-যমীনের উপরে সবইতো বস্তু। হোক সেটা দালান-কোঠা, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, লাইট-ফ্যান, চেয়ার-টেবিল, প্রাণী-উদ্ভিদ কিংবা তোমার-আমার-অন্যের এই নশ্বর সুন্দর দেহ। এই বস্তুগুলোকে সৃষ্টি করার সময়ে অসম্ভব আকর্ষণীয় শোভা-সৌন্দর্য দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে।
-কেন?
-তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য।
-কী পরীক্ষা?
-পরীক্ষা এটাই যে তুমি কাজ করার সময়, চোখ-কান-হাত-মাথা-পা ব্যবহার করার সময়ে এসব সৃষ্ট বস্তুর সৌন্দর্যের সুতীব্র আকর্ষণীয় ফাঁদে-মোহে ধরা খেয়ে যাও, নাকি এইসব সৃষ্ট বস্তুর ধ্বংস হয়ে পিষে ধুলিবালিতে মিশে যাওয়ার করুণ পরিণতিকে অন্তরে গেঁথে নিয়ে এদেরই একমাত্র অদ্বিতীয় স্রষ্টাকে হৃদয়ের একমাত্র আসনে স্থান দিয়ে কর্ম সাধন করো।
আমাদেরকে বারবার বাইরের বস্তুজগত-বিমুখী হয়ে অন্তর্চক্ষুকে অন্তর্মুখী করবার, হৃদয়মুখী হবার জন্য, সব সৃষ্টির একমাত্র চালক স্রষ্টামুখী করার জন্য কত না আয়োজন, কত না বার্তাবাহক, আত্মত্যাগ আর পথপ্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আর আমরা কী করছি?
বাইরের বস্তুজগতকে "ব্যবহার" করে অন্তর্চক্ষু খুলে অন্তর্মুখী হয়ে অন্তর্জগতকে আবিষ্কার করার পর, তাকে ব্যবহার করে একমাত্র প্রতিপালকের প্রতিনিধি হয়ে উঠবার যে কঠিনতম সাধনা আর পবিত্র গুরুদায়িত্ব আমাদেরকে দেয়া হয়েছে, সেটাকে ভুলে গেছি। কঠিনকে ভুলে সহজ আর আনন্দময় দায়িত্বহীন এক পথ বেছে নিয়েছি, যে সহজ পথের দায়িত্ব বিশ্বাসীদের দেয়া হয়নি। বিশ্বাসীদের শ্রেষ্ঠত্ব এই পথে নয়।
-কোন পথের কথা বলছেন?
-যে পথে হারিয়ে গিয়ে কেবলই বস্তু নির্মিত চক্ষু দিয়ে নশ্বর বস্তুর পর্যবেক্ষণ, আলোচনা আর গবেষণার তুচ্ছ মেকি আনন্দের চোরাবালিতে আটকে আছি। যে পথের সাথে শুধু মস্তিষ্কের অনুশীলনের সম্পর্ক, যে পথের সাথে হৃদয়ের কোন যোগাযোগ নেই, আমি সেই ভুল পথের কথা বলছি।
আমি সেই পথের কথা বলছি যে পথে হারিয়ে গিয়ে আমি ভুলে গেছি কী অতল-অথৈ ক্ষমতা আর অপার-অসীম সম্ভাবনা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে। ভুলে গেছি আমার উদ্দেশ্য আর গন্তব্য। ভুলে গেছি কী গভীর সাধনায় সুবিশাল এক মহীরুহ হয়ে ওঠার কথা ছিলো আমার। ভুলে গেছি, কার যোগ্য প্রতিনিধি হয়ে উঠতে আমার এই আগমন। আমি সব ভুলে গেছি, সব।
আর তাই আমাকে আবারও মনে করিয়ে দিতেই, ফিরিয়ে আনতেই, যোগ্য করে গড়ে তুলতেই এই মহাপবিত্র ঐশ্বরিক আলো আল-কুরআনের আগমন। স্মরণিকা হিসেবে আগমন সুরা কাহাফের সপ্তম-অষ্টম আয়াতদ্বয়ের।
আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে। এবং অবশ্যই আমি তার উপর যা কিছু রয়েছে তা উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব। [সুরা কাহাফের সপ্তম-অষ্টম আয়াতদ্বয়]
তবুও কি আমি ফিরবো? ফিরছি? এখন? তুমি?
Writer: Mohammed Touaha Akbar
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
ReplyDeletePost a Comment