সালাত : আপনার পরিচয় রক্ষার্থে অত্যাবশ্যক


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) এর উপর বিশ্বাস স্হাপন ও তাওহীদ সাক্ষ্য দেওয়ার পর যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ তা হল সালাত (নামাজ) কায়েম করা। অর্থাৎ নিজে সালাত আদায় করা এবং অধিনস্ত সবাইকে সালাতের দিকে ডাকা ও সালাত প্রতিষ্ঠা করা ।

আর যারা এই সালাতকে অবহেলা করে ছেড়ে দিবে তারা কুফরি করলো। আর কুফরি ইসলাম থেকে বের করে দেয় । অর্থাৎ নিজেকে মুসলিম দাবি করতে হলে সালাত অবশ্যই পড়তে হবে।

আর কিয়ামত দিবসে যে বিষয়টার হিসাব সর্ব প্রথম নেওয়া হবে তা হল 'সালাত'। আর যার সালাত ঠিক হবে তার অন্যন্য বিষয়গুলোও ঠিক হবে বলে আশা করা যায়।

এছাড়া যারা সালাত আদায় করে তাঁরা অশ্লীল এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। তাই সালাত আদায় না করে নেক আমল করা অসম্ভব।

আবার এই সালাতকে মহান আল্লাহ সুবাহানওয়া তাআ'লা তাঁর ও বান্দার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন। তাই একজন মুসলিম সালাতের মাধ্যমে আল্লাহকে যতটুকু কাছে পায়, অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়।

তাই নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিতে অবশ্যই রাসূল (সা:) এর পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে হবে। আর যারা সালাত কে ছেড়ে দিয়ে একজন মুসলিম দাবি করে তা তো যাদুকর এর ধোঁকার চেয়ে আরো বড় অবাস্তব।

মহান আল্লাহ বলেন,
"ধৈর্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামজের মাধ্যমে অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন । কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব ।" (বাক্বারাহঃ ৪৫)

"তোমার পরিবার পরিজনকে সালাত আদায় করার নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও তা দৃঢ়তার সাথে পালন করতে থাক।"-(সূরা ত্বা-হা: ১৩২)

"সকল নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে দিনের মধ্যবর্তী নামাযের ব্যাপারে। আর নামাজের সময়ে আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও। -(আল কুরআনঃ সুরা আল বাকারাহঃ ২৩৮)

"আপনি বলুনঃ আমার সালাত, আমার কোরবানী, এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।" -(সূরা আল আন-আমঃ ১৬২)

অর্থাৎ সালাত আদায়ের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর আদেশ পালন ও সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে । যেখানে থাকবেনা কোন লোকদেখানো অহমিকা ও বড়ত্ব । তবে অবশ্যই থাকতে হবে আল্লাহভিতি ।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন- সালাতকে অর্ধেক অর্ধেক করে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। আমার বান্দা আমার কাছে যা প্রার্থনা করে তা তার জন্য। বান্দা যখন বলে -“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্ব পালনকর্তা” তখন আল্লাহ বলেন - আমার বান্দা আমার যথাযথ প্রশংসা করেছে। অতঃপর সে যখন বলে- “তিনি করুনাময় ও অসীম দয়ালু”, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণকীর্তন করেছে। এরপর সে যখন বলে -“তিনি বিচার দিনের মালিক”, তখন আল্লাহ বলেন -আমার বান্দা আমার মর্যাদা প্রকাশ করেছে। সে যখন বলে - “আমরা তোমারই এবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি”, তখন আল্লাহ বলেন, “এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধাঅর্ধি। আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।” অতঃপর যখন সে বলে- “আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত কর তাদের পথে, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ, অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথে নয়” তখন আল্লাহ বলেন - “এটা আমার বান্দার অংশ। আর আমার কাছে আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।”-( আহমদ ও মুসলিম)

তিনি (সাঃ) আরো বলেনঃ
বান্দার কাছ থেকে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ের হিসেব গ্রহণ করা হবে তা হল তার সালাত। সে যদি তা পুরোপুরীভাবে আদায় করে থাকে তবে তা পুরো লেখা হবে। আর সে যদি তা পুরোপুরী আদায় না করে থাকে, তবে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলবেন -“দেখ, আমার বান্দার কোন নফল সালাত আছে কিনা, যার দ্বারা তোমরা তার ফরজ পুরো করে নিতে পার।” অতঃপর যাকাত সম্বন্ধে অনুরূপভাবে হিসেব গ্রহণ করা হবে। তারপর তার সমূদয় আমলের হিসেব অনুরূপভাবে নেয়া হবে।”-( আহমদ ও আবূ দাউদ)

আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন, “ফিরিশতাবর্গ তোমাদের প্রত্যকের জন্য দুয়া ক’রে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করে, যেখানে সে সালাত আদায় করেছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযূ নষ্ট হয়েছে; বলেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।” -(সহীহ বুখারী ৪৪৫; সহীহ মুসলিম ৬৪৯)

আবু হুরায়রা(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি রাসূল(সাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ
“তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের/বাড়ির সামনে দিয়ে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবাগণ বললেন, তার শরীরে কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারেনা। তিনি বললেন, এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে সালাতেরর মাধ্যমে আল্লাহ নামাযীর যাবতীয় পাপ মোচন করে দেন"।- (বুখারী; মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।”[মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন- ১৪৯৮)

"তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখা সেভাবে সালাত পড়ো"-(বুখারী -১ম খণ্ড হা:-৬৩১, আল-মাদানী প্রকাশনী)

অর্থাৎ উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেলো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহভিতিসহকারে সঠিকভাবে পালন করতে পারা অনেক বড় নিয়ামাহ ও রেহমাহ ।

আর যারা সালাত আদায় নিয়ে অবহেলা করে তাদের প্রতি ইসলাম কতটুকু কঠিন তা বুঝতে নিচের হাদীসগুলোর প্রতি লক্ষ্য করিঃ

"নবী(সা:) এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না" *(১)

"মুসলিম বান্দা এবং কাফের-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।" *(২)

"তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।" *(৩)

"যদি তারা তাওবা করে ও সালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তারাই তোমাদের দ্বিনী ভাই।" *(৪)

"অতঃপর এদের পর এল অপদার্থ লোকেরা। তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে।" *(৫)

"যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করে, ইসলামে তার কোন অংশ নেই।" *(৬)

অর্থাৎ সালাত আদায় না করে মুসলিম দাবি করা হাস্যকর ও লজ্জাজনক । তাই আমাদের মধ্যে যাদের এই ভয়ংকর অভ্যাস রয়েছে তারা যেন শীঘ্রই তাওবা করে সালাত প্রতিষ্ঠা করি । আল্লাহ সুবাহানওয়া তাআ'লা আমাদেরকে সালাতের ব্যাপারে সতর্ক ও নিয়মিত করুক । আমীন ।
-----------------------------------------------
(১) তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। হাকেম
(২) সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান
(৩) আহমাদ, তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান। নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, কিতাবুছ সালাত
(৪) সূরা তওবাঃ ১১
(৫) সূরা মারইয়ামঃ ৫৯-৬০
(৬) ইবনু আবী শায়রা, কিতাবুল ঈমান ।

Post a Comment

Previous Post Next Post