যে বন্ধুত্ব শেষ হবার নয়

পিতা মৃত্যুশয্যায়। আদরের কন্যাকে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞেস করলেন-
-“ মা! রাসূল(সাঃ) কোনদিন মারা গিয়েছিলেন?”
-“সোমবারে, আব্বাজান।”
- “আজ কি বার?”
- “সোমবার।”
-“আলহামদুলিল্লাহ।”
-“তার পরনে কি ছিলো?”
-“তিনটি সাদা কাপড়।”

-“রাসূল(সাঃ) কতো বছর বয়সে রবের কাছে গিয়েছিলেন?”
-“৬৩ বছরে।”
-“আমার বয়স কতো?”
-“৬৩ বছর”
-“আলহামদুলিল্লাহ।”

আবু বকর(রাঃ) প্রচণ্ড খুশি হলেন। বললেনঃ মনে হচ্ছে আমিও আজ মারা যাবো। নিজের চাদরের দিকে তাকালেন। বললেনঃ এ চাদরটি ধুয়ে আরো দুটি কাপড় দিয়ে আমার কাফন দিয়ো।
যেন চাচ্ছেন প্রিয় বন্ধুর সাথে একই সজ্জায় মিলিত হতে। মজার ব্যাপার, উমার(রাঃ) ও মারা গিয়েছিলেন ৬৩ বছর বয়সে।

উসমান(রাঃ) গৃহবন্দী। যিনি মসজিদে নববী সম্প্রসারণের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করেছিলেন তাকে সে মসজিদে সালাত পড়তে দেয়া হচ্ছিলো না। রূমা কূপ ক্রয় করে যিনি সকল মুসলিমের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন, তার গৃহে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হলো। উসমান(রাঃ) স্বপ্নে রাসূল(সাঃ), আবূ বকর(রাঃ) আর উমার(রাঃ) কে দেখলেন। রাসূল(সাঃ) বললেন, “উসমান! আমাদের সাথে ইফতার করো।"

উসমান(রাঃ) বুঝলেন সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি রোযা রাখলেন। খুব শক্ত দেখে একটা জামা পরলেন। যাতে হত্যা করার সময় নগ্ন না হয়ে পড়েন। চাইলেন প্রিয় মানুষটার সাথে সিয়াম রাখা অবস্থায় দেখা করতে।

বিলাল(রাঃ) মৃত্যুশয্যায়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আজকেই হয়তো তার শেষ দিন। স্ত্রী আহাজরি করতে করতে বললেনঃ আহারে! আজ কতোই না কষ্টের দিন। বিলাল(রাঃ) জবাবে বললেনঃ বরং বলো আজ আনন্দের দিন। কাল আমি মুহাম্মদ(সাঃ) আর তার সাহাবাদের সাথে দেখা করবো।

ইয়ারমুকের প্রান্তরে তীব্র যুদ্ধ হচ্ছে। এক খৃষ্টান যোদ্ধা হঠাৎ মুসলিমদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলো। বললোঃ কে আছো? আমার সাথে লড়বে!

এক যুবক আবু উবাইদা(রাঃ) এর কাছে গেলেন। বললেনঃ আমি নিজেকে আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে চাই। এই আল্লাহর দুশমনের সাথে লড়ে অন্তরটা ঠাণ্ডা করতে চাই। আপনি কি আমাকে অনুমতি দিবেন?

আবু উবাইদা(রাঃ) অনুমতি দিলেন। যুবক রওনা দেবার ঠিক আগে বললেনঃ হয়তো আমি শহীদ হয়ে যাবো। আপনার কি রাসূল(সাঃ) কে কিছু বলার আছে?

যুদ্ধের মাঠে আবেগ দেখাতে নেই। তবুও আগুনঝরা যুদ্ধের ময়দানে আবু উবাইদা(রাঃ) কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেনঃ আল্লাহর রাসূলকে আমার সালাম দিও।
যুবক ময়দানে গেলেন। লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন।

মৃত্যু আমাদের কাছে খুব যন্ত্রণাদায়ক। এতোটাই তিক্ততার যে আমরা এটা নিয়ে ভাবতে চাই না। ভুলে থাকতে চাই। তবে সবার কাছে হয়তো মৃত্যু এমনটা না। কারো কাছে মৃত্যু ছিলো রবের দীদার লাভের এক মাধ্যম। প্রিয় নবীকে বহুদিন পর দেখার এক সুবর্ণ সুযোগ। ভালোবাসার মানুষকে দেখার সুযোগ।

একবার এক লোক রাসূল(সাঃ) এর কাছে আসলো। বললোঃ হে আল্লাহর নবী! যখন আমি আপনার সাথে থাকি তখন আমার মন প্রচণ্ড খুশি থাকে। কিন্তু যখন আমি আমার পরিবারের কাছে যাই তখন আমি আপনাকে মিস করা শুরু করি। আমার চোখ দুটি আপনাকে দেখতে আকুল হয়ে পড়ে। তাই আমি আপনার কাছে আসি। আপনার দিকে তাকাই। আমার অন্তর ঠাণ্ডা হয়।

কিন্তু এক সময় তো আপনি মারা যাবেন। আর আমিও মারা যাবো। আপনি জান্নাতে নবীদের সাথে উচ্চ পর্যায়ে থাকবেন। আর আমি যদি খুব কষ্ট করে জান্নাতে যেতেও পারি, তবে অনেক নীচু পর্যায়ে থাকবো। হে আল্লাহর নবী! আপনাকে ছাড়া কিভাবে জান্নাত আসলেই জান্নাত হতে পারে!

রাসূল(সাঃ) জবাব দিতে পারলেন না। স্তব্ধ হয়ে রইলেন। জিবরাইল(আঃ) উত্তর দিতে আসমান থেকে নেমে আসলেন। বললেনঃ

“আপনার অনুসারীদের বলুন! মানুষ তো তার সাথেই জান্নাতে থাকবে যাকে সে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে।”


Writer: Shihab Ahmed Tuhin

1 Comments

Post a Comment