খ্রীস্টানরা কয়জন মাবূদের পূজা করে?



بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

(এক)

খ্রীস্টানরা নিজেদেরকে এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী (monotheist) বলে দাবী করে, আবার একই সাথে তারা ত্রিত্ববাদ বা (Trinity) মতবাদে বিশ্বাস করে।

ত্রিত্ববাদ বা (Trinity) মতবাদ হচ্ছে, পিতা (Holy Father) যিনি আকাশের উপরে আছেন; তিনি হচ্ছেন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, প্রভু বা সৃষ্টিকর্তা। জিসাস, যীশু বা আরবীতে ঈসা আ’লাইহিস সালাম হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র (Holy son), যিনি কুমারী মাতা মেরী বা আরবীতে মারইয়াম আ’লাইহাস সালামের গর্ভে কোন পিতা বা পুরুষের স্পর্শ ব্যতিরেকে অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে যে ‘পবিত্র আত্মা’ (Holy Spirit) দিয়ে সাহায্য করেছিলেন, তিনি একজন ফেরেশতা।

পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা - এই তিনজন আলাদা সত্ত্বা; আবার তিনজনে মিলে একই সত্ত্বা! অর্থাৎ যিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তিনিই ঈশ্বরের পুত্র যিসাস, আবার তিনিই পবিত্র আত্মা! Three in One বা একের ভিতর তিন।

এইভাবে খ্রীস্টানরা তিনজন মাবূদের উপাসনা করে, কিন্তু এই তিনজনকে একক সত্ত্বা হিসেবে দাবী করে নিজেদেরকে এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী (monotheist) বলে মনে করে।

সামান্য ‘আক্বল’ বা বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন একেবারে সাধারণ একজন মানুষ, এমনকি ক্লাস ওয়ান পাস করা একটা শিশুও জানে যে, তিনজন মানুষ, ব্যক্তি বা সত্ত্বা মিলে তিনজনই হয়, একজন হয় না। কিন্তু আফসোস খ্রীস্টানদের জ্ঞানে! যারা সাইয়েন্স টেকনলোজিতে উন্নতি করে চাঁদে ভ্রমণ করছে, কত রোগের ভ্যাক্সিন বা ঔষধ আবিষ্কার করছে...কিন্তু তারা ত্রিত্ববাদ বা (Trinity) মতবাদ বিশ্বাস করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ব্যাপারে মারাত্মক ধোঁকার মাঝে বাস করছে।

আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ ক্বুরআনুল কারীমে ত্রিত্ববাদকে ‘কুফুরী’ আখ্যা দিয়ে খ্রীস্টানদেরকে ‘কাফির’ বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

لَقَدۡ کَفَرَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡمَسِیۡحُ ابۡنُ مَرۡیَمَ ؕ وَ قَالَ الۡمَسِیۡحُ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اعۡبُدُوا اللّٰهَ رَبِّیۡ وَ رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ

“নিঃসন্দেহে তারা কাফের (অবিশ্বাসী), যারা বলে, “মারইয়াম পুত্র মসীহ হচ্ছেন আল্লাহ।” অথচ মসীহ বলেছিল, “হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপাসনা কর। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে, নিশ্চয় আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং জাহান্নাম হবে তার বাসস্থান। আর জালেম (অত্যাচারীদের) জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” সূরা আল-মায়ি’দাহঃ ৭২।

ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী খ্রীস্টানদেরকে কাফের ঘোষণা করার ঠিক পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআ’লা ত্রিত্ববাদকে বাতিল ঘোষণা করে বলেছেন,

لَقَدۡ کَفَرَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ ثَالِثُ ثَلٰثَۃٍ ۘ وَ مَا مِنۡ اِلٰهٍ اِلَّاۤ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ وَ اِنۡ لَّمۡ یَنۡتَهُوۡا عَمَّا یَقُوۡلُوۡنَ لَیَمَسَّنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ

“নিশ্চয় তারা কাফের (অবিশ্বাসী), যারা বলে, “আল্লাহ তো তিনের মধ্যে একজন।” অথচ এক উপাস্য ভিন্ন অন্য কোন উপাস্য নেই। তারা যা বলে, তা হতে বিরত না হলে তাদের মধ্যে যারা কুফুরী (অবিশ্বাস) করেছে, তাদের উপর অবশ্যই কঠোর শাস্তি আপতিত হবে।” সূরা আল-মায়ি’দাহঃ ৭৩।


(দুই)

খ্রীস্টানদের ত্রিত্ববাদ বা (trinity) মতবাদ কি পরিমাণ অদ্ভূত এবং অযৌক্তিক; তা কিছু প্রশ্ন এবং উত্তরের মাধ্যমে সুন্দরভাবে বুঝানো হয়েছে। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত সেই প্রশ্নগুলোর বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো।

(১) প্রশ্নঃ ঈশ্বর কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশু।

প্রশ্নঃ যীশুর মাতা মেরীকে কে সৃষ্টি করেছেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।

প্রশ্নঃ তাহলে ঈশ্বর কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশু।

অনুধাবনঃ যীশু হচ্ছেন ঈশ্বর এবং মেরীর পুত্র, মেরীকে সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর। আবার যীশুই হচ্ছেন ঈশ্বর!

(২) প্রশ্নঃ যীশু কি ঔরসজাত পুত্র?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ হ্যা।

প্রশ্নঃ যীশু কার পুত্র?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ ঈশ্বরের।

প্রশ্নঃ তাহলে ঈশ্বর কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশু।

অনুধাবনঃ একইসাথে পিতা (ঈশ্বর) এবং পুত্র (যীশু) দুইজন এক নয়, দুইজন ভিন্ন সত্ত্বা এটা যেমন সত্য, আবার এর বিপরীতে পিতাই হচ্ছেন পুত্র আবার পুত্রই হচ্ছে পিতা - এই কথাটাও সত্য। এই দুইটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কথা যারা বিশ্বাস করে এই দুনিয়াতে তারা নিজেদেরকে ‘খ্রীস্টান’ হিসেবে পরিচয় দেয়।

(৩) প্রশ্নঃ যীশু কি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের দাস ছিলেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ হ্যা।

প্রশ্নঃ যীশু কি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ হ্যা?

প্রশ্নঃ ক্রুশে মৃত্যুবরণ করার পর যীশুকে জীবিত করলেন কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ ঈশ্বর।

প্রশ্নঃ যীশু কি একজন রাসূল (প্রেরিত দূত) ছিলেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ হ্যা।

প্রশ্নঃ তাঁকে কে পাঠিয়েছেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।

প্রশ্নঃ তাহলে ঈশ্বর কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশু।

অনুধাবনঃ যীশুই হচ্ছেন ঈশ্বর, ঈশ্বর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। তাহলে যীশু মারা যাওয়ার পর তাঁকে কোন ঈশ্বর জীবিত করলেন? এই প্রশ্নের উত্তরেও খ্রীস্টানরা বলবে, এক ঈশ্বরই ক্রুশে মারা গেছেন আবার সেই ঈশ্বরই পুনরায় নিজেকে জীবিত করেছেন!

ত্রিত্ববাদী খ্রীস্টানরা নিজেদের অন্তরে বুঝতে পারে, এই দাবী সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং পাগলামি কিন্তু মুখে তা কোনদিন স্বীকার করবে না। কারণ তাদের অন্তর ব্যাধিগ্রস্ত। তাদের ধর্মগুরুরা ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস সম্পর্কে তাদেরকে যে গোঁজামিল দেয়, বুদ্ধিহীন জন্তুর মতোই অন্ধবিশ্বাসে তারা তা বিশ্বাস করে।

(৪) প্রশ্নঃ দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় যীশু কি কোন মাবূদের উপাসনা করতেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ হ্যা।

প্রশ্নঃ তিনি কার উপাসনা করতেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।

প্রশ্নঃ তাহলে ঈশ্বর কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশুই হচ্ছেন ঈশ্বর।

অনুধাবনঃ পুত্র দুনিয়ায়তে থাকা অবস্থায় পিতার উপাসনা করতেন, আবার সেই পুত্র নিজেই হচ্ছেন পিতা। অর্থাৎ পুত্র আসলে নিজের উপাসনা করতেন! খ্রীস্টানদের বিশ্বাস কি পরিমাণ অদ্ভূত এবং অযৌক্তিক!

(৫) প্রশ্নঃ ঈশ্বরের কোন শুরু (beginning) আছে, অমুক দিনে বা এত তারিখ থেকে তাঁর জীবন শুরু হলো?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ না।

প্রশ্নঃ তাহলে ক্রিসমাসের দিন কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশু।

প্রশ্নঃ তাহলে ঈশ্বর কে?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ যীশু।

অনুধাবনঃ খ্রীস্টানদের ঈশ্বর ২৫-শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ইয়াহুদীরা খ্রীস্টানদের ঈশ্বররের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে রোমান বাদশাহকে দিয়ে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল! খ্রীস্টানদের ঈশ্বরের চেয়ে রোমান বাদশাহর শক্তি বেশি!

(৬) প্রশ্নঃ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কোথায় আছেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ আকাশের উপরে।

প্রশ্নঃ আকাশের উপরে কয়জন মাবূদ?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ শুধুমাত্র একজন মাবূদ।

প্রশ্নঃ যীশু এখন কোথায় আছেন?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ তিনি ঈশ্বরের ডান হাতের উপর বসে আছেন।

প্রশ্নঃ তাহলে আকাশের উপরে কয়জন মাবূদ হল?

খ্রীস্টানদের উত্তরঃ একমাত্র মাবূদ; কিন্তু তিনজনের ভিতরে একজন। এটা যারা পবিত্র আত্মাকে বিশ্বাস করে শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারবে!

সর্বশেষ আমাদের মন্তব্যঃ

এ ধরণের গোলকধাঁধা একমাত্র ‘পাগল’ বা ‘উন্মাদ’ ব্যতীত কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা সম্ভব না!

[সংগৃহীত]

Post a Comment

أحدث أقدم