্তা সম্পর্কে না যতটা, তার চাইতে বেশি লোকটার স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে। মানে লোকটার গুন ও দোষ সম্পর্কে। প্রকৃতপক্ষে এটাই তো বড় পরিচয়। কারন মারা যাওয়ার পরে যখন লোকে প্রশ্ন করে অমুক কেমন ছিল, কেউ বলে না সে লম্বা ছিল, সুন্দর ছিল, ফর্সা ছিল, ডাগর ডাগর চোখ ছিল। বরং তার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কেই বলে। কারন এগুলোর রয়ে যায়। বাহ্যিক সত্তার বৈশিষ্ট্যগুলো আক্ষরিকভাবে বিলীন হওয়ার সাথে সাথে লোকদের মন থেকেও বিলীন হয়ে যায়।

আল্লাহকে জানার ইসলাম নির্দেশিত পথ - তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করাঃ
একইভাবে আল্লাহর সৃষ্টবস্তুগুলো হলো আল্লাহর সৃষ্টি করার গুণের প্রকাশ। স্রষ্টা অদৃশ্য। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্ম দৃশ্যমান ও প্রকাশ্য। চারদিকের প্রকৃতি, গাছপালা, বায়ু, নদী, পাহাড়, পর্বত, মানুষ, পশুপাখি এগুলো বিরামহীনভাবে স্রষ্টার পরিচিতিই জানান দিচ্ছে। শুধু পরিচিতিই নয়। বরং স্রষ্টার গুনাবলীরও জানান দিচ্ছে। শুধু আমাদের গভীর চিন্তা-ভাবনা করতে হবে তাঁর নিদর্শন নিয়ে ভাবা। এবং সৃষ্টির মধ্যে মহান সৃষ্টাকে, শিল্পের মধ্যে শিল্পীকে, দয়ার বন্টনের মধ্যে দয়ালু দাতাকে খুঁজে বের করা।

সৃষ্টির অস্তিত্ব থেকে স্রষ্টাকে জানা, সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য থেকে স্রষ্টার গুণ জানা। এটাই ইসলামের দেখানো পথ। এটাই করতে বলছেন মহান আল্লাহ।

“মানুষ তার খাদ্যের দিকে লক্ষ্য করুক। আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি। এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি। অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য। আংগুর, শাক-সবজি। যয়তুন, খেজুর। ঘন উদ্যান। ফল ও ঘাস" (সূরা আবাসা, আয়াত ২৪-৩১)

ইসলামে স্রষ্টাকে জানার সবচেয়ে পছন্দনীয় পদ্ধতি এটিই। আল্লাহ তায়ালার সত্তাগত বৈশিষ্ট্য কিরকম, কেমন এমন প্রশ্ন করা ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। এর কারণ তাঁর সত্তাগত বৈশিষ্ট্যের ধারণা মানুষের ক্ষুদ্র বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে বুঝা অসম্ভব। বরং ইসলাম বলে সত্তাগতভাবে নয় বরং গুণগতভাবে আল্লাহকে জানা মানুষের জন্য সম্ভব ।

আল্লাহ বলছেন,
"নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও যমীন সৃষ্টির বিষয়ে (তারা বলে), হে আমাদের রব! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদের তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও" (সুরা আলে-ইমরান, ১১০-১১১)

আয়াতে আল্লাহ পাক সেই সব মুমীনদের অবস্থার কথা বলছেন যারা আল্লাহকে স্মরণ করে সর্বাবস্থায় ও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে। ফলশ্রুতিতে তারা মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ন্য অনুধাবন করতে পারে। জানতে পারে মহান আল্লাহর শক্তি-মত্তা, তাঁর অসীম দয়া, ধৈর্য্য, নিঁখুত সৃজনদক্ষতা সম্পর্কে। পরিশেষে বিনম্র হয়ে তাঁর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করে। কেননা পরিচিতিই দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি করে আর দৃঢ় বিশ্বাস সত্যিকারের দাসত্বের অনুভূতি জন্ম দেয় বান্দার মনে।

নবী রসূলগন আল্লাহর পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে তাঁর গুণগুলোর কথা উল্লেখ করতেনঃ
শুধু দুজন নবীর আলোচনা করবো। একজন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। অন্যজন মুসা আলাহিস সালাম।
ক. ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেভাবে তাঁর রবের পরিচয় দিয়েছিলেন --
ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নিজের রবের পরিচয় দিয়েছেন তাঁর পিতা ও গোত্রের কাছে। কিন্তু তিনি কিভাবে এই পরিচিতি দিয়েছিলেন? আসুন দেখি কুরআন আল-কারীম থেকে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এক পর্যায়ে বলছেন,
"যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেছেন।যিনি আমাকে আহার দেন ও পানীয় দান করেন।যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তিনিই আমাকে রোগমুক্তি দান করেন।যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনর্জীবন দান করবেন।আমি আশা করি তিনিই বিচারের দিন আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি মাফ করবেন ।" (সূরা আশ-শু'আরা, ৭৯-৮৩)
আমরা দেখতে পাই তিনি স্রষ্টার কর্মগুলোর মাধ্যমে স্রষ্টাকে চিনিয়েছেন। তিনি মহান প্রভু আল্লাহর কাজগুলো একে একে বলেছেন। সৃষ্টি করা, হেদায়েত দেয়া, খাদ্য/পানীয় দেয়া, রোগগ্রস্থ অবস্থা থেকে রোগমুক্তি দেয়া, মৃত্যু ঘটানো ও পুনর্জীবন দেয়া ইত্যাদি। তিনি আল্লাহর সত্তাগত কোন কথাই বলেননি। আর এটাই দূর্বল মানুষের জন্য উত্তম উপায়।

খ. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যেভাবে তাঁর রবের পরিচয় দিয়েছিলেন--
"ফেরাউন বলল, তবে হে মূসা তোমাদের (মূসা ও হারুন আলাইহিমাস সালাম) পালনকর্তা কে? মূসা বললেন, আমাদের পালনকর্তা তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন এবং অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন ” (সূরা ত্ব-হা, ৪৯-৫০ )
দেখা যাচ্ছে, মূসা আলাইহিস সালাম এখানে রবের পরিচয় দিতে গিয়ে তাঁর সর্বোত্তম সৃষ্টিকৌশলের দিকে ইংগিত করছেন। যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাদের আসল রব কে। মূসা আলাইহিস সালামের এই কথায় হয়ত মানুষ চিন্তা শুরু করবে। দেখতে শুরু করবে প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টির পেছনে থাকা নিঁখুত পরিকল্পনাগুলো এবং অনুধাবন করতে পারবে এসবের সৃষ্টিকারীর সুক্ষ্মদর্শীতা, নিঁখুত পরিকল্পনা ও ক্ষমতা। উপলব্ধি করতে পারবে এসবের স্রষ্টাকে। বুঝবে তিনি কত মেহেরবান। হয়ত এভাবেই তারা হেদায়েতের দিকে আসবে।
ফেরাউন যখন আবার জিজ্ঞেস করলো,
"তাহলে পূর্ববর্তী লোকদের কি হবে? মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, তাদের কথা আমার পালনকর্তার কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হননা, বিস্মৃতও হননা” (সুরা ত্ব-হা, ৫১-৫২)
মুসা আঃ সুযোগ পেয়ে আরো বেশি আল্লাহর গুনগান বর্ণনা করতে শুরু করলেন,
“তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষন করেছেন এবং (আল্লাহ তায়ালা এখানে নিজেই বলছেন) তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। তোমরা আহার করো ও চতুষ্পদ জন্তু চরাও । নিশ্চয়ই এতে বিবেকবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে" (সুরা ত্ব-হা, ৫৩-৫৪)

আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন আয়াতে তাঁর পরিচিতি লাভের জন্য যেসব নিদর্শনের দিকে ইংগিত করেছেনঃ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর পরিচয় লাভের জন্য তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেই শুধু বলেননি, বরং অনেকগুলো তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ
১. আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন -
"আর আমরা নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেছি কাদার নির্যাস থেকে, তারপর আমরা তাকে বানাই শুক্রকীট এক নিরাপদ অবস্থান স্থলে, তারপর আমরা শুক্রকীটটিকে বানাই একটি রক্তপিন্ড, তারপর রক্তপিন্ডকে আমরা বানাই একটি মাংসের তাল, তারপর মাংসের তালে আমরা সৃষ্টি করি হাড়গোড়, তারপর হাড়গোড়কে আমরা ঢেকে দিই মাংসপেশী দিয়ে, তারপরে আমরা তাকে পরিণত করি অন্য এক সৃষ্টিতে। সেইজন্য আল্লাহ্‌রই অপার মহিমা, কত শ্রেষ্ঠ এই স্রষ্টা!” [সূরা মুমীনুন- ১২-১৪]
একজন মানুষ যখন এই সৃষ্টির ধারা নিয়ে চিন্তা করবে তখন সে সবশেষে যে উপলব্দিতে পৌঁছুবে সেটাই আল্লাহ বলছেন এভাবে, "কত শ্রেষ্ঠ এই স্রষ্টা!"
২. অন্য আরেক জায়গায় আল্লাহ বলছেন -
"আর নিঃসন্দেহে গবাদি-পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য তো শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমরা তোমাদের পান করাই যা রয়েছে তাদের পেটের মধ্যে -- গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে -- খাঁটি দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।
এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা নেশাজাতীয় (মদ পান নিষিদ্ধ হওয়ার আগের আয়াত) ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাত্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর,
এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।" [সূরা আন-নাহল, ৬৬-৬৯]
চতুষ্পদ জন্তুর পেটে গোবর আর রক্তের মধ্য থেকে সুস্বাদু দুধ পাওয়া, একই আংগুর ফল থেকে উত্তম ও অনুত্তম পানীয়ের সংস্থান করতে পারার মধ্যে রয়েছে নিদর্শন। বিশেষ করে মৌঁমাছির পর্বতগাহে, বিভিন্ন উঁচু গাছের ডালে ঘর বানানো ও এক আশ্চর্য উপায়ে বিভিন্ন ফল থেকে উড়ে উড়ে খাদ্য খাওয়া আর তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় হিসেবে এর নির্গত হওয়াও এক মহান শিল্পের দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করছে। এই পানীয় আবার বিভিন্ন রোগের ঔষধ। আল্লাহ বারে বারে বলেছেন এইসব কিছুর মধ্যে চিন্তাশীল ও বিবেকবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে স্রষ্টাকে জানার।
৩. প্রত্যেক প্রানীকে আল্লাহ বিশেষ উপায়ে যে খাদ্য দান করেন এতেও রয়েছে আল্লাহর পরিচয়ের চিহ্ন। মানুব শিশু জন্মের সময় কত অসহায় থাকে! সে কিছুই বলতে পারে না। কিন্তু এক আশ্চর্য নিয়মে তার জন্য সবচাইতে সহজ ও নিরাপদ জায়গাতেই খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেন আল্লাহ! এবং শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে যখন মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় এক মহান স্রষ্টার ইশারাতেই যেন সেই খাদ্যও ফুরিয়ে যায়। একজন মানবশিশুর শিশুকালের অসহায় অবস্থার প্রতিকার আল্লাহ এভাবেই করেছেন যে বাচ্চার সামান্য কিছুতেই মায়ের অস্থির ভাব ফুটে উঠে। এতটাই দরদ আর মমতা মাদের দেয়া হয় যে সার্বক্ষনিক তারা সন্তানের চিন্তায় থাকেন। আবার এক অমোঘ নিয়মে যতই সন্তান বড় হতে থাকে ততই সন্তানের প্রতি মায়ের সেই রকম অস্থির ভাব কাটতে থাকে! সুবহানাআল্লাহ!
কোন সেই রব যিনি মানবশিশুর অসহায় অবস্থায় সবচাইতে নিরাপদ জায়গায় খাদ্যের সংস্থান দেন? কোন সেই রব যিনি শিশুটির সবধরনের প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করেন মায়ের অন্তরে অসীম দয়া ঢেলে দিয়ে? তাও আবার প্রয়োজনের প্রেক্ষিতেই আবার তুলে নেন? কোন সেই রব?
আল্লাহ নিজেই উত্তর দিচ্ছেন -
“নিশ্চয়ই তোমাদের রব (হলেন) যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পারে না তাঁর অনুমতি ছাড়া, ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না ?” [সূরা ইউনুস-৩]
প্রশ্ন হলো, যিনি এত দয়াবান সৃষ্টিকর্তা তিনি কি মানুষের জীবনের কোন আদর্শ দিবেন না? তিনি কি মানুষকে জানাবেন না উত্তম পথ ও মন্দ পথ সম্পর্কে?

[Collected from: Mohammad Anwar Shah]

1 Comments

  1. জাযাকাল্লাহ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post