ব্যবসা বাণিজ্যের তিনটা বেসিক বলি -
১/ অবিশ্বাসী মানুষকে দায়িত্বে রাখবেন না।
২/ ডকুমেন্টেশন ঠিক রাখবেন।
৩/ বিশ্বাসী হলেও বোকা মানুষকে ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্টের কাজ দেবেন না।
অনেক হাদিস পড়লে ধাক্কা লাগে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা যে এত গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছেন সেটাতে আশ্চর্য হতে হয়। ইসলামের সত্যতা নিমেষেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ثَلاَثَةٌ يَدعُونَ فَلاَ يُستَجَابُ لَهُم : رَجُلٌ كاَنَت تَحتَهُ امرَأَةٌ سَيِّئَة الخُلُق فَلَم يُطَلِّقهَا وَرَجُلٌ كَانَ لَه عَلى رَجُل مَالٌ فَلَم يَشهَد عَلَيه وَرَجُل آتى سَفيهاً مَالَهُ وَقَد قَالَ الله عَزَّ وَجَلَّ : ( وَلاَ تُؤتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُم ).
হাদিসটার মোটামুটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় -
// তিন ব্যক্তি দুআ করে কিন্তু কবুল হয় না;
১/ যে তার অসৎ চরিত্রের স্ত্রীকে তালাক দেয় না।
২/ যে ঋণ দিয়ে সাক্ষী রাখে না এবং
৩/ যে নির্বোধকে নিজের অর্থ প্রদান করে;
অথচ আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা বলেছেন, ‘‘তোমরা নির্বোধদেরকে তোমাদের অর্থ প্রদান করো না। //
এই হাদিসের শেষে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা নিসার পাঁচ নম্বর আয়াতের শুরুর অংশটাকে কোট করে তাঁর কথা শেষ করেছেন।
চারপাশে তাকিয়ে দেখেন - কত মানুষ জানে তার স্ত্রী দুশ্চরিত্রা - তাও সে তালাক দিচ্ছে না। সংসারে অশান্তি। একই কথাটা করপোরেট গভরনেসের ক্ষেত্রেও খাটে। খুবই এফিশিয়েন্ট লোক - কিন্তু অসৎ -তাৎক্ষণিকভাবে সুবিধা দেবে কিন্তু দিনশেষে আপনার ক্ষতি করবে।
আমরা কয়জন ঋণ নেওয়ার সময় লিখে রাখি? সাক্ষী রাখি? অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সূরা বাকারাতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রচুর ব্যবসা নষ্ট হয়ে যায় কারণ চুক্তিগুলো লিখিত থাকে না, সাক্ষী থাকে না - সব কথা হয় মুখে মুখে। সুদিনে সবাই সুখী। যখন ব্যবসাতে ঝামেলা আসে একে অন্যকে দোষ দিতে থাকে। অথচ লিখে রাখলে, সাক্ষী রাখলে এই বিপত্তিটা হতো না।
আর ব্যবসা করতে গিয়ে যারা ধরা খেয়েছে তাদের বেশিরভাগ মানুষকেই দেখবেন ব্যবসায়ীর বুদ্ধিমত্তা যাচাই না করেই তাকে টাকা দিয়ে দিয়েছেন।
হয়ত অনেক লাভ দেবে - এই লোভে। অথচ আসল হালাল ব্যবসায় কত টাকা লাভ হয়?
হয়ত দিয়েছে সাহায্য করার উদ্দেশ্যেই। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে ব্যবসা সবার জন্য না। সবাই ব্যবসা করতে পারে না। খুব ভালো অ্যাকাডেমিশিয়ান, ডাক্তার বা এনজিনিয়ার - মাথায় অনেক বুদ্ধি - কিন্তু ব্যবসা করতে পারবে এমন গ্যারান্টি নেই।
সবাই ব্যবসা করবে এমনটা নয় - অন্যের অধীনে কাজ করাতে লজ্জার কিছু নেই যদি কাজটা হালাল হয়।
সবাই উদ্যোক্তা হতে পারে না। সামর্থ্য যার নেই তাকে উদ্যোক্তা হতে বলা অধুনা সমাজের একটা সামাজিক ব্যধি।
বিনিয়োগের আগে তাই ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে আমরা যাকে টাকা দিচ্ছি তার ব্যাকগ্রাউন্ড কী। এই বুঝে নেওয়াটাও কুরআনের নির্দেশ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যাপারটাকে এতটাই সিরিয়াসলি নিয়েছেন যে তিনি এর সাথে দু'আ কবুল হওয়াটাকে শর্ত হিসেবে যুক্ত করেছেন।
এখন আমাদের মনে হতে পারে, আমার টাকা আমি যা খুশি তাই করব - ঋণ দিব সাক্ষী রাখব না, যাকে খুশি তাকে ব্যবসা করতে দেব, নষ্ট করব - তাতে অন্য কার কী? এই কারণে দু'আ কবুল হবে না কেন?
আসলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার প্রতিটি বিধান শুধু ব্যক্তি না সমাজের ব্যাপারটাও মাথায় রাখে। মানুষ যখন ঋণ ফেরত দেবে না, তখন বিশ্বাস উঠে যাবে। এ কারণে এখন সত্যিকার বিপদে পড়া লোকেরাও কার্দে হাসানা পায় না।
বোকার মতো টাকা ব্যবসায় নষ্ট করে ফেলা হলে সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ফিনান্স পাবে না। এই যে এখন সুদের মহামারী - এ কারণেই। বিজনেস রিস্ক কেউ নিতে চায় না - নিশ্চিত আয় চায়।
আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে ব্যবসাগুলো থেকে বারাকাহ উঠে গেছে। মানুষের জীবন থেকে বারাকাহ হারিয়ে গেছে।
আমরা যারা ব্যবসা করি বা করতে চাই তারা ইসলামের চোখ দিয়ে ব্যবসাটাকে দেখলে কী চমৎকার একটা ব্যাপার হতে পারত; তাই না?
© শরীফ আবু হায়াত অপু
Post a Comment