মুসলিমরা কেনো ফযরের সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠতে পারে না?


সংযুক্ত আরব আমিরাতের সালাফী বিদ্বান শায়খ ড. আজিজ বিন ফারহান আনিজি হা’ফিযাহুল্লাহ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন,

“যদি কোন ব্যক্তি ফযরের সালাতের সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হতে না পারে, তাহলে নিশ্চয় এর জন্য কোন কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলো কি?

প্রথম নম্বর কারণঃ রাত জেগে থাকা।

অধিকাংশ লোক রাত জেগে সময় নষ্ট করে। কোন ব্যক্তি যদি রাতের বেলা একটা বা দুইটা বাজে ঘুমাতে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তি কি করে ফযরের সময় ঘুম থেকে উঠবে? যেই সমস্ত লোকেরা ফযরের সালাত কাযা করে, তাদের অধিকাংশ লোকই রাত জেগে থাকার কারণে কাযা করে।

দ্বিতীয় কারণঃ রাতের খাবার।

তারা দেরী করে রাতের খাবার খায়, এ কারণে তাদের পেটে খাবার জমা থাকে যা তাদের শরীরকে ভারী করে দেয়। মুসলিমদের জন্য রাতের খাবার দেরী করে খাওয়া ঠিক নয়।

তৃতীয় কারণঃ ফযরের সালাত আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান না হওয়া।

কিছু লোক ফযরের সালাত আদায় করার জন্য ঘুম জেগে উঠার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। তারা বলে, “আমি যদি ঘুম থেকে উঠতে পারি, তাহলে ফযর পড়বো। আর যদি জাগতে না পারি, তাহলে পরে পড়ে নিবো।”

এটা মারাত্মক ভুল। কিছু লোক আমাকে বলেছেন, “আমি শেষ কবে ঘড়ির এলার্ম শুনে ফযরের সালাতের জন্য উঠেছিলাম তা আমার মনে পড়ে না। বরং এলার্ম দেওয়ার পূর্বেই ফযর সালাতের জন্য আমার ঘুম ভেংগে যায়।” এটা কেনো? “কারণ ফযরের জন্য ঘুম থেকে উঠার জন্য আমি আগ্রহী এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকি। ঘুমানোর পূর্বে আমি ফযরের জন্য উঠার নিয়ত রাখি। এ কারণে আমার এলার্ম দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।”

অতঃপর শায়খ আনিজি বলেন, “এ কারণে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।

চতুর্থ কারণঃ গুনাহ।

যেমন অতিরিক্ত পানাহার মানুষের শরীরকে ভারী করে, গুনাহর কাজে লিপ্ত হলে তা মানুষের রূহ (আত্মা) এবং ক্বালব (অন্তরকে) ভারী করে দেয়। ইবাদতের জন্য শক্তি না পাওয়ার বড় একটা কারণ হচ্ছে গুনাহ। কিছু মানুষ গুনাহর কাজ করে ঘুমাতে যায়। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, “একজন মানুষ কিভাবে গুনাহর কাজ করে ঘুমাতে যায়?” উত্তর হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন ফেইসবুক, ইউটিউব, হোয়াটস এপ ইত্যাদি) দ্বারা মানুষ গুনাহতে লিপ্ত হচ্ছে। কিছু লোকেরা পর্নো ভিডিও না দেখে, মহিলাদের অশ্লীল বা নগ্ন ছবি না দেখে ঘুমাতে পারে না। একইভাবে কিছু মহিলারা খারাপ জিনিস দেখে ঘুমাতে যায়। এমন লোকেরা যে বিছানায় ঘুমায়, সেই বিছানাতেই গুনাহর কাজ শেষে ঘুমাতে যায়। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ‘যিকির’ দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করে দিন শেষ করতে উপদেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ঘুমানোর পূর্বে সূরা আল-কাফিরুন পড়ে শির্কের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে ঘুমাতে যাওয়ার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। (কিন্তু আফসোস!) কিছু মানুষ পর্নোগ্রাফিক ভিডিও বা হারাম জিনিস দেখে ঘুমাতে যায়। কিছু মানুষ রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উম্মতের (মাঝে কোন মুসলিম ব্যক্তির) গীবত করে ঘুমাতে যায়। তারা অমুকের গীবত করে, অমুককে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অপমান করে মানুষের মাঝে প্রচার করে। এমন ব্যক্তিরা কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি আশা করে? এমন লোকেরা কিভাবে ফযরের সালাতের জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠার আশা করে?

আমি এই উদাহরণগুলো এ কারণে উল্লেখ করলাম, যাতে করে যারা ফযরের সালাতের জন্য ঘুম থেকে উঠতে পারে না, তারা যেন নিজেই নিজের হিসাব গ্রহণ করে (তারা কোন গুনাহর কাজে জড়িত)?

আমিরুল মু’মিনিন উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আ’নহু আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন,

حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا وَتَزَيَّنُوا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ وَإِنَّمَا يَخِفُّ الْحِسَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنْ حَاسَبَ نَفْسَهُ فِي الدُّنْيَا

“হিসাব গ্রহণের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব নাও এবং মহা সমাবেশে হাযির হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার হিসাব-নিকাশ নেয়, কিয়ামাতের দিন তার হিসাব অত্যন্ত হালকা ও সহজ হবে।” সুনানে তিরমিযীঃ ২৪৫৯।

আল্লাহ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ বলেছেন,

اِنَّ اللّٰهَ لَا یَخۡفٰی عَلَیۡهِ شَیۡءٌ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ

“নিশ্চয়ই ভূমন্ডলের ও নভোমন্ডলের কোন জিনিসই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” সূরা আলে-ইমরানঃ ৫।

সমস্ত মাখলুক্বকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে এবং সেইদিন কোন কিছুই তাঁর সামনে গোপন থাকবে না।” (শায়খের বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত)।

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post