নাবী (সা:) এর শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ক

●●● আনাস (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দশ বছর পর্যন্ত নাবী (সা:) এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি উঃ শব্দ বলেননি । এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না? -(সহীহুল বুখারী: ৬০৩৮; মুসলিম: ২৩০৯; আল-লুলু ওয়াল মারজান: ১৪৯১)

●●● জাবির (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা:) এর নিকট এমন কোন জিনিসই চাওয়া হয়নি, যার উত্তরে তিনি 'না' বলেছেন। -(সহীহুল বুখারী: ৬০৩৪; মুসলিম: ২৩১১)

●●● আয়িশাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন এসে নাবী (সা:) এর কাছে বললো- আপনারা শিশুদের চুম্বন করে থাকেন, কিন্তু আমরা করি না। নাবী (সা:) বললেন: আল্লাহ্ যদি তোমার অন্তর থেকে রহমত উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তোমার উপর (তা ফিরিয়ে দেয়ার) অধিকার রাখি? -(সহীহুল বুখারী: ৫৯৯৮; মুসলিম: ২৩১৭)

●●● জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত। নাবী (সা:) বলেছেন: যে ব্যক্তি (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (স্রষ্টার পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হবে না। -(সহীহুল বুখারী: ৬০১৩; মুসলিম: ২৩১৯)

●●● আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা:) গৃহবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। -(সহীহুল বুখারী: ৩৫৬২; মুসলিম: ২৩২০)

●●● আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা:) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, নাবী (সা:) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম। -(সহীহুল বুখারী: ৩৫৫৯; মুসলিম: ২৩২১; আল লু'লু ওয়াল মারজান: ১৫০০)

●●● আনাস (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সা:) এর হাতের তালুর চেয়ে মোলায়েম কোন নরম ও গরদকেও আমি স্পর্শ করি নি। আর নাবী (সা:) এর শরীরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক সুঘ্রাণ আমি কখনো পাইনি। -(সহীহুল বুখারী: ৩৫৬১; মুসলিম: ২৩৩৮)

●●● বারআ (রা:) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সা:) এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। -(সহীহুল বুখারী: ৩৫৪৯; মুসলিম: ২৩৩৭)

●●● আয়িশাহ (রা:) হতে বর্ণিত । নাবী (সা:) কে যখনই দু'টি জিনিসের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহ না হত। গুনাহ হতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। নাবী (সা:) নিজের ব্যপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন। -(সহীহুল বুখারী: ৩৫৬০; মুসলিম: ২৩২৭)

●●● জুনদাব (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সা:) কে বলতে শুনেছি: আমি তোমাদের আগে হাউযের ধারে পৌঁছব। -(সহীহুল বুখারী: ৬৫৮৯; মুসলিম: ২২৮৯)

●●● আনাস ইবনু মালিক (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সা:) কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযুর পানি খুঁজতে লাগল কিন্তু পেল না । তারপর আল্লাহর রাসূল (সা:) এর নিকট কিছু পানি আনা হল। আল্লাহর রাসূল (সা:) সে পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযু করতে বললেন। আনাস (রা:) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙুলের নীচ থেকে পানি উপচে পড়ছে। এমনকি তাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তার দ্বারা উযু করল । -(সহীহুল বুখারী: ১৬৯; মুসলিম: ২২৭৯)

●●● আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ও খালিফা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসী কাফিররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মুজিযা দেখানোর জন্য দাবী জানালেন তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। -(গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ); অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ); হাদিস নাম্বার:৩৩৭৬)

●●● আবদল্লাহ্ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরাযরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নাবী কে তার যুগের চাহিদা মুতাবিক কিছু মুজিযা দান করতে হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মুজিযা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, ওহী- যা আল্লাহ পাক আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ); অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন; হাদিস নাম্বার:৪৬১৬

●●● সা'দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিনে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সঙ্গে আমি আরো দু' ব্যক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাকে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর পক্ষে তুমুল যুদ্ধ করেছে। আমি তাদেরকে আগেও দেখেনি আর পরেও দেখিনি। -(সহীহুল বুখারী: ৪০৫৪; মুসলিম: ২৩০৬)

●●● মুহাম্মাদ ইবনু মাহবুব ও খালীফা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জুমুআর দিন মদিনায় এল, যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। সে বললোঃ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে আপনি বৃষ্টিপাতের জন্য আপনার রবের নিকট দুআ করুন। তখন আকাশের দিকে তাকালেন তখন আমরা আকাশে কোন মেঘ দেখছিলাম না। তখন তিনি বৃষ্টিপাতের জন্য দু আ করলেন। এ সময় মেঘ এসে মিলিত হতে লাগলো। তারপর এমন বৃষ্টিপাত হল যে, মদিনার খাল- নালাগুলো প্রবাহিত হতে লাগল এবং ক্রমাগত পরবর্তী জুমূআ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে থাকল, মাঝে আর বিরতি হয়নি। পরবর্তী জুমুআয় যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন ঐ ব্যাক্তি অথবা অন্য এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল, আমরা তো ড়ুবে গেছি। আপনি আপনার রবের কাছে দু’আ করুন, যেন তিনি আমাদের উপর থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। তখন তিনি হেসে দিলেন এবং দুবার অথবা তিন বার দুআ করলেন। ইয়া আল্লাহ! (বৃষ্টি) আশে পাশে নিয়ে যান, আমাদের উপর নয়। তখন মেঘপূঞ্জ দূর হয়ে গিয়ে মদিনার আশে-পাশে বর্ষণ করতে লাগল। আমাদের উপর আর বর্ষিত হলো না। এতে আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুজিযা ও তার দুআ কবুল হওয়ার নিদর্শন দেখান। -(গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ); অধ্যায়ঃ ৬৫/ আচার ব্যবহার; হাদিস নাম্বার:৫৬৬৩)

●●● আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ্ (সা:) কে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও লোকদের দৃষ্টান্ত এমন ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো আর যখন তার চতুর্দিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ঐ সমস্ত প্রাণী যেগুলো আগুনে পড়ে, তারা তাতে পড়তে লাগলো। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে বাঁচাবার জন্য টানতে লাগলো। কিন্তু তারা আগুনে পুড়ে মরলো। তদ্রুপ আমি তোমাদের কোমর ধরে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করি অথচ তারা তাতেই প্রবেশ করছে । -(সহীহুল বুখারী: ৬৪৮৩; মুসলিম: ২২৮৪)

●●● আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সা:) বলেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের অবস্থা এমন, এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করল, তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক পাশে একটা ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নাবী (সা:) বলেন, আমিই সে ইট । আর আমিই সর্বশেষ নাবী। -(সহীহুল বুখারী: ৩৫৩৫; মুসলিম: ২২৮৬)

Post a Comment