কোন কিছুতেই মন বসে না


প্রথমত: কোন কাজে মন না বসার বা মন এমন উদাস হওয়ার কারণ খুঁজে বের করুন। কোন ঘটনা-দুর্ঘটনা, না পাওয়ার বেদনা, পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া, স্বপ্নভঙ্গ ইত্যাদি কী কারণ থাকতে পারে?

অনেক সময় অলসতা, অসুস্থতা, দু:শ্চিন্তা, মানসিক আঘাত, কারো সাথে মান-অভিমান, কারও খারাপ আচরণ ও কষ্টদায়ক কথা ইত্যাদি কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।

সুতরাং কারণ খুুঁজুন এবং যথাসাধ্য তা সমাধান করার চেষ্টা করুন।

আল্লাহর ইবাদত থেকে দূরে সরে গিয়ে থাকলে বা কোন গুনাহের কাজ করে থাকলে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন এবং কান্নাকাটি করে ক্ষমা চান।
কারণ বান্দা যখন আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে যায় এবং পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে তখন মনে উদাসীনতা, অস্থিরতা, টেনশন, ভয়ভীতি, হতাশা ইত্যাদি সৃষ্টি হয় এবং জীবনটা হয়ে উঠে সংকীর্ণ।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ

“এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।” (সূরা ত্বা-হা: ১২৪)

বেশি বেশি দুআ, তাসবিহ ইস্তিগফার পাঠ এবং আল্লাহর জিকির করুন। কেননা এগুলোর মাধ্যমে মনে প্রশান্তি সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَلَا بِذِكْرِ اللَّـهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

“জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তর স্থিরতা ও শান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দ: ২৮)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ

“সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করুন এবং প্রশংসা সহকারে আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণf করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও দিবাভাগে। সম্ভবতঃ তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরা ত্বা-হা: ১৩০)

বেশি বেশি নেকির কাজ করুন। মন না চাইলেও মনকে বাধ্য করুন। এতে আল্লাহ পক্ষ থেকে সুন্দর ও আনন্দ মূখর জীবন দান করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

"যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ইমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।" (সূরা নাহাল: ৯৭)

সালাতে সেজদায় গিয়ে নিজের সমস্যাগুলো আল্লাহর কাছে তুলে ধরুন এবং মনের এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য দুআ করুন।

বেশি বেশি এ দুআটি পাঠ করুন:

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ

উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব, সাব্বিস ক্বালবি ‘আলা দ্বীনিকা।”
অর্থঃ হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে তুমি তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। [তিরমিযি, অধ্যায়: দুআ, শাইখ আলবানি বলেন: হাদিসটি সহিহ, ৬/৩০৯]

মনে রাখতে হবে, দুনিয়ায় দু:খ-কষ্ট খুব স্বাভাবিক বিষয়। এখানে সব প্রত্যাশা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই ধৈর্য ধারণ করুন এবং আখিরাতে আল্লাহর নিকট প্রতিদান আশা করুন।

এ কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, একমাত্র জান্নাতেই মানুষের সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ হবে; এর আগে নয়।

যে কাজ করলে মনে শান্তি পাওয়া যাবে সে কাজ করুন যদি তা হালাল হয়। হারাম কাজের দিকে পা বাড়াবেন না। যেমন: কোথাও ঘুরতে যাওয়া, আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা, পছন্দের কোনও খাবার খাওয়া ইত্যাদি।

সর্বোপরি কথা হল, প্রত্যেকের জীবনে সাময়িকভাবে এ জাতীয় কিছু সমস্যা হতেই পারে। সুতরাং হতাশ হবেন না। ইনশাআল্লাহ সময়ের ব্যবধানে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যেমন আকাশের চাঁদও কখনো কখনো মেঘে ঢাকা পড়ে যায় কিন্তু মেঘ সরে গেলেই আবার তার উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।

দুআ করি, আল্লাহ যেন দ্রুত আপনার মনকে আবার আগের মত প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর করে দেন। আমীন।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

লেখাঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

1 Comments

  1. জাযাকাল্লাহ খাইরান খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post